আমি হিদায়াতুন্নাহু জামাতের ছাত্র। আজ আমি খুব ভারাক্রান্ত। দুঃখে বুক ফেটে যাচ্ছে। সকল আশা-আকাঙ্খাও চুরমার হয়ে গেছে। কারণ, আমি কিতাব কম বুঝি। স্মরণশক্তিও অন্য ছাত্রদের তুলনায় কম। তাই আমার এক বড় ভাই ডেকে বললেন, ‘তোমার আর পড়ার দরকার নেই। মাদরাসায় সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তোমার দ্বারা দ্বীনের কোনো কাজ হবে না। বাড়িতে গিয়ে ব্যবসা কর। আর যে ইলম হাসিল হয়েছে তার উপর আমল কর।’
এই কথা শোনার পর নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছি না। চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে। নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। বারবার একটি প্রশ্নই মনে আসছে-আমি কি মাদরাসায় এসেছিলাম ব্যবসা করার জন্য? আপনার কাছে সুপরামর্শ কামনা করছি।
ভাই আবদুল্লাহ! আমি আপনার ব্যাথায় ব্যাথিত। আপনার জন্য দুআ করছি এবং নিশ্চিত করেই বলছি, ইনশাআল্লাহ আপনি অনেক বড় আলিম হবেন। আপনার এই পত্রই সাক্ষ্য দেয় আপনার মধ্যেইলম অর্জনের স্বভাবগত যোগ্যতা আছে। সে যোগ্যতা কাজে লাগানোর পদ্ধতি জানতে হবে। শুধু এতটুকুই। আগামী কোনো বিরতিতে আপনার পিতামাতা ও উস্তাদ থেকে অনুমতি নিয়ে (যদি তাঁরাসন্তুষ্টচিত্তে অনুমতি দেন) কোনো সাথীকে নিয়ে ঢাকার মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়ায় এসে আমার সাথে সাক্ষাত করলে ইনশাআল্লাহ আপনাকে নেক পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করব। আসার আগেফোনে যোগাযোগ করবেন। ০১৭১২-৮৪১৮৪৭ নম্বরে সকাল এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে ফোন করে আসার বিষয়ে অবগত করবেন। ঢাকায় আপনার ও আপনার সাথীর যাতায়াত খরচ আমিবহন করব এবং আপনারা আমার মেহমান হবেন।
আপনি আল্লাহ তাআলার এই ইরশাদ থেকে সান্ত্বনা লাভ করুন-
ذلك فضل الله يؤتيه من يشاء والله ذو الفضل العظيم
(তরজমা) এটা আল্লাহরই অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আল্লাহ তো মহা অনুগ্রহশীল।-সূরা জুমুআহ (৬২) : ৪
বুযুর্গগণ বলেছেন, হিম্মত (যদি আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসার সাথে যুক্ত হয়) তবে তাতে ইসমে আযমের শক্তি সঞ্চারিত হয়। আপনি হিম্মত করুন। প্রতি কদমে আল্লাহ তাআলার নুসরত ও খাস রহমতলাভ করতে থাকবেন।
কারো এ কথা বলার অধিকার নেই যে, আপনার দ্বারা দ্বীনের কোনো কাজ হবে না। যে এমনটি বলবে আল্লাহ তাকে মাফ করুন এবং তাকে হেফাযত করুন। সে তো মারাত্মক স্পর্ধা দেখিয়েছে এবংনিজেকে ধ্বংস করার কথা বলেছে।
দ্বীনের কাজ কেউ করে না। আল্লাহ তাআলা করান। আর দ্বীনের কাজের শাখা-প্রশাখা এত বিস্তৃত যে, তা গণনা করা যায় না এবং এর কোনো সীমা-পরিসীমাও নেই। কেউ ‘আলিম’ হয়, কিন্তুআল্লাহ তাআলা তার দ্বারা কোনো কাজ নেন না। আবার কেউ নিয়মতান্ত্রিক মাদরাসার শিক্ষা লাভ করেনি, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে দ্বীনের বুঝ দিয়ে দেন, যা গতানুগতিক ‘ইলম’ থেকেও অনেকউঁচু স্তরের এবং তার দ্বারা দ্বীনের অনেক খেদমত নেন।
যদি সে আল্লাহর হুকুমে ব্যবসায়ীও হয় তবে এমন ফকীহ ব্যবসায়ী হবে, যার সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
التاجر الصدوق الأمين مع النبيين والصديقين والشهداء
অর্থাৎ সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত (আমানতদার) ব্যবসায়ী (জান্নাতে) নবী, সিদ্দীক ও শহীদগণের সঙ্গে থাকবেন।
এবং যার সম্পর্কে ওমর রা. বলেছেন-
لا يبع في سوقنا إلا من تفقه في الدين.
অর্থাৎ আমাদের বাজারে কেবল ঐ ব্যক্তিই কেনাবেচা করবে, যার দ্বীনী বোধ আছে।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪৮৭
তো আপনি কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না। মনোযোগের সাথে পড়াশোনায় লেগে থাকুন। আপনি শুধু আলিমই নয়, ইনশাআল্লাহ উস্তাযুল উলামা হবেন।
কবি বলেছেন-দরজা খুলল কি, খুলল না সেদিকে তোমার দৃষ্টি কেন?/তুমি শুধু নিজের কাজ করে যাও। অর্থাৎ আওয়াজ দিতে থাক।
আরেক কবি বলেন-তুমি নাছোড়বান্দার মতো বারবার দরজায় করাঘাত কর।/(কারণ) যে অবিরাম দরজা খটখটায় (একসময়) সে অবশ্যই ভিতরে পৌঁছবে।