আল্লাহ হযরতের নেক ছায়াকে দীর্ঘায়িত করুন। হযরতের নিকট নিমেণাক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান কামনা করছি।
ক. মুহাম্মাদ মুহিউদ্দীন দরবেশকৃত ইরাবুল কুরআন, যা দারু ইবনে কাছীর থেকে ৯ খ-- প্রকাশিত হয়েছে। তার ৬ষ্ঠ খ--র ১৯২ পৃষ্ঠায় بين المعتزلة وأهل السنة শিরোনামে আলোচনার শেষদিকে লিখেছেন-
وغالب الشافعية أشاعرة، والغالب في الحنفية معتزلة، والغالبة في المالكية قدرية، والغالب في الحنابلة حشوية .
উল্লেখিত ইবারতের বক্তব্যের বাস্তবতা কতটুকু এবং এ ব্যাপারে কোনো দলীল থাকলে জানালে ভাল হয়।
খ. সাথে সাথে মুসান্নিফ রাহ. তার উক্ত কিতাবের মধ্যে ‘ফাওয়াইদ’ শিরোনামে বহু ইখতিলাফ উল্লেখ করেছেন, যা নাহুর কায়েদার ব্যাপারে নয়; তার উপর আমরা কতটুকু নির্ভর করতে পারি। উক্ত কিতাবের মান লেখকের মান এবং মাজহাব সম্পর্কে জানতে চাই।
গ. হযরতের সনদে ছাত্র ভাইদের মুখে শোনা যায় যে, কাফিয়ার ছাত্রদের জন্য কাফিয়া এবং শরহে জামী অপেক্ষা قطر الندى পড়াই বেশি উত্তম। কাফিয়ার ছাত্রদের জন্য নাহুর বিস্তারিত মাসায়েল এবং মুতালাআয় রাখার মত নির্ভরযোগ্য ‘জাদিদ’ কিছু কিতাবের নাম উল্লেখ করলে ভাল হয়।
হযরতের নিকট দুআ কামনা করছি, আল্লাহ যেন আমাদেরকে ইলমের ময়দানে কবুল করেন। আমীন।
ক. উপরোক্ত ইবারতের ঢালাও বক্তব্য বাস্তবসম্মত নয়। স্থান, কাল, ব্যক্তি ও শ্রেণীর সীমারেখা উল্লেখ ছাড়া গড়পড়তা এমন মন্তব্য সঠিক হতে পারে না।
হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী হল চারটি ফিকহী মাযহাব ও তার অনুসারীদের উপাধি। এ সকল ফিকহী মাযহাবের সংকলক ইমামগণ সকলেই আকীদা ও উসূলুদ্দ্বীনের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর ইমাম ছিলেন।
মূলত সকল আইম্মায়ে দ্বীন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর অন্তর্ভুক্ত। ইমাম আবূ মানসুর আব্দুল কাহের বাগদাদী রাহ. (মৃত্যু ৪২৯ হি.) ‘উসূলুদ্দীন’ কিতাবে তাঁর যামানা পর্যন্ত বিভিন্ন যুগের ফিকহ, হাদীস, তাসাওউফ এবং নাহ্ব ও লুগাহ শাস্ত্রের ইমামদের সম্পর্কে আলোচনা করার পর বলেছেন,
وفي هذا دليل على أن جميع أئمة الدين في جميع العلوم من أهل السنة.
দ্রষ্টব্য : প্রগুক্ত, পৃ. ৩১২-৩১৭
বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রসিদ্ধ চার ফিকহী মাযহাব অনুসারে যারা যুগে যুগে আমল করে আসছেন, তাদের মাঝে বিভিন্ন অঞ্চলে নানা স্তরের, নানা শ্রেণীর এবং নানা পেশার মানুষ রয়েছেন। এঁদের অধিকাংশই মৌলিকভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন যুগে এমন অনেক ব্যক্তি ও দলের আবির্ভাব হয়েছে, যারা ফিকহী মাসাআলার ক্ষেত্রে উপরোক্ত চার মাযহাবের কোনো একটির অনুসরণ করত বা অনুসরণের দাবি করত; কিন্তু আকীদা-বিশ্বাস ও উসূলুদ্দীনের ক্ষেত্রে তারা চার ইমামের কারো অনুসরণ করত না, বরং ভিন্ন কোনো বিদআতী আকীদা পোষণ করত। নির্দিষ্ট কোনো যুগে বা স্থানে, বিশেষ কোনো শ্রেণীর মাঝে বা পরিম-লে উপরোক্ত ধরনের বিদআতী আকিদা পোষণকারী ব্যক্তিদের কখনো হয়তো প্রাধান্য ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো ফিকহী মাযহাবের অনুসারীদের মাঝে সব যুগে, সব স্থানে, সব শ্রেণীর মাঝে বিদআতী আকীদা পোষণকারীদের প্রাধান্য ছিল এ কথা সত্য নয়।
এ ব্যাপারে ইমাম তকীউদ্দীন সুবকী রাহ.-এর নিমেণাক্ত বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য-
والفرقة الأشعرية هم المتوسطون في ذلك، وهم الغالبون من الشافعية والمالكية والحنفية وفضلاء الحنابلة وسائر الناس. وأما المعتزلة فكانت لهم دولة في أوائل المائة الثالثة، ساعدهم بعض الخلفاء، ثم انخذلوا، وكفى الله شرهم.
দ্রষ্টব্য: আস-সাইফুস ছাকীল, ইমাম সুবকী পৃ. ২২
খ. ইরাবুল কুরআন ওয়া বায়ানুহু কিতাবের মুসান্নিফ মুহিউদ্দীন দরবেশ রাহ. সিরিয়ার বিখ্যাত আরব সাহিত্যিক ও কবি ছিলেন। তিনি কোন্ ফিকহী মাযহাবের অনুসারী তা নির্দিষ্টভাবে আমার জানা নেই।
আর তার উপরোক্ত কিতাবটি আদ্যপান্ত আমার পড়ার সুযোগ হয়নি। তবে এর বিভিন্ন স্থান মুরাজাআত করার সুযোগ হয়েছে। তাতে মনে হয়েছে যে, এতে তিনি নির্বিচারে সব কথা উল্লেখ করেননি, বরং বাছাই করে তথ্য উপাত্ত সন্নিবেশিত করেছেন। এ হিসাবে কিতাবটি ভালোই মনে হয়। এ কিতাব থেকে ইস্তেফাদাহ করা যেতে পারা। তবে নির্দিষ্ট কোনো কথা শায ও আপত্তিকর হলে তা অবশ্যই তাহকীক করা জরুরি।
গ. আপনি আমার ব্যাপারে যে কথাটি শুনেছেন তা আমি সবার ব্যাপারে ব্যাপকভাবে বলিনি। ব্যাপকভাবে এমন কথা আমি বলতে পারি না। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য তার বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে আমি হয়তো সে কথা বলেছি।
কাফিয়া কিতাবটি একটি জামে মুখতাসার মতন। মূল কিতাবটিই বুঝে পড়া দরকার। এর সাথে অতিরিক্ত কোনো জাদীদ কিতাব তালিবে ইলমদের জন্য আমি মুনাসিব মনে করি না।