মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ - কানাইঘাট, সিলেট
প্রশ্ন
আশা করি হুজুর ভাল আছেন। দুআ করি আল্লাহ সুস্থতার সাথে যেন দীর্ঘজীবী করেন। হুজুর! আমি নূরুল আনওয়ার কিতাবের কিতাবুল্লাহ অধ্যায়ে লেখা عند الخصاف এবং সুন্নাহ অধ্যায়ের ‘মাশহুর’ এর আলোচনায় قال الجصاص নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। আমার জানার বিষয় হলো উভয় স্থানের বিষয়বস্ত্ত এক নাকি ভিন্ন? যদি এক হয় তাহলে এ উভয় নাম একজনের না দুজনের? যদি দুইজনের হয় তাহলে তাদের পরিচয় কী? আর যদি একজন হন তাহলে কোন নাম ঠিক? বিস্তারিত জানতে চাই। তাছাড়া যা প্রশ্নে আসেনি অথচ তা আমার জন্য উপকারী তাও জানতে আগ্রহী।
উত্তর
জ্বী, উভয় স্থানের আলোচ্য বিষয় অভিন্ন। তবে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত ‘নুরুল আনওয়ার’ কিতাবে ‘কিতাবুল্লাহ’ অধ্যায়ে ‘কিতাবুল্লাহ’-এর তারীফ সংক্রান্ত আলোচনায় ‘‘ইনদাল খাসসাফ’’ শব্দটি মুলত নাসেখের অনিচ্ছাকৃত তাহরীফ ও ভুল। সঠিক হলো ‘‘ইনদাল জাসসাস’’ কারণ খবরের যে প্রকারটি হানাফী মাযহাবের পরবর্তী অধিকাংশ উসূলে ফিকহের মুসান্নিফগণের পরিভাষায় ‘মাশহুর’ সেটিকে ‘মাশহুর’ না বলে খবরে মুতাওয়াতির-এর একটি প্রকার হিসেবে ‘মুতাওয়াতির’ নামেই নামকরণ করেছিলেন ইমাম আবু বকর আহমদ ইবনু আলী আররাযী (জন্ম ৩০৫ মৃত্যু ৩৭০ হি.) যিনি ফিকহে হানাফীর কিতাব সমূহে ‘জাসসাস’ নামে প্রসিদ্ধ। আহকামুল কুরআন, আলফুসুল ফীল উসূল, শারহু জামিয়িস সগীর (মাখতুত) শরহু মুখতাসারিত তহাবী (মুদ্রিত) শরহু মুখতাসারিল কারখী (মাখতুত) তাঁর প্রসিদ্ধ তাসনীফ। আলোচ্য মাসআলাটি তিনি আলফুসুল ফীল উসূল (৩/৩৭-৫০) কিতাবে উল্লেখ করেছেন এবং পরবর্তী মুসান্নিফগণ তাঁরই উদ্ধৃতিতে নকল করেছেন। ‘নুরুল আনওয়ারের’ সুন্নাহ অধ্যায়েও উল্লেখ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইমাম খাস্সাফের নাম কেউই উল্লেখ করেননি। সুতরাং এ নামটি এখানে অপ্রাসঙ্গিক এবং নাসিখের তাহরীফ বৈ কিছু নয়।
ইমাম ‘খাসসাফ’ হলেন ইমাম ‘জাসসাস-এর এক শতাব্দী আগের। পুরো নাম আহমদ ইবনুল আমর আশ শায়বানী (মৃত্যু ২৬২ হি.)। তিনি
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম ও মুহাদ্দিস এবং ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ-এর সমসাময়িক। আদাবুল কাযী, কিতাবুশ-শুরুত এবং আহকামুল ওয়াকফ ইত্যাদি তাঁর প্রসিদ্ধ তাসনীফ।
ইমাম জাসসাস এর জীবনীর জন্য দ্রষ্টব্য:তারীখে বাগদাদ ৪/৩১৪; আলজাওয়াহিরুল মুযিয়্যাহ, আব্দুল কাদের কুরাইশী ১/২২০; তাজুত তারাজিম, ইবনু কুতলুবুগা, পৃ ৬; আল ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ পৃ ২৭।
আর ইমাম খাসসাফ এর জীবনীর জন্য দ্রষ্টব্য: আল জাওয়াহিরুল মুযিয়্যাহ ১/২৩০; আলওয়াফি বিল ওফায়াত ৭/২৬৬; তাজুত তারাজিম পৃ ৭; আল ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ পৃ ২৯।
যা হোক এখানে একটি বিষয় তাম্বীহযোগ্য, তা হলো ‘নুরুল আনওয়ার’ কিতাবের সুন্নাহ অধ্যায়ে ‘খবরে মাশহুর’এর আলোচনায় যে বলা হয়েছে, ‘এর অস্বীকারকারীকে বিশুদ্ধতম মতে কাফের বলা যাবে না বরং গোমরাহ বলা হবে। কিন্তু ইমাম জাসসাস এর মতে মাশহুরের অস্বীকারকারীকে কাফের বলা হবে, কারণ তাঁর মতে মাশহুর মুতাওয়াতিরের মতই ইলমুল ইয়াকিন এর ফায়েদা দেয়।’
উপরোক্ত এই বক্তব্য সঠিক নয়। কারণ, ইমাম জাসসাস ‘মাশহুর’ যা তার পরিভাষায় ‘মুতাওয়াতিরের দ্বিতীয় প্রকার-এর অস্বীকারকারীকে কাফের বলেননি। বরং তিনি মুতাওয়াতিরের প্রথম প্রকার যা অন্যদের মতে একমাত্র মুতাওয়াতির সেটির অস্বীকারকারীকে কাফের বলেছেন। এছাড়াও তিনি তো ইমাম ঈসা ইবনু আবান রাহ. এর উদ্ধৃতিতে খবরে মাশহুরের একাধিক প্রকার বয়ান করেছেন, এর অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে তাফসীলী হুকুম বর্ণনা করেছেন এবং তিনি তা সমর্থন করেছেন। কিন্তু এর কোনো এক প্রকারের অস্বীকারকারীকেও তিনি কাফের বলে আখ্যায়িত করেননি। দেখুন: আলফুসুল ফিল উসূল ৩/৪৮-৪৯।
সুতরাং সর্বসম্মতিক্রমেই খবরে মাশহুরের অস্বীকারকারীকে কাফের বলা হয় না। এ বিষয়টি অনেকেই তাম্বীহ করেছেন। দেখুন: উসূলুস সারাখসী ১/২৯২ কাশফুল আসরার, আলাউদ্দীন বুখারী; আততাহরীর মাআ শারহিহি, ইবনুল হুমাম; তাওজীহুন নজর, তাহের জাযায়িরী ১/১১৪।
এখানে মূলত পরবর্তী মুসান্নিফগণ খবরের যে প্রকারটিকে ‘মশহুর’ নামে আখ্যায়িত করেছেন সেটিকে জাস্সাস রাহ. মুতাওয়াতিরের দ্বিতীয় প্রকার হিসেবে গণ্য করেছেন। কেবল এ জন্য যে, এই প্রকারটি তাঁর মতে ‘ইলমুল ইয়াকীন’ এর ফায়েদা দেয়। যদিও ‘ইলমুল ইজতেরারী’ পর্যায়ের নয় যার অস্বীকারকারীকে কাফের বলা যায়। বরং ইলমুল ইয়াকীন ‘ইস্তেদলালী ও নযরী’এর পর্যায়ের। দেখুন: আল ফুসুল ফিল উসূল ৩/৩৭,৪৮।