আমি জানি, দরসী পড়া দ্বারা ভালো আলেম হওয়া যায় না। খারেজী মুতালাআর প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমাদের জামাতে কিছু ছাত্র আছে, যারা দরসের পড়ার প্রতি তেমন গুরুত্ব দেয় না, পরীক্ষার জন্য রেখে দেয়। সারাদিন খারেজী কিতাব মুতালাআ করে। আমিও আগে এমন করতাম। যার কারণে হেদায়াতুন্নাহু, কাফিয়া জামাতের কিতাবগুলো ভালোভাবে আয়ত্ব নেই। তাদের অবস্থা এমন যে, যদি এই খারেজী কিতাবগুলো নেসাবভুক্ত করা হত তবে তারা ভিন্ন কিতাব পড়ত। তাই এখন তলাবুল কুল ফাওতুল কুল হচ্ছে বলে মনে হয়। কোনটা ফরয, কোন্টা নফল তা জানা না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে।
তাই আমার জানার বিষয় হল, এই মুতালাআ কি উপকারী হবে? আর মুতালাআর ক্ষেত্রে কোনটা ফরয, কোনটা নফল জানাবেন। দরসী কিতাব কোনটা কী পরিমাণ আয়ত্ব করার পর খারেজী কিতাব পড়ব? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
‘খারেজী মুতালাআ’-এর তুলনায় ‘ইযাফী মুতালাআ’ শব্দটি আমার কাছে বেশি পছন্দের। ইযাফী মুতালাআ সম্পর্কে অনেকবার লেখা হয়েছে যে, এর পরিমাণ, ধরন ও কিতাব নির্বাচন সবকিছু তালীমী মুরববীর নেগরানী ও তাদের পরামর্শ মোতাবেক হওয়া জরুরি। এমনকি তিনি যদি কারো জন্য শুধু দরসী কিতাবগুলোর উপর ক্ষান্ত থাকা ও ইযাফী মুতালাআ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকার সিদ্ধান্ত দেন তাহলে তার জন্য এটা মেনে নেওয়াই জরুরি।
এটা তো সবাই জানে যে, তালিবে ইলমীর যামানায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল দরসী কিতাবগুলো আত্মস্ত করা। দরসের আগেই দরসী কিতাবগুলো মুতালাআ করা, মনোযোগ সহকারে সবকে উপস্থিত থাকা, এরপর তাকরার ও সবক সম্পর্কে উস্তাদগণের দেওয়া বিভিন্ন কাজ, তামরীন, কোনো মাকালা লেখা কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো আলোচনা উস্তাদের স্থিরকৃত কিতাব থেকে মুতালাআ করা-এসব কাজ হল তালিবে ইলমের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য।
এসব কর্তব্য পালনের পর যদি সময় পাওয়া যায় তাহলে অতিরিক্ত সময়ের কিছু অংশ যিকির, নফল নামায ইত্যাদিতে ব্যয় করা উচিত। তারপর কিছু অংশ ইযাফী মুতালায়। তবে আমি আগেও বলেছি, ইযাফী মুতালাআর বিষয়বস্ত্ত, কিতাব ইত্যাদি তালীমী মুরববীই নির্ধারণ করে দিবেন।
যে তালিবে ইলম নিজের ইচ্ছামতো মুতালাআ করতে চায় নিঃসন্দেহে সে নিজেকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিবে। পাঠ তো কেবল তখনই উপকারী হয় যখন তা পবিত্র হয় এবং পাঠ্যবস্ত্ত তালিবে ইলমের বয়স ও সার্বিক অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। আর এ তো বলাই বাহুল্য যে, এমন নির্বাচন শুধু মুরববীর পক্ষেই করা সম্ভব। তালিবে ইলম তো উপকারীর পরিবর্তে মজাদার বিষয়কেই প্রাধান্য দিবে। সমূহ সম্ভাবনা আছে যে, এই মজাদার ও চটকদার বিষয়ই তার জন্য আত্মঘাতী হয়ে দাঁড়াবে।
এজন্য তালিবে ইলমদের প্রতি আমার অনুরোধ, তারা যেন নিজ ইচ্ছামতো মুতালাআ করা থেকে বিরত থাকেন। দরসী কিতাবগুলোর সব হক আদায় করে কিতাব বুঝার যোগ্যতাকে পোক্ত করেন এবং ইযাফী মুতালাআকে সীমিত রাখেন ও তা সম্পূর্ণই উস্তাদের পরামর্শের সাথে সীমাবদ্ধ রাখেন। যারা ইযাফী মুতালাআর পিছনে পড়ে দরসী কিতাব থেকে উদাসীন থাকে তাদের ইস্তিদাদ সাধারণত অপরিপক্ক থেকে যায়। আর ইস্তিদাদ অপরিপক্ক থাকা তো সারা জীবনের ক্ষতি, সারা জীবনেও এর ক্ষতিপূরণ প্রায় অসম্ভব। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সব ধরনের প্রান্তিকতা থেকে হেফাযত করুন এবং সঠিক পন্থা অবলম্বনের তাওফীক দান করুন। আমীন।
আপনার জামাতের যে কিতাবগুলোর নাম উল্লেখ করেছেন ক্রমান্বয়ে এর সবগুলোই জরুরি। এর প্রতিটি কিতাব আত্মস্থ করা এবং এগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট অনুশীলনমূলক যেসব কাজ উস্তাদগণ দিয়ে থাকেন তা করাও জরুরি। অবশ্য শরহে জামী ও শরহে তাহযীব-এর দীর্ঘ শরাহ মুতালাআর পিছনে বেশি সময় ব্যয় করার প্রয়োজন নেই। শুধু কিতাব হল্ করে নেওয়াই যথেষ্ট।