জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৬ || ডিসেম্বর ২০২৪

আবদুল্লাহ - যাত্রাবাড়ি

৬৬২৭. প্রশ্ন

মুহতারাম, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আমার ব্যবসাটি ভাড়া দোকানে এবং তাতে দুজন কর্মচারী রয়েছে। বর্তমানে আমি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বড় করার কথা ভাবছি। তাই আমি এক ব্যক্তি থেকে দশ লক্ষ টাকা মুযারাবা হিসেবে ব্যবসায় খাটানোর জন্য নিয়েছি। তার সাথে আমার এভাবে চুক্তি হয় যে, এই টাকার লভ্যাংশের ৭০% আমার, ৩০% তার।

এখন আমার জানার বিষয় হল, ব্যবসায় যে সমস্ত খরচাদি রয়েছে, যেমন দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, কনভেন্স (দৈনিক নাস্তা বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা) বিদ্যুৎ বিল, সার্ভিস চার্জ, ভ্যাট, কাস্টমারকে চা-নাস্তা খাওয়ানোর খরচ ইত্যাদি খরচগুলোর মধ্যে কোন্ কোন্ খরচ মাইনাস করে লভ্যাংশ হিসাব করতে হবে।

উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে বিনিয়োগের গৃহীত টাকা দিয়ে যদি নতুন আরেকটি দোকান ভাড়া নিয়ে পূর্বের ব্যবসা সম্প্রসারণ করা হয় বা যদি পূর্বের দোকানেই খাটানো হয়, তাহলে উভয় ক্ষেত্রে উল্লিখিত খরচ মাইনাসের ক্ষেত্রে কোনো ব্যবধান হবে কি না?

উত্তর

মুযারাবা ব্যবসার ক্ষেত্রে যেসব কাজ মুযারিবের (ব্যবসা পরিচালনাকারীর) নিজেই আঞ্জাম দেওয়া সম্ভব সেসব কাজের জন্য কর্মচারী নিয়োগ দিলে এর বেতন-ভাতা মুযারাবা ব্যবসা থেকে নেওয়া যাবে না; বরং এমন ক্ষেত্রে ওই কর্মচারীর বেতন-ভাতা মুযারিবের নিজেকেই বহন করতে হবে। কিন্তু যেসব কাজ মুযারিবের একাকী আঞ্জাম দেওয়া সম্ভব নয়, যেমন পণ্য বাজারজাত করা, মালামাল ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি, এমন কাজের জন্য অতিরিক্ত লোকের প্রয়োজন হলে এবং সেগুলো সম্পাদনের জন্য কর্মচারী নিয়োগ দিলে এর বেতন-ভাতা মুযারাবা সম্পদ থেকে নেওয়া যাবে। তাদের যাতায়াত ভাড়া ও নাস্তা ইত্যাদিও এ থেকে নেওয়া যাবে। এমনিভাবে মুযারাবা ব্যবসার মালামাল হেফাজত-সংরক্ষণ ও ব্যবসা পরিচালনার জন্য দোকান-গোডাউন ভাড়া নেওয়ার প্রয়োজন হলে উক্ত দোকানের ভাড়া এবং পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য গাড়ি ভাড়া প্রয়োজন হলে তাও মুযারাবার সম্পদ থেকে নেওয়া যাবে।

মোটকথা, মুযারাবা ব্যবসা পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট সরাসরি প্রয়োজনীয় খরচাদি মুযারাবা সম্পদ থেকে নেওয়া যাবে।

অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি ওই ব্যক্তি থেকে মুযারাবার ভিত্তিতে যে দশ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ নিয়েছেন তা যেহেতু কর্মচারী ও দোকান-ঘর ছাড়া পরিচালনা করা সম্ভব নয়, তাই উক্ত মুযারাবা সম্পদ থেকে কর্মচারীর বেতন এবং দোকান ভাড়া নিতে পারবেন। এবং এর সাথে উক্ত দোকানের বিদ্যুৎ বিল, সার্ভিস চার্জ, এমনিভাবে কাস্টমারের চা-নাস্তাসহ উক্ত ব্যবসা পরিচালনার সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আবশ্যকীয় খরচাদিও মুযারাবার টাকা থেকে নেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে আপনার আগের দোকানেই পূর্বের ব্যবসার সাথে এই ব্যবসাটি পরিচালনা করলেও মুযারাবার অংশ অনুপাতে এ থেকে এসব খরচাদি নিতে পারবেন। অর্থাৎ যত টাকা আপনার নিজের বিনিয়োগ থাকবে, সে পরিমাণ টাকার খরচ আপনি বহন করবেন। অবশিষ্ট খরচ মুযারাবার সম্পদ থেকে নিতে পারবেন। তবে আপনার নিজের জন্য কোনো বেতন-ভাতা বা খাবার ইত্যাদি নিতে পারবেন না। আপনি মেয়াদান্তে চুক্তি অনুযায়ী লভ্যাংশ পাবেন।

* >المبسوط< للسرخسي ২২/৬৬: وإذا دفع الرجل إلى رجل ألف درهم مضاربة، فخرج المضارب فيها، وفي عشرة آلاف من مال نفسه إلى مصر، ليشتري بها ويبيع، فإن نفقته على أحد عشر سهما، جزء منها في مال المضاربة، وعشرة أجزاء في مال نفسه.

وفيه أيضا ২২/৩৮: وله أن يستأجر معه الأجراء، ويستأجر البيوت، والدواب لأمتعته التي يشتريها؛ لأن ذلك من صنع التجار. فالمضارب لا يستغني عن ذلك في تحصيل الربح.

মুখতাসারু ইখতিলাফিল উলামা, জাস্সাস ৪/৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩১৩

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন