শহীদুল ইসলাম - ফেনী
প্রশ্ন
বর্তমান যুগে অনেকে বলে যে, তালিবানে ইলমের জন্য ইশরাক আওয়াবীন ও তাহাজ্জুদের নামায এবং অন্যান্য নফল ইবাদতসমূহের মধ্যে সময় ব্যয় করার চেয়ে ইলমের জন্য সময় ব্যয় করা উত্তম এবং ছাত্র যামানায় নফল ইবাদতসমূহের জরুরত নেই। কিছু কিছু কিতাবেও দেখা যায় যে
الاشتغال بالعلم কে الاشتغال بالعبادة من النوافل এর চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে। যেমন আল্লামা ইবনু আব্দিল বার রাহ.-এর জামিউ বায়ানিল ইলম। এ ধরনের আলোচনা আল্লামা হাছকাফী রাহ.-এর কিতাব ‘আদ দুররুল মুখতার’ ও আল্লামা হারিছ মুহাসিবী রাহ.-এর কিতাব ‘রিসালাতুল মুসতারশিদীন’ ইত্যাদিতেও রয়েছে। অতএব হুযুরের কাছে বিনীত আর তা এই যে, এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে আমাদের সকলকে উপকৃত করবেন। আল্লাহ তাআলা হুযুরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন।
উত্তর
একজন তালিবে ইলমের জন্য ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায়ের পর প্রধান কাজ ও মাশগালা হচ্ছে ইলমের চর্চা অর্থাৎ দরস, মুতালাআ, তাকরার ও তামরীনে নিমগ্ন থাকা। এতে কোনো বিঘ্ন ঘটানো উচিত নয়। সুতরাং তলবে ইলমের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এত অধিক পরিমাণে নফল ইবাদত বন্দেগী যিকির ও ওয়াযিফায় মশগুল হওয়া তালিবে ইলমের জন্য মুনাসিব নয়।
কিন্তু একথার অর্থ এই নয় যে, তালিবে ইলম কোনো নফল ইবাদতই করবে না। বরং কিছু কিছু নফল আমল তাকেও করতে হবে। যেমন, নিয়মিত কুরআনে কারীমের তেলাওয়াত ও আদইয়ায়ে মাছুরাহ-এর ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার সাথে সাথে শেষ রাতে জাগা সম্ভব হলে কয়েক রাকাত তাহাজ্জুদ পড়বে আর কোনো ওজরের কারণে শেষ রাতে জাগা সম্ভব না হলে শোয়ার আগে কিয়ামুল লাইলের নিয়তে দুই চার রাকাত নামায পড়বে। দিনের শুরুতে দুই রাকাত করে চার রাকাত চাশত ও ইশরাকের নামায এবং মাগরিবের পরে দুই-চার রাকাত যা সম্ভব হয় আদায় করবে।
এই সামান্য পরিমাণ নফল এবং সাথে অল্প পরিমাণে সহজ কিছু যিকিরের আমল এমন কিছু বেশি কাজ নয়, যা তলবে ইলমের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। বরং তেলাওয়াত, নাওয়াফেল, আযকার ও আদইয়ায়ে মাছুরাহ এর মাধ্যমে অন্তরের পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয়। যা ইলমী ও আমলী উভয় ধরনের উন্নতি ও অগ্রগতির পক্ষেই সহায়ক। উল্লেখ্য, কোনো তালিবে ইলমের বিশেষ অবস্থার বিবেচনায় যদি তাকে তার তালীমী মুরুববী নাওয়াফেল থেকে বিরত থেকে পুরো সময় ইলমের চর্চায় মগ্ন থাকতে বলেন তবে তা ভিন্ন কথা।
এ তো হল নফল ইবাদত-বন্দেগীর কথা। আর গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা এবং তাকওয়া ও তাহারাত অর্জনে সচেষ্ট হওয়া তো সবার জন্য সর্ব অবস্থায় জরুরি। সুতরাং ‘নফল ইবাদতবন্দেগীর তুলনায় ইলম চর্চায় মশগুল থাকা উত্তম’ যে কথাটি আপনি উল্লেখিত কিতাবগুলোর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন তা মূলত অধিক পরিমাণে নাওয়াফেল ও আযকারে মশগুল থাকার ব্যাপারে। অর্থাৎ ইবাদত-বন্দেগীকে জীবনের একমাত্র লক্ষবস্ত্ত বানিয়ে সারা দিনরাত এই এক কাজেই ব্যস্ত থাকা।
এ বিষয়ে আপনি খুব সহজেই উস্তাযে মুহতারাম মাওলানা মুহাম্মাদ তকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম -এর ‘ইসলাহী মাজালিস’ তৃতীয় খন্ডে সংশ্লিষ্ট আলোচনা পড়তে পারেন। হাফেজ শামসুদ্দীন আযযাহাবী রাহ. (মৃত্যু ৭৪৮ হি.) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’য় ‘মিসআর ইবনু কিদাম আল কূফী’ রাহ.-এর জীবনীতে প্রসঙ্গক্রমে এ ব্যাপারে একটি ব্যাখ্যামূলক মন্তব্য করেছেন, যা পড়ে দেখার মতো। তিনি বলেন
قلت: هذه مسألة مختلف فيها: هل طلب العلم أفضل، أو صلاة النافلة والتلاوة والذكر ؟ فأما من كان مخلصا لله في طلب العلم، وذهنه جيد، فالعلم أولى، ولكن مع حظ من صلاة وتعبد، فإن رأيته مجدا في طلب العلم، لا حظ له في القربات، فهذا كسلان مهين، وليس هو بصادق في حسن نيته.
وأما من كان طلبه الحديث والفقه غية ومحبة نفسانية، فالعبادة في حقه أفضل، بل ما بينهما أفعل تفضيل، وهذا تقسيم في الجملة، فقل - والله - من رأيته مخلصا في طلب العلم، دعنا من هذ كله. انتهى من سير أعلام النبلاء ٧⁄١٦٧طبعة مؤسسة الرسالة
এরপর যাহাবী রাহ. ইলম ও আমলের অধঃপতনের চিত্র তুলে ধরেছেন। আগ্রহী পাঠক তা পড়ে দেখতে পারেন।