আবদুল্লাহ - কুমিল্লা
৬৫৪০. প্রশ্ন
মসজিদে বিভিন্ন সময় ফকির-মিসকীন ও বিপদগ্রস্ত লোক ইমাম সাহেবকে এসে মুসল্লিদেরকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য বলার অনুরোধ করে। ইমাম সাহেব না বললে সে নিজেই সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে উচ্চৈঃস্বরে সাহায্যের কথা বলে, এমতাবস্থায় ইমাম সাহেব, মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিদের করণীয় কী? বিশুদ্ধ প্রমাণসহ এর শরয়ী সমাধান জানানোর আরয করছি, জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
উত্তর
শরীয়তে একান্ত মাজবুরি বা অপারগ অবস্থা ছাড়া অন্যের কাছে হাত পাতা নাজায়েয। আর একে অভ্যাস ও পেশা বানিয়ে নেওয়া আরো অন্যায় ও নিন্দনীয়। ভিক্ষাবৃত্তি ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠিন ধমকি এসেছে। কোনো ভিক্ষুকের ব্যাপারে যদি ধারণা হয়, সে মাজবুর-অপারগ নয়; বরং ভিক্ষাবৃত্তি তার পেশা, তাহলে তাকে ভিক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
কেউ মাজবুরি ও অপারগতাবশত সাহায্য চাইলে এক্ষেত্রেও জামাত শেষ হওয়ার পর মসজিদের ভেতর দাঁড়িয়ে এভাবে সাহায্য চাওয়া ঠিক নয়। এ থেকে বিরত থাকা উচিত। হাদীস শরীফে এসেছে, এক ব্যক্তি তার হারানো জন্তু সন্ধানের জন্য মসজিদে ঘোষণা করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বললেন-
لَا وَجَدْتَ، إِنَّمَا بُنِيَتِ الْمَسَاجِدُ لِمَا بُنِيَتْ لَهُ.
তুমি যেন তা না পাও। মসজিদ এ কাজের জন্য বানানো হয়নি। মসজিদ কেবল সে কাজেরই জন্য, যার জন্য (তথা নামায, ইবাদত-বন্দেগীর) তা বানানো হয়েছে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৬৯)
হাদীসটির ব্যাখ্যায় ইমাম খাত্তাবী রাহ. বলেন-
ويدخل في هذا كل أمر لم يبن له المسجد، من البيع والشراء ونحو ذلك من أمور معاملات الناس واقتضاء حقوقهم، وقد كره بعض السلف المسألة في المسجد، وكان بعضهم لا يرى أن يتصدق على السائل المتعرض في المسجد.
অর্থাৎ এ হাদীসের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এমন সব কাজ অন্তর্ভুক্ত, যার জন্য মসজিদ বানানো হয়নি। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, পারস্পরিক লেনদেন ও নিজেদের হক ও অধিকার আদায় সংক্রান্ত বিষয়াদি। সালাফের অনেকেই মসজিদে সাহায্য চাওয়া অপছন্দ করতেন। এবং তাঁদের কেউ কেউ মসজিদে সাহায্যপ্রার্থী লোকদের দান করা পছন্দ করতেন না। (মাআলিমুস সুনান ১/১৪৩)
আল্লামা আইনী রাহ.-সহ অন্যান্য অনেক মুহাদ্দিসও হাদীসটির ব্যাখ্যায় একই কথা বলেছেন। (দেখুন, শরহু সুনানে আবি দাউদ, আইনী ২/৮৭)
তাছাড়া ফরয নামাযের সালামের পর এভাবে সাহায্য চাওয়াতে মাসবুক ও তাৎক্ষণিক সুন্নতে দাঁড়িয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নামাযে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। মুসল্লিদের মাসনূন দুআ ও যিকির-আযকারের মধ্যেও বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। এমনিভাবে এর দ্বারা মসজিদে আওয়াজ-শোরগোল এবং কখনো কখনো বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। যা সম্পূর্ণরূপে মসজিদের আদব-ইহতেরাম পরিপন্থী। বিশেষত কোনো কোনো সাহায্যপ্রার্থী যে ভাষায় ও পদ্ধতিতে সাহায্যের আবেদন করে, তাতে আরো নানান আপত্তিকর বিষয়াদি থাকে। সুতরাং মসজিদে এমনটি করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত।
এক্ষেত্রে ইমাম ও মসজিদ কর্তৃপক্ষের করণীয় হচ্ছে- যারা এভাবে মসজিদের ভেতর দাঁড়িয়ে সাহায্য চায়, তা থেকে তাদের বারণ করা। সম্ভব হলে মসজিদের ইমামগণ জুমাসহ বিভিন্ন বয়ানে এ বিষয়গুলো আলোচনা করতে পারেন। যাতে এ ধরনের লোকদের কাছে এ বার্তাগুলো পৌঁছে যায়। ব্যক্তিগতভাবেও এমন লোকদেরকে বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলা যেতে পারে। কোনো নামাযের পর কাউকে এভাবে সাহায্যের জন্য দাঁড়াতে দেখলে মসজিদের দায়িত্বশীলগণ শান্ত ও নরম ভাষায় বুঝিয়ে তাকে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে যদি মনে হয়, বারণ করলেও সে মানবে না বা আরো বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, তাহলে তৎক্ষণাৎ কিছু না বলে নামাযের পর বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলবেন। এবং সামনে থেকে মসজিদে এমনটি করতে নিষেধ করবেন।
আরো উল্লেখ্য, রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্বশীল ও বিত্তবান লোকদের দায়িত্ব হচ্ছে- গরীব ও অসহায় লোকদের নিজ থেকে সহযোগিতা করা। তাদের প্রয়োজনগুলো পূর্ণ করা। সমাজের কর্মহীন ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান এবং বৃদ্ধ, অসুস্থ, প্রতিবন্ধী লোকদের ভরণ-পোষণের ভার বহন করা। যেন বাস্তব ওযরেও কেউ হাত পাততে বাধ্য না হয়। অনুরূপভাবে রাষ্ট্র ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। রাষ্ট্র ও সমাজের বিত্তবানরা এ বিষয়ে মনোযোগী হলে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়া ভিক্ষাবৃত্তি কমে আসবে ইনশাআল্লাহ।
সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৭৪; আততামহীদ ২৩/৩১৯; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৩০৯; বাযলুল মাজহুদ ৬/৫৩১; আলমাদখাল, ইবনুল হাজ ১/১০৬; আলবিনায়া ৩/৯৪; শরহুল মুনইয়া ৬১২