আবদুল আলীম - ঢাকা

প্রশ্ন

(ক) প্রশ্ন : আমরা তাফসীরে জালালাইনের হাশিয়া মুতালাআর সময় প্রায়ই দেখি السمين নামক কিতাবের হাওয়ালা দেয়া হয়। এ সামীন কিতাবটির মুসান্নিফ কে এবং কিতাবটি কোন্ স্তরের- আমরা জানি না। আমাদেরকে বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন। ওয়াসসালামু আলাইকুম।

উত্তর

السمين মূলত কিতাবের নাম নয়, বরং মুসান্নিফের নাম। শিহাবুদ্দীন আহমদ ইবনু ইউসুফ আলহালাবী (ওফাত : ৭৫৬ হি.) তিনি  السمين الحلبي নামে মশহুর। তিনি ইলমে নাহ্ব এবং ইলমে কিরাআতের মাহির আলিম ছিলেন। নাহব শাস্ত্রের ইমাম আবু হাইয়ান আন্দালুসী রাহ.-এর শাগরিদ। ‘ইরাবুল কুরআন’ সম্পর্কে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ হল, الدر المصون في علوم الكتاب المكنون । এছাড়াও তিনি তাফসীর, আহকামুল কুরআন এবং ইলমে কেরাআত সম্পর্কে কিতাব লিখেছেন। (দ্রষ্টব্য : আদদুরারুল কামিনাহ ফী আইয়ানিল মিয়াতিছ ছামিনাহ ১/৪০২-৪০৩)  তাফসীরে জালালাইনের প্রসিদ্ধ হাশিয়া ‘হাশিয়াতুল জামাল’ এবং এর খোলাসা ‘হাশিয়াতুস সাবী’-এ আসসামীন আলহালাবী-এর উপরোক্ত কিতাব থেকে ইরাবুল কুরআন সংক্রান্ত বিভিন্ন কথা নকল করা হয়েছে। সুতরাং হাশিয়াতুল জামাল, হাশিয়াতুস সাবী এবং তাফসীরে জালালাইনের হিন্দুস্তানী নুসখার সাথে যে হাশিয়া রয়েছে তাতে السمين দ্বারা উদ্দেশ্য হল তাঁর রচিত-

الدر المصون في علوم الكتاب المكنون

শেয়ার লিংক

ইবনু আব্দিল খালিক - ঢাকা

প্রশ্ন

প্রশ্ন :  فقه اللغة কিতাবটি থেকে ইস্তেফাদা করার পদ্ধতি কী? এবং এ কিতাব থেকে শব্দসমূহ আয়ত্ত করার উপায় কী? আশা করি জানিয়ে উপকৃত করবেন। জাযাকাল্লাহু খাইরান!

উত্তর

‘ফিকহুল লুগাহ’ বলতে আপনি সম্ভবত ইমাম ছা‘লাবী রাহ.-এর  فقه اللغة

وأسرار العربية বুঝিয়েছেন। কিতাবটি প্রধান দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমভাগে ত্রিশটি বিষয়ভিত্তিক অধ্যায় রয়েছে। এতে তিনি আরবী শব্দসম্ভার হতে বিভিন্ন বিষয়ে (الأشباه والنظائر) তথা সমার্থক শব্দ বা কাছাকাছি অর্থ বিশিষ্ট শব্দ একত্রে সংকলন করেছেন। তবে এটি নিছক একটি সমার্থক শব্দকোষ নয়; বরং সাধারণ দৃষ্টিতে ‘মুরাদিফ’ ও ‘মুতাকারিব’ হিসেবে পরিগণিত শব্দসমূহের মধ্যে যে সূক্ষ্ম অর্থগত বা ব্যবহারগত পার্থক্য (الفروق) রয়েছে তাও ইহতেমামের সাথে এতে উল্লেখিত হয়েছে। তদ্রƒপ এতে কোনো বিষয়ের বা কোনো ভাব ও মর্মের যে বিভিন্ন অবস্থা ও বিভিন্ন স্তর ও পর্যায় রয়েছে তা ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রত্যেক অবস্থা ও প্রত্যেক পর্যায়ের জন্য খাস খাস উপযোগী শব্দ নির্দেশ করা হয়েছে। এসব ‘ফিকহুল লুগাহ’-এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আপনি প্রথম পর্যায়ে কিতাবটি আগাগোড়া এক-দু’বার বুঝে বুঝে পড়–ন এবং এর মাকসাদ ও উসলূবের সাথে পরিচিত হোন। দ্বিতীয় পর্যায়ে  পূর্বোক্ত বিষয়াবলির প্রতি লক্ষ্য রেখে বিষয়ভিত্তিক শব্দসম্ভার হিফজ করার চেষ্টা করুন। সবক’টি অধ্যায় হিফজ করতে পারলে ভালো। আর তা সম্ভব না হলে কোনো কোনো অধ্যায় তো পুরোটাই হিফজ করা দরকার, যেমন প্রথম অধ্যায় باب الكليات আর যে অধ্যায় পুরোটা হিফজ করা সম্ভব হবে না, তার নির্বাচিত অংশ হিফজ করুন। তারপর পঠিত ও হিফজকৃত শব্দসমূহ আরবী বলা ও লেখায় অনুশীলন করতে থাকুন। তাছাড়া কিতাবটি যদি দীর্ঘদিন মুতালাআয় রাখা হয়; বুঝে বুঝে বার বার মুতালাআ করা হয় এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে যেমন কোনো আরবী মাযমূন লেখার সময় এর মুরাজাআত করা হয় তাহলেও এটি আরবী ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় খুবই মুফীদ হবে, ইনশাআল্লাহ।

কিতাবের দ্বিতীয় ভাগ হল أسرار العربية সম্পর্কে অর্থাৎ আরবী শব্দ ও বাক্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং বিভিন্ন ধরনের আরবী বাকরীতি সম্পর্কে উসূলী আলোচনা, যার বেশিরভাগই মূলত ইমামুল লুগাহ আহমদ ইবনু ফারিস (ওফাত : ৩৯৫ হি.)-এর  الصاحبي في فقه اللغة العربية ومسائلها وسنن العرب في كلامها থেকে নকল। এই অংশটি আপনি বার বার মুতালাআর মাধ্যমে আত্মস্থ করার চেষ্টা করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাওফীক দান করুন- আমীন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ তানভীর হাসান জাকারিয়া - মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

প্রশ্ন

এ বছর শরহে জামী জামাতে আমরা  نفحة العرب কিতাব পড়ছি। তরজমা তোলা ছাড়া আরবী ইবারত আমরা পড়ে পড়েই বুঝতে পারি। সুতরাং এ কিতাব থেকে আমাদের কী ইস্তে‘দাদ হাসিল করতে হবে? এবং এ কিতাবটি কীভাবে পড়লে উক্ত উদ্দেশ্য হাসিল হবে?

উত্তর

এই কিতাবের উদেশ্য হল, হালকা ও সহজ-সরল আরবী গদ্য অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে আরবী সাহিত্যের সাথে তালিবে ইলমদের সম্পর্ক গড়ে তোলা। সুতরাং এই কিতাবের নিছক তরজমা পড়াই যথেষ্ট নয়; বরং নি¤েœাক্ত বিষয়গুলোর ইহতেমাম করা দরকার।

১. নতুন শব্দাবলীর আভিধানিক ও ব্যবহারিক অর্থ জানা। ফেয়েল হলে তার বাবের পরিচয় এবং ইসম হলে তার মুফরাদ ও জমার পরিচয় এবং এসবের ব্যবহার সম্পর্কে জানা।

২. নতুন আন্দাযের বাক্যসমূহের নাহবী তারকীব করা।

৩. সরফ ও নাহুর উসূল ও কাওয়ায়েদের ইজরা বা প্রায়েগিক অনুশীলন।

৪. নিত্য-নতুন শব্দ ও বাকরীতি মুখস্থ করা এবং তা বিভিন্ন আরবী বাক্যে ব্যবহারের অনুশীলন।

৫. আরবী আদবের যে কোনো কিতাব অধ্যয়নের মাধ্যমে তালিবে ইলমের এই ইস্তে‘দাদ অর্জন করা দরকার যে, কথাবার্তায় সে অনায়াসে আরবী শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করতে পারবে এবং তার আরবী বলার সংকোচ ও জড়তা দূর হবে।

শেয়ার লিংক

আহমাদ যোবায়ের - ঢাকা

প্রশ্ন

সাইয়েদ কুতুব শহীদ রাহ.-এর তাফসীর ‘তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন’-এর ব্যাপারে হযরতের অভিমত কী? সংক্ষিপ্তাকারে হলেও মুহতারামের মূল্যবান মূল্যায়ন জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

এই গ্রন্থটির একটি বৈশিষ্ট্য হল, এর ভাষা ও উপস্থাপনা সমকালীন রুচি ও সাহিত্যগুণসম্পন্ন। কিন্তু সমস্যা হল, এর কিছু উসূলী ও মৌলিক বিষয় এমন রয়েছে, যা আমাদের হিন্দুস্তানের জনৈক লেখক কর্তৃক রচিত ‘তাফহীমুল কুরআনের’ অনুরূপ। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা একান্ত জরুরি। এ গ্রন্থটি সম্পর্কে মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী রাহ.-এর মন্তব্য ও সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা লক্ষ্যণীয়, যা তিনি  يتيمة البيان في شيء من علوم القرآن পুস্তিকায় উল্লেখ করেছেন। এমনিভাবে  তার কিছু ফিকরী শুযূয ও উসূলী আগলাত সম্পর্কে বিশ্বজনীন দাঈয়ে ইসলাম মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রাহ. সতর্ক করেছেন। দ্রষ্টব্য : আসরে হাজের মে দ্বীন কী তাফহীম ও তাশরীহ’ বা এর আরবী অনুবাদ ‘আত-তাফসীরুস সিয়াসী লিল ইসলাম’। এই পুস্তিকাটির বাংলা অনুবাদও হয়েছে। এমনিভাবে তার আরেকটি কিতাব ‘পুরানে চেরাগ’ ৩/২৩-২৮ দ্রষ্টব্য।

এছাড়াও আরবীতে শায়খ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আদ-দরবেশ রচিত  المورد الزلال على أخطاء تفسير الظلال এবং শায়খ রবী ইবনু হাদী আল মাদখালী এর  مطاعن سيد قطب في أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم দেখা যেতে পারে।

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - ঢাকা

প্রশ্ন

আরবী ভাষার কামুসগুলোর মধ্যে কোন্ কামুসের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? কোন্ কামুসের কী বৈশিষ্ট্য, কোন্ নুসখাগুলো ভালো? বিস্তারিতভাবে জানালে উপকৃত হব।র

উত্তর

আরবী ভাষার মৌলিক ও নির্ভরযোগ্য অভিধানসমূহের নাম ও পরিচয় এবং সেসবের মারাতিব জানার জন্য নিম্নোক্ত কিতাবসমূহ দেখতে পারেন।

-১مقدمة تهذيب اللغة، للأزهري مع مقدمة التحقيق لعبد السلام هارون.

-২ مقدمة مقاييس اللغة، لابن فارس مع مقدمة التحقيق لعبد السلام هارون.

-৩ مقدمة لسان العرب، لابن منظور.

-৪ مقدمة تاج العروس، للزبيدي.

-৫ المزهر في علوم اللغة وأنواعها، للسيوطي (النوع الأول: معرفة الصحيح، النوع الرابع والأربعون: معرفة الطبقات والثقات والضعفاء)

-৬ مقدمة النهاية في غريب الحديث، لابن الأثير.

-৭ مقدمة الباحث أحمد عبد الغفور عطار، للصحاح، للجوهري.

-৮ تاريخ الأدب العربي، لأحمد حسن الزيات ص ৩৭৫-৩৭০

আরবী লুগাতের মৌলিক ও প্রামাণ্য উৎসগ্রন্থ কেবল সেগুলোই, যেগুলো মুতাকাদ্দিমীন আইম্মায়ে লুগাহ কর্তৃক রচিত, যা আপনি উপরোক্ত কিতাবসমূহ পড়লে বুঝতে পারবেন। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ের আরবী অভিধান হল সেগুলো, যা পরবর্তী উলামায়ে লুগাহ কর্তৃক রচিত, যেমন  العباب- تكملة العباب- القاموس- لسان العرب এসব কোনো মৌলিক অভিধান নয়; বরং এতে পূর্ববর্তী উৎস-গ্রন্থসমূহকে নতুন আঙ্গিকে একত্রে সংকলন করা হয়েছে কিংবা কোনো কোনোটা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের নতুন তারতীব ও বিন্যাস বা খোলাসা ও সারসংক্ষেপ।

তৃতীয় পর্যায়ের আরবী অভিধান হল আধুনিক যুগে রচিত অভিধানসমূহ। যেমন- محيط المحيط- أقرب الموارد- المنجد- المعجم  الوسيط  ইত্যাদি। আধুনিক অভিধানগুলোর মধ্যে المعجم الوسيط  বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ এটি মিসরের আরবী ভাষা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে সমসাময়িক কয়েকজন আরবী ভাষার বিশেষজ্ঞ আলেম কর্তৃক রচিত এবং এতে কুরআন ও হাদীসের নুসূস থেকে শব্দের ব্যবহার দেখানো হয়েছে।

তবে মনে রাখতে হবে, কোনো আরবী শব্দের কোনো অর্থ প্রমাণের ক্ষেত্রে কেবল মুতাকাদ্দিমীন ‘আইম্মায়ে লুগাহ’-এর বক্তব্য হুজ্জত; পরবর্তী কারো বক্তব্য স্বতন্ত্র কোনো হুজ্জত নয়।

এ বিষয়ে একটি শিক্ষণীয় ঘটনা মনে পড়ছে। হাফেজ ইবনু হাজার রাহ. ‘ফাতহুল বারী’তে এক স্থানে ‘আলকামূসের’ উদ্ধৃতিতে কোনো একটি শব্দের তাহকীক নকল করেন। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহ. ‘উমদাতুল কারী’  (৩/৯১) গ্রন্থে তাঁর সেই তাহকীকের নক্দ করেন এভাবে-

قلت: هذا يحتاج إلى نسبته إلى أحد من أئمة اللغة المعتمد عليهم.

শায়েখ আব্দুল হাই আলকাত্তানী রাহ. ‘ফিহরিসুল ফাহারিস’ গ্রন্থে বদরুদ্দীন আইনীর উক্ত মন্তব্য উল্লেখ করার পর বলেন-

فطبقه على حال من يحتج اليوم بكلام "المنجد " و "أقرب الموارد" كأنه وحي يوحى، مع أن قرب الفيروزآبادي من العيني كقرب هؤلاء منا أو أكثر، فانا لله من ضعف العلم و قلة المتمكنين فيه. انتهى من فهرس الفهارس ৯১০-৯০৯/২

শেয়ার লিংক

শামিম বিন হায়দার আলী - বরিশাল

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

হযরত, আমি কিছুদিন আগে একটি বই হাতে পাই। বইটির নাম ‘শরীয়তের মানদ-ে ওলীগণের হালত’।

প্রকাশনায় : দারুত তাহকীক, জামেয়া ইসলামিয়া  রশিদিয়া হোসাইনাবাদ, (ধুমঘাট) শ্যামনগর, সাতক্ষীরা।

লেখকের নামের সঙ্গে লেখা আছে : মুতাখাসসিস ফিল হাদীস, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া বাংলাদেশ।

বইটির উপরে লেখা আছে, ‘তাসাওউফ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ষোলটি প্রশ্নের শরয়ী  সমাধান।’ আমি খুব কৌতুহলী হয়ে বইটি পড়া শুরু করি। কিন্তু পড়ার পর আমি খুবই মর্মাহত হই। কারণ, এতে বহু আপত্তিকর কথাবার্তা আমার নযরে পড়ে। আমি আশ্চর্য হই, এতে তাসাওউফের মৌলিক কোনো বিষয় অর্থাৎ তাযকিয়া ও ইসলাহে আখলাক সম্পর্কে তেমন কোনো আলোচনা নেই। বরং এতে কিছু প্রশ্নের আজগুবি জবাব দেয়া হয়েছে। এসব দেখে আমার মনে সংশয় জাগে, আসলে কি এ বইটি মারকাযুদ দাওয়াহর কোনো মুতাখাসসিস-এর লেখা?! বইটি সম্পর্কে কি আপনারা অবহিত? বইটির একটি কপি আপনার কাছে পাঠালাম। আশা করি বইটি দেখে এর সম্পর্কে ও এর লেখক সম্পর্কে আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। যাতে বইটি পড়ে কারো মধ্যে ভুল ধারণা বা ভুল আকীদা সৃষ্টি না হয়। আল্লাহ সবাইকে হেফাযত করুন।

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। বইটি ইতিপূর্বে দেখার সুযোগ হয়নি। এই প্রথম দেখছি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! আসলেই বইটি খুবই বিভ্রান্তিকর। এতে শুধু বিদআতীদের জন্যই নয়; বরং কাদিয়ানীদের জন্যও নিজ নিজ বাতিল মতবাদের তরফদারির বিভিন্ন উপাদান জমা করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তিকর ও আপত্তিকর বিষয় রয়েছে, যেমন :

তাহরীফ অর্থাৎ এক জায়গার কথা অন্য জায়গায় ব্যবহার করা, ‘কথা সত্য মতলব খারাপ’-এর বিভিন্ন নমুনা, শায ও মুনকার কথাবার্তা এবং পূর্ববর্তী কতক আলেমের বর্জনীয় যাল্লাত ও তাসামূহাতের অনুসরণ। আল্লাহ তাআলা বইটির লেখককে খালেস অন্তরে তওবা করার তাওফীক দান করুন এবং এসব কিছু থেকে নিজের বারাআত ও সম্পর্কহীনতা ঘোষণার তাওফীক দান করুন- আমীন।

‘মুতাখাসসিস’ শব্দটি থেকেই আপনি অনুমান করতে পারেন, মারকাযুদ দাওয়াহ-এর সাথে লেখক বেচারার সম্পর্ক  কোন্ প্রকারের। মারকাযুদ দাওয়াহ্য় কেউ দাখেল হলে চেষ্টা করা হয়, সে যেন কমপক্ষে ইলমের বিস্তৃতি ও গভীরতা অনুধাবনের চেষ্টা করে। এবং এর মধ্য দিয়ে নিজের ক্ষুদ্রতার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে। সে যেন কোনো শব্দ বা উপাধি অনুচিত স্থানে ব্যবহার না করে। এবং অতি ব্যবহৃত শব্দ ও উপাধিসমূহের নির্বিচার ব্যবহারের মাধ্যমে সেগুলোকে আরো বেশি গতানুগতিক ও গুরুত্বহীন বানানো থেকে বিরত থাকে।

পুরাতন কাগজপত্রে তার পরীক্ষার ফলাফল দেখা হয়েছে। সে সময় উলূমিল হাদীস বিভাগের লাযেমী নেসাব ছিল দু’বছরের। প্রথম বর্ষের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলে শুধু ‘আলমাদখাল ইলা উলূমিল হাদীসিশ শারীফ’ কিতাবের নাম্বার পাওয়া গেল। এটি একটি প্রাথমিক কিতাব, এতে তার প্রাপ্ত নাম্বার মাত্র ৪৯  (মোট নাম্বার ১০০), বাকি বিষয়গুলোতে তার কোনো নাম্বার নেই। নোটে লেখা আছে, অসুস্থ।

দ্বিতীয় ফাতরার (সেমিস্টারের) পরীক্ষার ফলাফলের অবস্থা হল, ‘মুকাদ্দিমাতু ইবনিস সালাহ’ কিতাবের পরীক্ষায় ‘রাসিব’ (ফেল)। তৃতীয় ফাতরার (সেমিস্টারের) পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণই করেনি। নোটে লেখা আছে, সে অসুস্থ। আর দ্বিতীয় বর্ষের কোনো ফাতরার  (সেমিস্টারের) পরীক্ষায়ই তার নাম উল্লেখ নেই!! প্রথম ফাতরার পর থেকে মারকাযে অবস্থানের সুযোগ পাওয়া মূলত তার ওজর ও অনুরোধের বিবেচনায় হয়েছিল। কিন্তু এর কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তো যেখানে বিভাগের সাধারণ কারিকুলাম পূর্ণ করার কাছে ধারেও যে পৌঁছাতে পারেনি সে তাখাসসুসের দাবি করে কীভাবে? তাখাসসুস তো কারিকুলাম পুরা করার চেয়েও অনেক দীর্ঘ ও গভীর বিষয়। আর এখানে তো দাবি শুধু ‘তাখাসসুসের’ নয়; বরং ‘মুতাখাসসিস’ শব্দের নিঃসঙ্কোচ ব্যবহার।

উলূমুল হাদীস বিভাগের যিম্মাদারি এই অধমকে সোপর্দ করা হয়েছে। সম্ভবত এই দুঃখজনক অবস্থা আমারই আমলের মন্দ পরিণতি। আল্লাহ তাআলা এই অধমকে মাফ করুন এবং তার অনিষ্ট থেকে সকল ব্যক্তিকে ও সকল বস্তুকে হেফাযত করুন- আমীন।

উক্ত বইটিতে উদ্ভট ও আপত্তিকর কথাবার্তা এবং তাহরীফ ও বিকৃতির তো কোনো শেষ নেই। তবে বইটির ১০৫ নং পৃষ্ঠায় এই জঘন্য কুফুরী কথারও উল্লেখ রয়েছে যে, বান্দা কখনো নাকি এমন হালতে পৌঁছে যায়, যখন সে শরয়ী বিধি-বিধানের ঊর্ধ্বে উঠে যায়। নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক।

 

বইটির ৬নং পৃষ্ঠায় এক বুযুর্গের ‘তাকরীয’ও ছাপা হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক ও কষ্টদায়ক। তবে স্পষ্ট যে, ঐ বুযুর্গের সরলতার সুযোগ নিয়েই হয়তো তার থেকে তাকরীয নেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এই বইয়ের অনিষ্ট থেকে মানুষকে হেফাযত করুন। বইয়ের লেখককে তাওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসার তাওফীক দান করুন। যে ব্যক্তির তরফদারির জন্য এই বেচারা নিজের দু চার হরফ লাফযী ইলমকে বরবাদ করেছে সেই ব্যক্তি যদি এই বইয়ের কথাবার্তার সাথে একমত হন তবে শুধু এটাই তারও গোমরাহ হওয়ার দলীল। আল্লাহ তাআলা তাকেও হেদায়েত নসীব করুন- আমীন।

শেয়ার লিংক