মহাম্মাদ কামরুল হাসান - জামিয়া রাহমানিয় আরাবিয়া মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

প্রশ্ন

মুহতারাম আমীনুত তালীম ছাহেব (হাফিযাহুলাহ) আমি উলূমুল হাদীস ২য় বর্ষের একজন তালিবে ইলম। উলূমুল হাদীসে ফন্নী ইসতিদাদ পয়দা হওয়ার জন্যে একজন তালিবে ইলম কোন উসলূবে মেহনত করবে? এই ফনের ইসতিদাদ পয়দা হচ্ছে এর আলামাত-ই বা কী? এই বিষয়ে হযরতের মাশওয়ারা কামনা করছি।


উত্তর

যে কোনো বিষয়ে ফন্নী ইস্তেদাদ ও ইখতেসাস অর্জনের জন্য কয়েকটি বিষয় জরুরী যথা : ১. ফনের মাহের কোনো উস্তাযের বিশেষ ও দীর্ঘ সোহবত। ২. সংশিষ্ট বিষয়ে মুহাক্কিক ও মুতকিন আহলে ফনের তাসনিফ মুতালাআ অব্যাহত রাখা। বিশেষত মুতাকাদ্দিমীন আহলে ফনের তাসনীফ মুতালাআ করা (এই মুতালাআ হতে হবে তামযীয, নাবাহাত এবং বসীরতের সাথে) অন্যথায় কেবল মালুমাত বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু ফনের ফাকাহাত পয়দা হবে না। ৩. উপরোক্ত বিষয়দুটি ছিলো কাসবী তথা  চেষ্টা ও মেহনতের মাধ্যমে অর্জিতব্য বিষয়। এর সাথে যোগ হতে হবে ওহাবী এলম। এর জন্য প্রয়োজন তাকওয়া-তাহারাত এবং রুজু ইলালাহ।

মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া থেকে প্রকাশিত আল মাদখাল ইলা উলূমিল হাদীসিশ শরীফ-এ উলূমুল হাদীসের মুতালাআ ও তামরীন সংক্রান্ত উসূলী কথা আলোচান করা হয়েছে। আপনি তা মুতালাআ করে থাকলেও পুনঃবার দেখে নিতে পারেন।

স্মরণ রাখতে হবে, ফন্নী ইস্তেদাদ ও ইখতেসাসের বিভিন্ন মরতবা ও স্তর রয়েছে। এর একটি স্তর হচ্ছে আহলে ফনের আলোচনা-পর্যালোচনা শরহে সদরের সাথে বুঝতে পারা। ফন্নী ইখতেসাসের বড় একটি আলামত হচ্ছে, ফনের কোনো বিষয়ে শক, শুবাহ এবং ইশকাল দেখা দিলে তার কাবেলে ইতমিনান ও প্রশান্তিদায়ক জবাব দিতে পারা। এছাড়াও এ বিষয়ে আহলে ফন আলেমদের শাহাদাতও বড় প্রমাণ ও সনদ হিসেবে বিবেচ্য।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ যোবায়ের - জামিআতুল আবরার

প্রশ্ন

ক) নূরুল আনওয়ার কিতাবের ১৯২ পৃষ্ঠায় طعن  -এর আলোচনায় হাদাসাতুস সিন-এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে একটি মেছাল দিয়েছেন যে, সুফিয়ান ছাওরী আবু হানীফা রাহ. সম্পর্কে বলছেন, এই ছোট্ট ছেলে আমার নিকট কী বলছে? এই মেছালটা তো কখনো সঠিক হতে পারে না। কারণ সুফিয়ান ছাওরী রাহ. হল আবু হানীফা রাহ.-এর একজন অন্যতম শাগরিদ। আর শাগরিদ উস্তায সম্পর্কে এমন কথা বলার তো প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া তিনি আবু হানীফা রাহ. থেকে বয়সেও ছোট। তাহলে মুসান্নিফ কোন ভিত্তিতে এই মেছাল দিয়েছেন বা এই মেছালের কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে কি না?

খ) কিতাবের ২০৩ পৃষ্ঠায় বয়ানে তাগয়ির-এর আলোচনায় হানাফীদের উপর যে তিনটি ইশকাল আসে তার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পৃষ্ঠার শেষে তিনি লিখেছেন, ...।


উত্তর

ক) নূরুল আনওয়ার কিতাবের উদ্ধৃত স্থানে সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর সাথে সম্বন্ধ করে যে মন্তব্যটি উল্লেখ করা হয়েছে তা আমার জানামতে তারীখ, তারাজিম এবং জারহ-তাদীলের কোনো নির্ভরযোগ্য প্রসিদ্ধ কিতাবে উল্লেখ নেই। উসূলে ফিকহের অন্য কোনো প্রসিদ্ধ কিতাবে বা মানারের অন্য কোনো শরহেও এর কোনো অস্তিত্ব নেই। আলোচ্য মাসআলায় উসূলে ফিকহের অন্যান্য কিতাবে ভিন্ন উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। কথাটি সম্ভবত কোনো নাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, সেখান থেকে মুসান্নিফ তা নকল করেছেন। কিন্তু এটিকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করা মুসান্নিফের যাল্লাত ও তাসামুহ হিসেবে গণ্য। কারণ মন্তব্যটি মুনকার বা আপত্তিকর ও অবাস্তব হওয়াই এ কথার জন্য যথেষ্ট যে, ইমাম সুফিয়ান ছাওরী থেকে এটি প্রমাণিত নয়; বরং মানাকিবের কোনো কোনো কিতাবে সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বর্ণনা করা হয়েছে যে, সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর একটি ফতোয়ার প্রেক্ষিতে তাঁর সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা রাহ. এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। দ্রষ্টব্য : মানাকিবুল কারদারী ২/১০-১১

ইমাম আবু হানীফা রাহ. থেকে বর্ণিত এ কথাটি (যদি তা প্রমাণিত হয়) হাদীস সংক্রান্ত নয়, ফিকহ ও ফতোয়া সংক্রান্ত।

যাহোক, আবু হানীফা রাহ. থেকে এ ধরনের কথা প্রমাণিত কি না তা তাহকীক করতে হবে।

উল্লেখ্য, সুফিয়ান ছাওরী রাহ. (জন্ম : ৯৭, মৃত্যু : ১৬১ হি.) আবু হানীফা রাহ. (জন্ম : ৮০ হি., মৃত্যু : ১৫০ হি.)-এর নিয়মতান্ত্রিক শাগরিদ নন। তবে তাঁরা উভয়ে পরস্পর থেকে কিছু হাদীস ও রেওয়ায়েত শুনেছেন। (দ্রষ্টব্য : উকুদুল জুমান, সালেহী ১১৫)

সুফিয়ান ছাওরী রাহ. আবু হানীফা রাহ.-এর ফিকহ ও ফতোয়ার অনেক প্রশংসা করতেন এবং তা থেকে অনেক সময় ইস্তেফাদাও করতেন-এ কথা একাধিক সূত্রে মানাকিবের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। অনুরূপভাবে আবু হানীফা রাহ. সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর ফাকাহাতের প্রশংসা করতেন। (দ্রষ্টব্য : আলইনতেকা, ইবনু আবদিল বার ১৯৭-১৯৮; মানাকিবুল কারদারী ২/৯-১৪; আখবারু আবী হানীফা, হাফেয সয়মারী)

সুফিয়ান ছাওরী রাহ. বলতেন-

كان أبو حنيفة شديد الأخذ للعلم، ذابًّا عن حرام الله عز وجل عن أن يستحل، يأخذ بما صح عنده من الأحاديث التي تحملها الثقات وبالآخر من فعل رسول الله صلى الله عليه وسلم، وما أدرك عليه علماء الكوفة، ثم شنع عليه قوم نستغفر الله، نستغفر الله.

 (দ্রষ্টব্য : ফাযায়িলু আবী হানীফা, ইবনু আবীল আওয়াম, ৯৯)

খ) আপনার প্রশ্নোক্ত বিষয়টির সম্পর্ক কুরআনে কারীমের সূরা হুদ-এর ৪০-৪৭ আয়াতে বর্ণিত হযরত নূহ আ. ও তাঁর পুত্রের ঘটনার সাথে। উক্ত আয়াতসমূহের একাধিক তাফসীর রয়েছে। তার মধ্য থেকে কেবল একটি নূরুল আনওয়ার কিতাবের আলোচ্য স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। সংক্ষেপে উক্ত আয়াতসমূহের তাফসীর বুঝার জন্য তাফসীরের কিতাবসমূহ দেখা যেতে পারে, বিশেষত নিম্নোক্ত সংক্ষিপ্ত ও নির্ভরযোগ্য কোনো একটি তাফসীরের কিতাব দেখা যেতে পারে।

১. তাফসীরে উসমানী (তরজমায়ে শায়খুল হিন্দের হাশিয়া)

২. বয়ানুল কুরআন

৩. তাফসীরে মাজেদী

৪. সদ্য প্রকাশিত আসান তরজমায়ে কুরআন।

শেয়ার লিংক

মাহফুজ মুসলিহ - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

প্রশ্ন

ক) শহীদ সাইয়্যেদ কুতুবের আগলাতগুলো কী কী? এক আলেমের নিকট থেকে শুনেছি, তিনি নাকি মারা যাওয়ার পূর্বে তাঁর আগলাতগুলো থেকে রুজু করেছিলেন। আসলে কি তাই?

খ) মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহহাবকে কি আহলে হক ধরা যায়?

গ) শহীদ হাসানুল বান্না রাহ.-এর ফিকহী দৃষ্টিভঙ্গি কী? আমি তাঁর রচনায় কয়েক জায়গায় এমন পেয়েছি যে, তিনি সর্বপ্রথম হানাফী মাযহাবকে প্রাধান্য দেন। যেমন জিহাদের বিধান বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি সর্বপ্রথম হানাফী মাযহাবের বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তারপর মালেকী মাযহাবের, তারপর শাফেয়ী মাযহাবের, তারপর হাম্বলী মাযহাবের।

আমাদের আকাবিরে দেওবন্দ তাঁকে কেমন মূল্যায়ন করেছেন এবং আপনার মূল্যায়নটা কেমন?

সবশেষে হযরত! এই বিষয়গুলো মূল উৎস থেকে জানতে পারি দয়া করে এমন কিছু কিতাবের নাম বলবেন।


উত্তর

ক) সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ-এর ফিকরি বিষয়াবলি সংক্রান্ত পর্যালোচনা জানার জন্য নিম্নোক্ত কিতাবগুলো দেখা যেতে পারে।

১. দুআতুল কুযাত, শায়খ হাসান ইসমাঈল আল হুসাইমী। যিনি শায়খ হাসানুল বান্না রাহ.-এর শাহাদতের পর ইখওয়ানুল মুসলিমীনের প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন সর্বসম্মতিক্রমে।

২. মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রাহ. রচিত التفسير السياسي الإسلامي, যার উর্দু হচ্ছে عصر حاضر مين دين كى تفہيم وتشريح আর তাঁর আরেকটি কিতাব : পুরানে চেরাগ (৩/২৩-৩৮)

৩. يتيمة اليمان في شيء علوم القرآن

মাওলানা ইউসুফ বানূরী রাহ.

৪. مطاعن سيد قطب في أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم, শায়খ রবী ইবনু হাদী আল মাদখালী।

৫.  المورد الزلال في التنبيه على أخطاء تفسير الظلال, শাইখ আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আদদরবেশ।

উল্লেখ্য, শেষ দুটি কিতাব আমার পড়ার সুযোগ হয়নি।

খ) শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব নজদী রাহ. সম্পর্কে জানার জন্য দেখা যেতে পারে :

১। মাওলানা মনযূর নুমানী রাহ. রচিত শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাবকে খেলাফ প্রপেগান্ডে আওর হিন্দুস্তান কে উলামায়ে হক পর উসকে আছারাত অথবা এর আরবী অনুবাদ

دعايات مكتفة ضد الشيخ محمد بن عبد الوهاب

২। মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.-এর তারীখে দাওয়াত ওয়া আযীমত ৫/৩৯৪-৩৯৭

৩। মাওলানা মাসউদ আলম নদভী-এর মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব এক মজলুম আওর বদনাম মুসলেহ।

গ) শায়খ হাসানুল বান্না শহীদ রাহ. সম্পর্কে জানার জন্য নিম্নোক্ত কিতাবগুলো দেখা যেতে পারে।

১. روح وريحان من حياة داع ودعوة

শায়খ আহমদ আনাস হাজ্জাজী।

২. আলআলাম, খায়রুদ্দীন যিরিকলী ২/১৮৩-১৮৪

৩. مذكرة سائح في الشرق العربي বা এর উর্দু شرق اوسط كى ڈائرى, মাওলানা আবুল হাসান আল নদভী

৪. পুরানে চেরাগ, আলী নদভী ৩/১৩-২২

৫. হাসানুল বান্না, আনওয়ার আলজুনদী, দারুল কলম, দিমাশক।

শেয়ার লিংক