আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। এক কিতাবে পড়লাম, সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ. আরবী সাহিত্যের পাঠ গ্রহণের যামানায় তিনটি কিতাব খুব বেশি পড়েছেন এবং বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। যথা : নাহজুল বালাগাহ, হামাসা এবং দালাইলুল ইজায। আমার আবেদন হলো, হযরত যদি এই কিতাব তিনটির পরিচয় কী এবং কিতাবত্রয় ক্রয় করলে কোন নোসখা ভালো হবে। এবং এর থেকে কোন্ পদ্ধতিতে পূর্ণাঙ্গ ফয়েদা অর্জন করতে পারবো- জানা বড়ই উপকৃত হবো এবং হযরতের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
‘নাহযুল বালাগাহ’ কিতাবের পরিচয় : এটি হযরত আলী রা.-এর বিভিন্ন বাণী, বক্তৃতা, কবিতা এবং চিঠি-পত্রের সংকলন। এ কিতাবের সংকলক কে সে বিষয়ে কিছুটা মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে বলেছেন, এর সংকলক হলেন, শরীফ রাযী মুহাম্মাদ ইবনুল হুসাইন (মৃত্যু ৪০৬ হি.)। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এর সংকলক হলেন শরীফ রাযীর ভাই শরীফ মুরতাযা আলী ইবনুল হুসাইন (মৃত্যু ৪৩৬ হি.)। এঁরা উভয়ই শীয়া ইমামিয়্যাহ ফেরকার আলেম।
উল্লেখ্য, এ কিতাবটিতে যেসব বিষয় আলী রা.-এর প্রতি সম্বন্ধ করা হয়েছে তার কোনো সনদ সাধারণত উল্লেখ করা হয়নি। মূলত এর অনেক কথাই আলী রা. থেকে প্রমাণিত নয়। এতে সংকলিত কিছু কিছু কথা তো বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হওয়া স্পষ্ট, যা আলী রা.-এর নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এতে এমন অনেক বাণী ও বিষয়ও সংকলিত হয়েছে যেগুলো নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত এবং নির্ভরযোগ্য কিতাবে রয়েছে।
যাহোক এ কিতাবটি আরবী আদবের একটি নমুনা। তাই এ কিতাব থেকে আদবী ইস্তেফাদা করা যেতে পারে। কিন্তু এর কোনো কথাকে আলী রা.-এর কথা হিসেবে বর্ণনা করতে হলে তা প্রমাণিত কি না সে তাহকীক করা জরুরি। এটি মুতালাআর সময় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এর সংকলক হলেন শীয়া মতাবলম্বী। এতে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে আলী রা.-এর প্রতি সম্বন্ধকৃত বিভিন্ন বানোয়াট ও মিথ্যা মন্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে।
এ কিতাবটির ব্যাপারে আহলে ইলমের মন্তব্য ও পর্যালোচনা জানার জন্য নিম্নোক্ত কিতাবগুলো দেখা যেতে পারে।
১. মিনহাজুস সুন্নাহ, হাফেজ ইবনু তাইমিয়া, ৭/৮৬, ৮/৫৩-৫৬
২. সিয়ারু আলামিন নুবালা, হাফেয যাহাবী ১৩/৩৮৩ (শরীফ মুরতাযা আলী ইবনুল হুসাইন-এর জীবনী)
৩. মীযানুল ই‘তিদাল, হাফেয যাহাবী ৩/১২৪ (শরীফ মুরতাযার জীবনী)।
৪. তারীখুল আদাবিল আরাবী, ড. আহমদ হাসান যায়্যাত, পৃ. ১৩৬
৫. ‘আল মুরতাযা’, মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী, পৃ. ২৮৫-২৮৭
‘হামাসা’ কিতাবের পরিচয়
আরবী কাব্য সাহিত্যে ‘হামাসা’ নামে একাধিক কিতাব রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন আরব কবিগণ সংকলন করেছেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ হল, আবু তাম্মাম (২৩১ হি.) সংকলিত ‘দিওয়ানুল হামাসা’। সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.-এর বাল্যকালের আরবী সাহিত্য বিষয়ক পাঠ্যপুস্তকের তালিকায় আমরা যে ‘হামাসা’-এর উল্লেখ পাই, সেটিও আবু তাম্মাম রচিত এই‘দিওয়ানুল হামাসা’।
আবু তাম্মাম হল, হাবীব ইবনে আওস ইবনে হারেছ আত্বায়ী (জন্ম : ১৮৮ হি. মৃ. ২৩১ হি)। তৃতীয় শতাব্দীর সুপ্রসিদ্ধ একজন আরব শায়ের। আরবের প্রাচীন কাব্যভা-ার থেকে তাঁর পছন্দের‘কাব্যমালা’-কে এ গ্রন্থে সংকলন করেছেন। এটি দশটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত। প্রথম অধ্যায়টির শিরোনাম‘আল-হামাসা’ যার অর্থ বীরত্ব। পরবর্তীতে এই প্রথম অধ্যায়ের নামেই কিতাবটি প্রসিদ্ধি লাভ করে। আবু তাম্মাম রচিত আরেকটি কিতাব হল : ‘আলওয়াহশিয়্যাত’। এটি ديوان الحماسة الصغرى নামে পরিচিত। তবে শুধু ‘আলহামাসা’ বলে প্রথমটিকেই বোঝানো হয়।
দ্রষ্টব্য : কাশফুয যুনুন ১/ ৬৯১-৬৯২; আলআলাম, যিরিকলী ২/১৬৪; মুজামুল মুআল্লিফীন, উমর রেযা কাহহালাহ ৩/১৮৩
‘দালায়েলুল ই‘জায’ কিতাবের পরিচয়
দালায়েলুল ই‘জায বালাগাত শাস্ত্রের অত্যন্ত ‘জ্ঞানগর্ভ’ কিতাব। বিশেষ করে ই‘জাযুল কুরআন বিষয়ে একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ। পঞ্চম শতাব্দীর বালাগাত শাস্ত্রের ইমাম আবদুল কাহের ইবনে আবদুর রহমান আলজুরজানী রাহ. (মৃ. ৪৭১ হি.)-এর একটি শ্রেষ্ঠ রচনা। এ কিতাবে তিনি ভাষা ও সাহিত্যের বিচারে কুরআনে কারীমের মুজিযা ও অলৌকিকত্বের দিকগুলোর বিশ্লেষণ পেশ করার চেষ্টা করেছেন।