রবিউল আখির ১৪৪৬ || অক্টোবর ২০২৪

মুহাম্মাদ সালমান - গাজিপুর

৬৫৮৬. প্রশ্ন

নিচের তথ্যগুলো এক ব্যাংকের সেভিংস একাউন্টের। উক্ত ব্যাংকের কর্মচারীদের থেকে আমি তা জেনেছি।

১. Interest (সুদ)। আমি যে পরিমাণ টাকা রাখি আমার একাউন্টে এক বছরে তার ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক আমাকে এটা প্রদান করে।

২. TDS (Tax deduction at source) on interest amount এটা এক ধরনের ট্যাক্স, যা আমার একাউন্ট থেকে কেটে নেয়। এটা সরকারি ফান্ডে যায়। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ইন্টারেস্টের ওপর। অর্থাৎ যে পরিমাণ ইন্টারেস্ট {১নং} দেয় সেখান থেকে এটা কেটে নেয়। ইন্টারেস্টের পরিমাণ বেশি হলে বেশি কাটে, আর ইন্টারেস্টের পরিমাণ কম হলে কম কাটে।

৩. Excise duity (এক্সাইজ ডিউটি)। বছরের কোনো সময় যদি একাউন্টে এক লক্ষ টাকার ওপর থাকে, তাহলে ১৫০ টাকা কেটে নেয়। এটা সরকারের ফান্ডে যায়।

৪. SMS চার্জ। এটা ব্যাংক কেটে নেয়। একাউন্টে টাকা রাখলে বা তুললে ব্যাংক টাকার পরিমাণসহ এসএমএস দেয় আমাকে। তাই এটা কেটে নেয়।

৫. SMS চার্জ ভ্যাট। এই ট্যাক্স সরকার নেয় ৪ নং-এর জন্য।

৬. স্টেটমেন্ট চার্জ। কত টাকা কবে আমার একাউন্টে রাখলাম বা তুললাম তার হিসাব প্রিন্ট করে ব্যাংক থেকে নিলে এই কাগজের নাম স্টেটমেন্ট। জুলাই এবং ডিসেম্বর ব্যতীত অন্য মাসে এটা নিলে ব্যাংক এই চার্জ কাটে।

৭. ভ্যাট অন স্টেটমেন্ট চার্জ। এটা সরকারের ফান্ডে যায়। ৬ নং-এর জন্য এটা কাটে।

৮. মেইনটেনেন্স চার্জ। এটা ব্যাংক কাটে। দশ হাজার টাকার ওপরে যদি লেনদেন করা হয়, তাহলে এটা কাটা হয়।

৯. ভ্যাট অন মেইনটেনেন্স চার্জ। এটা আমার একাউন্ট থেকে সরকার কেটে নেয়। এটা ৮ নং-এর ওপর নির্ভরশীল। ৮ নং-এ যে পরিমাণ কাটবে তার ১৫% এই ভ্যাট কাটে।

এখন আমার প্রশ্ন হল, ১ নং-এর ইন্টারেস্ট বা সুদ হারাম এবং এটা সদকা করতে হবে সওয়াবের নিয়ত না করে; এটা আমি জানি। বাকি ২ থেকে ৯নং পর্যন্ত যে ভ্যাট, চার্জ, ট্যাক্স আমার থেকে কেটে নিচ্ছে, সেখান থেকে কোন্টা কোন্টা বিয়োগ করতে পারি ১ নং থেকে? বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ জানালে ভালো হয়।

আর সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও কি একই হুকুম? সরকারি ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ সরকারি ট্যাক্স বা ভ্যাট প্রদানে ব্যবহার করা যাবে কি না? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ব্যাংক একাউন্টের সুদ থেকে সরকার সরাসরি TDS (উৎসে কর) নামে যে পরিমাণ অর্থ কেটে রেখে দেয়, সেই পরিমাণ অর্থ নিজ থেকে আর সদকা করতে হবে না। কেননা এই কর সরাসরি সুদের অর্থের ওপরই আরোপিত হয়ে থাকে। এটি হিসাবধারীর একাউন্টের ওপর আরোপিত কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স কিংবা সার্ভিস চার্জ নয়। কিন্তু TDS ছাড়া ব্যাংকের বাকি কোনো চার্জ সুদের টাকা থেকে কর্তন করা যাবে না; বরং নিজের টাকা থেকেই সেগুলো পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংক এবং বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য নেই। সরকারি ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদের টাকাও (উৎসে কর ব্যতীত) সরকার কর্তৃক আরোপিত ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায়ে ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এটি সুদের টাকা নিজের কাজে ব্যবহার করে তা দ্বারা সুবিধা ভোগের নামান্তর। যার কোনো সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, এখানে দুটি বিষয় সম্পূর্ণ পৃথকভাবে দেখা আবশ্যক :

১. নিজ জমাকৃত অর্থের ওপর প্রাপ্ত সুদ। এটি সম্পূর্ণরূপে (উৎসে কর কর্তনের পর) সদকা করে দেওয়া আবশ্যক।

২. একাউন্টের ওপর আরোপিত ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন চার্জ এবং সেগুলোর সাথে সংযুক্ত ভ্যাট। এগুলো একাউন্ট পরিচালনা ফি হিসাবে ব্যাংক নিয়ে থাকে। সুদের টাকা দিয়ে তা আদায় করলে প্রকারান্তরে সুদ গ্রহণ হয়ে যায়। তাই এটা পরিহার করতে হয়।

Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৭২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৬০; বাযলুল মাজহুদ ১/১৪৮

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন