ড. সায়েদ বাকদাশের তাহকীককৃত হিদায়ার মুকাদ্দিমাতুত তাহকীকে হিদায়ার শুরূহ, হাওয়াশীর একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে তিনি এক জায়গায় (পৃ. ১২১) হিন্দুস্তানে প্রচলিত হিদায়ার হাশিয়ার বিবরণ দিয়েছেন এভাবে—
السقاية لعطشان الهداية، للإمام محمد عبد الحي اللكنوي، (حاشية اللكنوي على الهداية). وكان قد بدأ بها والدُه العلامة الشيخ محمد عبد الحليم اللكنوي، المتوفى سنة ১২৮৫هـ، ولكنه شرع بكتابة الحاشية من كتاب البيوع قبل سنة من وفاته، ولما وصل إلى خيار العيب: توفي رحمه الله، فأكملها ولدُه العلامةُ الشيخ محمد عبد الحي اللكنوي. (مقدمة التحقيق للهداية ص ১২১)
এখান থেকে বোঝা যায়, হিদায়া আউওয়ালাইন, আখিরাইন উভয়টির হাশিয়া আবদুল হাই লাখনোভী রাহ. লিখেছেন। শুধু কিতাবুল বুয়ূ-এর শুরু থেকে ‘খিয়ারুল আইব’ অধ্যায় পর্যন্ত অংশটুকুর হাশিয়া আবদুল হালীম লাখনোভী রাহ. লিখেছেন। অথচ আমরা ‘তালিবানে ইলম : পথ ও পাথেয়’ কিতাবের ৪৭৬-৪৭৭ পৃষ্ঠায় পড়েছি, হিদায়া ‘আউওয়ালাইন’-এর হাশিয়া আবদুল হাই লাখনোভী রাহ. আর ‘আখিরাইন’-এর হাশিয়া তাঁর পিতা আবদুল হালীম লাখনোভী রাহ. লিখেছেন।
সঠিক বক্তব্যটি কী? জানালে কৃতজ্ঞ হব। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
হিদায়ার প্রচলিত হিন্দুস্তানী নুসখার হাশিয়া এবং ‘আসসিকায়া লিআতশানিল হিদায়া’ দুটি ভিন্ন কিতাব। ভুলবশত ড. সায়েদ বাকদাশ উভয়টিকে একই কিতাব মনে করেছেন। মাওলানা আবদুল হালীম লাখনোভী রাহ. ‘আসসিকায়া’ নামে হিদায়ার বিস্তৃত শরাহ লিখতে চেয়েছিলেন। কিতাবুয যাবাইহ ও কিতাবুল বুয়ূ-এর কিছু অংশ লেখার পর তার ইন্তেকাল হয়ে যায়। ফলে এ কিতাব অপূর্ণ থেকে গেছে। আর হিদায়ার প্রচলিত হিন্দুস্তানী নুসখার হাশিয়া পিতা-পুত্র উভয়কৃত পূর্ণাঙ্গ হাশিয়া। যার প্রথমাংশ (আউওয়ালাইন) পুত্র আবদুল হাই লাখনোভী রাহ.-এর এবং দ্বিতীয়াংশ (আখিরাইন) পিতা আবদুল হালীম রাহ.-এর। আবদুল হালীম রাহ.-এর জীবদ্দশাতেই হাশিয়াটির প্রথম সংস্করণ ছেপে গিয়েছিল।
থাকল ড. সায়েদ বাকদাশের বক্তব্য; তো তার আলোচনার শেষে তিনি লাখনোভী রাহ.-এর যফারুল আমানীর উদ্ধৃতি দিয়েছেন। সম্ভবত লাখনোভী রাহ.-এর বক্তব্য বুঝতে তিনি ভ্রমের শিকার হয়েছেন।
প্রথমত তিনি ‘আসসিকায়া’-কে আবদুল হাই লাখনোভী রাহ.-এর দিকে নিসবত করেছেন। অথচ যফারুল আমানীতে লাখনোভী রাহ. তা বলেননি; বরং তিনি স্পষ্টভাবে তাঁর পিতার দিকে নিসবত করে বলেছেন—
... فليرجع إلى حواشي الهداية المسماة >بالسقاية لعطشان الهداية< لوالدي وأستاذي، نوَّر الله مرقده. (ظفر الأماني بشرح مختصر السيد الشريف الجرجاني ص (৩১৫
দ্বিতীয়ত তিনি উপমহাদেশের প্রচলিত হিদায়ার হাশিয়াকে ‘আসসিকায়া’—এর মিসদাক মনে করেছেন। শায়েখ সায়েদ বলেন, ‘সিকায়া প্রথমে মাওলানা আবদুল হালীম রাহ. লেখা শুরু করেছেন, কিছু অংশ লেখার পর তাঁর ইন্তেকাল হয়ে যায়, এরপর আবদুল হাই লাখনোভী রাহ. বাকি অংশ পুরো করেন’। অথচ ‘আসসিকায়া’ আবদুল হাই রাহ. মুকাম্মাল করেছেন— এ ধরনের কোনো কথাও যফারুল আমানীতে নেই। বস্তুত ‘আসসিকায়া লিআতশানিল হিদায়া’ এবং হিদায়ার প্রচলিত হাশিয়া দুটি ভিন্ন ভিন্ন কিতাব। আবদুল হালীম রাহ.—এর জীবনীতে আবদুল হাই লাখনোভী রাহ. ‘আসসিকায়া’ সম্পর্কে লিখেছেন—
ومنها (أي من تصانيف والدنا ومولانا محمد عبد الحليم مما شرع فيها قبل مرض موته، فلم تتم، حتى مضى لسبيله) شرحُ >الهداية< المسمى >السقاية لعطشان الهداية< شرع فيه سنة (১২৮৪هـ)، فكتب من كتاب البيوع إلى (خيار العيب)، وشرح (كتاب الذبائح) على حدة، ولَعِلْمي لو تمَّ لبلغ عشر مجلدات كبار<. (حسرة العالم ص (৭২-৭৩).
এতে বোঝা যায় ‘আসসিকায়া’ হিদায়ার সুবিস্তৃত শরাহ, যা তিনি ১২৮৪ হিজরীতে লেখা শুরু করেছেন। অথচ হিদায়ার প্রচলিত হাশিয়ার প্রথম সংস্করণ তারও আগে ১২৮১ হিজরীতেই ছেপেছে।
হিদায়ার খাতিমাতুত তাবয়ে লাখনোভী রাহ. হিদায়ার হাশিয়া সম্পর্কে লিখেছেন—
ولما رأى الوالد العلام مولانا محمد عبد الحليم أن الناس في تحصيله (كتاب الهداية، سيما النصف الأخير منه كما يظهر من السياق) كالحيارى في الصحارى، توجَّه إلى تصحيحه وتحشيته، فصحَّح أولاً نسخةً بمقابلة سبعة من النسخ المطبوعة والمكتوبة، ثم زيَّنها بالحواشي المفيدة والتعليقات اللطيفة، ثم نُسختْ منها نسخةٌ وطبِعتْ في المطبع العلوي مرة أولى سنة ১২৮১هـ، ثم مرة ثانية في المطبع المصطفائي، ثم أراد المولوي محمد خادم حسين أن تطبع مرة ثالثة أحسن من الأوليين، فنظرتُ أصلها نظرة واحدة، وزدت عليها زيادات، وطبعت في المطبع المصطفائي، ثم طبع فيه مرة رابعة، ثم خامسة سنة ১৩০২هـ. انتهى (باختصار(
এতে দেখা যাচ্ছে, আবদুল হালীম রাহ. হিদায়ার যে হাশিয়া-তালীক লিখেছেন, তা ১২৮১ হিজরীতেই ছেপে গেছে। এরপর ১২৮৪ হিজরীতে তিনি ‘আসসিকায়া’ নামে হিদায়ার আরেকটি বিস্তারিত শরাহ লেখা শুরু করেছেন।
যফারুল আমানীর যে উদ্ধৃতি ড. সায়েদ বাকদাশ দিয়েছেন সেখানে খিয়ারুল মাজলিস সংক্রান্ত আলোচনা প্রসঙ্গে লাখনোভী রাহ. বলেছেন—
ومن شاء التفصيل في هذا البحث، فليرجع إلى حواشي الهداية المسماة بـ>السقاية لعطشان الهداية< لوالدي وأستاذي، نوَّر الله مرقده... ولولا غرابة المقام، لأتيتُ بنُبذٍ من تفصيل هذه المسألة في هذا المقام.
অথচ প্রচলিত হাশিয়ায় এ মাসআলার অধীনে এমন দীর্ঘ কোনো হাশিয়া নেই, যার বিষয়ে এমন উক্তি করা যেতে পারে। এ থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, ‘আসসিকায়া’ এবং হিদায়ার প্রচলিত হাশিয়া ভিন্ন ভিন্ন কিতাব।
আলীগড়ের আযাদ লাইব্রেরীতে ‘আসসিকায়ার’ একটি পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে। উক্ত মাকতাবার ক্যাটালগে পাণ্ডুলিপির শুরু লেখা হয়েছে নিম্নোক্ত এবারতে—
كتاب البيوع: أى هذا كتاب فى بيان أحكام البيوع، وإنما ذكر هذا الكتاب بعد كتاب الوقف ... (فهرس مخطوطات مكتبة آزاد عليكر، الهند، رقم الميكروفيلم (২/ ২৫৫)
পক্ষান্তরে প্রচলিত হাশিয়ায় কিতাবুল বুয়ূর প্রথম হাশিয়া শুরু হয়েছে এভাবে—
قوله: كتاب البيوع، ذكر هذا الكتاب بعد الوقف لكون كل...
মোটকথা, হিদায়ার প্রচলিত হাশিয়া আর আবদুল হালীম লাখনোভী রাহ. এর ‘আসসিকায়া’ দুটি ভিন্ন কিতাব। ‘আসসিকায়া’ হিদায়ার স্বতন্ত্র শরাহ, যা তিনি কিছুটা দীর্ঘ করার ইচ্ছায় শুরু করেছিলেন। কিন্তু তা মুকাম্মাল হয়নি। আর না তার পরে আবদুল হাই লাখনোভী রাহ. সেটি মুকাম্মাল করেছেন বলে কোনো প্রমাণ আছে। পক্ষান্তরে হিদায়ার প্রচলিত নুসখার হাশিয়া পূর্ণাঙ্গ হাশিয়া। যা পিতা-পুত্র উভয়েরই কাজ। হিদায়া আউওয়ালাইনের বিভিন্ন হাশিয়ার শেষ লক্ষ করলে দেখা যায়, কোনো কোনো হাশিয়ার শেষে مولوي محمد عبد الحي বলে তিনি নিজের নাম লিখেছেন। তদ্রƒপ হিদায়া আখিরাইনের অনেক হাশিয়ার শেষে مولانا محمد عبد الحليم نور الله مرقده রয়েছে। (আবদুল হাই লাখনোভী রাহ. পরবর্তী সংস্করণে সংযোজন করেছেন। محمد عبد الحليم -এর সাথে দুআব্যঞ্জক শব্দাবলি হয়তো তারই সংযোজন, অথবা লিপিকারের পক্ষ থেকে।)