আবু নোমান - শর্শদি মাদরাসা, ফেনী

প্রশ্ন

শ্রদ্ধেয় উস্তাদজী!

بارك الله في حياتك مع الصحة والعافية

ইমাম তিরমিযী রাহ. রচিত আশশামায়েল কিতাবটির সঠিক ও পূর্ণ নাম কী- তালাশ করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি নাম পেয়েছি। এখন আমি জানতে চাই-

১. কাশফুয যুনূন-এর মধ্যে এই কিতাবের নাম লেখা হয়েছে-

الشمائل النبوية والخصائل المصطفوية

২. আল্লামা ইবরাহীম আলবাজুরী তাঁর রচিত শামায়েলের শরহে এই কিতাবের নাম الشمائل المحمدية  উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর শরহের নাম উল্লেখ করতে গিয়ে লেখেন-

وسميتها "المواهب اللدنية على الشمائل المحمدية".

শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামা দা. বা.-ও আলমাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়্যাহ-এর ভূমিকায় এই কিতাবের নাম الشمائل المحمدية উল্লেখ করেছেন।

সাইয়েদ ইমরানের তাহকীক তাখরীজকৃত শামায়েলে তিরমিযীর নুসখাতেও এই কিতাবের নাম الشمائل المحمدية উল্লেখ করা হয়েছে, যা দারুল হাদীস, কায়রো থেকে মুদ্রিত।

৩.শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. কাওয়াইদ ফী উলূমিল হাদীস-এর টীকায় এক আলোচনা প্রসংগে এই কিতাবের নাম  الشمائل النبوية উল্লেখ করেছেন।

শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ দা. বা. আলমাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ-এর ভূমিকায় শায়েখ আব্দুল ফাতাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.-এর নুসখা থেকে তাঁর লিখিত একটি মন্তব্য হুবহু উল্লেখ করেছেন, সেখানেও শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. এই কিতাবের নাম الشمائل النبوية উল্লেখ করেছেন।

মাকতাবায়ে শামেলায় ইমাম তিরমিযী রাহ.-এর জীবনী আলোচনায় তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহের তালিকায় এই কিতাবের নাম الشمائل النبوية উল্লেখ করা হয়েছে।

আমার হাতের কাছে যে সকল মাওয়াদ আছে সেগুলোতে উপরোক্ত তিন ধরনের নাম পেয়েছি, তাই জানতে চাই- সঠিক নাম কোনটি?


উত্তর

ইমাম তিরমিযী রাহ.-এর এই কিতাবটি সংক্ষেপে  الشمائل নামেই প্রসিদ্ধ। তবে বিভিন্ন ভাষ্যকার ও টীকাকার এবং প্রকাশকগণ উপরোক্ত নামের সাথে আরো কোনো অংশ যোগ করে থাকেন, যার কিছু বিবরণ আপনি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আসলে কিতাবটির পূর্ণ নাম কী তা নিশ্চিতভাবে বলতে হলে আরো তাহকীকের প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে প্রাচীনতম এমন কোনো মুতকান নুসখা ও অনুলিপির, যার মুত্তাসিল সনদ রয়েছে মুসান্নিফের নুসখা পর্যন্ত।

তবে কুতুবে হাদীসের বিভিন্ন আছবাত-এ কিতাবটির নাম এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-

كتاب شمائل النبي صلى الله عليه وسلم

দ্রষ্টব্য : ফিহরিসতু ইবনে খায়ের, পৃ.১২৮; আলগুনইয়াহ, কাযী ইয়ায, পৃ. ১৩২; আত-তাহবীর ফীল মুজামিল কাবীর, সাময়ানী, পৃ. ১৯৬; ইছারাতুল ফাওয়াইদ, সালাহুদ্দীন আলায়ী, পৃ. ২২৭; মাশইখাতু ইবনিল জাওযী, পৃ. ১৪২

তাই আপতত আমার খেয়ালে অর্থ ও উসলূবের বিচারে পূর্ণাঙ্গ নাম হিসেবে শেষোক্ত নামটিকেই অধিক মুনাসিব মনে হয়। অর্থাৎ-

كتاب شمائل النبي صلى الله عليه وسلم

আর এ নামেই আরবের কোনো কোনো মাকতাবা থেকে কিতাবটি ছাপা হয়েছে।

শেয়ার লিংক

তাসনীম আরেফীন - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

প্রশ্ন

 

আসসালামু আলাইকুম, আমার প্রশ্ন হচ্ছে সব মিলিয়ে হাদীসের কিতাবের সংখ্যা কত?


 

উত্তর

হাদীসের সংকলন ও উৎসগ্রন্থের সংখ্যা তো প্রচুর এবং হাদীস শরীফ বিভিন্ন গ্রন্থে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। হাদীসগ্রন্থের মোট সংখ্যা কত তা কীভাবে বলা সম্ভব। কারণ, হাদীসের বহু গ্রন্থ এখনো পান্ডুলিপি আকারে বিশে^র বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত রয়েছে, যা এখনো ছাপেনি। আর  যেসব গ্রন্থ ছাপা হয়েছে তার সবগুলো সবার কাছে নেই। তবে যেসব হাদীসের গ্রন্থ মুহাদ্দিসীন ও উলামায়ে কেরামের নযরে এসেছে এবং তাদের নাগালে রয়েছে তাতে সমষ্টিগতভাবে দ্বীন ও শরীয়তের উৎস ও ভিত্তি সকল হাদীস ও আছার সন্নিবেশিত রয়েছে। সেসব হাদীস গ্রন্থের তালিকা ও পরিচয় জানার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিবলিওগ্রাফী, ক্যাটালগ ও গ্রন্থপঞ্জীর সহযোগিতা নেয়া যায়। এ ধরনের কয়েকটি গ্রন্থ ও পুস্তিকার নাম এখানে উল্লেখ করছি।

১. الرسالة المستطرفة، لمحمد بن جعفر الكتاني

২. دليل مؤلفات الحديث الشريف المطبوعة القديمة والحديثة

৩. المعجم المصنف لمؤلفات الحديث الشريف، لمحمد خير رمضان

শেয়ার লিংক

ইবনু হামিদ - ঢাকা

প্রশ্ন

হযরত! আল্লাহ তাআলা আপনার মেহনতকে কবুল কুরন। আমার দিলী তামান্না আপনার সাথে তাআল্লুক রাখা। আপনি মাঝে-মধ্যে চিঠির মাধ্যমে তাআল্লুক রাখার মশওয়ারা দিয়ে থাকেন।

আমি অনেকবার চিঠি পাঠানোর ইচ্ছা করেছি। কিন্তু চিঠি-পত্র প্রেরণের আদব-কায়দা সম্পর্কে কিছু জানি না বিধায় পাঠাতে পারি নাই। তাই যদি সম্ভব হয় চিঠি লেখার আদব-কায়দা প্রবন্ধ আকারে পেশ করলে আমার মতো অনেকেরই ফায়দা হবে ইনশাআল্লাহ।


উত্তর

চিঠিপত্র লেখার কিছু উসূল ও আদব তো আপনারও জানা থাকার কথা। আর আপনি আপনার উস্তাযকে জিজ্ঞাসা করেও তা জেনে নিতে পারেন এবং অনুশীলনের জন্য প্রথমে চিঠি লিখে উস্তাযকে দেখিয়ে সংশোধন করে নিতে পারেন। আমি এখানে এমন কিছু সাধারণ আদবের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, যা যেকোনো চিঠিপত্র লেখার সময় অনুসরণ করা দরকার-

১. চিঠির বিষয়বস্ত্ত স্পষ্ট ভাষায় এবং স্পষ্ট হস্তাক্ষরে লেখা।

২. চিঠির শুরুতে অবশ্যই বিসমিল্লাহ লেখা এবং সালাম পেশ করা।

৩. চিঠি লেখার দিন-তারিখ শুরুতে বা শেষে উল্লেখ করা।

৪. বড়দের কাছে পরামর্শের জন্য চিঠি লিখলে এবং চিঠির মাধ্যমে জওয়াব পেতে হলে চিঠির সাথে জওয়াবী খাম নাম-ঠিকানা লিখে পাঠানো। সম্ভব হলে খামে টিকিট লাগিয়ে দেওয়া।

৫. পরামর্শ চেয়ে লিখলে তা বাংলায় লিখলে পৃষ্ঠার বাম পাশে লেখা এবং ডান পাশ খালি রাখা, আর আরবী বা উর্দুতে লিখলে পৃষ্ঠার ডান পাশে লেখা এবং বাম পাশ খালি রাখা।

৬. পরামর্শ চেয়ে যে চিঠি লেখা হয় তাতে নিজের কোনো হালত ও অবস্থা অস্পষ্ট না রাখা।

৭. চিঠির শেষে নিজের পূর্ণ নাম ও ঠিকানা লেখা।

হযরত থানবী রাহ.-এর আদাবুল মুআশারা নামক রিসালায় চিঠিপত্র পাঠানোর কয়েকটি আদবের কথা উল্লেখ রয়েছে সেগুলো দেখে নিতে পারেন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সাইদুল ইসলাম - মুহাম্মাদনগর মাদরাসা, খুলনা

প্রশ্ন

১.আল্লাহ তাআলা হযরতকে নেক হায়াত দান করুন। আমি কাফিয়া জামাতের ছাত্র। ভবিষ্যতে আমার ইলমে তাফসীরে তাখাসসুস করার নিয়ত আছে, ইনশাআল্লাহ। আমি এখন থেকে কোন্ কোন্ কিতাব মুতালাআয় রাখতে পারি? এবং কুরআন তরজমা কীভাবে হল করব।

২. তাফসীরে ইবনে কাসীরের কোন্ নুসখা আমাদের জন্য অধিক উপকারী এবং সহজলভ্য।

৩. উলূমুল কুরআনের বিস্তারিত নির্ভরযোগ্য সহজলভ্য কোন্ কিতাব মুতালাআয় রাখতে পারি।

৪. হায়াতুস সাহাবার মিশরীয় ছাপাগুলোর কোন্টি বেশি মুহাক্কাক এবং তাখরিজ সম্বলিত?

হযরতের নিকট দুআ কামনা করছি।

উত্তর

(১) আল্লাহ তাআলা আপনার নিয়ত কবুল করুন এবং ভরপুর তাওফীক দান করুন। আপনি যে নিয়ত করেছেন তা বাস্তবায়নের জন্য উস্তাযের নেগরানীতে মেহনত জারি রাখতে হবে। কাফিয়া জামাত থেকে পরবর্তী আরো দুই জামাতে তরজমায়ে কুরআন পড়ানো হয়। তাই এই জামাতগুলোতে কুরআনে  কারীমের সহীহ তরজমা শেখা এবং আয়াতের মর্ম বুঝার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য আপনি তরজমায়ে শাইখুল হিন্দ এবং ফাওয়ায়েদে উছমানী নিয়মিত মুতালাআ করতে পারেন। বাংলা তরজমার মধ্যে এমদাদিয়া লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত বঙ্গানুবাদ বা সদ্য প্রকাশিত আসান তরজমায়ে কুরআন (অনুবাদ : মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম) থেকে সহযোগিতা নিতে পারেন। পাশাপাশি সম্ভব হলে আবু তাহের মেসবাহ দা.বা. রচিত الطريق إلى القرآن الكريم দেখতে পারেন। আর কুরআনের গরীব-বিরল ও কঠিন শব্দসমূহের জন্য রাগেব আস্ফাহানী রাহ.-এর  المفردات في غريب القرآن  বা মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নোমানী রাহ.-এর لغات القرآن দেখতে পারেন। বিশদ তাফসীর পড়ার আগে কুরআনের সহীহ তরজমা শেখা এবং সহজ-সরলভাবে অর্থ ও মর্ম বোঝা বেশি জরুরি। তাই এ বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগ দিন। আর সাথে সাথে প্রত্যেক জামাতে যে যে ইলম ও ফনের কিতাব রয়েছে তারও হক আদায় করে বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন।

(২) এখন বিভিন্ন মাকতাবায় তাফসীরে ইবনে কাসীরসহ অনেক কিতাবের একাধিক নুসখা ও ছাপা রয়েছে। সবগুলোর খোঁজ-খবর আমার জানা নেই। নিজে দেখে কোনো একটি নির্বাচন করুন।

(৩) আপনি এখন এই মুতালাআ মুফতী তাকী উছমানী দামাত বারাকাতুহু-এর উলূমুল কুরআন দ্বারা শুরু করতে পারেন। আর এ ফনের বুনিয়াদী কিতাবসমূহের মধ্যে বদরুদ্দীন যারকাশী রাহ.-এরالبرهان في علوم القرآن এবং জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ.-এর الإتقان في علوم القرآن তো খুবই প্রসিদ্ধ ও সহজলভ্য। এ দুটো কিতাব আরো পরে সুযোগ মত মুতালাআ করতে পারেন।

(৪) হায়াতুস সাহাবা কিতাবটি শায়েখ বাশশার আওয়াদ মারুফের তাহকীক এবং সংক্ষিপ্ত তাখরীজ ও তালীকসহ মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ, বায়রুত থেকে পাঁচ খ-- ছেপেছে। আপনি এই নুসখাটি সংগ্রহ করতে পারেন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হুযাইফা - রংপুর

প্রশ্ন

তালীম ও তারবীয়াত সংক্রান্ত একটি দীর্ঘ প্রশ্ন।


উত্তর

আপনি ফেরত খামসহ অথবা সরাসরি সাক্ষাৎ করে পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

শেয়ার লিংক

শিব্বির আহমদ - মোমেনশাহী

প্রশ্ন

মুহতারাম, আল্লাহ তাআলা আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন এবং আপনার থেকে আমাদেরকে আরও বেশি উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন।

কয়েকটি বিষয়ের সমাধান বুঝে আসছে না, আশা করি জানিয়ে উপকৃত করবেন।

ক. সূরা জিন্ন দ্বারা বুঝা যায়, জিনেরা আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান এনেছে তারপরও নাকি জিনদের জান্নাতে যাওয়া নিয়ে ইমামদের মাঝে মতভেদ আছে। বিষয়টি মতভেদসহ বিস্তারিত জানতে চাই।

খ. কুরআন শরীফে অনেক জমার সীগা আলিফ ছাড়া কেন? যেমন- ১ নং পারার ৮ পৃষ্ঠায় بَاءُوْ  শব্দটি ও ২ নং পারার ১৫ নং পৃষ্ঠায় فَاءُوْ শব্দটি।

আবার অনেক শব্দ অহেদের সীগা কিন্তু আলিফসহ কেন? যেমন : সূরা বায়িন্যাহ يَتْلُوْا শব্দটি।

আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।


উত্তর

ক. জিন্ন জাতি শরীয়তের মুকাল্লাফ অর্থাৎ ঈমান আনা ও শরীয়ত মান্য করা তাদের উপরও ফরয- এ বিষয়ে কারো কোনো ইখতেলাফ নেই। এমনিভাবে জিন্নদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে না এবং যারা আল্লাহর নাফরমানী করবে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে এ বিষয়েও কোনো ইখতিলাফ নেই। কুরআনে কারীমের সুস্পষ্ট আয়াত ও সহীহ হাদীস দ্বারা এসব কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং এ বিষয়ে উম্মতের ইজমা রয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হল জিনদের মধ্যে যারা মুমিন ও নেককার তাদেরকে আখেরাতে কী প্রতিদান দেয়া হবে। এ ব্যাপারে সঠিক কথা হল, নেককার জিনরা মানুষের মতই জান্নাত লাভ করবে। জুমহুর ও অধিকাংশ আহলে ইলম থেকে এ কথাই বর্ণিত হয়েছে। তবে পূর্ববর্তী কোনো কোনো আহলে ইলম থেকে একথাও বর্ণিত হয়েছে যে, মুমিন ও নেককার জিনদের প্রতিদান হল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ এবং আখেরাতে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ। কিন্তু জান্নাতের যেসব নায-নিআমতের প্রতিশ্রম্নতি মানুষকে দেয়া হয়েছে তাতে জিনেরা শামিল হবে না, বরং তাদেরকে অন্যান্য প্রাণীর মত মাটি বানিয়ে দেয়া হবে।

শেষোক্ত এই মতটি যাদের দিকে সম্বন্ধ করা হয়, যেমন, ইমাম আবূ হানীফা রাহ.-এর প্রতি; তাদের প্রতি এ কথার সম্বন্ধ সন্দেহযুক্ত। কারণ তাদের পর্যন্ত এ কথার সহীহ কোনো সনদ আমাদের জানা নেই। অধিকন্তু এ মতটির পক্ষে শক্তিশালী কোনো দলীলও নেই। সুতরাং প্রথমোক্ত জুমহুরের মতটিই সহীহ ও অগ্রগণ্য। কেননা এ সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহর নুসূসের জাহির ও ব্যাপকতা থেকে প্রথমোক্ত কথাই প্রতীয়মান হয় এবং এর খেলাফ কোনো শক্তিশালী দলীল বিদ্যমান নেই।

দ্রষ্টব্য : তাফসীরু ইবনু কাছীর, তাফছীরু কাশশাফ, তাফসীরু আবিস সাউদ (সূরা আহকাফের ৩১ নং আয়াতের তাফসীর), তাফসীরে মাযহারী, (সূরা জিনের তাফসীর), কিতাবুন নুবুওয়াহ, ইবনু তাইমিয়া পৃ. ৩/১২৩৬

খ. দেখুন, আরবী লেখার সাধারণ رسم الخط বা লিখন পদ্ধতি এবং কুরআনে কারীমের রসমুল খতের মাঝে পার্থক্য রয়েছে।

বিভিন্ন মাসলেহাত ও কারণে কুরআনে কারীমের রসমুল খত "المصحف الإمامতথা হযরত উছমান রা. কর্তৃক সংকলিত মুসহাফের মত রাখা জরুরি। এর উপরই সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর কর্মধারা বিদ্যমান রয়েছে। তাই একে অপরিবর্তিত রাখাই সর্বস্বীকৃত বিষয়।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মফিজুর রহমান - মোহাম্মাদ নগর মাদরাসা, খুলনা

প্রশ্ন

 

আল্লাহ হযরতের নেক ছায়াকে দীর্ঘায়িত করুন। হযরতের নিকট নিমেণাক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান কামনা করছি।

ক. মুহাম্মাদ মুহিউদ্দীন দরবেশকৃত ইরাবুল কুরআন, যা দারু ইবনে কাছীর  থেকে ৯ খ-- প্রকাশিত হয়েছে। তার ৬ষ্ঠ খ--র ১৯২ পৃষ্ঠায় بين المعتزلة وأهل السنة   শিরোনামে আলোচনার শেষদিকে  লিখেছেন-

وغالب الشافعية أشاعرة، والغالب في الحنفية معتزلة، والغالبة في المالكية قدرية، والغالب في الحنابلة حشوية .

উল্লেখিত ইবারতের বক্তব্যের বাস্তবতা কতটুকু এবং এ ব্যাপারে কোনো দলীল থাকলে জানালে ভাল হয়।

খ. সাথে সাথে মুসান্নিফ রাহ. তার উক্ত কিতাবের মধ্যে ফাওয়াইদ শিরোনামে বহু ইখতিলাফ উল্লেখ করেছেন, যা নাহুর কায়েদার ব্যাপারে নয়; তার উপর আমরা কতটুকু নির্ভর করতে পারি। উক্ত কিতাবের মান লেখকের মান এবং মাজহাব সম্পর্কে জানতে চাই।

গ. হযরতের সনদে ছাত্র ভাইদের মুখে শোনা যায় যে, কাফিয়ার ছাত্রদের জন্য কাফিয়া এবং শরহে জামী অপেক্ষা قطر الندى পড়াই বেশি উত্তম। কাফিয়ার ছাত্রদের জন্য নাহুর বিস্তারিত মাসায়েল এবং মুতালাআয় রাখার মত নির্ভরযোগ্য জাদিদ কিছু কিতাবের নাম উল্লেখ করলে ভাল হয়।

হযরতের নিকট দুআ কামনা করছি, আল্লাহ যেন আমাদেরকে ইলমের ময়দানে কবুল করেন। আমীন।


 

উত্তর

ক. উপরোক্ত ইবারতের ঢালাও বক্তব্য বাস্তবসম্মত নয়। স্থান, কাল, ব্যক্তি ও শ্রেণীর সীমারেখা উল্লেখ ছাড়া গড়পড়তা এমন মন্তব্য সঠিক হতে পারে না।

হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী হল চারটি ফিকহী মাযহাব ও তার অনুসারীদের উপাধি। এ সকল ফিকহী মাযহাবের সংকলক ইমামগণ সকলেই আকীদা ও উসূলুদ্দ্বীনের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর ইমাম ছিলেন।

মূলত সকল আইম্মায়ে দ্বীন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর অন্তর্ভুক্ত। ইমাম আবূ মানসুর আব্দুল কাহের বাগদাদী রাহ. (মৃত্যু ৪২৯ হি.) উসূলুদ্দীন কিতাবে তাঁর যামানা পর্যন্ত বিভিন্ন যুগের ফিকহ, হাদীস, তাসাওউফ এবং নাহ্ব ও লুগাহ শাস্ত্রের ইমামদের সম্পর্কে আলোচনা করার পর বলেছেন,

وفي هذا دليل على أن جميع أئمة الدين في جميع العلوم من أهل السنة.

দ্রষ্টব্য : প্রগুক্ত, পৃ. ৩১২-৩১৭

বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রসিদ্ধ চার ফিকহী মাযহাব অনুসারে যারা যুগে যুগে আমল করে আসছেন, তাদের মাঝে বিভিন্ন অঞ্চলে নানা স্তরের, নানা শ্রেণীর এবং নানা পেশার মানুষ রয়েছেন। এঁদের অধিকাংশই মৌলিকভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন যুগে এমন অনেক ব্যক্তি ও দলের আবির্ভাব হয়েছে, যারা ফিকহী মাসাআলার ক্ষেত্রে উপরোক্ত চার মাযহাবের কোনো একটির অনুসরণ করত বা অনুসরণের দাবি করত; কিন্তু আকীদা-বিশ্বাস ও উসূলুদ্দীনের ক্ষেত্রে তারা চার ইমামের কারো অনুসরণ করত না, বরং ভিন্ন কোনো বিদআতী আকীদা পোষণ করত। নির্দিষ্ট কোনো যুগে বা স্থানে, বিশেষ কোনো শ্রেণীর মাঝে বা পরিম-লে উপরোক্ত ধরনের বিদআতী আকিদা পোষণকারী ব্যক্তিদের কখনো হয়তো প্রাধান্য ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো ফিকহী মাযহাবের অনুসারীদের মাঝে সব যুগে, সব স্থানে, সব শ্রেণীর মাঝে বিদআতী আকীদা পোষণকারীদের প্রাধান্য ছিল এ কথা সত্য নয়।

এ ব্যাপারে ইমাম তকীউদ্দীন সুবকী রাহ.-এর নিমেণাক্ত বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য-

والفرقة الأشعرية هم المتوسطون في ذلك، وهم الغالبون من الشافعية والمالكية والحنفية وفضلاء الحنابلة وسائر الناس وأما المعتزلة فكانت لهم دولة في أوائل المائة الثالثة، ساعدهم بعض الخلفاء، ثم انخذلوا، وكفى الله شرهم.

দ্রষ্টব্য: আস-সাইফুস ছাকীল, ইমাম সুবকী পৃ. ২২

খ. ইরাবুল কুরআন ওয়া বায়ানুহু কিতাবের মুসান্নিফ মুহিউদ্দীন দরবেশ রাহ. সিরিয়ার বিখ্যাত আরব সাহিত্যিক ও কবি ছিলেন। তিনি কোন্ ফিকহী মাযহাবের অনুসারী তা নির্দিষ্টভাবে আমার জানা নেই।

আর তার উপরোক্ত কিতাবটি আদ্যপান্ত আমার পড়ার সুযোগ হয়নি। তবে এর বিভিন্ন স্থান মুরাজাআত করার সুযোগ হয়েছে। তাতে মনে হয়েছে যে, এতে তিনি নির্বিচারে সব কথা উল্লেখ করেননি, বরং বাছাই করে তথ্য উপাত্ত সন্নিবেশিত করেছেন। এ হিসাবে কিতাবটি ভালোই মনে হয়। এ কিতাব থেকে ইস্তেফাদাহ করা যেতে পারা। তবে নির্দিষ্ট কোনো কথা শায ও আপত্তিকর হলে তা অবশ্যই তাহকীক করা জরুরি।

গ. আপনি আমার ব্যাপারে যে কথাটি শুনেছেন তা আমি সবার ব্যাপারে ব্যাপকভাবে বলিনি। ব্যাপকভাবে এমন কথা আমি বলতে পারি না। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য তার বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে আমি হয়তো সে কথা বলেছি।

কাফিয়া কিতাবটি একটি জামে মুখতাসার মতন। মূল কিতাবটিই বুঝে পড়া দরকার। এর সাথে অতিরিক্ত কোনো জাদীদ কিতাব তালিবে ইলমদের জন্য আমি মুনাসিব মনে করি না।

শেয়ার লিংক