নূর আহমদ বিন সালেহ - ডেমরা, ঢাকা

প্রশ্ন

ক. ছোটবেলা বাংলা বইয়ে পড়েছি, ‘উদ্দেশ্যহীন জীবন মাঝীবিহীন নৌকার মত’ উস্তাযগণের বয়ানের মাধ্যমে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়েছে, তবে উদ্দেশ্য নির্বাচনে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। অর্থাৎ তালীমী জীবনে কোন্ ফনের উপর বিশেষ করে মেহনত করব। কখনো একটি ফনকে নির্ধারণ করি কিন্তু কিছুদিন পর আবার মন ঘুরে যায়, তাই হুযুরের কাছে জানতে চাই, লক্ষ্য কীভাবে নির্ধারণ করব? এবং লক্ষ্যপানে এগিয়ে যেতে কী পন্থা অবলম্বন করব?

খ. আমি চাচ্ছি জালালাইন জামাত থেকে দারুল উলূম দেওবন্দে পড়ব, তবে আমাদের উস্তাযগণ বলে থাকেন এখান থেকে দারুল হাদীস পড়ে যেতেÑ এর কারণ কী? এ ব্যাপারে হুযুরের মতামত কী? এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী হতে পারে?

আল্লাহ তাআলা হুযুরকে নেক হায়াত দান করুন এবং মিল্লাতের অপূর্ণ কাজগুলো পূর্ণ করার তওফীক দান করুন এবং আমাদেরকে কিয়ামতের দিন তালিবে ইলমের কাতারে শামিল করুনÑ আমীন।

উত্তর

ক. আপনি এত পেরেশান কেন?! ঠিক এখনই বিশেষ কোনো ফনকে নির্ধারণ করার কী প্রয়োজন? দাওরায়ে হাদীস বা মেশকাত পর্যন্ত মাদরাসায় যে নির্ধারিত নেসাব ও নেযাম রয়েছে সে অনুসারেই আপনার চলা উচিত। এখন সময় হল মৌলিক ইসতি‘দাদ তৈরি করার। বিশেষ কোনো ফন চর্চা তো আরো পরের বিষয়। এখন আপনার কর্তব্য হল, মাদরাসার নেযাম মেনে চলা, উসতাযগণের তালীম ও তারবিয়াতের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলা এবং মৌলিক যোগ্যতাকে পাকাপোক্ত করা। আল্লাহ তাআলা আপনাকে কামিয়াব করুন।

খ. এ বিষয়ে উস্তাযদের পরামর্শ মেনে চলাই কর্তব্য। এর পক্ষে যুক্তি-প্রমাণ কীÑ তা জানার সময় এখন নয়।

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - ঢাকা

প্রশ্ন

উস্তাযে মুহতারাম! আমি মাওলানা হারুন ছাহেবের রচিত ‘আলফাতহুর রব্বানী’ কিতাবটি পড়ছিলাম। এর শুরুতে আপনার একটি তাকরীয রয়েছে। কিন্তু কিতাবটির ২৯৮-২৯৯ পৃষ্ঠায় একটি কথা দেখে খুব বিস্মিত হলাম। কারণ এতে আলফুতুহাতুল মাক্কীয়াকে ত্রুটিমুক্ত কিতাব বলা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, এমন একটি কিতাবকে কীভাবে ত্রুটিমুক্ত বলা হল?! জানি না, কিতবারের ব্যাপারে এই মন্তব্য তাকরীয লেখার আগে আপনার নযরে এসেছি কি না । সুতরাং হযরতের কাছে আমার আবেদন, কিতাবটি সম্পর্কে আপনার সুচিন্তিত মতামত ও তাহকীক কীÑ জানালে খুবই উপকৃত হব। আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।

উত্তর

বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করার জন্য আপনাকে শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহু খায়রান। আলফাতহুর রব্বানী নামে যে হাশিয়াটির কথা আপনি উল্লেখ করেছেন তার  শুরুতে আমার যে লেখাটি রয়েছে তার শিরোনাম হল ‘কালিমাতুশ শুক্র’। তাকরীয নয়। পারিভাষিক তাকরীয এবং কালিমাতুশ শুক্র নামে আমি যা লিখেছি এ দুয়ের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। কিতাবটির আদ্যপ্রান্ত সব কথা আমি পড়িনি। সুতরাং আপনি যে কথার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তা ইতোপূর্বে আমার নযরে আসেনি। আপনি বলার পর আমি তা দেখেছি।

লক্ষণীয়, উপরোক্ত স্থানে টীকাকার আসলে আল-ফুতুহাতুল মাক্কীয়াকে ত্রুটিমুক্ত কিতাব বলে কোনো রায় প্রদান করেননি বা এ বিষয়ে তাঁর কোনো তাহকীক ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও পেশ করেননি এবং সম্ভবত এমনটা তার উদ্দেশ্যও ছিল না। এখানে মূলত তিনি প্রসঙ্গক্রমে এ ব্যাপারে কেবল  লতীফা ও চুটকি হিসেবে একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন, যা থেকে আলফুতুহাতুল মাক্কীয়া কিতাবটি ত্রুটিমুক্ত হওয়া প্রমাণীত হয় না এবং লেখক তা প্রমাণ করতে চানওনি। খাব এবং কাশফ ও কারামত সম্পর্কে আমাদের কিতাব ‘তাসাউফ : তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ’-এ যে আলোচনা রয়েছে তা সামনে থাকলে কোনো ভুল ধারণা সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল না। তারপরও কারো ক্ষেত্রে ভুল ধারণার সৃষ্টি করতে পারে, তাই এ ধরনের ঘটনা উল্লেখ না করাই উচিত। আমি যদি ছাপার আগে দেখতাম তবে  এ বিষয়টি বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিতাম।

ফুতুহাতে মাক্কীয়া সম্পর্কে আপনি আমার রায় ও তাহকীক জানতে চেয়েছেন, দেখুন, কোনো কিতাব সম্পর্কে রায় প্রদান করতে হলে সেই কিতাবটি আদ্যপ্রান্ত ভালভাবে পড়া দরকার, কিন্তু আমি এ কিতাবটি পড়িনি এবং তা পড়ার প্রয়োজনও বোধ করি না। সুতরাং নিজ থেকে এ কিতাবের ব্যাপারে কোনো রায় প্রদান করার কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে যদি কিছু বলতেই হয় তাহলে আমি এ ব্যাপারে আকাবিরদের কথাই তো শুনিয়ে দিতে পারি। তো এখানে আমি মুজ্জাদ্দিদে আলফেসানী আহমদ সেরহিন্দী রাহ. (১০৩৪ হি.)-এর মাকতুবাত থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতি পেশ করছিÑ

১. كلام محمد عربى عليہ وعلى آلہ الصلواة والسلام دركار است نہ كلام محي الدين عربى وصدر الدين قونوى وعبد الرزاق كاشى، مارا بانص كار است نہ بفص، فتوحات مدنيہ از فتوحات مكيہ مستغنى ساختہ است. (مكتوبات، حصۂ  دوم، ص ১১১، مكتوب ১০০)

২. از نص بفص نميگرانيد، و از فتوحات مدنيہ بفتوحات مكيہ التفات نمى كند. (مكتوبات مجدد، حصۂ سوم ص১২، مكتوب ১৩১، مسلسل ৩০৪)

৩. "وعمل صوفيہ در حل وحرمت سند نيست، ہميں بس نيست كہ ما ايشاں را معذور داريم وملامت نہ كنيم؟ وامر ايشاں را بحق سبحانہ وتعالى مفوض داريم؟

اينجا قول امام ابي حنيفہ وامام ابي يوسف وامام محمد معتبر است، نہ عمل ابي بكر شبلی   وابى حسن نوری، ... " (مكتوبات مجدد، دفتر اول ، حصۂ چہارم ص১৭، ج، مسلسل ৬২৬)

আল্লাহ করুন, আপনি মুজাদ্দিদ রাহ.-এর উপরোক্ত কথাগুলো বুঝবেন এবং সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার করবেন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জহিরুল ইসলাম - শর্শদি ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদরাসা

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ আপনাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। হুযুর! আমি জামাতে কাফিয়ায় পড়ি। আমার প্রশ্ন হল :

ক. আরবী পড়তে আমার খুব ভালো লাগে, কিন্তু আমি এবারত পড়ে যথাসম্ভব অর্থ তুলতে পারি না।

খ. আরবী পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ভালো করে বুঝি না। বিশেষ করে যে লেখাগুলো বিদেশী পত্রিকা থেকে দেওয়া হয়।

গ. লিখতেও চেষ্টা করি, কিন্তু সুন্দরভাবে লিখতে পারি না। একই শব্দ বারবার ব্যবহার করতে হয়। নতুন শব্দ ব্যবহারে প্রায় অক্ষম। যদিও ব্যবহার করি, কিন্তু বেশিদিন মনে রাখতে পারি না। এখন হযরতের কাছে জানার বিষয় হল, কীভাবে আমি এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে পারি? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ক. ‘অর্থ তুলতে পারি না’ এটা কেমন কথা! আপনি অর্থ তুলতে যাবেন কেন? অর্থ আপনি বুঝবেন এবং উপলদ্ধি করবেন। কাফিয়া জামাত পর্যন্ত যেসব আরবী কিতাব পড়া হয়েছে তা থেকে তো এই যোগ্যতা অর্জন হওয়ার কথা যে, যে কোনো আরবী কিতাব আপনি বুঝে বুঝে পড়বেন, যেভাবে কোনো বাংলা বই আপনি বুঝে বুঝে পড়েন।

যাইহোক, ‘অর্থ তুলতে পারি না’Ñ একথার উদ্দেশ্য যদি হয় সঠিক অর্থ ও মর্ম বুঝতে না পারা, তবে মনে রাখতে হবে, নাহু, সরফ এবং লুগাতের মাবাদিয়াত সম্পর্কে পাঠ গ্রহণ করার পরও কিতাবের ইবারত পড়ে যথাযথ অর্থ বুঝতে না পারার নানা কারণ রয়েছে। এক. নাহবী তারকীব যথাযথ বুঝতে না পারা। যেমন, কোনটি ফায়েল এবং কোনটি মাফউল, কোনটি মুবতাদা এবং কোনটি খবর, কোন যমীরের মারজে কী, ইসমে ইশরার মুশারুন ইলাই কীÑ এসব বিষয় সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে না পারা।

দুই. কোনো শব্দের মূল অর্থ জানা, ব্যবহারিক অর্থ না জানা। এজন্য লুগত থেকে এবং ইবারতের পূর্বাপর থেকে শব্দের উদ্দিষ্ট ব্যবহারিক অর্থ বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

তিন. কিতাবটি যে ফনের সে ফনের পরিভাষা এবং বুনিয়াদী বিষয়াবলী সম্পর্কে ওয়াকিফহাল না থাকা।

তো কী কারণে আপনি যথাযথ অর্থ ও মর্ম উদ্ধার করতে পারেন না তা আগে আপনাকে নির্ণয় করতে হবে এবং তা করতে হবে কোনো উস্তাযের কাছ থেকে নিজের অবস্থা যাচাই করে। অতপর সেই কারণটি দূর করার মেহনত করতে হবে উস্তাযের নেগরানীতে।

আর যদি আপনার কথার উদ্দেশ্য হয় অর্থ বুঝতে পারা সত্ত্বেও মুখে প্রকাশ করতে না পারা, তবে তো এর জন্য কথা প্রকাশের অনুশীলন প্রয়োজন। আর এ কাজটি আপনি নিয়মিত তাকরারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে করতে পারেন।

খ-গ. দেখুন, আরবী পত্র-পত্রিকা পড়া এবং আরবীতে প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখার অনুশীলন এসব ইযাফী কাজ। আপনার মূল কাজ হল নেসাবের নির্ধারিত কিতাবসমূহের মুতালাআ, দরস, তামরীন এবং তাকরার। তো এসব কাজ ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন করার পরেই কেবল ইযাফী কাজ করতে পারেন উস্তাযের অনুমতিক্রমে এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে। সুতরাং আপনি কি এ বিষয়ে আপনার উস্তাযের অনুমতি এবং পরামর্শ গ্রহণ করেছেন? যদি তা করে থাকেন তবে তো আপনার উস্তায আপনাকে এ বিষয়ে আপনার উপযোগী নির্দেশনা দান করবেন। আর সে অনুসারেই আপনাকে অগ্রসর হতে হবে। আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাওফীক দান করুনÑ আমীন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জাবের হুসাইন - খেড়িহর মাদরাসা

প্রশ্ন

প্রথমে হুযুরের সিহহত ও আফিয়াত কামনা করছি। অতপর জানাচ্ছি যে, আমি পূর্বেও নি¤েœাক্ত প্রশ্ন পাঠিয়েছি। পৌঁছেনি ধারণা করে আবার বিষয়টি জানার জন্য লিখছি। তা হল, আমরা অনেককে বলতে শুনেছি যে, হযরত আদম ও হাওয়া আ.-এর বিবাহের মহর ছিল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পড়া। আর এ বিষয়টিকে আল্লামা আবদুল হাই লখনবী রাহ. শরহে বেকায়া ছানী-এর বাবুল মহর-এর এক নং হাশিয়ায় ইবনুল জাওযী রাহ. রচিত كتاب صلوة الأحزان-এর হাওয়ালায় উল্লেখ করেছেন। তো এখন হুযুরের কাছে এ বিষয়ের তাহকীক জানতে আগ্রহী। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

উত্তর

দরূদ পাঠের ফযীলত বয়ান করতে গিয়ে অনেকে উপরোক্ত কথাটি বলে থাকেন। কিন্তু কথাটির কোনো সনদ ও সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না।  আবদুল হাই লাখনবী রাহ. শরহে বেকায়ার হাশিয়ার উপরোক্ত কথাটি ইবনুল জাওযী রাহ.-এর যে কিতাবের হাওয়ালায় উল্লেখ করেছেন তার সঠিক নাম হল, سَلْوَةُ الأَحْزَان এবং পূর্ণাঙ্গ নাম হল, سَلْوَةُ الأَحْزَان بما رُوِيَ عن ذَوِي الْعِرْفَان এটি সনদবিশিষ্ট কোনো হাদীসের কিতাব নয়; বরং এতে মুসান্নিফ বিভিন্ন মনীষী ও আউলিয়া কেরামের যুহ্দ ও তাকওয়া সংক্রান্ত কিছু ঘটনা ও বাণী সংকলন করেছেন। কিন্তু তিনি এতে কোনো বাণীর সনদ বা হাওয়ালা উল্লেখ করেননি।

দশম শতকের বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেয শামসুদ্দীন সাখাবী রাহ. উপরোক্ত ঘটনাটি সম্পর্কে বলেছেনÑ

و ذكر ابن الجوزي في كتابه "سلوة الأحزان" قصة طويلة لم أقف عليها مسندة في تزويج أبينا آدم عليه الصلاة والسلام بحواء..."

অনেক তালাশ করে আমরাও এর কোনো সনদ খুঁজে পাইনি। আর আহলে ইলমের সর্বজন স্বীকৃত নীতি হল, সনদ ছাড়া এ ধরনের কথা গ্রহণযোগ্য নয়।

উপরোক্ত রেওয়ায়েতটির ব্যাপারে মারকাযুদ দাওয়াহ থেকে প্রকাশিত ‘এসব হাদীস নয়’ বইয়ের ২য় খ-ের ৭৭ নম্বর পৃষ্ঠায় আলোচনা করা হয়েছে। আপনি তা দেখতে পারেন।

শেয়ার লিংক