প্রশ্নের সারকথা এই যে, মন খুব বিক্ষিপ্ত থাকে। পড়াশোনায় মন বসে না। মনোযোগিতার অভাব। গল্প-গুজব করতে খুব ভালো লাগে। কোনো কিছু মুখস্থ করা খুব কঠিন হয় এবং কিছু মুখস্থ করা হলেও মনে থাকে না।
প্রশ্নের সারকথা এই যে, মন খুব বিক্ষিপ্ত থাকে। পড়াশোনায় মন বসে না। মনোযোগিতার অভাব। গল্প-গুজব করতে খুব ভালো লাগে। কোনো কিছু মুখস্থ করা খুব কঠিন হয় এবং কিছু মুখস্থ করা হলেও মনে থাকে না।
মেরে দোসত! দুনিয়াতে কোনো কাজ হিম্মত ছাড়া হয় না। শুধু আকাঙ্খা ও দুআর দ্বারাই যদি সকল কাজ হয়ে যেত তাহলে আল্লাহ দুনিয়াকে ‘দারুল আসবাব’ বানাতেন না আর আমাদেরকেও শরীয়তের অনুগত থাকার বিধান দিতেন না। এজন্য খালেস দিলে তওবা করে হিম্মত করুন এবং কিছু কিছু মুজাহাদা আরম্ভ করুন। আর আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা রাস্তা খুলে দিবেন।
চিন্তা-ভাবনা বিক্ষিপ্ত থাকার যে কারণ আপনি উল্লেখ করেছেন তার জন্য রূহানী ও জিসমানী দুই ধরনের চিকিৎসকেরই শরণাপন্ন হওয়া কর্তব্য। রূহানী চিকিৎসক-এর অর্থ হল মুসলিহ ও শায়খে কামেল। খুব দ্রুত আপনি কোনো শায়খে কামেলের সঙ্গে ইসলাহী সম্পর্ক কায়েম করুন। পাশাপাশি কোনো অভিজ্ঞ ও দরদী চিকিৎসককে আপনার অবস্থা জানিয়ে ওষুধপত্র ব্যবহার করুন। এটা শুধু রূহানী রোগের বিষয় নয় শারীরিক অসুবিধাও এখানে রয়েছে, যা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময়যোগ্য। (রূহানী ও জিসমানী উভয় ধরনের) চিকিৎসক রোগীর জন্য আমানতদার হয়ে থাকেন। রোগীর সমস্যা তারা অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন না এবং রোগীকেও তুচ্ছজ্ঞান করেন না। এজন্য শায়খ ও ডাক্তারকে নিজের অবস্থা জানাতে কোনোরূপ দ্বিধা করা উচিত নয়।
পড়াশুনায় মন দিলেই মন বসবে। এটা কখনো ভাববেন না যে, ‘মন বসা’ ইচ্ছাধীন নয়। এটা সম্পূর্ণ মানুষের ইচ্ছা ও সামর্থ্যের ভিতরের বিষয়। কেউ হিম্মত করলেই আল্লাহ তাআলা তাকে তাওফীক দান করেন।
গল্প-গুজবের ব্যাপারে দু’টো বিষয় মনে রাখবেন। প্রথম বিষয়টি এই যে, যবানের ভুল ব্যবহার বা অহেতুক ব্যবহার মানুষের দ্বীন ও দুনিয়া দু’টোই বরবাদ করে দেয়। এজন্য একে নিয়ন্ত্রন করা অত্যন্ত জরুরি। একটি প্রসিদ্ধ উক্তি রয়েছে- ‘জিরমুহু ছগীর ওয়া জুরমুহু কাবীর’। কথাটা মনে রাখুন। দ্বিতীয় কথা এই যে, গল্প-গুজব তো একাকী কখনো হয় না। অবশ্যই দ্বিতীয় কারো সঙ্গে আপনি গল্প-গুজবে মগ্ন হচ্ছেন। এতে অন্যের যে সময় আপনি নষ্ট করছেন, যদিও তার সন্তুষ্টিক্রমেই হোক না কেন, নিঃসন্দেহে তা কবীরা গুনাহ। আর যদি অন্যদের অসুবিধা হয়ে থাকে তবে তো এটা তৃতীয় কবীরা গুনাহ। ভাই! নিজের ওপর দয়া করুন!
পড়া ভুলে যাওয়ার অভিযোগও আপনি করেছেন। উপরোক্ত তিনটি বিষয়ে আমল করতে থাকলে ইনশাআল্লাহ এই অভিযোগও দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাযত করুন এবং প্রতি পদক্ষেপে আমাদেরকে সাহায্য করুন। আমীন।শেয়ার লিংক
হযরত, একটি বিষয় ব্যক্তিগতভাবে জানার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু হয়তো আমার মতো অনেকের মনেই প্রশ্নটি রয়েছে তাই পত্রিকায় পাঠালাম। প্রশ্নটি হচ্ছে : বর্তমান সময়ের চাহিদানুযায়ী ইংরেজি ও ফার্সী ভাষার মধ্যে কোনটির গুরুত্ব বেশি? এবং শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকেও বর্তমানে দ্বীনের তাকাযানুসারে কোনটা কতটুকু গুরুত্ব রাখে? বুঝিয়ে লেখলে কৃতজ্ঞ হব।
এ বিষয়ে কিছু গোড়া লোক সমাজে রয়েছেন। তারা এ উক্তি করেন যে, ইংরেজি যারা শিখে এরা হচ্ছে দুনিয়ালোভী আর ফার্সি যে জানে না সে ‘হিজড়া’ আলেম। ... আশা করি আপনার কাছে এর সঠিক সমাধান পাব।
দাওয়াতী এবং তাহকীকী কাজের জন্য আলেমদের মধ্যে দুই ভাষারই মাহির থাকা দরকার। কিছু এই ভাষার মাহির আর কিছু ওই ভাষার। এখন কাদেরকে এই কাজের জন্য নির্বাচন করা হবে এবং কাকে কোন ভাষা শেখার জন্য লাগানো হবে তা ফয়সালা হয়তো উলামায়ে কেরামের ‘আহলুল হাললি ওয়াল আকদ’ করবেন কিংবা তা’লীমী মুরববী। এ বিষয়ে তালিবে ইলমের স্বাধীন হওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। কেননা, অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে তারা না পরিণামদর্শী হয়ে থাকে, না দূরদর্শী। আর না সকল অবস্থা সামনে রেখে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার যোগ্যতা তাদের মধ্যে থাকে।
এরপর আরো দু’টি কথা মনে রাখুন। প্রথম কথা এই যে, সময়ের পূর্বে নিজেকে কোনো মত পোষণ করা বা মতপ্রকাশ করার যোগ্য কখনও মনে করবেন না। বিশেষত নিসাব-নিযামের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে মতামত দেওয়া তো খুবই অসমীচীন। নিজ গন্ডির বাইরের বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের জন্য ছেড়ে দিন। বলাবাহুল্য যে, এই নীতি من حسن إسلام المرء تركه ما لا يعنيه এর অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয় কথা এই যে, আবেগনির্ভর কথাবার্তার সুন্দর জওয়াব হল নিশ্চুপ থাকা। উল্টা এমন আবেগী কথাবার্তা বলা, যা ছাপারও অযোগ্য, মোটেই উচিত নয়। আসাতিযায়ে কেরামের নিকট থেকে ইলমের সঙ্গে সঙ্গে ‘হিলম’ ও ‘আকল’ও অর্জন করা উচিত।শেয়ার লিংক
নিচের বিষয়গুলো আপনার কাছে জানতে চাই।
ক) ফিকহে হানাফীর আলমাবসূত গ্রন্থে যেমন সমস্ত প্রসিদ্ধ মাসাইল কুরআন ও সুন্নাহর দলীলসহ উল্লেখ আছে তেমনি বাকি তিন মাযহাব ও গায়রে মুকাল্লিদের অনুরূপ একটি করে কিতাবের নাম।
খ) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ‘আকীদাতুত তহাবী’ ব্যতীত আক্বীদা সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য ও বিস্তৃত কিতাবের নাম।
গ) চার মাযহাবের ফিকহী উসূল কি ভিন্ন? ভিন্ন হলে একটি বা দু’টি করে নির্ভরযোগ্য উসূলের কিতাবের নাম।
ঘ) রিজাল শাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জনের জন্য পরামর্শ ও এ বিষয়ক প্রয়োজনীয় কিতাবের নাম।
ঙ) উসূলে হাদীসের কিছু কিতাবের নাম।
ক. ফিকহে মালেকীতে এ ধরনের কিতাব ইবনে আবদুল বার রাহ. (৪৬৩ হি.) -এর‘আলইসতিযকার শরহুল মুয়াত্তা’, ফিকহে শাফেয়ীতে নববী রাহ. (৭৭৬ হি.) -এর ‘আলমাজমু শরহুল মুহাযযাব’, ফিকহে হাম্বলীতে ‘আলমুগনী’ ইত্যাদি। ফিকহে হানাফীতে সারাখসী রাহ.-এর‘আলমাবসূত’-এর চেয়ে তার পূর্বের তহাবী, জাসসাস, কুদূরী প্রমুখের লিখিত গ্রন্থগুলো অধিক গভীরতা ও মৌলিকত্বের অধিকারী।
গায়রে মুকাল্লিদদের কোনো আলাদা ‘ফিকহ’ নেই, যদি আপনি তাদেরকে জাহেরী মাযহাবের সমকালীন অনুসারী বলে গণ্য করেন তাহলে ইবনে হাযম জাহেরীর ‘আলমুহাল্লা বিল আছার’-এর কথা বলা যায়।
মিসরের সাইয়্যেদ সাবেক রাহ. ‘ফিকহুল কিতাবি ওয়াসসুন্নাহ’ নামে একটি কিতাব লিখেছেন, যা গায়রে মুকাল্লিদদের মধ্যে খুব প্রচলিত। প্রজ্ঞাবান আলেমদের জন্য এ কিতাবটি অধ্যয়নযোগ্য। তবে এ কিতাবটির প্রকৃত নাম হওয়া উচিত ‘ফিকহুস সাইয়্যেদ সাবেক ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ।’ গায়রে মুকাল্লিদদের অন্যতম অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. সাইয়্যেদ সাবেক সাহেবের এই কিতাবের উপর ‘তামামুল মিন্নাহ ফিত তা‘লীকি আলা ফিকহিস সুন্নাহ’ নামে খন্ডন লিখেছেন। অধ্যয়নের সময় এ কিতাবটিও পাশে থাকা জরুরি।
খ. এ বিষয়ে আবু বকর বাকেল্লানী (৪০৩ হি.)-এর কিতাব ‘আনইনসাফ’, সদরুল ইসলাম বাযদভী (৪৯৩ হি.)-এর ‘উসূলুদ্দীন’, মুহাম্মদ ইবনে মায়মূন মাকহুলী -এর ‘তাবসিরাতুল আদিল্লা’, গাযালী রাহ.-এর ‘কাওয়াইদুল আকাইদ’, ইবনুল হুমাম রাহ. (৮৬১ হি.)-এর ‘আলমুসায়ারাহ’ ও তার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আলমুসামারাহ’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নতুন কিতাবসমূহের মধ্যে ড. মুস্তফা আলখান এর ‘আল আকীদাতুল ইসলামিয়া’ ও শায়েখ জামালুদ্দিন কাসেমীর দালায়েলুত তাওহীদের কথাও বলা যায়।
গ. এ বিষয়ে আবু বকর জাসসাস আলহানাফী (৩৭০ হি.)-এর ‘আলফুসূল ফিলউসূল’, কাযী আবুল ওয়ালিদ বাজী আলমালেকী এর ‘আলইহকাম’। আবুল মুজাফফর সামআনী আশশাফেয়ী রাহ.-এর‘কাওয়াতিউল আদিল্লা, বদরুদ্দীন যরকাশী আশশাফেয়ী রাহ.-এর ‘আলবাহরুল মুহীত ফী উসূলিল ফিকহ’, সুলায়মান ইবনে আবদুল কাভী আততুফী আলহাম্বলী-এর ‘শরহু মুখতাসারি রওযাতিত তালেবীন’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ড. আবদুল করীম আননামলাহ-এর কিতাব ‘আলমুহাযযাব ফী ইলমি উসূলিল ফিকহিল মুকারান’যা পাঁচ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে আলেমদের জন্য মুতালাআযোগ্য।
ঘ. ইলমে আসমাউর রিজাল অনেকগুলো ‘ফন’-এর সমষ্টি। ‘আলমাদখাল ইলা উলূমিল হাদীসিশ শরীফ’ (মারকাযুদ দাওয়াহ থেকে প্রকাশিত) এবং ‘বুহুছুন ফিসসুন্নাতিল মুশাররফা’ ড. আকরাম ওমারী থেকে এই ইলম সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জন করা যেতে পারে।
এই ফনের আমলী মুতালাআর সূচনা যে কিতাবগুলো দ্বারা করতে পারেন তা হচ্ছে:
১. খায়রুদ্দীন যিরিকলী-এর ‘আলআ’লাম’
২. হাফেয ইবনে হাজার রাহ.-এর ‘তাকরীবুত তাহযীব’
৩. শামসুদ্দীন আযযাহাবী রাহ.-এর ‘আলকাশিফ’ ও ‘তাযকিরাতুল হুফফায’।
‘তাকরীব’ ও ‘কাশিফ’ এই দুই কিতাবের শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামা-এর তাহকীককৃত এডিশন সংগ্রহ করা উচিত।
ঙ. এ বিষয়ে ‘আলমাদখাল ইলা উলূমিল হাদীসিশ শরীফ থেকে প্রাথমিক দিক-নির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে।
আপনার চিঠির সঙ্গে জবাবী খাম আমি পাইনি এবং চিঠিতে ঠিকানাও ছিল না। এজন্য জওয়াব আলকাউসারে প্রকাশ করে দিচ্ছি ।শেয়ার লিংক