সুমাইয়া - মাদারীপুর
২৪৫৪. প্রশ্ন
শুনেছি, হাদীসে আরাফার দিনে রোযা রাখার যে কথা এসেছে তা হল যারা হজ্বে যায়নি তাদের জন্য। আর যারা হজ্বে আছেন তাদের জন্য এদিন রোযা রাখা ঠিক নয়। জানতে চাই, এ কথাটি কি সঠিক?
উত্তর
আরাফার দিনের রোযা সম্পর্কিত হাদীসটির তরজমা নিম্নরূপ : আবু কাতাদা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, এর বিনিময়ে তিনি ঐ দিনের পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।-সহীহ মুসলিম ১/৩৬৭
উপরোক্ত হাদীসটিতে আরাফার বাইরে অবস্থানকারী বা আরাফায় অবস্থানকারী কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অতএব যারা হজ্বে যাননি শুধু তাদের জন্য এ হাদীস প্রযোজ্য-এমনটি নয়। সকলের জন্যই এই হাদীসের উপর আমল করার সুযোগ রয়েছে। তবে যারা হজ্বে আছেন তাদের যেহেতু এদিন আরাফায় লম্বা সময় দুআ-মুনাজাতে ব্যস্ত থাকতে হয় এবং এর পরবর্তী দিনগুলোতেও হজ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল আদায় করতে হয় যেগুলো বেশ কষ্টসাধ্য তাই হাজীদের জন্য বিশেষ হুকুম হল, রোযা রাখার কারণে দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তারা রোযা রাখবে না। এমন লোকদের জন্য রোযা রাখা মাকরূহ। কেননা এই দিনের রোযার চেয়ে হজ্বের আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উম্মতকে এই মাসআলা শিক্ষা দেওয়ার জন্য স্বয়ং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বে আরাফার রোযা রাখেননি। খুলাফায়ে রাশেদীনসহ অনেক সাহাবী আরাফায় অবস্থানকালে রোযা রাখেননি।
অবশ্য সুস্থ, সামর্থ্যবান ব্যক্তি, যে এই দিনে রোযা রাখলেও দুর্বল হবে না এবং হজ্বের কোনো কাজে ব্যাঘাত ঘটবে না বলে আশ্বস্ত থাকে তার জন্য রোযা রাখার অনুমতি রয়েছে। কেউ কেউ তাদের জন্যও রোযা রাখাকে উত্তমও বলেছেন। সুতরাং যারা হজ্বে আছেন তাদের জন্য রোযা রাখা ঠিক নয়-এই কথাটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রা., উসমান ইবনে আবুল আস রা., আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. এবং আতা রাহ. প্রমুখ
সাহাবা-তাবেয়ী থেকে এই দিন আরাফায় অবস্থানকালে রোযা রাখার প্রমাণ রয়েছে। এবং তাদের থেকে এটিও স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, শরীর দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে এদিন রোযা রাখতে কোনো অসুবিধা নেই। নিম্নে এ সংক্রান্ত আছারগুলো পেশ করা হল।
১. কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. (হজ্ব করতে গিয়ে) আরাফার দিনে রোযা রাখতেন।-মুয়াত্তা মালেক, পৃ. ১৪৬; আলইসতিযকার ৩/৫৩৪
২. আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর আরাফার দিনে আয়েশা রা-এর নিকট গেলেন তখন আয়েশা রা. রোযা ছিলেন। তিনি তাকে বললেন, আপনি ইফতার করুন (রোযা ভাঙুন)। আয়েশা রা. জবাবে বললেন, আমি কীভাবে ইফতার করব। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই আরাফার দিনের রোযার বিনিময়ে পূর্বের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৪৭৭০
৩. ইবনে জুরাইজ বলেন, আমি আতা রাহ.কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি হজ্বের সময় আরাফার দিনে রোযা রাখেন? তিনি বললেন, আমি শীতকালে রোযা রাখি। গ্রীষ্মকালে এই দিন রোযা রাখি না।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৮২২
হাফেয ইবনে আবদুল বার রাহ. বলেন, গ্রীষ্মকালে তিনি এজন্য রোযা রাখতেন না যে, এদিন যেন দুআ (ও হজ্বের অন্যান্য আমল আদায়ে) তিনি দুর্বল না হন।-আলইসতিযকার
৪. কাতাদাহ বলেন, আরাফার দিন দুআ (ও অন্যান্য আমল) আদায়ে যদি সমস্যা না হয় তবে এদিন রোযা রাখতে অসুবিধা নেই।
-প্রাগুক্ত মাবসূত সারাখসী ৩/৮১; বাদায়েউস সানায়ে ২/২১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬২; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১০০