আখতার কামাল - চট্টগ্রাম

প্রশ্ন

 

قال ابن عابدين في مقدمة رد المحتار (ص   : ৭০) [دار الكتب العلمية] ...ضما إلى ذلك ما حرره العلامة الحلبي والعلامة الطحاوي وغيرهما من محشي هذا الكتاب  ...

وفي الصفحة : ৭১ ... ثم قرأته عليه ثانيا مع حاشيته للشيخ إبراهيم الحلبي ...

আমরা সাধারণত ইবরাহীম হালাবী বলতে الحلبي الكبيريÑএর মুসান্নিফ ইবরাহীম হালাবীকে বুঝি। যার ওফাত ৯৫৬ হিজরীতে। আর আল্লামা শামী রাহ.-এর ওফাত ১২৫২ হিজরী সনে। সুতরাং ইবারতে উল্লেখিত ইবরাহীম হালাবী প্রসিদ্ধ ইবরাহীম হালাবী না হওয়াটাই স্বাভাবিক।

হুযুরের কাছে বিনীত আরয, আল্লামা শামী রাহ.-এর উল্লিখিত এই ইবরাহীম হালাবী কে? এবং এখানে উল্লিখিত তার হাশিয়াটির নাম কী?

(খ) আর একই ইবারতের পরবর্তী ব্যক্তি লেখা হয়েছে العلامة الطحاوي আমরা সাধারণত الطحاوي বলতে ফুকাহায়ে হানাফিয়্যার প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম ত্বহাবীকে বুঝি। যার ওফাত ৩০৩ হিজরী সনে। সুতরাং এখানে যে প্রসিদ্ধ الطحاوي হবে না, এটা বলাই বাহুল্য।

হুযুরের কাছে আরয, এখানে উল্লেখিত العلامة الطحاوي বলতে কাকে বুঝানো হয়েছে? নাকি বিষয়টা এমন যে, এখানে আল্লামা শামী রাহ.-এর উস্তায আল্লামা أحمد بن أحمد الطحطاوي المتوفى ১২৩১ هـ  উদ্দেশ্য; যা মুদ্রণজনিত  ভুল। হুযুরের কাছে তার সমাধান পেশ করার বিনীত দরখাস্ত করছি।

(গ) ফাতাওয়া শামীতে كذا في الحلية দ্বারা কোন কিতাব উদ্দেশ্য?

 السعاية لعبد الحي اللكنوي المتوفى ১৩০৪ [سهيل اكيدمي لاهور ]

-এর ১ম খÐ ১৮৯ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে وفي حلية المحلي شرح منية المصلى এখানে শামীতে الحلية দ্বারা হাশিয়াতে উল্লেখিত কিতাবটি উদ্দেশ্য কি না? আর কিতাবটির সঠিক উচ্চারণ হুলয়া...কি না?

কাশফুয যুনূনে আছে (আমাদের মাকতাবায় সংরক্ষিত কাশফুয যুনূনটি হল, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা [১৪১৩/১৯৯২] প্রকাশিত)।

وأما شرح الإمام الشهير بابن أمير الحاج محمد بن محمد بن أحمد [محمد] الحنفي المتوفى سنة تسع وسبعين وثمان مائة أكبر حجما، رسم حرف الميم بالمشروح وحرف الشين بالشرح، وسماه حلبة المجلي وبغية المهتدي في شرح منية المصلي...

এখানে حلبة المجلي উল্লেখ আছে। আসলে এর সঠিক উচ্চারণ কী? হুযুরের কাছে তার সমাধান কামনা করছি।

(ঘ) আল্লামা শামী রাহ. ফাতাওয়া শামীতে বিভিন্ন জায়গায় খুব গুরুত্বের সাথে একজন ব্যক্তির নাম নেন। যেমন,  في رد المحتار (১/৫৩৭) [دار الكتب العلمية] وقد ذكر سيدي عبد الغني كلاما حسنا হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি তিনি কে? এবং তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি উল্লেখ করার দরখাস্ত করছি।

(ঙ)منية المصلي للكاشغري المتوفى ৭০৫ هـ -এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ

 الحلبي الكبيري لإبراهيم الحلبي المتوفى ৯৫২هـ 

আমাদের মাকতাবায় সংরক্ষিত একটি নুসখায় তার নাম লেখা আছে غنية المستمليআমাদের একজন হুযুর বলেছেন এটি ভুল। শুদ্ধ হল غنية المتملي পরে আমি كشف الظنون-এ দেখি মূল মতনে غنية المتملي লেখা আছে। তার নিচে المتملي শব্দটির হাশিয়া টেনে লেখা হয়েছে [ : المستملي -৩. ৯৯৮-৬ غلط] কাশফুয যুনূনের এই সাংকেতিক চিহ্নের মর্ম কী? হুযুরের কাছে তার সমাধান পেশ করার বিনীত দরখাস্ত করছি।

আল্লাহ তাআলা হুযুরকে সর্বোত্তম জাযা দান করেন। দীর্ঘ হায়াতে তায়্যিবা দান করেন।


 

উত্তর

 

(ক) রদ্দুল মুহতার কিতাবের উপরোক্ত ইবারতে ইবরাহিম ইবনু মুহাম্মাদ আল হালাবী (মৃত্যু ৯৫৬ হি.) উদ্দেশ্য নন। বরং ইনি হলেন ইবরাহিম ইবনু মুস্তফা আলহালাবী,যিনি শাহ ওয়ালী উল্লাহ রাহ. (মৃত্যু ১১৭৬ হি.)-এর সমসাময়িক। ওফাত ১১৯০ হিজরী সনে। আদ্দুররুল মুখতার কিতাবের উপর তাঁর একটি হাশিয়া রয়েছে। হাশিয়াটির নাম تحفة الأخيار على الدر المختار  । এই হাশিয়াটির একাধিক পাণ্ডুলিপি বিভিন্ন লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত রয়েছে। সম্ভবত এটিই আদ্দুররুল মুখতার কিতাবের প্রথম হাশিয়া। এছাড়া আরবী আদবের উপর তার রচিত একাধিক কিতাব রয়েছে।

তিনি ইবনু আবিদীন রাহ.-এর দাদা উস্তাযদের একজন। ইবনু আবিদীন-এর খাস উস্তায মুহাম্মাদ শাকের আলআক্কাদ রাহ. (মৃত্যু ১২২২ হি) এই ইবরাহীম হালাবী থেকে পত্র মারফতে ইজাযত লাভ করেছেন। শায়খ আব্দুল গনী নাবুলুসী রাহ. (মৃত্যু ১১৪৩ হি.) ছিলেন এই ইবরাহীম হালাবীর তাসাওউফের শায়খ। তিনি শায়খ আবু তাহির আল কুরানী এবং শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু সালেম আল মক্কীসহ আরো অনেকের থেকে হাদীস ও ফিকহের দরস গ্রহণ করেছেন। তাঁর জন্মস্থান শামের হলব’ হলেও পরবর্তীতে তুরস্কের কুস্তুনতুনিয়ায় অবস্থান করেছেন এবং সেখানে বিভিন্ন ইলম ও ফনের দরস দিয়েছেন। সেখানে তিনি আয়াসুফিয়া-এর জামে মসজিদে মাশইখাতুল হাদীস পদে অধিষ্ঠিত হন এবং হাদীসের দরস প্রদান করেন। তাঁর জীবনী সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনসিলকুতদদুরার,মুহাম্মাদ খলীল মুরাদী ১/৪৬-৪৮উকুদুল লাআলি ফিল আসানিদিল আওয়ালীইবনু আবিদীন শামী পৃ. ১৪৭-১৫১ইযাহুল মাকনূন ১/২৪০আল আলামযিরিকলী ১/৭৪

(খ) আপনার ধারণাই ঠিক। উক্ত ইবারতে তাহাবী’ শব্দটি নুসখার মুদ্রণজনিত ভুল। মূলত হবে, ‘আত-তাহতাবী’ অর্থাৎ আহমদ ইবনু আহমদ আত তাহতাবী রাহ. (মৃত্যু ১২৩১ হি.) যিনি আদ্দুররুল মুখতার কিতাবের উপরে হাশিয়া লিখেছেন।

(গ) কিতাবটির সঠিক নাম তাই যা কাশফুয যুনূন কিতাবের উদ্ধৃতিতে আপনি উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ حَلْبَةُ المُجَلّي وبغية المهتدي في شرح منية المصلي وغنية المبتدي । এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য দেখতে পারেন শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.-এর হাশিয়াযা তিনি আব্দুল হাই লখনবী রাহ.-এর কিতাব আলআজইবাতুল ফাদিলাহ লিল আসইলাতিল আশারাতিল কামিলা-এর উপর লিখেছেন। দ্রষ্টব্য : পৃ. ১৯৭-২০১

(ঘ) তিনি হলেন শায়খ আব্দুল গনী ইবনু ইসমাঈল আন নাবুলুসী আদদিমাশকী। তিনি দ্বাদশ শতকে শামের বিখ্যাত আলেমসূফীআদীব এবং মুসান্নিফ। ১০৫০ হিজরী সনে জন্ম এবং ১১৪৩ হিজরী সনে ওফাত। বিভিন্ন বিষয়ে ছোট-বড় প্রায় দুই শতাধিক কিতাব ও রিসালা তাসনিফ করেছেন।

 ذخائر المواريث في الدلالة على مواضع الأحاديث - الحديقة الندية شرح الطريقة المحمدية- ربع الإفادات في ربع العبادات -    تعطير الأنام في تعبير المنام

ইত্যাদি তাঁর প্রসিদ্ধ তাসনীফ।

তিনি ইবনু আবিদীন শামী রাহ.-এর দাদা উস্তাযদের উস্তায। যেমন ইবরাহীম ইবনু মুস্তফা হালাবী এবং মুহাম্মাদ ইবনু সালেম নাবুলুসী তাঁর শাগরিদ। আর এরা উভয়ই ইবনু আবিদীন রাহ.-এর দাদা উস্তায। তবে ইবনু আবেদীন রাহ. শায়খ আব্দুল গনী নাবুলুসী রাহ.-এর দুই নাতী শায়খ ইবরাহীম ও তার সহোদর ভাই শায়খ আব্দুল কাদের নাবুলুসী থেকে ইজাযত লাভ করেছেন। এ হিসাবে আব্দুল গনী নাবুলুসী রাহ. ইবনু আবিদীন রাহ.-এর দাদা উস্তাযগণের অন্তর্ভুক্ত। আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখতে পারেন সিলকুদ দুরারমুহাম্মাদ খলীল মুরাদী ৩/৩৬-৪৪তারীখু আজায়িবুল আছারআল জাবারতী ১/১৬৫ফিহরিসুল ফাহারিসআব্দুল হাই কাত্তানী ২/৭৫৬-৭৫৮তরবুল আমাছিলআব্দুল হাঈ লাখনবী পৃ . ২৮৪ আলআলামযিরিকলী ৪/৩২-৩৩উকদুল লায়ালী মাআ যায়লিহিইবনু আবিদীন পৃ. ১৪৭১৭২৫৬২

(ঙ) আপনার উস্তাযের কথাই ঠিক কিতাবটির সহীহ নাম غنية المتملي । আর غنية المستملي হল তাহরীফ ও ভুল। আপনি কাশফুয যুনূন কিতাবের যে নুসখাটিতে غنية المتملي লেখা দেখেছেন সেটি মূলত কুল্লিয়াতু ইস্তাম্বুলের শিক্ষক মুহাম্মাদ শরফুদ্দীনের তাহকীককৃত নুসখা। যা তিনি কিতাবের মুসান্নিফ হাজী খলীফা রাহ.-এর স্বহস্তে লিখিত পাণ্ডুলিপির সাথে মোকাবেলা করে ছেপেছেন। আর এই নুসখাটির হাশিয়ায় যে কথাটি বলা হয়েছে [ঋ : المستملي ৩. ৯৯৮-৬]- এর অর্থ হলজার্মানীর প্রাচ্যবিদ গোস্টাভ ফ্লুগেল (এটঝঞঅঠটঝ ঋখটএঊখ) কর্তৃক ১৮৩৫-১৮৫৮ সালে কাশফুয যুনূন’ ল্যাটিন অনুবাদসহ জার্মানির লিপজিক শহর থেকে ছাপা হয়েছিল। মুদ্রিত এই নুসখাটির ৩নং খণ্ডের ৯৯৮ নং পৃষ্ঠার    ৬নং লাইনে المتملي  স্থলে ছাপার অক্ষরে المستملي লেখা হয়েছে। যা ভুল ও তাহরীফ। এই নুসখাটির বিবরণ তো শায়খ মুহাম্মাদ শরফুদ্দীনের তাহকীককৃত নুসখাটির মুকাদ্দিমাতুত তাহকীকে উল্লেখ রয়েছে। 

 

শেয়ার লিংক