মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান - বাগেরহাট

প্রশ্ন

তাফসীর ও তরজমায়ে কুরআনের কিতাব সব ভাষাতেই এত বিপুল পরিমাণে লিখিত হয়েছে যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে নির্বাচন করা অত্যন্ত কঠিন। হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুম ‘উলূমুল কুরআন’-এ কয়েকটি কিতাব নির্বাচন করে দিয়েছেন, কিন্তু তার সংখ্যাও কম নয়। আপনি আমাকে শুধু চারটি কিতাবের নাম বলুন এবং উর্দূ ভাষায় লিখিত একটি বা দুটি কিতাবের নাম। যেন আমি কুরআন হাকীম বুঝতে পারি এবং কুরআনী পয়গাম অনুধাবন করতে পারি। কোনোটির নির্ভরযোগ্য বাংলা অনুবাদ হয়ে থাকলে তা-ও জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনি নিম্নোক্ত কিতাবগুলি অধ্যয়ন করতে পারেন :

  • ১. তাফসীরে ইবনে কাছীর
  • ২. তাফসীরে আবুস সাউদ, বা মুখতাসারু তাফসীরিত তাহরীরি ওয়াত তানবীর
  • ৩. মুফরাদাতুল কুরআন, রাগিব আসফাহানী
  • ৪. তাইসীরুল কারীমির রহমান, আবদুর রহমান আসসা’দী বা আইসারুত তাফসীর, আবু বকর জাবির আলজাযাইরী

উর্দূতে আপনি ‘তাফসীরে উছমানী’ হযরত শায়খুল ইসলাম শাব্বীর আহমদ উছমানী রাহ. এবং ‘আসান তরজমায়ে কুরআন’ হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উছমানী (দামাত বারাকাতুহুম) শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বারবার পাঠ করতে পারেন। ইসলামিক ফাউণ্ডেশন থেকে তাফসীরে উছমানীর বাংলা অনুবাদ চার খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম দুই খণ্ড জামেয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া ঢাকা-এর শায়খ জনাব মাওলানা আবুল বাশার ছাহেব (আ.ব.ম. সাইফুল ইসলাম) করেছেন। ‘আসান তরজমায়ে কুরআন’-এর অনুবাদও তিনিই করছেন। আশা করি, তা একটি প্রাঞ্জল ও নির্ভরযোগ্য অনুবাদ হবে এবং ইনশাআল্লাহ অচিরেই মুদ্রিত হয়ে পাঠকের সামনে এসে যাবে।

আসলে শুধু কিতাবের নাম জেনে নেওয়াতে বিশেষ কোনো ফায়েদা নেই। মূল কাজ হচ্ছে প্রতিদিন অল্প করে হলেও নিয়মিত মুতালাআ করা। এতে জাহেরী ও বাতেনী অনেক বরকত হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

শেয়ার লিংক

মাওলানা সুফিয়ান - চাঁদপুর

প্রশ্ন

কিছু তালিবে ইলমের যিম্মাদারী আমার উপর রয়েছে। তাইসীর থেকে হেদায়াতুন্নাহব ও কাফিয়া পর্যন্ত প্রায় প্রতি জামাতে কিছু তালিবে ইলম আছে, যাদের যিম্মাদারী তাদের অভিভাবকরা আমার উপর অর্পণ করেছেন। তাদের বিষয়ে আমার করণীয় কী জানতে চাই। তাদেরকে মীযান, নাহবেমীর ইত্যাদি কিতাবের ফার্সী ইবারতও কি মুখস্ত করতে বলব? মোটকথা, আপনি এ বিষয়ে আমাকে কিছুটা বিস্তারিত পরামর্শ দিবেন, যেন আমি এই যিম্মাদারী সঠিকভাবে আঞ্জাম দিতে পারি।

উত্তর

কিছু তালিবে ইলমের যিম্মাদারী আমার উপর রয়েছে। তাইসীর থেকে হেদায়াতুন্নাহব ও কাফিয়া পর্যন্ত প্রায় প্রতি জামাতে কিছু তালিবে ইলম আছে, যাদের যিম্মাদারী তাদের অভিভাবকরা আমার উপর অর্পণ করেছেন। তাদের বিষয়ে আমার করণীয় কী জানতে চাই। তাদেরকে মীযান, নাহবেমীর ইত্যাদি কিতাবের ফার্সী ইবারতও কি মুখস্ত করতে বলব? মোটকথা, আপনি এ বিষয়ে আমাকে কিছুটা বিস্তারিত পরামর্শ দিবেন, যেন আমি এই যিম্মাদারী সঠিকভাবে আঞ্জাম দিতে পারি। উত্তর : মাশাআল্লাহ বোঝা যাচ্ছে, আপনার মাঝে দায়িত্বের অনুভূতি রয়েছে। বর্তমানে এই অনুভূতির শূন্যতাই ইলমী, ফিকরী ও আখলাকী অবনতির বড় কারণ। এ প্রসঙ্গে দরখাস্ত এই যে-

১. সর্বদা স্মরণ রাখুন যে, এই শিশুরা আপনার কাছে আমানত। তাই এ বিষয়ে কোনোরূপ শিথিলতা খেয়ানতের অন্তর্ভুক্ত। আর এই আমানত রক্ষার পদ্ধতি এই নয় যে, আপনি তাদেরকে কোনো মাদরাসায় ভর্তি করে দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে রইলেন। আপনাকে সরাসরি তাদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে হবে। আলাদাভাবে প্রত্যেকের আদব-আখলাক, ফাহম-ইসতি’দাদ, ইনহিমাক ও মনোযোগ এবং অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে হবে। কখনো বলুন, অমুক কিতাব নিয়ে এস, অমুক বহছটি শোনাও, অমুক বহছ কিতাব থেকে পড়ে শোনাও, এই আয়াতের সরফী তাহকীক কর, এই আয়াতের নাহবী তাহকীক বল, ঐ হাদীসের তরজমা করে দেখাও। গত সপ্তাহের রোযনামচা দেখাও। তাদের হাতের লেখা দেখুন, বানান দেখুন, ভাষার মান লক্ষ করুন।

ইখলাস, তাকওয়া, আদব ও ইলমের জন্য ফানাইয়াত হচ্ছে তাফাককুহ হাসিল হওয়ার বুনিয়াদী শর্ত। এটা তালিবে ইলমদের বোঝানোর চেষ্টা করুন। তাদের বলুন যে, আসাতিযার সঙ্গে শুধু নিয়মের সম্পর্ক যথেষ্ট নয়, মহব্বত ও আযমত এবং সোহবত ও তালাক্কীর সম্পর্ক থাকা অপরিহার্য। অনুসরণীয় উস্তাদের রঙ্গে নিজেকে রঙ্গীন করার মানসিকতা থাকা অপরিহার্য।

এই আসবাব ও ওসাইল গ্রহণের পর সালাতুল হাজত পড়ে আল্লাহ তাআলার দরবারে তাদের জন্য কেঁদে কেঁদে দুআ করুন, আল্লাহ যেন তাদের কবুল করেন এবং শরহে সদরের নেয়ামত দান করেন। পাশাপাশি তাদেরকেও উদ্বুদ্ধ করুন। যখন তালিবে ইলম, পিতামাতা, নেগরান ও আসাতিযা সবাই মিলে আল্লাহ তাআলার দরবারে কাঁদতে থাকবে তখন অবশ্যই আল্লাহর রহমত তাদের বেষ্টন করে নিবে। শর্ত এটুকুই যে, সকল উদাসীনতা ও হেঁয়ালীপনা পরিত্যাগ করে সচেতনতা ও মুহাসাবার যিন্দেগী গ্রহণ করতে হবে।

আপনি মীযান-নাহবেমীর প্রভৃতি কিতাবের ইবারত মুখস' করানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন, না এটা মোটেও প্রয়োজন নেই। কাওয়ায়িদ ও আবনিয়া ভালোভাবে বুঝিয়ে অধিক পরিমাণে তামরীন করানোই হচ্ছে মূল কাজ। আপনি আত্‌তরীক ইলাস সরফ, আসসারফুল কাফী, আরবী ইলমুস সীগা তদ্রূপ আত্‌তরীক ইলান নাহব, আননাহবুল ওয়াজিহ ও আরবী নাহবেমীর মুতালাআ করে তামরীন করানোর পদ্ধতি শিখে নিন। এরপর যত বেশি সম্ভব তামরীন করাতে থাকুন। কুরআন কারীম ও আলআহাদীসুল কিসার (মুহিউদ্দীন মুহাম্মাদ আওয়ামা) থেকে আয়াত ও হাদীসের বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য দ্বারা তামরীন করাতে থাকুন। এটাই মূল কাজ।

ইবারত মুখস্ত করাতে হলে কুরআন-হাদীসের নুসূস মুখস্ত করাবেন। আদবী জুমলা, তাবীরাত ও ইবারত মুখস্ত করাবেন। এর জন্য আত্‌তরীক ইলাল আরাবিয়্যা থেকে সহযোগিতা নিতে পারেন। এরপর শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা-এর পুস্তিকা ‘আলমুখতার মিন ফারাইদিন নুকূলি ওয়াল আখবার’ থেকে সহজ সহজ হেকায়েত নির্বাচন করে খাতায় লেখাবেন এবং ইয়াদ করাবেন।

শেয়ার লিংক