আবদুল কাদের - নোয়াখালী
৬৫৬৭. প্রশ্ন
জন্ম ও মৃত্যু তারিখ পালন বা এ তারিখে বিশেষ দুআর আয়োজন ইসলামী শরীয়ত মতে কেমন? বিভিন্ন মসজিদে ইমাম সাহেবকে সরকারি ও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের জন্ম ও মৃত্যু তারিখে আয়োজন-ভিত্তিক দুআ করার জন্য বলা হয়। সরকার নিয়ন্ত্রিত মসজিদগুলোতে তো করতেই হয় এ ব্যাপারে ইমামদের করণীয় কি? বিশুদ্ধ প্রমাণসহ এর শরয়ী সমাধান জানানোর জন্য আরয করছি, জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
উত্তর
জন্মবার্ষিকী-মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা এবং একে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা ইসলামের শিক্ষা নয়। এগুলো বিজাতীয় সংস্কৃতি। এসকল অহেতুক কাজ থেকে মুসলমানদের বিরত থাকা আবশ্যক। শরীয়তে জন্ম দিবস বা মৃত্যু দিবসের আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই। বিশেষভাবে এই দিনে কোনো ধরনের দুআ বা আমল-ইবাদতের বিধান নেই।
আর মৃত ব্যক্তিদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করা, ঈসালে সাওয়াব করা শরীয়ত স্বীকৃত। তবে এর জন্য কোনো দিনক্ষণ নির্দিষ্ট নেই। বরং যে কোনো দিন যে কোনো সময় তাদের জন্য দুআ করা, নফল নামায, দান-সদকা, ইত্যাদির মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করা যেতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট দিনে বা সময়ে এমনটি করলে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যাবেÑ এমন নয়। সালাফে সালেহীনের যুগেও নির্দিষ্ট দিনে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দুআ-ঈসালে সওয়াবের আয়োজনের প্রমাণ নেই। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, মৃতের সন্তান-আত্মীয়স্বজন সব সময়ই মরহুমদের মাগফিরাতের দুআ করবে, সাধ্যমতো ঈসালে সওয়াব করবে। বছরে কেবল নির্দিষ্ট এক-দুদিন এসব রসমী দুআ, ঈসালে সওয়াবের আয়োজন করে সারা বছর এ থেকে গাফেল থাকা- এটা যেমন ইসলামের শিক্ষা নয়; তেমনি তা আদর্শ সন্তানেরও আচরণ হতে পারে না। সুতরাং জন্মদিবস, মৃত্যু দিবস পালন বা বিশেষভাবে এ দিনগুলোতে ঈসালে সওয়াবের আয়োজন থেকে বিরত থাকা জরুরি।
কোনো মুসল্লি মসজিদে এজাতীয় আয়োজন করতে চাইলে ইমাম সাহেব প্রজ্ঞা ও হেকমতের সাথে বিষয়টির শরয়ী দিকটা তাদের বুঝিয়ে বলবেন। এবং এসব রসমী আয়োজনের পরিবর্তে মৃত ব্যক্তির জন্য সুন্নাহসম্মত ঈসালে সওয়াবের প্রতি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করবেন। এতদসত্ত্বেও কেউ এমন আয়োজন করলে বা এসব দিনে ইমাম সাহেবকে কারো জন্য দুআ করতে বললে সেক্ষেত্রে ফিতনা-ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলা থেকে বাঁচতে ইমাম সাহেব সাধারণভাবে (একজন মুমিনের মাগফিরাতের নিয়তে, বিশেষ দিবস হিসেবে নয়) ঐ মৃত ব্যক্তিসহ সকল মুসলমানের জন্য দুআ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে দুআ-মজলিসের আগে বা পরে মূল শরয়ী বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করবেন।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৯৭; শরহে মুসলিম, ননবী ১২/১৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৯; আলবায়িছ আলা ইনকারিল বিদায়ি ওয়াল হাওয়াদিছ, পৃ. ১০৭; আলইতিসাম ১/৫৩, ৪৮৬