মোহাম্মাদ দেলোয়ার হোসাইন - মিরপুর ১৩, ঢাকা

প্রশ্ন

ক) কুরআন  মজীদের দুইটি আয়াত উল্লেখ করছি-

سُوْرَةٌ اَنْزَلْنٰهَا وَ فَرَضْنٰهَا (سورة النور) وَ تِلْكَ نِعْمَةٌ تَمُنُّهَا (سورة الشعراء)  উক্ত দুই আয়াতে سُوْرَةٌ  ও نِعْمَةٌ শব্দদ্বয়ে رفع কোন কায়েদার ভিত্তিতে হয়েছে? অথচ ما أضمر عامله على شريطة التفسير এর কায়েদা অনুযায়ী শব্দ দুটিতে نصب হওয়া উচিত। যেমন-

وَ كُلَّ شَیْءٍ اَحْصَیْنٰهُ فِیْۤ اِمَامٍ مُّبِیْنٍ    وَ كُلَّ اِنْسَانٍ اَلْزَمْنٰهُ طٰٓىِٕرَهٗ فِیْ عُنُقِهٖ    আয়াতদ্বয়ে نصب হয়েছে। বিস্তারিত জানালে খুবই উপকৃত হব।

খ)  حمامبيت الخلاء এর মাঝে পার্থক্য কী? শহরের বাথরুমগুলোতে সাধারণত গোসল ও ইস্তিঞ্জা দুটোরই ব্যবস্থা থাকে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এগুলো  حمام হিসেবে গণ্য, নাকি بيت الخلاء হিসেবে?

 

উত্তর

ক) সূরা শুআরার আয়াত شريطة التفسير -এর সংজ্ঞার মধ্যেই পড়ে না। সূরা নূরের আয়াত এ সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে, তবে আপনি নিশ্চয়ই কাফিয়া কিতাবে পড়েছেন যে, বাহ্যত شريطة التفسير -এর সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হলেও সেখানে বিভিন্ন ছূরত হতে পারে। তার মধ্যে একটি হল, আলোচিত বাক্যকে شريطة التفسير না ধরে মুবতাদা-খবরগণ্য করা  اختيارا বা وجوباআরেকটি ছূরত হল, شريطة التفسير -এর ভিত্তিতে মানসূব সাব্যস্ত করা এবং ইবতিদারভিত্তিতে মারূফসাব্যস্ত করা-উভয় দিক সমান হওয়া। বিস্তারিত আলোচনা কাফিয়াও তার ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোতে, বিশেষত শরহুর রযীতে দেখে নিবেন।

আলোচ্য আয়াতে رفعنصب দুই কিরাআতই রয়েছে। نصب-এর কিরাআতের ব্যাখ্যা হল شريطة التفسير

 

খ) এই বিষয়গুলো عرف-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, যা স্থান-কালের পরিবর্তনে বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেখানে

ইস্তেঞ্জা ও গোসল দুটোরই ব্যবস্থা রয়েছে তার নাম যা-ই হোক তাতে হুকুমে পরিবর্তন হবে না। হুকুমের সম্পর্ক হল হাকীকত মানাতের সঙ্গে। এজন্য আপনি যে বিষয়ের বিধান জানতে চান তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে প্রশ্নোত্তর বিভাগে চিঠি লিখুন।

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - ঢাকা

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো ও সুস্থ আছেন। আমিও আপনার দুআয় একরকম ভালো আছি। পরকথা এই যে, আমি হযরত থেকে ইতোপূর্বে অনেক সুন্দর সুন্দর পরামর্শ পেয়েছি। হযরতের জন্য তখন মন খুলে দুআ করেছি। আজও একটি পরামর্শের জন্যই কলম ধরেছি। আশা করি, হুজুর স্বীয় গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যয় করে অধমকে সহযোগিতা করবেন। .....আমার জিজ্ঞাসা হল, এ অবস্থায় আমি কি সেই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হব ...لا يحل لمسلم أن  অনুগ্রহপূর্বক জানাবেন। আর সুন্দর পরামর্শ দিবেন। এটাই আশা।

উত্তর

আপনি প্রশ্নে যে অবস্থা উল্লেখ করেছেন তাতে আপনি ওই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। আল্লাহ আপনাকে হিফাযত করুন। আমীন।

শেয়ার লিংক

আবুল ওলী - নিরালা, খুলনা

প্রশ্ন

ক) আল্লামা আলী ইবনে বুরহানুদ্দীন হালাবীর  سير এর গ্রহণযোগ্যতা কেমন?

খ)الكامل فى التاريخ لابن الأثير  এবং  الرحيق المختوم কোন পর্যায়ের কিতাব? এর নির্ভরযোগ্যতা কেমন? উল্লেখ্য, الرحيق المختوم এর মাঝে মওদূদী সাহেবের দুটি কিতাবের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে।

উত্তর

ক) নূরুদ্দীন আলহালাবী (আলী ইবনে বুরহানুদ্দীন ইবরাহীম) একাদশ হিজরী শতাব্দীর একজন বড় আলিম ছিলেন। জন্ম ৯৭৫ হিজরীতে এবং মৃত্যু ১০৪৪ হিজরীতে। মুহিব্বী খুলাসাতুল আছারকিতাবে তার তরজমা লিখেছেন। আল্লামা আব্দুল হাই কাত্তানী (১৩৮২ হি., ফিহরিসুল ফাহারিস-গ্রন্থে (খ. ১ পৃ. ৩৪৪) তাঁর কিতাব আসসীরাতুল হালাবিয়াসম্পর্কে লিখেছেন غاية في الجمع  والإمتاع কিন্তু মুসান্নিফ নিজেই তার কিতাবের ভূমিকায় লেখেন,

لا يخفي أن السيرة تجمع الصحيح والسقيم والضعيف والمرسل و المنقطع والمعضل والمنكر، دون الموضوع

 

কোনো কিতাবের মুসান্নিফ যখন মুনকার রেওয়ায়াত পর্যন্ত নেমে আসেন তখন, কিতাবটি সামগ্রিক বিচারে নির্ভরযোগ্য হলেও, তাতে উল্লেখিত মুনকাররেওয়ায়াতগুলো মুনকারই থাকে। এগুলো পরিত্যাগ করা জরুরি।

খ) ইযযুদ্দীন ইবনুল আছীর (মৃত্যু ৬৩০ হি.) কৃত আলকামিলতারীখের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহেরই অন্তর্ভুক্ত। তবে কোনো কিতাব নির্ভরযোগ্য হওয়ার অর্থ এই নয় যে, এ কিতাবে উল্লেখিত প্রত্যেক কথাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য; বরং অর্থ এই যে, সার্বিক বিবেচনায় কিতাবটি নির্ভরযোগ্য। এজন্য আকাইদ ও আহকামের সঙ্গে নিকটবর্তী কিংবা দূরবর্তী সম্পর্ক রয়েছে এমন কোনো বিষয় সেখানে আসলে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তা তাহকীক করা জরুরি। বিস্তারিত জানার জন্য মাকামে সাহাবামুফতী মুহাম্মদ শফী রাহ. হযরত মুয়াবিয়া আওর তারীখী হাকাইকমাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী এবং শহীদে কারবালামুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-এর ভূমিকা ও পরিশিষ্ট অংশ অধ্যয়ন মুনাসিব হবে।

ছফিউল্লাহ মুবারকপুরী (গাইরে মুকাল্লিদ আলিম) কৃত আররাহীকুল মাখতুমসম্পর্কেও একই কথা। এই কিতাবটিও সার্বিক বিবেচনায় নির্ভরযোগ্য এবং সীরাতের অনেক মুসান্নিফের তুলনায় রেওয়ায়েতের যাচাইবাছাই তিনি বেশি করেছেন এবং সীরাতে নববী উপস্থাপনার জন্য হাদীসের কিতাবসমূহের বেশ সহযোগিতা নিয়েছেন।

শেয়ার লিংক

নাম নেই - বরিশাল

প্রশ্ন

ক) ফতহুল বারী (খ. ১১ পৃ. ৪২১) উমদাতুল কারী (খ. ২২ পৃ. ৪৬) ফতহুল মুলহীমসহ (খ.১ম পৃ. ৪২১) বিভিন্ন কিতাব  لحية (দাড়ির) সংজ্ঞা লিখেছে ما نبت على الخدين والذقن এই সংজ্ঞা দ্বারা উদ্দেশ্য কী? এটাই কি দাড়ির প্রকৃত সংজ্ঞা ও সীমারেখা?

لعن الله المتنمصات للحسن مغيرات خلق الله (بخارى(

খ) চেহারায় গজানো দাড়ি কাটা জায়েয কিনা? যদি জায়েয হয় তবে বুখারী শরীফে উল্লেখিত হাদীসের যুগশ্রেষ্ঠ গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা-গ্রন্থের ব্যাখ্যার উদ্দেশ্য কী?

النماص ازالة شعر الوجه بالمنقاص (فتح البارى(

هو ازالة الشعر من الوجه مأخوذ من النماص، وقال النبى : هوحرام الا اذا نبتت للمرأة لحية او شارب..(عينى(

النمص : نتف الشعر من الوجه تزيينا، وهو حرام، واباحوا نتف اللحية والشوارب اذا نبتت للنساء (حاشية ابى داود(

গ) কোনো কোনো ফতওয়ার কিতাবে গালের দাড়ি কাটাকে জায়েয লিখেছে, নরম ভাষায়। অথচ একটি প্রসিদ্ধ কায়েদা হল-

اذا اجتمع الحلال والحرام والمبيح والمحرم غلب الحرام و المحرم (قواعد فقه(

এখন যদি তা হালাল হয় তবে সর্বসম্মত, প্রয়োগিক কায়েদার সমাধান কী? আর متنمصات-এর ব্যাখ্যা ও মেসদাক কোথাও কোথাও মহিলাদেরকে লিখেছে তবে মোল্লা আলী ক্বারী রহ. লিখেছেন-

وهى تعم الرجل والمرأة فأنث باعتبار  النفس، او لان الاكثر ان المرأة هى الامرة والراضية (مرقات(

তাহলে এই ইবারত দ্বারাই বা কী উদ্দেশ্য?

ঘ) ফতোয়া শামীতে আছে- قد يطلق الجائز على ما لا يمتنع فيشمل المكروه

এর দ্বারা বুঝা যায় জায়েয দুই প্রকার (১) সুন্নাত জায়েয (২) মাকরূহ জায়েজ। তো উল্লেখিত দাড়ি কাটা যদি জায়েয হয় তবে সুন্নাত জায়েযহবে না অবশ্যই। হবে মাকরূহ জায়েযআর তাতে ছগীরা গুনাই হয়। আমরা বাইজাবীসহ অনেক কিতাবে পড়েছি ছগীরা গুনাহ বার বার করলে কাবীরা হয়। ফলে হারাম ছাবেত হওয়ার কথা। ঠিক কি-না। না হলে কিভাবে হল না। সমাধানমূলক উত্তর চাই।

উত্তর

ক) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহ. ফাতহুল বারীর ইবারতের যে পর্যালোচনা করেছেন তা যুক্তিসঙ্গত। এ আলোচনা আপনার সামনেও রয়েছে।

খ) যদি শুধু শব্দের তাহকীক ও কোনো হাদীসের কিতাবের শরহ থেকেই ফিকহী হুকুম প্রমাণ করা যেত তাহলে না আইম্মায়ে ফিকহের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন হত, আর না ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবের কোনো প্রয়োজন থাকত। এ বিষয়ে ফিকহী তাহকীক এই যে, শরীরের যে অংশে সাধারণত চুল থাকে না সেখানে যদি চুল গজায় তাহলে তা পরিষ্কার করা যাবে। অর্থাৎ বাড়তি ও অস্বাভাবিক চুল পরিষ্কার করা ওই নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। এই সিদ্ধান্ত দলীলসিদ্ধ এবং প্রশ্নোক্ত হাদীসে তা নিষিদ্ধ হওয়ার সারাহাত নেই। যদি হাদীসের নিষেধ একদম ব্যাপক হত তবে إلا إذا نبتت للمرآة لحية أو شارب  এই ইসতিসনা কীভাবে শুদ্ধ হয়?

ইমাম আবু হানীফা রাহ. কিতাবুল আছারে (পৃ. ৩৭৮) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে,

إن المرأة سألتها : أحف وجهى؟ فقالت : أميطى عنك الأذى

ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেছেন, وبه نأخذ، وهو قول أبى حنيفة বোঝা গেল, যে চুল اذى-এর অন্তর্ভুক্ত তা দূর করা نمص বলে গণ্য হবে না। এজন্য দাড়ির সীমার বাইরে চেহারায় অতিরিক্ত যে চুল গজায় তা দূর করা ওই নিষেধের অন্তর্ভুক্ত নয়।

কাওয়াদে ফিকহের উল্লেখ এখানে অপ্রাসঙ্গিক। প্রথমত এই কায়েদাগুলো প্রয়োগ করার অধিকার শুধু ফকীহদেরই রয়েছে। যেকোনো শব্দ-পরিচয়-জ্ঞানধারী লোকের জন্য এই অধিকার সাব্যস্ত হয় না। এই কায়েদা যদি এতই ব্যাপক হত, যেমন আপনি ভাবছেন তবে যেসব বিষয়ে মাযাহিবে আরবাআর মধ্যে বৈধতা-অবৈধতার মতাভেদ রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে আপনাকে অবৈধতার মতই গ্রহণ করতে হবে। বলাবাহুল্য, কেউই এমন করবে না। এজন্য কাওয়াইদে ফিকহিয়্যাহর কিতাবসমূহ পড়ে প্রথমে কায়েদাগুলোর মর্ম অনুধাবন করা অপরিহার্য।

মিরকাত-এর ইবারত واصلةمستوصلة  সম্পর্কে। এরপরও হাদীসের নিষেধ পুরুষ মহিলা উভয়ের জন্য হওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি নেই। এখানে বিবেচ্য বিষয় এই যে, নিষেধের ক্ষেত্র কোনটি? উপরের আলোচনায় প্রমাণ হয়েছে যে, শরীরের অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক চুল এই নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। এ প্রসঙ্গে আপনি জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. -এর الأحاديث الواردة فى الاطلاء بالنورة পুস্তিকাটি অধ্যয়ন করতে পারেন। পুস্তিকাটি الحاوى للفتاوى  তে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গ) তৃতীয় কথা হল মুবাহে জায়েযপ্রসঙ্গে। যে ফকীহগণ অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক চুল দূর করার অনুমতি দিয়েছেন তাদের মতে এটা মাকরূহ-জায়েযনয়, মুবাহ জায়েয-এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রিওয়ায়েতের সঙ্গে দিরায়াত এবং হাদীসের সঙ্গে তাফাককুহ ফিদ্দীননসীব করুন। আমীন।

শেয়ার লিংক