হুজুর, আমি জালালাইন, হিদায়া ও অন্যান্য কিতাব পড়ি। আলহামদুলিল্লাহ, ইবারত বিশুদ্ধভাবে পড়তে পারি এবং তারকীবও বুঝে এসে যায়। মুফরাদাত-এর অর্থও বুঝতে পারি এবং মনে হয় যে, বিষয়বস্তুও বুঝতে পেরেছি। সহপাঠীদের সাথে তাকরারও করি, কিন্তু যখন উস্তাদকে শোনাতে যাই তখন তিনি বলেন যে, তুমি আলোচনাটা যেভাবে বুঝেছ তা সঠিক নয়। অনুগ্রহ করে জানাবেন, এখন আমি কী করতে পারি? তারকীব বোঝার পরও আলোচনা সঠিকভাবে কেন বুঝতে পারছি না?
যথার্থ প্রশ্ন। আজকাল ছাত্ররা ব্যাপকভাবে এ অসুবিধার শিকার হচ্ছে। এর একাধিক কারণ রয়েছে। যথা : ১. নাহবী তারকীব অসম্পূর্ণ বোঝা। অনেক সময় এমন হয় যে, তারকীব বুঝেছেন বলে আপনার মনে হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে বোঝেননি। শুধু ইবারত সহীহ পড়তে পারা যায়-এ পরিমাণ নাহবী জ্ঞান সঠিকভাবে তারকীব বোঝার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। এজন্য নাহবের সঙ্গে আরো অধিক মুনাসাবাত প্রয়োজন।
২. লোগাতের জ্ঞান অসম্পূর্ণ হওয়া। বিষয়বস্তু বোঝার জন্য শুধু শব্দার্থ জানা যথেষ্ট নয়। লুগাতের আরবী কিতাবসমূহের সাহায্যে ‘লফয’ ও ‘তা’বীরে’র উদ্দিষ্ট অর্থ নির্ণয় করার অভ্যাস করাও প্রয়োজন।
৩. উপস্থাপনা-ভঙ্গির সঙ্গে পরিচয় না থাকা। কোনো ইবারতের মর্মোদ্ধারের জন্য ছরফী তাহকীক, নাহবী তাহকীক ও মুফরাদাতের ইলম থাকাও যথেষ্ট নয়। আরবী ভাষার উপস্থাপন-ভঙ্গির সঙ্গেও পরিচয় থাকতে হয়। দেখুন, এ প্রসঙ্গে ইলমে বয়ানে যেসব আলোচনা আছে সেগুলো বোঝারও প্রয়োজন আছে, কিন্তু আমি এখানে তা বলচি না। আমার উদ্দেশ্য হল আরবী ভাষায় একটি ভাব কীভাবে প্রকাশ করে সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এটা এমন এক জিনিস যে, ইবারতের মৌলিক শব্দগুলোর অর্থ জানা থাকলে, নাহবী তারকীব না বুঝলেও ইবারতের সহজ-সরল অর্থ বুঝে এসে যায়। এজন্য ইবারত বোঝার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভাষার ভাবপ্রকাশের ভঙ্গির সঙ্গে পরিচিত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আরবী কিতাব সম্পর্কে কথা হচ্ছে তাই বলতে পারি যে, আরবী আদব বা আরাবিয়্যাতের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ইবারতের ভাবার্থ বোঝার ক্ষেত্রে একটি মৌলিক বিষয়। আরবী আদবের প্রাণই হচ্ছে ‘আরাবিয়্যতের যওক’। আল্লাহপ্রদত্ত মেধা ও রুচি তো প্রথম শর্ত। এটা থাকলে অবশিষ্ট উন্নতির জন্য এই মেহনত করুন যে, ‘আত-তরীক ইলাল আরাবিয়্যা’ দ্বারা উস্তাদ ও তালিবে ইলম উভয়ে সহীহ তরীকায় নিজ নিজ মেহনত জারী রাখুন। ‘আরবী আদব’ শব্দ থেকে এই ভুল ধারণা করবেন না যে, আমি আপনাকে ‘আদীব’ হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি বা বলতে চাচ্ছি যে, ইবারত বোঝার জন্য আপনার প্রচলিত ইলমে আদব শিক্ষা করা জরুরি। না এমন নয়। আফসোস, আমি আপনাকে সম্পূর্ণরূপে বিষয়টি বোঝাতে পারিনি। আসলে তা পত্রিকার পাতায় লিখে বোঝানোও যায় না, এটা হচ্ছে সামনে বসিয়ে হাতে কলমে বোঝানোর বিষয়।
৪. চতুর্থ যে জিনিসটি কিতাব বোঝার জন্য প্রয়োজন তা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ফনের সঙ্গে মুনাসাবাত। কিতাবটি যে ফনের সে ফনের সঙ্গে অপরিচিতি দূর হয়ে ইসতিলাহাত, কাওয়াইদ ও মওযূআত-এর সঙ্গে মুনাসাবাত পয়দা হয়ে যাওয়া জরুরি। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, ফনের সঙ্গে মুনাসাবাত তো কিতাবের দ্বারা হবে এখন কিতাবই যদি বুঝে না আসে? তাছাড়া ফনের প্রথম কিতাব ‘হল’ হবে কীভাবে? এই প্রশ্ন এজন্য ঠিক নয় যে, ফনের সঙ্গে মুনাসাবাত শুধু কিতাব দ্বারা হয় না, আর আমরা এখানে শুধু ফনের প্রথম কিতাব সম্পর্কে আলোচনা করছি না।
কিতাব বোঝার ক্ষেত্রে শেষোক্ত বিষয় দুটির প্রয়োজন অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আর এই দুই বিষয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শফীক ও বা-যওক উস্তাদের সোহবত। উস্তাদের সঙ্গে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বা দরসগাহের সম্পর্ক যথেষ্ট নয়।
আপনি লিখেছেন যে, ‘কিতাবের কোনো সন্তান উস্তাদকে শোনালে তিনি বলেন, তুমি সঠিকভাবে বিষয়টি বুঝতে পারনি।’ আমার পরামর্শ এই যে, আপনি ওই উস্তাদের সঙ্গেই আপনার ইলমী তাআল্লুক গড়ে তুলুন। তাঁর নিকটে বারবার যান এবং বোঝার চেষ্টা করুন, আপনার বোঝা কেন সঠিক নয়, কোথায় ভুল হওয়ার কারণে আপনার বোঝাটা সঠিক হচ্ছে না এবং কোন বিষয়টি অনুধাবন না করার কারণে সঠিক ভাবার্থ বুঝতে পারছেন না। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।