(ক) হুযুর ‘আলমাদখাল ইলা উলূমিল হাদীসিশ শারীফ’ কিতাবের ১৯০ নং পৃষ্ঠায় ইমাম ফকীহ মুহাম্মাদ যাহেদ বিন হাসান কাউসারী রাহ. এর মাকালার টীকায় আপনি লিখেছেন-
ويلاحظ هنا أن الكوثري رحمه الله تعالى أوصى بتدريس الأصول الستة ونحوها بطريق السرد على طبق الرواية، وهو أحد الطرق الثلاثة المتعارفة لتدريس الحديث ...
এখানে বর্ণিত তিনটি তরিকার ব্যাখ্যা একটু বিস্তারিতভাবে জানতে চাই।
(খ) কিতাবসমূহের হাশিয়ায় দেখা যায় আলোচনা শেষ হলে ‘١٢’ চিহ্ন দিতে। এ চিহ্নের অর্থ কী?
(ক) হাদীসের কিতাবসমূহ দরসদানের উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে ইতোপূর্বে প্রশ্নোত্তর বিভাগে লেখা হয়েছে। ‘তালিবানে ইলম: পথ ও পাথেয়’ বইয়ের ৩৭৮ পৃষ্ঠার ৪২ নং প্রশ্নের উত্তর দ্রষ্টব্য। তারপরও কিছু কথা সংক্ষেপে এখানে পেশ করছি।
طريق السرد -এর মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে দুটি যথা, কিতাবের বিশুদ্ধ পাঠ অর্জন করা এবং কিতাবের মুসান্নিফ পর্যন্ত ‘মুত্তাসিল সনদ’ হাসিল করা। এজন্য কিতাবটি পড়া ও শোনা হবে এমন কোনো উস্তাযুল হাদীসের কাছে যিনি কিতাবের আমানত গ্রহণ করেছেন স্বীকৃত কোনো পদ্ধতিতে এবং মুসান্নিফ পর্যন্ত মুত্তাসিল সনদের মাধ্যমে। আর এই পড়া হতে হবে কিতাবের সহীহ কোনো নুসখা থেকে। উস্তায নুসখার ইখতেলাফ বর্ণনা করবেন, নাসিখ এবং মুদ্রণের ভুল-ত্রুটির ব্যাপারে সতর্ক করবেন। এ পদ্ধতিতে হাদীসের সনদ সংক্রান্ত বিশদ আলোচনা, হাদীসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং ফিকহী আলোচনা ও পর্যালোচনা উদ্দেশ্য নয়। তবে কঠিন শব্দ ও বাক্যের অর্থ বলা যেতে পারে। প্রয়োজনে পুরো হাদীসের অর্থ বলা যায়। পাশাপাশি পঠিত হাদীসে উম্মতের প্রতি যে শিক্ষা ও নির্দেশনা রয়েছে তা আলোচনা করা যায়।
طريق البحث والحل -এ উপরোক্ত বিষয় দুটির পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় যোগ করতে হয় যথা : প্রয়োজনের সময় সনদ সম্পর্কে আলোচনা করা, মুশকীলুল হাদীসের শরাহ পেশ করা এবং মুখতালিফুল হাদীসের সমাধান পেশ করা। এই আলোচনাগুলো করতে হবে ফন্নী উসূল ও আদব অনুসারে প্রয়োজন পরিমাণ। সুদীর্ঘ ও লাগামহীন আলোচনা কাম্য নয়।
طريق التعمق والإمعان হলো হাদীসের সনদ ও মতন সম্পর্কে প্রয়োজনাতিরিক্ত দীর্ঘ ও অড়ম্বরপূর্ণ আলোচনা। যেমন, প্রয়োজন ছাড়াই সনদের প্রত্যেক রাবীর জীবনী আলোচনা। মতনের কোনো শব্দের দীর্ঘ লুগাবী তাহকীক ও ইশতেকাক বয়ান করা। সংশ্লিষ্ট ফিকহী মাসআলা আলোচনা করতে গিয়ে মাসআলার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার দীর্ঘ ফিরিস্তি পেশ করা। প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে বিভন্ন নুকতা, কিসসা-কাহীনি ও ঘটনা বর্ণনা করা। হাদীসের কিতাবকে সামনে রেখে অতি দূরবর্তী সম্পর্কের ভিত্তিতে এ ধরণের অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয় তাকরীর সমীচীন নয়।
হাদীসের কিতাব রেওয়ায়াত ও দরস দানের ক্ষেত্রে ‘তরীকুস সরদ’ হলো উত্তম পদ্ধতি। এই পদ্ধতিকে অনুসরণ করেছেন মাশায়েখে হাদীস ও মুহাদ্দিসীন। মুসনিদুল হিনদ হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহ. এই পদ্ধতিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে আমাদের উপমহাদেশের নেসাব ও নেজামের কিছু দুর্বলতার কারণে পরবর্তী আকাবিরগণ অর্থাৎ আকাবিরে দেওবন্দ ‘তরীকুল বাহছ’-এর রীতিকে অনুসরণ করেছেন। কিন্তু ‘তরীকুত তাআম্মুক’ আকাবিরদের অনুসৃত রীতি কখনো ছিলো না। যা হোক, হাদীসের দরসের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিই অবলম্বন করা হোক না কেন সবক্ষেত্রে যা বলা হবে তা ইতকানের সঙ্গে বলতে হবে এবং সঠিক কিনা তা নিশ্চিতভাবে জেনে বলতে হবে।
দরসে হাদীসের আলোচিত তিনটি পদ্ধতির ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন সম্পর্কে শাহওয়ালিউল্লাহ রাহ. তাঁর একাধিক কিতাবে আলোচনা করেছেন। যেমন-
১. ইনসানুল আইন ফী মাশায়িখিল হারামাইন পৃষ্ঠা ১৯৪-১৯৫
২. আনফাসুল আরিফীন পৃ. ১৮৬-১৮৭ ৩. ইতহাফুন নবীহ ফীমা ইয়াহতাজু ইলাইহিল মুহাদ্দিসু ওয়াল ফকীহ। এছাড়া দেখতে পারেন মাওলানা মানাযের আহসান গীলানীর : বররে সগীর পাক ও হিন্দ মে মোসলমানোকা নেযামে তালীম ওয়া তারবীয়ত (১/২৪০-২৪৬ অধ্যায় : দরসে হাদীস কী ইসলাহ)
(খ) কোনো কোনো উস্তাযের মুখে শুনেছি হাশিয়ার শেষে (١٢) সংখ্যাটি লেখা হয় হাশিয়ার শেষ সীমারেখা বুঝানোর জন্য। এটি حد শব্দের গাণিতিক মান। অর্থাৎ এটি ‘হা’ এর গানিতিক মান :৮ এবং ‘দাল’ এর গাণিতিক মান : ৪ এভাবে ৮+৪= ১২ হয়।