মুহাম্মাদ ওমর ফারূক - জামিয়া আরাবিয়া ফরিদাবাদ

প্রশ্ন

(ক) আমি একজন তালিবুল ইলম। দরসের পাশাপাশি ইতিহাসগ্রন্থ অধ্যয়ন করা আমার অভ্যাস। আমার চারজন মুজাহিদের জীবনী ও অবদান সম্পর্কে জানার খুব ইচ্ছা। তারা হলেন : ১. মুসলমানদের প্রথম কেবলা পুনরুদ্ধারকারী হযরত সালাহুদ্দীন আইয়ূবী রাহ.। ২. ক্রুসেডারদের আতঙ্ক নূরুদ্দীন জঙ্গী রাহ.। ৩. মূর্তি-সংহারক সুলতান মাহমুদ গযনভী রাহ. এবং কনস্টান্টিনোপোল বিজয়ী সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ রাহ.। দুঃখের বিষয় আমি শুধু তাদের নিয়ে রচিত কোনো ইতিহাসের বইয়ের নাম জানি না। হুজুরের নিকট আমার অনুরোধ, উল্লেখিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে লিখিত ইতিহাসের বইয়ের নাম, লেখকের নামসহ পত্রিকায় উল্লেখ করবেন। প্রশ্ন : খ) হযরত আবুল হাসান আলী নাদভী রা. তার ‘‘তারীখে দাওয়াত ও আযীমত’’-গ্রন্থে সালাহুদ্দীন আইয়ূবী রাহ. ও নূরুদ্দীন জঙ্গী রাহ. এর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে কাযী বাহাউদ্দীন শাদ্দাদ কর্তৃক রচিত ‘‘আননাওয়াদিরুস সুলতানিয়া’’ থেকে অনেক তথ্য পেশ করেছেন, কিন্তু আমি অনেক অনুসন্ধান করেও বইটি পাইনি। হুজুরের নিকট বিনীত অনুরোধ, কিতাবটি কোথায় পাওয়া যেতে পারে, জানিয়ে বাধিত করবেন। প্রশ্ন : গ) হযরত আদীব ছাহেব হুজুর দা.বা. প্রাথমিক সাহিত্যচর্চার জন্য তার লিখিত বই পড়তে বলেন। আলহামদুলিল্লাহ। শুধু সাহিত্যচর্চার জন্য নয়; বরং তালিবে ইলমের অনেক অভাব পূরণে তার বইয়ের কোনো তুলনা নেই। কিন্তু আমরা তার বইসমূহের নাম না জানার কারণে অনেক অপূর্ণতায় ভুগছি। বাজারে বই কিনতে গেলে অকল্পনীয়ভাবে তার বই পাচ্ছি। কিন্তু আমরা যদি তার সকল বইয়ের নাম জানতাম তাহলে আমাদের অনেক উপকার হত। তাই হুজুরের নিকট আমাদের আকুল আবেদন, আদীব ছাহেব হুজুরের লিখিত, অনূদিত ও সম্পাদিত সকল বইয়ের তালিকা, প্রকাশনীর নামসহ আলকাউসারে প্রকাশ করে উপকৃত করবেন। সবশেষে হুজুরের নিকট দুআর আবেদন, আল্লাহ তাআলা যেন আমাকে ও আমার ছোট ভাইকে তাকী উসমানী (দা.বা.)-এর মতো মুহাক্কিক আলিম, আদীব হুজুরের (দা.বা.)-এর মতো লেখক এবং সালাহুদ্দীন আইয়ূবীর (রাহ.)-এর মতো মুজাহিদ হওয়ার তাওফীক দান করেন।

উত্তর

ইতিহাসের প্রতি ঝোঁকের জন্য আপনাকে মোবারকবাদ। তবে খেয়াল রাখা উচিত যে, এতে করে যেন মৌলিক পড়ালেখায় কোনো ত্রুটি বা অবহেলা না হয়। আলকুদস বিজয়ী ইউসুফ বিন আইয়ূব শাযী (৫৩২-৫৮৯ হি., মোতাবেক ১১৩৭-১১৯৩ ঈ.) যিনি সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ, তারীখ, রিজাল ও আলামের বিভিন্ন কিতাব ছাড়াও স্বতন্ত্র তাঁর জীবনের উপর অনেক কিতাব রচিত হয়েছে। তন্মধ্যে ১. ইবনে শাদ্দাদের ‘‘আননাওয়াদিরুস সুলতানিয়াহ ওয়াল মাহাসিনিল ইউসুফিয়্যাহ’’ (প্রকাশিত) যাকে ‘‘সীরাতে সালাহুদ্দীন’’ও বলা হয়, ইমাদ উদ্দীন কাতেবের দু’টি কিতাব ‘‘আল-বারকুশ শামী’’ এবং ‘‘আন-নাফহুল ক্বাসী ফিল ফাতহিল কুদসী’’ ও সমসাময়িকদের মধ্যে মুহাম্মাদ ফরীদ আবু হাদীদ এর ‘‘সালাহুদ্দীন আলআইয়ূবী ওয়া আসরুহু’’, ও আহমদ বিলী আল মিরীর ‘‘হায়াতু সালাহুদ্দীন আল-আইয়ূবী’’ উল্লেখযোগ্য। আর একই যুগের ন্যায়পরায়ণ শাসক নূরুদ্দীন মাহমুদ বিন ইমাদুদ্দীন জঙ্গী (৫১১-৫৬৯ হি., মোতাবেক ১১১৮-১১৭৪ ঈ.)-এর জীবনের উপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ হিসাবে মুহাম্মাদ বিন আবু বাকার বিন কাযী শাহবার কিতাব ‘‘আদদুররুস সামীন’’ এবং সমসাময়িকদের মধ্যে ড. আলী মুহাম্মাদ আস সাল্লাবীর রচিত দুটি কিতাব ‘‘আলকায়িদুল মুজাহিদ নূরুদ্দীন মাহমুদ জনকী’’ এবং ‘‘আসরুদ দাওলাতিল যানকিয়্যা’’ উল্লেখযোগ্য। এখানে উল্লেখ্য যে, এই দু’জন মনীষীর জীবন ও তাদের রাষ্ট্র পরিচালনাকালীন ঘটনার জন্য নির্ভরযোগ্য ও সর্বপ্রাচীন গ্রন্থ হল ইমাম আবু শামা (৫৯৯-৬৬৫ হি.) লিখিত ‘আর রাওযাতাইন ফী আখবারিদ দাওলাতাইন’ নামক কিতাবটি, যা বৈরুতের ‘মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ’ কর্তৃক পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। আর ভারতে অভিযান পরিচালনাকারী ‘ইয়ামিনুদ দাওলাহ’ সুলতান মাহমুদ বিন সুবাগতিগীন (৩৬১-৪২১ হি., মোতাবেক ৯৭১-১০৩০ ঈ.) এর জীবনের উপর মুহাম্মাদ বিন আবদুল জব্বার উতবীর লিখিত কিতাব ‘আল ইয়ামিনী’ দ্বাদশ শতাব্দীর আহমদ বিন আলী আলমানিনী দুই খণ্ডে যার ব্যাখ্যা লিখেছেন-মৌলিক কিতাব। চুতর্থ মুসলিম বীর সুলতান ‘মুহাম্মদ’ সানী (৮৩৩-৮৮৬ হি., মোতাবেক ১৪২৮-১৪৮১ ঈ.) যিনি ফাতেহ উপাধিতেই প্রসিদ্ধ। তিনি ছিলেন খোলাফায়ে ওসমানিয়ার সপ্তম খলীফা। তিনি পরবর্তী যুগের হওয়া সত্ত্বেও তাঁর জীবনের উপর তখনকার যুগের ঐতিহাসিকরা খুব কমই লিখেছেন। এই বিষয়টি আফসোস করে বলেছেন মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উছমানী। তিনি তাঁর তুরষ্কের সফরনামায় লেখেন, ‘আফসোসের কথা হল, বর্তমানে ওসমানীয় খলীফাদের ইতিহাসের অধিকাংশ সূত্র ইংরেজিতে। এই বিষয়ের মৌলিক গ্রন্থগুলি ঐসব পশ্চিমা ইতিহাসবিদদেরই লেখা অথবা ঐ সব ইংরেজি গ্রন্থাদি থেকেই আহরণ করা নতুবা তা তুর্কী ভাষায় রচিত, যা থেকে তুরষ্কের বাইরের মুসলিম পাঠক উপকৃত হতে পারে না। এজন্য না জানি কত ‘হাকীকত’ এখনও পর্দার আড়ালে রয়ে গেছে, যে পর্যন্ত আমরা এখনও পৌঁছতে পরিনি। (জাহানে দীদাহ পৃ. ৩২৯) তবু ইদানীং আরবী ভাষায় তার জীবনের উপর স্বতন্ত্র কিতাব ‘মুহাম্মদ আল-ফাতিহ’ এসেছে, যার লেখক হলেন, ড. আলী মুহাম্মদ আস সাল্লাকী। এছাড়াও তার কিতাব ‘আদ-দাওলাতুল উসমানিয়া আওয়ামিলুন নুহুদ ও আসবাবুস সুকুত’ও একটি ভালো কিতাব। প্রশ্নোক্ত চারজন মনীষীর মূল নাম ও মৃত্যুসন লিখে দেওয়াতে এখন আপনি সহজে উল্লেখিত স্বতন্ত্র কিতাব ছাড়াও ‘আলাম’ ও ‘তারীখ’ সংক্রান্ত যে কোনো নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে পারেন। মনে রাখবেন, এই গ্রন্থগুলোও তাদের জীবনীর মৌলিক উৎস। উত্তর : খ) হ্যাঁ, ৭ম হিজরীর প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ আবুল মাহাসিন বাহাউদ্দীন ইউসুফ বিন রাফে বিন তামীম মাওসীলি (৬৩৫ হি.) যিনি কাযী শাদ্দাদ নামে সমধিক প্রসিদ্ধ, এর লিখিত এই কিতাবটি যার পূর্ণ নাম আমি কিছু আগেই উল্লেখ করেছি এটি প্রকাশিত হয়েছে অনেক আগেই। এটি ড. জামাল উদ্দীন আশশায়্যাল এর তাহকীকে মিসরের কায়রোর প্রসিদ্ধ মাকতাবাতুল খানজী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। উত্তর : গ) এখানে উল্লেখ করার তো প্রয়োজন নেই। আপনি একদিন ‘মাদরাসাতুল মদীনা’ আশরাফাবাদ অথবা বাংলা বাজারস্থ ইসলামী টাওয়ারে ‘সাবআ সানাবিল’ বা ‘দারুল কলম’ প্রকাশনীতে গিয়ে সাধ্যমতো অনুসন্ধান করে নিজেই একটি তালিকা তৈরি করে নিতে পারেন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুহসিন উদ্দীন - ঝিনাইদহ

প্রশ্ন

প্রশ্ন : ২. ক) আমি একজন শরহে জামী জামাতের ছাত্র। আমাদের জামাতে ক. তরজমাতু মাআনিল কুরআন (শেষ ১০ পারা), খ. কানযুদ দাকাইক গ. নূরুল আনোয়ার (সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস) ঘ) শরহে জামী ঙ. শরহে তাহযীব চ. তালখীসুল মিফতাহ পড়ানো হয়। হযরতের নিকট আবেদন এই যে, আমরা উক্ত কিতাবগুলো কীভাবে পড়লে আয়ত্ত করা সম্ভব এবং কিতাবগুলোর সাথে কোন কোন শরাহ মুআলাআ করলে উপকৃত হতে পারব। প্রশ্ন : খ) ইরাবুল কুরআন বিষয়ক মুদ্রিত কিছু কিতাবের নাম নভেম্বর ’০৯ সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছিল। তার মধ্যে কোনটি আমাদের জন্য বেশি উপকারী হবে তা উল্লেখ করলে হযরতের নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

ক) কিতাবী ইসতি’দাদ তৈরির প্রাথমিক ও মৌলিক স্তরটি আপনি পেরিয়ে এসেছেন। নেসাবভুক্ত কিতাবগুলোর দিকে নজর বুলালে আপনি দেখতে পাবেন, এখানে নাহব-ছরফের কোনো কিতাব নেই। শরহে জামী যদিও নাহুর কিতাব, তবে আমি একে ‘ফালসাফায়ে নাহু’র কিতাব বলাটাই শ্রেয় মনে করি। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে যে ফালসাফার তেমন কোনো দখল নেই। যাই হোক, যেহেতু ‘কিতাবী ইসতিদাদ’ তৈরির মৌলিক স্তরটি আপনি পেরিয়ে এসেছেন এখন আপনার প্রধান কাজ হবে বাস-বক্ষেত্রে আপনার এই ইসতিদাদ কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা যাচাই করে দেখা। আপনার পাঠ্যতালিকাভুক্ত সব কিতাবই যেহেতু আরবী ভাষায়, তাই সব কিতাবই এমনভাবে পড়তে হবে যাতে নাহবী-ছরফী কোনো দুর্বলতা আর না থাকে। কিতাবের সঠিক মর্ম ও মুসান্নিফের উদ্দেশ্য অনুধাবনে সব সমস্যা যাতে কাটিয়ে উঠতে পারেন এ জন্য নোটের সাহায্য নেওয়া একেবারে পরিত্যাগ করতে হবে। প্রত্যেকটি কিতাবের আরবী ‘মুআররা’ নুসখা পাশে রাখুন। প্রয়োজনে আরবী শরাহ, হাশিয়া ও সংশ্লিষ্ট উস্তাদের সহযোগিতা নিন। এ গেল একটি মৌলিক কথা। এবার আপনার নেসাবভুক্ত কিতাবগুলোর ব্যাপারে কিছু আরয করতে চাই। প্রথমত আপনাকে এজন্য মুবারকবাদ দেই যে, আপনি জামাতের কিতাবের মধ্যে ‘তারজমাতু মাআনিল কুরআন’-এর কথাই আগে উল্লেখ করেছেন। বাস্তবেও তা বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। কিন্তু হায়! আজ তা বড় অমনোযোগ ও অবহেলার শিকার। যেহেতু শেষের দশ পারার পুরোটাই আপনার এই বছরের নেসাবভুক্ত তাই দীর্ঘ কোনো তাফসীরের পেছনে না পড়ে আপনার উচিত হবে, নিয়মিতভাবে প্রত্যেকটি আয়াতের অর্থ ও মর্ম অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া। যাতে একটি আয়াতও ছুটে না যায়। আর এজন্য আরবী ভাষায় জাবির জাযায়েরীকৃত ‘আয়সারুত তাফাসীর’ এবং ‘তাফসীরে উসমানী’ বা মাওলানা মুফতী তাকী উছমানী দা.বা.-কৃত ‘আছান তরজমায়ে কুরআন’ নিয়মিত পড়ুন। উর্দূ না বুঝলে এই দুটির বঙ্গানুবাদ অথবা এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত বঙ্গানুবাদ তো আপনার হাতের নাগালেই আছে। প্রাসঙ্গিক কোনো প্রয়োজনে ‘তাফসীরে ইবনে কাসীরের’ সাহায্য নিন। তবে শেষ দশ পারায় যে বিশেষ কাজটির প্রতি আপনাকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে তা হল, শেষ দিকের সূরাগুলোর গরীব শব্দগুলোর অর্থ ও তাহকীক ভালোভাবে আত্মস্থ করা। এজন্য লোগাতুল কুরআন বিষয়ের কোনো কিতাব সংগ্রহ করতে পারেন। দ্বিতীয় কিতাব কানযুদ দাকায়েক। এটি হানাফী ফিকহের প্রসিদ্ধ মতন। এটি পড়ার সময় কিতাবের মর্মার্থ বুঝার সাথে সাথে মুসান্নিফের নিজস্ব রুমুয ও ইশারাগুলো খুব ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করবেন। সুরতে মাসআলা, হুকুম এবং ইখতেলাফে উলামা (যদিও তা দলীল ছাড়াই হোক না কেন) আত্মস্থ করতে হবে। আর শরাহর কথা বললে হিন্দুস্থানী নুসখার আরবী হাশিয়া ও আল বাহরুর রায়েক নিয়মিত মুতআলাআ করার মতো। নূরুল আনওয়ার (সুন্নাহ) এর মতনেই তো মানার-এর মূল মতনের বিস্তৃত ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রয়োজনের সময় কামরুল আকমার তো আছে। তবে উসূলে ফিকহ যেহেতু ইলমে দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফন আর দরসে নেযামীর প্রায় শেষদিকের একটি কিতাব হল নূরুল আনওয়ার তাই কিতাবের মূল মতন ‘আলমানার’ হল করার জন্য এবং ফনের সঙ্গে তাআল্লুক গড়ে তোলার জন্য আল্লামা নাসাফী রাহ.-এরই লিখিত মানারের শরাহ ‘কাশফুল আসরার’ আর আবদুল মাজীদ তুরকমানীর সদ্য লিখিত কিতাব ‘দিরাসাতুন ফী উসূলিল হাদীস আলা মানহাজিল হানাফিয়্যাহ’ সংগ্রহ করে নিয়মিত মুতালাআ করতে পারলে ভালো হবে বলে মনে করি। আর শরহে জামীর জন্য হাওয়াশী মুতাফাররাকা ও শরহে তাহযীবের জন্য ‘তুহফায়ে শাহাজাহানী’ অনেকটা সহজ ও সাবলীল বলে মনে হয়। ‘তালখীসুল মিফতাহ’র জন্য সুবকী-কৃত ‘আরুসুল আফরাহ’ তাফতাযানীর ‘মুখতাছার’ থেকেও কিছুটা সহজ। এটিও আপনি সংগ্রহ করতে পারেন। উত্তর : খ) কোনটি বেশি উপকারী হবে-তা বলার জন্য আপনার ইসতিদাদ এবং এই বিষয়ে মুতালাআর জন্য কতটুকু সময় আপনি বের করতে পারবেন তা জানা জরুরি। তবুও বলি, মুহিউদ্দীন আদ-দরবেশ লিখিত ‘ইরাবুল কুরআনিল কারীম ওয়াবায়ানুহু’ একটি সহজলভ্য কিতাব। এই কিতাবে ‘ইরাব’ ছাড়াও লুগাত, বালাগাত-বয়ান ও কিছু ফাওয়ায়েদও পাওয়া যায়, যা একটি বাড়তি লাভ। আর যদি সংক্ষিপ্ত কোনো কিতাবের কথা বলেন তাহলে বৈরুতের দারুন নাফায়িস থেকে এক খণ্ডে প্রকাশিত মুহাম্মাদ আত-তাইয়িব আল-ইবরাহীমের ‘‘ইরাবুল কুরআনিল কারীম’’ সংক্ষিপ্ত অথচ সহজ একটি কিতাব। এটিও আপনি সংগ্রহ করতে পারেন। তবে ভালো হয় আপনার হাতের কাছে যদি এ বিষয়ক কয়েকটি কিতাব থাকে তবে আপনি নিজেই একটি আয়াত নিয়ে কয়েকটি কিতাব থেকে ইরাব সংক্রান্ত বহস পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোনটির উসলুব আপনার জন্য সহজ হবে এবং তরজমা বোঝার জন্য সহায়ক হবে। এরপর তা আপনি নিয়মিত মুতালাআ করতে পারেন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আজিজুল্লাহ - জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

প্রশ্ন

প্রশ্ন : ৩. আমি জামাতে চাহারমের ছাত্র। শিক্ষা-পরামর্শে হুজুরের মাশওয়ারা মতো আরবী হাশিয়া ও শরাহগুলো পড়তে চেষ্ট করি। আলহামদুলিল্লাহ, প্রায়ই বুঝি। কিন্তু মাঝে মধ্যে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হই। ভেবেছি, এখন থেকে যে সব বিষয়ে সমস্যার সম্মুখীন বেশি হই এগুলোর জন্য হুজুরের শিক্ষা-পরামর্শের সাহায্যে নেব। সেই হিসাবে আজ একটি সমস্যার কথা উল্লেখ করছি। আশা করি, সমাধান দিয়ে উপকৃত করবেন। সমস্যাটা হল, কোনো শব্দের তাহকীক করতে গিয়ে বিভিন্ন শরাহ বা হাশিয়ার মধ্যে المعجمة، المهملة، الموحدة، المثناة، المثلثة، التحتانية، الفوقانية ইত্যাদি শব্দ লেখা থাকে। এ শব্দগুলির অর্থ কী? এগুলো কেন লেখা হয়?

উত্তর

মাশাআল্লাহ, আপনার মেহনতের কথা শুনে খুশি হলাম। আপনি মেহনত চালিয়ে যান। অবিরাম মেহনতের মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ একদিন ‘রুসূখ ফিল ইলম ও তাফাক্কুহ ফিদ্দীন’ অর্জন করতে পারবেন। আল্লাহ তাওফীক দিন। আমীন। আপনি প্রশ্নে যেসব শব্দ উল্লেখ করেছেন এই পরিভাষাগুলো সাধারণত আরবী শব্দের ‘জবতে’র ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আরবী ভাষার লেখারূপের সূচনালগ্নে আরবী আর আযমীদের জন্য এই নূকতা বলেই হয়তো এই সব নূকতাওয়ালা বর্ণের নাম দেওয়া হয় ‘আলমু’জামাহ’ আর কিছু বর্ণ রাখা হয় নূকতাবিহীন। এর নাম রাখা হয় ‘আলমুহমালা’। সে যাই হোক, কোনো কোনো মাক্ষী নবীশের কবলে পড়ে বা অন্য কোনো কারণে এই নুকতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভুলভ্রান্তি থেকে রক্ষার জন্য ‘জবতটাকে আরো স্পষ্ট করার জন্য বলে দেওয়া হয় নুকতাটা বর্ণের উপরে হবে না নিচে। উপরে হলে ‘আলফাওকিয়্যহ’ বা ‘আলফাওকানিয়া’ বা ‘ফাওকা’ আর নিচে হলে ‘আত-তাহতিয়্যাহ’ বা ‘আত-তাওতানিয়া’ বা ‘তাহতা’ বলা হয়। এরপর আবার নুকতা কয়টি হবে। একটি হলে ‘আলমুওয়াহহাদা’। আর দুটি হলে ‘আলমুছান্নাহ’ আর তিনটি হলে ‘আলমুছাললাছাহ’ বলে জবত করা হয়। যেমন আরবী বর্ণমালার নিচে এক নুকতাওয়ালা ‘বা’ কে ‘মুওয়াহহাদা’ আর উপরে দু নুকতা ওয়ালা ‘তা’ ‘মুছান্নাহ-ফাওকা’ আর নিচে দু নুকতা ওয়ালা ‘ইয়া’ কে ‘মুছান্না তাহতা’ অথবা ‘মুছান্নাত তাহতিয়্যাহ’ আর তিন নুকতাওয়ালা ‘সা’ কে ‘মুছাল্লাছাহ’ আর নুকতাওয়ালা ‘খা’ ‘জাল’ ‘সীন’ ‘যাদ’ ‘গাইন’ ইত্যাদি বর্ণকে ‘আলমুহমালাহ’ বলে। এমনিভাবে রায়ে মুহমালাকে যায়ে মুজামা থেকে পার্থক্য করণের জন্য প্রথমটিকে ‘হামযা বা’দা আলিফ’ আর দ্বিতীয়টি যায়ে মু’জামাকে ‘মুছান্নাহ তাহতা বা’দা হামযাহ’ বলা হয়ে থাকে। (দেখা যেতে পারে আলমুগনী পৃ. ২) উপরোক্ত কথাটি মাথায় রেখে শরাহ-হাশিয়ার জবতগুলোতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিন। বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ।

শেয়ার লিংক