(ক) উসূলে বযদবী এবং উসূলে সারাখসীর সবচে’ ভাল তা’লীক ও তাহকীক কোনটি এবং তা কোন লাইব্রেরীর?
(খ) কিছু আমল জানতে চাই যার মাধ্যমে মেধা বাড়বে।
(গ) সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ -এ সীরাত গ্রন্থটি কোন মানের? সবচেয়ে ভাল সংস্করণ কোনটি (তা’লীক ও তাহকীকসহ) জানিয়ে বাধিত করবেন।
(ক) ইমাম আবু বকর আস-সারাখসী রাহ. (৪৯০ হি.) রচিত ‘উসূলুস সারাখসী’-এর যে নুসখাটি শায়খ আবুল ওফা আফগানী রাহ.-এর তাহকীকসহ লাজনাতু ইহইয়ায়িল মায়ারিফিন নু’মানিয়্যাহ থেকে প্রকাশিত হয়েছে তা একটি ভালো নুসখা। আর ইমাম ফখরুল ইসলাম বযদবী রাহ. (মৃত্যু ৪৮২ হি.) রচিত উসূলে ফিকহের কিতাব যা উসূলুল বাযদাবী নামে পরিচিত-এর একটি নুসখা মীর মুহাম্মাদ কুতুবখানা করাচী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এই নুসখাটির হাশিয়ায় ছাপা হয়েছে হাফেয কাসেম ইবনে কুতলুবুগা হানাফী (৮৭৯ হি.) রাহ. কৃত কিতাবে উল্লেখিত হাদীস ও আছারের তাখরীজ এবং এর শেষে রয়েছে মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নুমানী রাহ. লিখিত ইমাম বযদবী রাহ.-এর জীবনী। এই কিতাব দুটির নতুন আরো ভালো ও মুহাক্কাক কোনো নুসখা ছেপেছে কি না তা আমার জানা নেই।
আলাউদ্দিন আবদুল আযীয বুখারী (মৃত্যু ৭৩০ হি.) ‘কাশফুল আসরার’ নামে উসূলুল বাযদাবীর যে শরাহ লিখেছেন তা এই কিতাবের একটি উত্তম শরাহ। এতে তিনি ইমাম সারাখসীসহ উসূলে ফিকহের অন্যান্য অনেক মুসান্নিফের রায় ও ইবারত নকল করে শরাহ করে থাকেন। আর আমীরে কাতেব আল ইতকানী (৭৫৮ হি.) রাহ. রচিত ‘আশ শামিল’ শারহু উসূলিল বাযদাবী তো একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থ। কিন্তু তা এখনো অমুদ্রিত পাণ্ডুলিপি বা মাখতুতা আকারে রয়েছে।
(খ) এ বিষয়ে ইমাম বুখারী রাহ.-এর উক্তি বিশেষভাবে স্মরণীয়। মুহাম্মাদ ইবনু আবী হাতেম আল অররাক (যিনি ইমাম বুখারী রাহ.-এর শাগরিদ ও লিপিকার) বলেন, আমি শুনতে পেলাম যে, আবু আব্দিল্লাহ বুখারী নাকি হিফয ও স্মরণশক্তি বর্ধক কোনো দাওয়াই পান করেছেন। তাই আমি তাঁকে একামেত্ম জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, হিফয ও স্মরণশক্তির পক্ষে ফলদায়ক কোনো দাওয়াই আছে কি না? তিনি তখন উত্তরে বলেছিলেন, لا أعلم شيئا أنفع للحفظ من نهمة الرجل ومداومة النظر অর্থাৎ অদম্য স্পৃহা এবং অবিরাম অধ্যয়নের তুলনায় হিফয ও স্মরণশক্তির জন্য অধিক ফলদায়ক আর কোনো কিছু আছে বলে আমার জানা নেই।
মনে রাখতে হবে, ওহীর ইলম (কুরআন ও হাদীস) পড়ে নেওয়া যদিও মানুষের সাধ্যের অধীন কিন্তু ‘তাফাক্কুহ ফিদ্দীন’-এর নেয়ামত লাভ করা নির্ভর করে আল্লাহ তাআলার দানের উপর। এ বিষয়টি পরিষ্কার বুঝে আসে নিমেণাক্ত হাদীস থেকে-
من يرد الله به خيرا يفقهه في الدين، وإنما أنا قاسم والله يعطي -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭১। এজন্য এই নেআমত অর্জন করতে হলে সেই পথই অবলম্বন করতে হবে যে পথে আল্লাহ তাআলা তা দান করেন। আর তা হল, আহলে ফন ও আহলে দিলের সান্নিধ্য। যথাযথ মেহনত ও মুজাহাদা এবং তাকওয়া ও তাহারাত।
(গ) মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনু ইউসূফ আস সালেহী আশ শামী (মৃত্যু ৯৪২) রচিত ‘সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ’ বৃহৎকলেবরের একটি সুসংহত সীরাত গ্রন্থ যা অন্যান্য সীরাত গ্রন্থের তুলনায় নির্ভরযোগ্য। তবে কোনো কিতাব নির্ভরযোগ্য হওয়ার অর্থ এই নয় যে, এ কিতাবে উল্লেখিত প্রত্যেক কথাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য; বরং অর্থ এই যে, সার্বিক বিবেচনায় কিতাবটি নির্ভরযোগ্য। এজন্য আকাইদ ও আহকামের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন কোনো বিষয় সেখানে আসলে বা কোনো রেওয়ায়েত কিংবা যে কোনো বিষয় সম্পর্কে সংশয় হলে অত্যন্তসতর্কতার সঙ্গে তাহকীক করা জরুরি। দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বায়রুত থেকে ১৪১৪ হিজরী সনে এর একটি সংস্করণ তাহকীক ও তালীকসহ বেরিয়েছে। এছাড়া অন্য কোনো নুসখার কথা আমার জানা নেই।