(ক) মুহতারাম, আশা করি ভালো আছেন। আমি জালালাইন জামাতে পড়ছি। আমি যখন মাদরাসার পরিবেশে থাকি তখন আমার হালাত আলহামদু লিল্লাহ অনেকাংশ ভালোই থাকে। যেমন নামাযের গুরুত্ব, মুতালাআয় মনোযোগ ও আগ্রহ, ভালো কাজে উৎসাহ এককথায় সকল কাজ-কর্ম পুরোপুরি না হলেও অনেকাংশে আলহামদু লিল্লাহ ভালোভাবেই চলে। কিন্তু সমস্যা হল মাদরাসা ছুটি হওয়ার পর যখন বাড়িতে যাই তখন এলাকা ও সমাজের প্রভাবে আস্তে আস্তে সব কিছুর মধ্যে খলল পয়দা হতে থাকে। যদিও প্রথম প্রথম কিছুদিন ভালো থাকে। কিন্তু তা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। বরং খললের মাত্রা একসময় খুব ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে। আর সামনে সালানা পরীক্ষার পর দীর্ঘ ছুটির মধ্যে এক পেরেশানী হচ্ছে যে, এলাকার পরিবেশে ছুটির এ দীর্ঘ সময়টা কীভাবে অতিবাহিত করব। সুতরাং পূর্বে যা হয়েছে তার জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করছি। আর ভবিষ্যতে কীভাবে চললে খলল ও গোমরাহী থেকে বেঁচে থাকতে পারব সে ব্যাপারে হযরতের সুপরামর্শ কামনা করছি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যামানার ফেতনা-ফাসাদ থেকে হেফাযত করুন ও তাঁর দ্বীনের উপর অটল থাকার তাওফীক দান করুন।
(খ) অনেককে দেখা বা তাঁর কথা শুনার পর মনে এই খেয়াল জাগে যে, তাঁকে আমার মুশীরে হায়াত বা তালীমী মুরব্বী হিসেবে গ্রহণ করব। কিন্তু যখন তাঁর থেকে খেলাফে শরা কোনো কাজ হতে দেখি তখন তাঁর প্রতি যে ভক্তি থাকে স্বভাবতই তাতে খলল পয়দা হয়। এখন হযরতের কাছে আমার জানার বিষয় হল মুশীরে হায়াত ও তালীমী মুরব্বী কেমন হওয়া জরুরি? তাছাড়া আরেকটি বিষয় হল প্রত্যেক ফন ও জীবনের যে কোনো বিষয়ের জন্য কি একজন তালীমী মুরব্বী ও একজন মুশীরই যথেষ্ট না ভিন্ন ভিন্ন হওয়া জরুরি?
(ক) আপনার উক্ত সমস্যার সমাধানের জন্য আপনাকে বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজ মুরব্বীর পরামর্শক্রমে বিরতির দিনগুলোর জন্য আলাদা নেযামুল আওকাত তৈরি করে নেয়া উচিত। এরপর বিরতিতে সেই নেযামুল আওকাতের পাবন্দী করা এবং বিরতির দিনগুলির দৈনিক কার্য-বিবরণী বা রিপোর্ট তেরি করে বিরতির পর মুরুব্বীর সামনে পেশ করে পরামর্শ নেয়া চাই। আর বিরতির দিনগুলির নেযামুল আওকাতের মধ্যে বিশ্রাম ও তাফরীহ, (যার জন্য অন্য সময়ের চেয়ে বেশি সময় বরাদ্দ রাখতে অসুবিধা নেই) পিতামাতার খেদমত এবং অন্যান্য জরুরি কাজকর্মের পাশাপাশি এই কাজগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা। যথা : (১) তাদাব্বুর তথা চিন্তাভাবনার সাথে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা চাই। (২) নিজ এলাকায় কিছু সময় দাওয়াতের কাজের জন্য বরাদ্দ রাখা। যেমন নামাযের পর মসজিদে এবং দিন-রাতের কোনো একসময় নিজের ঘরে আযান, ইকামত, নামায ও সুন্নতসমূহ মশক করানো, কুরআন তিলাওয়াত বিশুদ্ধ করানো ইত্যাদি। (৩) সম্ভব হলে অল্প হলেও কিছু সময় রিসালা ও কিতাব মুতালাআর জন্য বরাদ্দ রাখা। তা হতে পারে সীরাত ও শামায়েলের কোনো কিতাব বা সালাফ ও আকাবিরের জীবনী কিংবা ইলমী ও ফিকরী কোনো রিসালা।
বিরতির দিনগুলোতে তালিবে ইলমের আমল-আখলাক তথা সুন্নতের ইহতেমাম, জামাতের সাথে নামায আদায় ইত্যাদি বিষয় তেমনি থাকা চাই যেমন মাদরাসার পরিবেশে থাকে; বরং তার চেয়েও উন্নত রাখার চেষ্টা করা উচিত। একজন তালিবে ইলম তো দ্বীনের দাঈ সুতরাং তাকে আমল-আখলাকের দিক থেকে অন্যের জন্য আদর্শ হতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন দুআ, মুজাহাদা এবং মুহাসাবা। আল্লাহ তাআলা তাওফীক নসীব করুন।
(খ) একজন তালীমী মুরুব্বীর জন্য আমানতদার, দায়িত্বশীল, হিতাকাঙ্ক্ষী এবং সমঝদার ও অভিজ্ঞ হওয়া জরুরি। তালিমী মুরুব্বী তো কোনো একজন মানুষই হবেন,ফেরেশতা হবেন না। সুতরাং সামগ্রিক বিচারে শরীয়তের পাবন্দ ও আমানতদার হওয়াই যথেষ্ট। আমাদের বড় একটি দুর্বলতা, ভক্তি-ভালোবাসার পাত্রকে আমরা ফেরেশতার আসনে দেখতে চাই। তাই সহজেই এবং সামান্য কারণেই ভক্তি ও শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলি। যাকে শ্রদ্ধা করি আমরা ভুলে যাই, তিনি মাটির মানুষ। তার গুনাহ যেমন আছে তেমনি ইস্তিগফার আছে এবং নির্জন রাতের মোনাজাত ও রোনাযারি আছে। তো আমরা যাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করি মাটির মানুষ হিসেবেই যেন করতে পারি।
অবশ্য মনে রাখতে হবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে উস্তাযের প্রতি আমাদের ‘শ্রদ্ধাবঞ্চিত’ হওয়ার আসল কারণ হচ্ছে ভুল চিন্তা এবং অমূলক ধারণা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ ধরনের ভুল ধারণা থেকে হেফাযত করুন।
আপনি জিজ্ঞাসা করেছেন মুশীরে হায়াত হিসেবে তালীমী মুরুব্বী একজন নাকি একাধিকজনকে গ্রহণ করবেন? শৃঙ্খলা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে মুশীরে হায়াত ও তালীমী মুরুব্বী একজন হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তিনিই প্রয়োজনবোধে অন্যান্য মুরুব্বীর সঙ্গে মশোয়ারা করে সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন।