রেজওয়ান আহমদ - শরীয়তপুর
৬৩৩৪. প্রশ্ন
আমরা বহু বছর যাবৎ একটি মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযসহ জুমা আদায় করে আসছি। আমাদের মসজিদের মাত্র দশ থেকে বার হাত দূরত্বে সরকারি মডেল মসজিদ নির্মিত হয়। প্রকাশ থাকে যে, আমাদের পুরাতন মসজিদটি সম্পূর্ণ ওয়াক্ফকৃত। এমতাবস্থায় দুটি মসজিদে একই সময় জুমা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা মুসল্লিদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির একটি সম্ভাবনা তৈরি করে। এই পরিস্থিতে আমাদের ইচ্ছা, সরকারি মডেল মসজিদে নামায আদায় করার। এক্ষেত্রে পুরাতন মসজিদটির বিষয়ে আমাদের করণীয় কী?
এলাকার মুসল্লিগণ পুরাতন মসজিদটিতে জুমাসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায বন্ধ করে ঐ স্থানে একটি হেফজখানা বা নূরানী মাদরাসা বানাতে চান। এতে শরীয়ত কর্তৃক কোনো বিধি-নিষেধ আছে কি না? দলীল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
কোনো স্থানে শরয়ী মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হলে উক্ত জায়গা স্থায়ীভাবে মসজিদের জন্য নির্ধারিত হয়ে যায়। সর্বদা তা মসজিদ হিসেবে বহাল রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে আশপাশে নতুন কোনো মসজিদ নির্মিত হলেও আগের মসজিদটিকে মসজিদ হিসেবেই বহাল ও আবাদ রাখতে হবে। নতুন মসজিদের কারণে আগের মসজিদের মসজিদ সত্তাকে পূর্ণরূপে বাতিল করে একে ভিন্ন সত্তা, যেমন হেফজখানা বা মাদরাসা বানিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পাশে নতুন আরেকটি মসজিদ হলেও আগের মসজিদটিকে সম্পূর্ণরূপে হেফজখানা বানিয়ে দেওয়া যাবে না। একে মসজিদ হিসেবেই বহাল রাখতে হবে এবং যথাসম্ভব মসজিদটিতে ওয়াক্তিয়া নামাযগুলো (ছোট পরিসরে হলেও) চালু রাখার চেষ্টা করবে। আর জুমা যেহেতু একত্রে বড় জমায়েতে আদায় করা শরীয়তে কাম্য, তাই জুমার নামায সকলে একসাথে নতুন বড় মসজিদে আদায় করতে পারবে।
অবশ্য পুরাতন মসজিদটিকে মসজিদ হিসেবে বহাল রেখে পাঞ্জেগানা নামাযের পাশাপাশি মসজিদের অধীনে চাইলে তাতে কোনো মসজিদভিত্তিক হেফজখানাও চালু করা যাবে। এতে অসুবিধা নেই; বরং মসজিদভিত্তিক কোনো হেফজখানা চালু হলে মসজিদটিতে নিয়মিত নামায চালু রাখাও সহজ হবে। কিন্তু মসজিদের সত্তা বাতিল করে একে সম্পূর্ণরূপে হেফজখানা বানিয়ে নেওয়া বৈধ হবে না; যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এক মসজিদের একেবারে পাশে এভাবে আরেকটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা ঠিক নয়। নতুন মসজিদটি নির্মাণের সময়ই এলাকাবাসীর দায়িত্ব ছিল, মসজিদটি আগের মসজিদ থেকে মোটামুটি দূরে এমন কোনো জায়গায় নির্মাণ করার চেষ্টা করা, যেখানে বাস্তবে মসজিদের প্রয়োজন রয়েছে। এমনটি হলে পাশাপাশি দুটি মসজিদে একসাথে জামাত হওয়ার প্রশ্নোক্ত জটিলতা তৈরি হত না। তাছাড়া বিনা প্রয়োজনে এভাবে পাশাপাশি দুটি মসিজদ নির্মাণ, মসজিদ নির্মাণের শরয়ী নীতিমালারও পরিপন্থী।
আলহাবিল কুদসী ৭১/৫৪৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১১; আলহাবী, যাহেদী (মাখতুত, জামেয়াতুন নাজাহ), পৃ. ১২৯