মুহাম্মাদ আবদুর রহীম শাহ - উত্তর যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

প্রশ্ন

হযরত আমি নাহু-ছরফ বিভাগের একজন ছাত্র। আমি নাহু-ছরফ মোটামুটি বুঝি। এখন আমাদেরকে মুখতারাত পড়ানো হচ্ছে।

আমার সমস্যা এই যে, অনেক সময় ইবারতের মাজাযী অর্থ মুরাদ হওয়ার কারণে মাফহুম বুঝে আসে না। অতএব কিতাবটি কীভাবে পড়লে উল্লেখিত সমস্যার সমাধান হবে জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

যদি সমস্যা শুধু মাজাযী মানা না-বোঝাটাই হয়ে থাকে তাহলে আপনি যামাখশরী রাহ.-এরআসাসুল বালাগা থেকে সাহায্য নিতে পারেন। আসলে সঠিকভাবে ইবারত বোঝার জন্য সে ভাষার শব্দ, অর্থ ও শৈলী, সবগুলোর সঙ্গেই পরিচয় থাকা অপরিহার্য। একই সাথে যে ভাষায় বোঝা হচ্ছে তার সঙ্গেও পর্যাপ্ত পরিচয় থাকা জরুরি। ভালো হয় যদি উসূলুত তরজমা  সর্ম্পকেও কিছু ধারণা থাকে।

প্রাথমিক পর্যায়ে মুখতারাত কীভাবে পড়তে হবে সে সম্পর্কে আলকাউসারের এপ্রিল ০৭ সংখ্যায় লেখা হয়েছে। আশা করি, ওই আলোচনাটা পড়ে নিবেন। 

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রহমতুল্লাহ - জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ মুহাম্মদপুর, ঢাকা

প্রশ্ন

আমি বর্তমানে জালালাইন জামাতে অধ্যয়ন করছি। এই বৎসর থেকে  আরবীতে পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই চলছে, তবে আরবীতে উপস্থাপনা ও সাবলীলতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে অনেকটাই দুর্বলতা অনুভব করছি। এখন আমার জানার বিষয় হল, কীভাবে মুজাহাদা করলে আমার এই দুর্বলতা দূর হবে। জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

এ প্রসঙ্গে করণীয় এটাই যে, আপনি আরবীতে উত্তরপত্র লেখা অব্যাহত রাখুন, আরবীতে রোযনামচা লিখুন এবং আরবী সাহিত্যিকদের নির্বাচিত কিছু কিতাব  অল্প অল্প করে পড়ুন। আর দরসী কিতাবসমূহের মুতালাআও আরবী কিতাবসমূহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন। পাশাপাশি দিনে বা রাতে একটি সময় নির্ধারণ করে সহপাঠীদের সঙ্গে আরবীতে কথা বলুন।

শেয়ার লিংক

আব্দুর রহীম - নরসিংদী

প্রশ্ন

আমি  বর্তমানে কাফিয়া জামাতে অধ্যয়নরত। আমাদেরকে জামাতের অন্যান্য কিতাবের সাথে কুরআন তরজমাও পড়ানো হয়। কিন্তু আমার সমস্যা হল, আমি কুরআন শরীফ দেখে তরজমা করতে পারি, কিন্তু অর্থ শুনে আয়াত বলতে পারি না। এখন আমার প্রশ্ন হল, আমি কী  পদ্ধতিতে কুরআন পড়লে অর্থ শুনে  আয়াত বলতে পারব?

প্রাথমিক অবস্থায় কোন তরজমা আমাদের জন্য বেশি উপকারী? পরামর্শ পেলে উপকৃত হব।

 

 

উত্তর

আয়াত তরজমাসহ বারবার পড়ুন। পঠিত সবক সহপাঠীদের সঙ্গে তাকরার করুন এবং তরজমা থেকে আয়াতটি স্মরণ করার চেষ্টা করুন। যদি স্মরণে না আসে তাহলে কুরআন মজীদ খুলে দেখে নিন। এভাবে মশক করতে থাকুন।

আলকাউসারের অক্টোবর-নভেম্বর ০৫ সংখ্যায় অর্থ বুঝে তেলাওয়াত করার যে পদ্ধতি উল্লেখিত হয়েছে সময় পেলে সেভাবেও মেহনত করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ উপকার হবে।

কুরআন মজীদের অর্থ বোঝার প্রাথমিক বা সহায়ক অধ্যয়নে মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুম-এর আততরীক ইলাল কুরআন অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত রাখুন। পূর্ণ কুরআন মজীদের তরজমার জন্য এমদাদিয়া কুতুবখানা থেকে প্রকাশিত তরজমায়ে কুরআন সংগ্রহ করা উচিত, যা হযরত মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ ছাহেব এবং অন্যান্য আকাবিরের তত্ত্বাবধানে প্রস্ত্তত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তরজমা পড়া যেতে পারে। 

শেয়ার লিংক

হুসাইন আদনান - জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া

প্রশ্ন

ছোটবেলায় শুনেছি, বই জ্ঞানার্জনের অন্যতম মাধ্যম। তখন থেকেই বইয়ের প্রতি আমার প্রচন্ড আগ্রহ। হাতের কাছে কোনো বই পেলে তা শেষ না করা পর্যন্ত স্বস্তি পাই না। আর বই কেনা তো আমার রীতিমতো নেশা। পছন্দের বই কিনতে আমার খুব ভালো লাগে। বর্তমানেও আমার কাছে প্রায় শখানেকের মতো বই আছে। আমার ইচ্ছা ধীরে ধীরে একটা ব্যক্তিগত পাঠাগার গড়ে তোলা, যা  থেকে আমার পরিবার এবং পরিচিতজনরা উপকৃত হবে। তো জানার বিষয় হল, এর জন্য আমি কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি? কোন পথে এগিয়ে গেলে এ কাজ আমার জন্য সহজ হবে?  এবং কোন ধরনের লেখকের কী কী বই সংগ্রহ করতে পারি? দয়া করে এ ব্যাপারে সুপরামর্শ দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।


উত্তর

মাশাআল্লাহ, অতি উত্তম সংকল্প! আল্লাহ তাআলা হিম্মত ও তাওফীক দান করুন।

এ প্রসঙ্গে দুটি বিষয় লক্ষণীয় : ১. গ্রন্থ নির্বাচন ২. গ্রন্থ সংগ্রহ।

গ্রন্থ নির্বাচনের বিষয়ে আলআহাম ফালআহাম নীতি অনুসরণ করা ছাড়া উপায় নেই। এরপরেও কুতুবখানায় বিষয়-বৈচিত্র থাকা চাই। কুতুবখানা আয়তনে ছোট হলেও তাতে প্রয়োজনীয় সব বিষয়েরই একটা, দুটা কিতাব থাকা প্রয়োজন।

কী কিতাব এবং তার কোন সংস্করণ সংগ্রহ করবেন-এবিষয়ে তালীমী মুরববী ও কিতাবপত্রের খোঁজখবর রাখেন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। নিজেও বিভিন্ন কুতুবখানা : ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও উন্মুক্ত পাঠাগার ইত্যাদি ঘুরে ঘুরে দেখবেন। তিজারতী কুতুবখানাগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা চাই। মুতালাআর যওকের সঙ্গে যদি এ বিষয়টা যুক্ত হয় তাহলে আপনার নিজের মধ্যেও গ্রন্থ নির্বাচনের রুচি ও যোগ্যতা তৈরি হবে।

এ বিষয়ে একটা কথা এই যে, কিছু কিছু ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যাদের সকল রচনা সংগ্রহ করার মতো (যদি সম্ভব হয়)। বর্তমান সময়ে এ ধরনের ব্যক্তিত্বের মধ্যে হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ., শায়খ যাহেদ কাউছারী রাহ., মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ., হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নাদভী রাহ., হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ মনযুর নুমানী রাহ., হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ নুমানী রাহ., শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ., হযরত মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানভী রাহ., হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুম, আল্লামা খালিদ মাহমুদ ছাহেব এবং মাওলানা আমীন ছফদার রাহ. বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এরপর আকাবিরের পছন্দনীয় কিতাবসমূহ, বিশেষত যেগুলোকে তারা তাদের মুহসিন কিতাব বলে উল্লেখ করেছেন, অবশ্যই সংগ্রহ করার মতো।

দ্বিতীয় প্রসঙ্গ অর্থাৎ গ্রন্থসংগ্রহের বিষয়ে দুআ ও রোনাযারীকেই মূল উপায় হিসেবে গ্রহণ করুন। আর সহযোগী উপায় হবে মিতব্যয়িতা। উস্তাদে মুহতারাম হযরত মাওলানা আমীন ছফদর ছাহেব অত্যন্ত গরীব মানুষ ছিলেন, কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত কুতুবখানা ছিল বেশ বড়। এ কুতুবখানা তৈরিতে দুআ ও রোনাযারী ছিল তার সবচেয়ে বড় সহায়। তার আদ্দুররুল মানছূর কিতাবের প্রয়োজন ছিল। রাতভর তাহাজ্জুদের নামাযে কেঁদে কেঁদে দুআ করলেন। এর মধ্যে কিছুটা তন্দ্রা এল। স্বপ্নে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যিয়ারত হয়ে গেল। ইরশাদ হল কিতাবের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। শেষে সেই কিতাবের তো ব্যবস্থা হলই পরবর্তীতে প্রয়োজনমাফিক অন্যান্য কিতাবেরও ব্যবস্থা হতে থাকল।

শায়খ আবদুল ফাত্তাহ  রাহ. কিতাবের জন্য নফল নামাযের মান্নত করতেন : অমুক কিতাব পেলে এত রাকাত নফল নামায পড়ব। কিতাবও সংগ্রহ হত আর নফল নামাযের মাধ্যমে তাকাররুব ইলাল্লাহও হাসিল হত।

হযরতুল উস্তাদ (মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ নুমানী রাহ.) এর ব্যক্তিগত কুতুবখানাও অনেক বড় ছিল এবং তাতে অনেক দুষ্প্রাপ্য কিতাব ও অনেক খন্ডের বড় বড় গ্রন্থও ছিল। কখনও বিকালে তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে জিজ্ঞাসা করতেন, কীভাবে এসেছ, হেটে না বাসে? যেদিন বাসে যাওয়া হত বলতাম, বাসে এসেছি। প্রশ্ন করতেন, কত ভাড়া লেগেছে? বলতাম, চার আনা।তিনি বলতেন, তালিবে ইলমের জন্য চার আনাও অনেক। আমরা যদি চার আনা পেতাম তো সংরক্ষণ করে রাখতাম, আরো চার আনা সংগ্রহ করা গেলে একটা রিসালা খরিদ করতাম।

আসলে মিতব্যয়িতার মাধ্যমে তাঁর ওই কুতুবখানা প্রস্ত্তত হয়েছিল।

বিবাড়িয়ার টানবাজার মসজিদের খতীব ছাহেব তার নিজের ঘটনা আমাকে শুনিয়েছেন যে, তিনি যখন দারুল উলূম দেওবন্দে পড়াশোনা করতেন তখন তার জন্য নির্ধারিত দুই রুটির মধ্যে একটা রুটি খেতেন, অন্য রুটি যদি কেউ নিয়ে যেত এবং তাকে কিছু দিত এটাই ছিল তার কিতাব সংগ্রহের উপায়।

আর যাদেরকে আল্লাহ তাআলা আর্থিক সচ্ছলতা দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে কিতাব সংগ্রহের আগ্রহও দিয়েছেন তাদের শোকর গোযারী করা উচিত এবং এই নেয়ামত সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। 

শেয়ার লিংক

হাবীবুর রহমান - বাগেরহাট

প্রশ্ন

 

আমি আসাহহুস সিয়ার কিতাবে দেখেছি যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আযাদকৃত গোলামদের তালিকায় একটা নাম লেখা হয়েছে سندر   এই নামের উচ্চারণ কী হবে আর তিনি যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাওলা (আযাদকৃত গোলাম)  হয়ে থাকেন তবে زنباع  -র মাওলা কীভাবে হলেন?


 

উত্তর

ওই নামের উচ্চারণ ছানদার। অপর নামটি হচ্ছে زِنْبَاع الجُذَامي         

(দেখুন : তাজুল  আরূস, শরহুল কামূস, মুরতাযা যাবীদী; আলআনসাব আবদুল কারীম সামআনী)

ছানদর রা. মূলত যিম্বা রা.-এর গোলাম ছিলেন। বর্ণিত আছে যে, একবার কোনো অপরাধের কারণে যিম্বা রা.  তাকে খাসী  করে দেন। ছানদর রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের  করলেন তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন যে, যাকে অঙ্গহানী করে বিকৃত করা হয় কিংবা আগুনে জ্বালানো হয় সে আযাদ। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলেরমাওলা (আযাদকৃত)। (উসদুল গাবা ২/৩৮৩; আলইসাবা ২/৫৬৮-৫৬৯)

উপরোক্ত বর্ণনা থেকে তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাওলা বলে উল্লেখ করার কারণও জানা গেল।

শেয়ার লিংক