প্রথমে হুযুরের সিহহাত ও আফিয়াত কামনা করছি। তারপর জানাচ্ছি-
(ক) আমি শরহে বেকায়ার একজন তালিবে ইলম। আমরা জানি সাহাবীগণ রা. মুকতাদা হওয়ার বিষয়টি স্বীকৃত এবং এ বিষয়ে আমরা অনেককে এই হাদীসটিও পেশ করতে শুনি -
أصحابي كالنجوم، بأيهم اقتديتم اهتديتم .
মিশকাত শরীফের كتاب المناقب باب مناقب الصحابة، رقم الحديث ৩০১৭
-এ এই হাদিসটিকে رواه رزين বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তো হুযুরের কাছে হাদীসের তাখরীজ এবং সনদের মান জানতে চাই।
(খ) রাযীন-কে? তার পরিচয় জানতে আগ্রহী।
(গ) সাহাবাদের মুকতাদা হওয়ার বিষয়ে কিছু নির্ভরযোগ্য মাওয়াদ জানতে চাই। আল্লাহ তাআলা হুযুরের ইলমে, আমলে, আওকাতে এবং সবকিছুতে বরকত দান করুন। আমীন।
(ক) আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসটি বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন, মুসনাদু আবদ ইবনু হুমাইদ (হাদীস নং ৭৮৩), গারায়িবু মালিক, দারাকুতনী, মুসনাদুশ শিহাব, কিতাবুস সুন্নাহ আবু যর হারাবী ইত্যাদি। হাদীসটির বিস্তারিত তাখরীজ ও উদ্ধৃতি জানার জন্য নিম্নের কিতাবগুলো দেখা যেতে পারে।
১. আলবদরুল মুনীর, ইবনুল মুলাক্কিন ৯/৫৮৪-৫৮৮ (কিতাবুল কাযা)
২. আততালখীসুল হাবীর, ইবনু হাজার আসকালানী ৬/১৮৮-৩১৯ (কিতাবুল কাযা)
৩. তাখরীজু আহাদিসিল কাশশাফ, যায়লায়ী ২/২২৯-২৩২
আর হাদীসটির সনদের মান এবং হুকুম সম্পর্কে আব্দুল হাই লাখনাবী রাহ. تحفة الأخيار بإحياء سنة سيد الأبرار কিতাবে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করেছেন। এই রেওয়ায়েতটি বিভিন্ন শব্দে একাধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে। তবে সবকটি সনদই যয়ীফ। কিন্তু এর যে মর্ম তা সহীহ সনদে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন আবু মূসা আশআরী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত-
النُّجُومُ أَمَنَةٌ لِلسَّمَاءِ، فَإِذَا ذَهَبَتِ النُّجُومُ أَتَى السَّمَاءَ مَا تُوعَدُ، وَأَنَا أَمَنَةٌ لِأَصْحَابِي، فَإِذَا ذَهَبْتُ أَتَى أَصْحَابِي مَا يُوعَدُونَ، وَأَصْحَابِي أَمَنَةٌ لِأُمَّتِي، فَإِذَا ذَهَبَ أَصْحَابِي أَتَى أُمَّتِي مَا يُوعَدُونَ.
--সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৩১
(খ) ‘রযীন’ হলেন ষষ্ঠ শতকে মালেকী মাযহাবের একজন আলেম। পূর্ণ নাম রযীন ইবনু মুআবিয়া আল-আবদারী। তাঁর জন্মস্থান আন্দালুস, তবে তিনি মক্কা মুকাররমার অভিবাসী ছিলেন। তিনি ৫২৫ হিজরী সনে মক্কায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর জীবনী জানার জন্য দেখা যেতে পারে- আল ইকদুছ ছামীন ফী তারীখিল বালাদিল আমীন, তাকীউদ্দীন ফাসী, ৪/৩৯৮ এবং সিয়ারু আলামিন নুবালা, যাহাবী ২০/২০৪
মিশকাতের মুসান্নিফ উপরোক্ত স্থানে রযীনের যে কিতাবটির প্রতি ইশারা করেছেন সেটি হল, تجريد الصحاح والسنن নামক কিতাব। এতে তিনি সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবূ দাউদ , সুনানে নাসায়ী এবং মুয়াত্তা এই ছয় কিতাবে বর্ণিত হাদীসসমূহ সনদ ছাড়া শুধু মতনকে একত্রে সংকলন করেছেন। পূর্বোক্ত ছয় কিতাবের হাদীসসমূহ একত্রে সংক্ষেপে সংকলন করতে গিয়ে রযীন রহ. বিভিন্ন প্রসঙ্গে নিজের থেকে এমন কিছু রেওয়ায়েতও সংযোজন করেছেন যা উপরোক্ত কিতাবগুলোতে নেই। তিনি নিজের সংযোজিত রেওয়াতগুলোকে সাধারণত সনদ বর্ণনা করা ছাড়াই এবং উৎসগ্রন্থের উদ্ধৃতি ছাড়াই উল্লেখ করেছেন। প্রশ্নোক্ত হাদীসটিও রযীন রহ. তাঁর কিতাবে সনদ এবং কিতাবের হওয়ালা ছাড়াই বর্ণনা করেছেন।
রযীন এবং তাঁর কিতাবের পর্যালোচনার জন্য শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ রহ. এর সারগর্ভ আলোচনা পড়ে নিতে পারেন, যা তিনি مبادئ علم الحديث وأصوله কিতাবের ৬৫৭-৬৫৯ নং পৃষ্ঠায় ১ ও ২ নং হাশিয়ায় লিখেছেন। এটি মূলত হযরত শাব্বির আহমদ উসমানী রহ. রচিত ফতহুল মুলহিম গ্রন্থের মুকাদ্দিমাহ; যা পরবর্তীতে শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ রহ. নিজ তাহকীক ও তালীকসহ ভিন্নভাবে উপরোক্ত নামে ছেপেছেন।
(গ) এ বিষয়ে স্বতন্ত্র অনেক কিতাব ও রিসালা রয়েছে। এছাড়া আকায়েদ তাফসীর, হাদীস, উসূলে হাদীস, উসূলে ফিকহ এবং সিয়ারুস সালাফ বিষয়ক কিতাবেও এ বিষয়ের আলোচনা পাওয়া যাবে। আমি এখন কেবল তিনিটি কিতাবের কথা উল্লেখ করছি- ১. ই‘লামুল মুয়াক্কিয়ীন, শায়খ ইবনুল কায়্যিম রাহ.
২. মাকামে সাহাবা, মুফতী শফী রাহ.
৩. শিয়া-সুন্নী ইখতেলাফ আওর সিরাতে মুস্তাকীম, মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানবী রাহ.। এ কিতাবের ইত্তেবায়ে সাহাবা সংক্রান্ত আলোচনা । অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও এবং অনন্য সাধারণ।