মুহাম্মাদ যোবায়ের - জামিআতুল আবরার
প্রশ্ন
ক) নূরুল আনওয়ার কিতাবের ১৯২ পৃষ্ঠায় طعن -এর আলোচনায় হাদাসাতুস সিন-এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে একটি মেছাল দিয়েছেন যে, সুফিয়ান ছাওরী আবু হানীফা রাহ. সম্পর্কে বলছেন, এই ছোট্ট ছেলে আমার নিকট কী বলছে? এই মেছালটা তো কখনো সঠিক হতে পারে না। কারণ সুফিয়ান ছাওরী রাহ. হল আবু হানীফা রাহ.-এর একজন অন্যতম শাগরিদ। আর শাগরিদ উস্তায সম্পর্কে এমন কথা বলার তো প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া তিনি আবু হানীফা রাহ. থেকে বয়সেও ছোট। তাহলে মুসান্নিফ কোন ভিত্তিতে এই মেছাল দিয়েছেন বা এই মেছালের কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে কি না?
খ) কিতাবের ২০৩ পৃষ্ঠায় ‘বয়ানে তাগয়ির’-এর আলোচনায় হানাফীদের উপর যে তিনটি ইশকাল আসে তার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পৃষ্ঠার শেষে তিনি লিখেছেন, ...।
উত্তর
ক) নূরুল আনওয়ার কিতাবের উদ্ধৃত স্থানে সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর সাথে সম্বন্ধ করে যে মন্তব্যটি উল্লেখ করা হয়েছে তা আমার জানামতে তারীখ, তারাজিম এবং জারহ-তাদীলের কোনো নির্ভরযোগ্য প্রসিদ্ধ কিতাবে উল্লেখ নেই। উসূলে ফিকহের অন্য কোনো প্রসিদ্ধ কিতাবে বা মানারের অন্য কোনো শরহেও এর কোনো অস্তিত্ব নেই। আলোচ্য মাসআলায় উসূলে ফিকহের অন্যান্য কিতাবে ভিন্ন উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। কথাটি সম্ভবত কোনো নাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, সেখান থেকে মুসান্নিফ তা নকল করেছেন। কিন্তু এটিকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করা মুসান্নিফের যাল্লাত ও তাসামুহ হিসেবে গণ্য। কারণ মন্তব্যটি মুনকার বা আপত্তিকর ও অবাস্তব হওয়াই এ কথার জন্য যথেষ্ট যে, ইমাম সুফিয়ান ছাওরী থেকে এটি প্রমাণিত নয়; বরং মানাকিবের কোনো কোনো কিতাবে সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বর্ণনা করা হয়েছে যে, সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর একটি ফতোয়ার প্রেক্ষিতে তাঁর সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা রাহ. এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। দ্রষ্টব্য : মানাকিবুল কারদারী ২/১০-১১
ইমাম আবু হানীফা রাহ. থেকে বর্ণিত এ কথাটি (যদি তা প্রমাণিত হয়) হাদীস সংক্রান্ত নয়, ফিকহ ও ফতোয়া সংক্রান্ত।
যাহোক, আবু হানীফা রাহ. থেকে এ ধরনের কথা প্রমাণিত কি না তা তাহকীক করতে হবে।
উল্লেখ্য, সুফিয়ান ছাওরী রাহ. (জন্ম : ৯৭, মৃত্যু : ১৬১ হি.) আবু হানীফা রাহ. (জন্ম : ৮০ হি., মৃত্যু : ১৫০ হি.)-এর নিয়মতান্ত্রিক শাগরিদ নন। তবে তাঁরা উভয়ে পরস্পর থেকে কিছু হাদীস ও রেওয়ায়েত শুনেছেন। (দ্রষ্টব্য : উকুদুল জুমান, সালেহী ১১৫)
সুফিয়ান ছাওরী রাহ. আবু হানীফা রাহ.-এর ফিকহ ও ফতোয়ার অনেক প্রশংসা করতেন এবং তা থেকে অনেক সময় ইস্তেফাদাও করতেন-এ কথা একাধিক সূত্রে মানাকিবের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। অনুরূপভাবে আবু হানীফা রাহ. সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর ফাকাহাতের প্রশংসা করতেন। (দ্রষ্টব্য : আলইনতেকা, ইবনু আবদিল বার ১৯৭-১৯৮; মানাকিবুল কারদারী ২/৯-১৪; আখবারু আবী হানীফা, হাফেয সয়মারী)
সুফিয়ান ছাওরী রাহ. বলতেন-
كان أبو حنيفة شديد الأخذ للعلم، ذابًّا عن حرام الله عز وجل عن أن يستحل، يأخذ بما صح عنده من الأحاديث التي تحملها الثقات وبالآخر من فعل رسول الله صلى الله عليه وسلم، وما أدرك عليه علماء الكوفة، ثم شنع عليه قوم نستغفر الله، نستغفر الله.
(দ্রষ্টব্য : ফাযায়িলু আবী হানীফা, ইবনু আবীল আওয়াম, ৯৯)
খ) আপনার প্রশ্নোক্ত বিষয়টির সম্পর্ক কুরআনে কারীমের সূরা হুদ-এর ৪০-৪৭ আয়াতে বর্ণিত হযরত নূহ আ. ও তাঁর পুত্রের ঘটনার সাথে। উক্ত আয়াতসমূহের একাধিক তাফসীর রয়েছে। তার মধ্য থেকে কেবল একটি নূরুল আনওয়ার কিতাবের আলোচ্য স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। সংক্ষেপে উক্ত আয়াতসমূহের তাফসীর বুঝার জন্য তাফসীরের কিতাবসমূহ দেখা যেতে পারে, বিশেষত নিম্নোক্ত সংক্ষিপ্ত ও নির্ভরযোগ্য কোনো একটি তাফসীরের কিতাব দেখা যেতে পারে।
১. তাফসীরে উসমানী (তরজমায়ে শায়খুল হিন্দের হাশিয়া)
২. বয়ানুল কুরআন
৩. তাফসীরে মাজেদী
৪. সদ্য প্রকাশিত আসান তরজমায়ে কুরআন।