বিনতে আবদুল হান্নান - গওহরডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ
প্রশ্ন
আমি হেদায়েতুন্নাহব জামাতের একজন ছাত্রী। শুনেছি, সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ীদের মধ্যে এবং পরবর্তী যুগেও মহিলাদের মধ্যে অনেক বড় বড় আলেম ছিলেন। মুফতী ছিলেন, মুহাদ্দিস ছিলেন। এ যুগে কি মহিলাদের জন্য তাদের মতো বড় আলেম, মুফতী, মুহাদ্দিস হওয়া সম্ভব? সম্ভব হলে কীভাবে?
মন চায় তাদের মতো বড় মুফতী হতে। এখন আমার জন্য কী করণীয়?
আমার তো একটুও পড়তে মন চায় না। শুধু পেরেশানি লাগে যে এত পড়া কীভাবে পড়ব! আমি তো কিছুই পারি না! পড়তে বসলে ঘুম আসে। আমার জন্য কী করণীয়?
তরজমাতুল কুরআন বুঝার জন্য কীভাবে মেহনত করতে পারি? এখনতো হুজুর যে অর্থ পড়ান তা পুরা মুখস্থ করে ফেলি। শাব্দিক অর্থ বুঝি না। এভাবেই পড়তে থাকব, না অন্যভাবে? আরবী-বাংলা ভালো লুগাতুল কুরআন আছে কি? আমরা তো উর্দু পড়ি নাই এবং আরবীও ভালো পারি না। তাই বাংলা হলে ভালো হয়। আমাদের কাছে আলকাউসার প্রকাশনী থেকে ছাপা একটা আরবী-বাংলা লুগাতুল কুরআন আছে। শুনেছি, তাতে নাকি অনেক ভুল আছে। বাস্তবেই কি তাতে অনেক ভুল আছে? আর ওটার মান কেমন? মানসম্মত একটা আরবী-বাংলা লুগাতুল কুরআন খুঁজছি। আশা করি সন্ধান দিয়ে ধন্য করবেন।
আমি ভালো আরবী পারি না। ভালো আরবী পারার জন্য কী করতে পারি?
আমার জন্য একটু খাস করে দুআর দরখাস্ত করছি। আল্লাহ তাআলা যেন কবুল করেন। এবং পূর্বযুগের বড় বড় আলেমদের ন্যায় তাফাক্কুহ ফিদ্দীন অর্জন করার তাওফীক দান করেন। আমীন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। আমীন।
উত্তর
আপনি সঠিক শুনেছেন। সলফের যমানায় তালীমের ব্যাপক ও বিস্তৃত আয়োজনের কারণে নারীদের পক্ষেও ঘরোয়া পরিবেশে পূর্ণ পর্দার সাথে উচ্চতর তালীম লাভের সুযোগ হতো। কিন্তু বর্তমান যমানায় কিছু প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতার কারণে তা কিছুটা জটিল হয়ে পড়েছে। তবে তা এখনো অসম্ভব বা নজীর বহির্ভুত নয়।
ইলমের উচ্চাকাঙ্খার জন্য আপনাকে মোবারকবাদ। আল্লাহ তাআলা আপনার হিম্মতকে বাড়িয়ে দিন এবং ইলমের মনযিলে মকসূদে পৌঁছার তাওফীক দান করুন। আমীন।
ইলমের বিস্তৃতি ও গভীরতা চিন্তা করে তা হাসিলের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা কাম্য। এত পড়া কীভাবে পড়ব! এই চিন্তা ও পেরেশানি অবান্তর। কারণ অনেকেই তো তা পড়েছে এবং পড়ছে। সুতরাং আপনিও পারবেন। আর সব পড়া তো এক সাথে পড়তে হবে না; বরং কিছু কিছু করে পর্যায়ক্রমে পড়তে হবে।
আপনি তরজমায়ে কুরআন বুঝার জন্য কীভাবে মেহনত করবেন জিজ্ঞাসা করেছেন। এজন্য তো উত্তম সহযোগী হচ্ছে মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুম রচিত আততরীক ইলাল কুরআনিল কারীম (এসো কুরআন শিখি), যা এ পর্যন্ত চার খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। সম্ভব হলে কোনো উস্তাযের তত্ত্বাবধানে কিতাবটি মুতালাআ করবেন।
আরবী-বাংলা কোনো মানসম্মত লুগাতুল কুরআনের কিতাব আমার জানা মতে এখনো তৈরি হয়নি। তরজমা বুঝার জন্য আততরীক ইলাল কুরআনিল কারীম-এর সহযোগিতা নেওয়া হলে বাংলা লুগাতুল কুরআনের সহযোগিতা আর তেমন প্রয়োজন হবে না।
আর আরবী পড়া ও বুঝার জন্যও মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুম রচিত আততরীক ইলাল আরাবিয়্যাহ-এর সবকটি খন্ড বুঝে বুঝে পড়েন এবং মশক করেন তবে ফায়েদা হবে। এ কিতাবটি যদি আপনি আগে একবার পড়েও থাকেন তবুও তা পুনরায় সবকটি খন্ড পড়তে হবে। ভালো হয় যদি কোনো উস্তাযের সহযোগিতা নিতে পারেন। এর পাশাপাশি আপনাকে আততামরীনুল কিতাবী আলাত তরীক ইলাল আরাবিয়্যাহ অনুসারে অনুশীলন জারি রাখতে হবে।
এছাড়া আপনার দরসে যেসব আরবী কিতাব পড়ানো হয় সেগুলো যদি কোনো বাংলা বা উর্দূ শরাহ ও তরজমার সহযোগিতা না নিয়ে নিজেই একটু কষ্ট করে বুঝে বুঝে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তবে এক সময় ইনশাআল্লাহ আরবী ইবারত পড়া ও বুঝার যোগ্যতা তৈরি হবে। আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাওফীক দান করুন। আমীন।