তানভীর তাকী - জামিয়া হোসাইনিয়া আরাবিয়া <br> আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।

প্রশ্ন

আমি জামাতে হেদায়াতুন নাহুর একজন ছাত্র। আমি কয়েকটি বিষয় জানতে চাই। বিষয়গুলো হচ্ছে-

ক. কিতাবের হাশিয়া, বায়নাস সুতূরের শেষে আরবীতে ১২ লেখা থাকার কারণ কী?

খ. কিতাবের অধিকাংশ উদাহরণে যায়েদ আমর এ দুটি নাম দেখা যায়। উক্ত নাম দুটি দ্বারা কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না? এ বিষয়ে আমি একটি কথা শুনেছিলাম। কিন্তু কথাটি আমার বিশ্বাস হয়নি। তাই আপনার শরণাপন্ন হলাম।

উত্তর

ক) এ বিষয়ে আগেও লিখেছি। উস্তাদদের মুখে শুনেছি, ১২ সংখ্যাটি আবজাদ-এর হিসেবে .....এর মর্ম বহন করে। যা সমাপ্তি-সীমা বুঝায়

খ) এগুলো হলো ফরযী উদাহরণ। এর সাথে কোনো ঘটনা বা ইতিহাসের সম্পর্ক সন্ধান করার প্রয়োজন নেই।

শেয়ার লিংক

কে এম শাহাদাত হোসাইন - জামাতে কাফিয়া-শরহেজামী <br> মাদরাসায়ে আশরাফুল মাদারেস বটতলী <br> মান্দারী বাজার, লক্ষীপুর

প্রশ্ন

মুহতারাম, আমি বর্তমানে কাফিয়া জামাতের একজন ছাত্র। আমার সমস্যা হল আমি আরবী কিতাব খুব কম বুঝি, বিশেষ করে মিরকাত কীভাবে পড়লে এই কিতাব বুঝে আসবে তা জানতে চাচ্ছি। আরো পরামর্শ চাচ্ছি যে, মিরকাত কিতাব বুঝার জন্য কোন কোন বাংলা শরাহ অধ্যয়ন করতে পারি?

উত্তর

একজন তালিবে ইলমের জন্য আরবী কিতাব পড়ে বোঝার যোগ্যতা হাসিল করা জরুরি। এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে শিক্ষা-পরামর্শ বিভাগে বিগত সংখ্যাগুলোতে আলোচনা করা হয়েছে। মিরকাতের ভাষা ও উপস্থাপনা সহজ। আরবী কিতাব বোঝার ইস্তিদাদ হয়ে গেলে এই কিতাব বোঝা সহজ। এরপরও যদি মিরকাত-এর আলোচনা বুঝতে অসুবিধা হয় তবে তাইসীরুল মানতিক বা আলমানতিক কিতাবে যেসব আলোচনা ও পরিভাষা উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো আয়ত্ত করে নেওয়াও মোটামুটিভাবে যথেষ্ট হয়ে যায়। মিরকাত-এর কোনো বাংলা শরাহ প্রকাশিত হয়েছে কি না আমার জানা নেই।

শেয়ার লিংক

আলমগীর - চকরিয়া, কক্সবাজার

প্রশ্ন

আমি এক মাদরাসার একজন নগণ্য উস্তায। আল্লাহর ফজলে শরহে বেকায়া ও নূরুল আনোয়ার পাঠদানের সৌভাগ্য হয়েছে, কিতাব দুটি আমার দরসের অধীনে রয়েছে। কিন্তু এই কিতাবদ্বয় পাঠদানের যথার্থ নিয়ম-নীতি সম্পর্কে আমার তেমন অবগতি নেই। তাই আমি আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। আমার জানার বিষয় হল-

ক. কিতাব দু'টি কোন নিয়মে পড়ালে ছাত্ররা যথার্থভাবে উপকৃত হবে।

খ. কিতাব দু'টি শিক্ষার্থীদের কাছে কতটুকু যোগ্যতার দাবি রাখে।

গ. শরহে বেকায়াহ পড়ানোর ক্ষেত্রে আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী রাহ.-এর শরাহ عمدة الرعاية ও নুরুল আনোয়ার সুন্নাহ পড়ানোর ক্ষেত্রে কামারুল আক্বমার সাধারণত সামনে রাখি এ সম্পর্কে আপনার কী মত?

ঘ. কিতাবদ্বয়ের নির্ভরযোগ্য আর কোন শরাহ আছে কি না?

ঙ. লাখনভী রহ.-এর ভূমিকায় ফিকাহ সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে, কিন্তু কিতাবটি একটু অস্পষ্ট হওয়াতে তা অধ্যয়ন করে তার বিষয় সম্পর্কে অবগতি লাভ করা কঠিন। তাই এর বিকল্প বা ইলমে ফিকাহর এসব মৌলিক বিষয়াদির আলোচনা সমৃদ্ধ অন্য কোনো কিতাব আছে কি না?

আশা করি, আপনার সুচিন্তিত পরামর্শ দান করে তালিবে ইলমদের যথার্থ খেদমত করার বিষয়ে অধমকে সহযোগিতা করবেন। আর ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

উত্তর

ক. প্রত্যেক কিতাবই তার মাকছাদে তাসনীফ' বা রচনার উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে পড়ানো উচিত। শরহে বেকায়া কিতাবটি মুলত وقاية الرواية في مسائل الهداية -এর শরাহ। আর বেকায়া রচনার উদ্দেশ্য হল, হেদায়া কিতাবটির মাসআলাগুলো আয়ত্ত করানো। সে হিসেবে আসল করণীয় হওয়া উচিত বেকায়া কিতাবের মাসআলাগুলো ছাত্রদের মুখস্থ করানো, তারপর শরহে বেকায়া পড়ানো, তবে যেহেতু বেকায়া ভিন্ন পড়ানোর কোনো নিয়ম আমাদের এখানে নেই তাই অন্তত বেকায়ার মতন থেকে মূল মাসআলা পরিষ্কার ভাষায় ছাত্রদের বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। অতঃপর শরহে বেকায়ায় উপস্থাপিত আলোচনা ও দলীলের সারসংক্ষেপ আগে মৌখিকভাবে বুঝিয়ে তারপর কিতাবের ইবারতের সঙ্গে মিলিয়ে তা বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। কিতাব থেকে ছাত্ররা আলোচনা বুঝতে পারছে কি না প্রথম কয়েকমাস সেটাও লক্ষ করা প্রয়োজন। শুধু খুলাসা বা সারসংক্ষেপ আলোচনা করে দেওয়া যথেষ্ট নয়। এর ফলে অনেক সময় ছাত্রদের কিতাব হল করার ইস্তিদাদ গড়ে ওঠে না। এটা ক্ষতিকর।

শরহে বেকায়ার আরেকটি মাকছাদ হল, মাসায়েলে ফিকহের আকলী ও নকলী দলীল সম্পর্কে তালিবে ইলমদেরকে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া। যেহেতু উক্ত কিতাব দ্বারা এই মাকসাদ পুরোপুরি হাসিল হয় না তাই উস্তায যদিالفقه الحنفي في ثوبه الجديد  , الفقه الحنفي وادلته অথবা  اعلاء السنن, جامع أحاديث الأحكام  -এর মতন কিতাবগুলো নিজের মুতালাআয় রাখেন তাহলে ছাত্রদের বেশি ফায়দা পৌছাতে পারবেন। عمدة الرعاية  শরহে বেকায়ার একটি ভালো হাশিয়া। সেটি মুতালাআয় রাখা ভালো। তবে উত্তাদ এ বিষয়ে ইলমী তরক্কির জন্য (সব দরসে বলার জন্য নয়) হযরত আব্দুল হাই লাখনভী লিখিত السعاية কিতাবটিও মুতালাআ করতে পারেন। স্মরণ রাখা যেতে পারে, যে কোনো কিতাবেই কোনো কোনো মাসআলার দলীলকে দুর্বল দেখানো হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে পেরেশান না হয়ে মাসআলাগুলো অন্যান্য ফিকহ ও হাদীসের মাহেরীনদের-কিতাব থেকে অধ্যয়ন করা উচিত। বিশেষভাবে আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ., ইউসুফ বানুরী রহ. ও আল্লামা যাহেদ কাউসারী রহ. লিখিত কিতাবসমূহ দেখা যেতে পারে।

শরহে বেকায়া কিতাব দীর্ঘদিন পড়ানোর সুবাদে কোনো উস্তায যদি এর সূত্র ধরে ইলমে ফিকহর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে চান তাহলে শরহে বেকায়ায় যেহেতু হেদায়া কিতাবেরই মাসায়েল আলোচনা করা হয়েছে তাই হেদায়া কিতাবের গুরুত্বপূর্ণ শরাহগুলো মুতালাআ করতে পারেন এবং ফিকহের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন।

নূরুল আনওয়ার-এর ক্ষেত্রেও প্রথমে আলমানার- এ উপস্থাপিত কায়দা বা মাসআলা আত্মস্থ করানোর চেষ্টা করতে হবে। এরপর নূরুল আনওয়ার এর সারসংক্ষেপ তালিবে ইলমদেরকে বুঝিয়ে পরবর্তীতে কিতাবের ইবারতের সঙ্গে মিলিয়ে বুঝাতে হবে। নুরুল আনওয়ার-এর যেসব বিষয় কিছুটা লফজী তাদকীক জাতীয়, ওগুলোতে সময় বা মেধা অনেক বেশি ব্যয় করার প্রয়োজন নেই। নুরুল আনওয়ার বুঝার ক্ষেত্রে 'আলমানার' এর শরহুল মুসান্নিফ (কাশফুল আসরার) ও মুতালাআয় রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আরো ইলমী তারাক্কীর জন্য 'মানার'-এর বুনিয়াদ যে কিতাব সেই উসূলে বযদবী'র বিভিন্ন শরাহ সাধ্যানুযায়ী মুতালাআ করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে আব্দুল আজীজ বুখারী (৭৩০ হি.) লিখিত কাশফুল আসরার (শরহে বযদবী) একটি প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যগ্রন্থ, যা সহজলভ্য। তবে উসুলে ফিকহের বাস্তবমুখী অধ্যয়নের জন্য ড. আব্দুল করী যায়দানের  الوجيز في أصول الفقه -এর মতো সহজ সরল ও অকৃত্রিম উপস্থাপনার কোনো কিতাব অবশ্যই পড়তে হবে।

নূরুল আনওয়ার-এর তাদরীসের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়ে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। সেটি হচ্ছে আয়ত্ত্বকৃত উসুলের ইজরা ও তাতবীকের (উদাহরণ ও অনুশীলন) প্রতি যত্ন নিতে হবে। এ বিষয়টি অনেক স্থানেই অবহেলিত। এ বিষয়ে উপাদান কম থাকায় হয়তো উস্তাদের কিছু বাড়তি শ্রম দিতে হবে। কুরআন শরীফ তেলাওয়াত এবং আহাদীস মুতালাআর সময় বিভিন্ন উসুলের তাতবীক ও ইজরার চেষ্টা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে الواضح في أصول الفقه এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে التاسيس في أصول الفقه على ضوء الكتاب و السنة এবং أثر الاختلاف في القواعد الاصولية في اختلاف الفقهاء  থেকে সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। যে কিতাবগুলোর রচয়িতা পর্যায়ক্রমে ড. মুহাম্মাদ আশকর ও আবু ইসলাম মুস্তফা ইবনে মুহাম্মদ ও ড. মুস্তফা সাঈদ আলখন।

খ. কিতাব দুটি আমাদের দেশে যে শ্রেণীতে পড়ানো হয় তা মুনাসিব। কিন্তু সমস্যা এই যে, এই শ্রেণীগুলোতে যেসব ছাত্র পড়তে আসে অনেকেই তাদের নিচের জামাতগুলো থেকে যথাযথ ইস্তিদাদ অর্জন করে আসে না। আরেকটি হচ্ছে, নূরুল আনওয়ার-এর আগে উসূলে ফিকহের কিতাব কেবল উসূলুশশাশী-ই যথেষ্ট নয়, বরং এ ছাড়াও আরো দু-একটি কিতাব অধ্যয়নে আসা উচিৎ।

গ. উমদাতুর রিআয়া এর বিষয়ে পূর্বেও বলা হয়েছে। নূরুল আনওয়ার সুন্নাহ- এর বহসের জন্য কামরুল আকমার যথেষ্ট নয়। এ  ক্ষেত্রে মুদাররিসকে উসুলে হাদীসের কোনো সহজ কিতাব মুতালাআ করার পাশাপাশি মুকাদ্দিমায়ে ফাতহুল মুলহিম (শাব্বির আহমদ উসমানী রাহ. লিখিত) মুতালাআয় রাখা জরুরি।

ঘ. এ কিতাবের প্রচুর শরাহ রয়েছে। কয়েকটির নাম উপরে উল্লেখও করা হয়েছে।

ঙ. "উমদাতুর রিআয়া'-এর ভূমিকার مبادية الفقه والفتوي সংক্রান্ত বুহুসগুলোর জন্য আব্দুল হাই লাখনভী রচিত الـنـافـع الـكـبـيـر لـمـن يطـالع الجـامع الصغير এবং উস্তাদে মুহতারাম হযরত মাওলানা তাকী উসমানীর 'উসূলুল ইফতা' মুতালাআ করা যেতে পারে।

تاريخ الفقه -এর বিস্তারিত ও তথ্যনির্ভর কিতাব হল মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আল হাজাবী রচিত الـفـكـر السـامـي فـي تـاريـخ الفقه الاسلامي  কিতাবটি বৃহৎ কলেবরে ২ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।

আর 'আছারুত তাশরীয়ুল ইসলামী আল্লামা খালেদ মাহমুদের কথাতো পূর্বে অনেকবারই বলেছি।

শেয়ার লিংক