মুহাম্মাদ আহনাফ হাসান খান - গোপিবাগ, ঢাকা
৬৩১৭. প্রশ্ন
জনৈক ব্যক্তি বছরখানেক আগে ২৯ লক্ষ টাকায় চারতলা নির্মাণাধীন মার্কেটের একটি দোকানের পজিশন ক্রয় করে। দোকান মালিকের সাথে ক্রেতার একটি চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয় এবং উভয় পক্ষই সরকারি স্ট্যাম্পে লিখিয়ে সাক্ষীর উপস্থিতিতে তা সই করে। এখন দোকানের পজিশন ক্রয়কারী ব্যক্তি উক্ত দোকান অপর আরেকজনের নিকট গোডাউন হিসেবে ভাড়া দিয়েছে মাসিক ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে।
অতএব আমার প্রশ্ন হল-
১. উক্ত পজিশন ক্রয় চুক্তিটি শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না? এবং দোকানঘরটি অন্যত্র গোডাউনের জন্য ভাড়া দেওয়া বৈধ কি না?
২. চুক্তিগুলো বৈধ না হয়ে থাকলে বর্তমানে এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
উত্তর
বর্তমানে দোকান অফিস ইত্যাদির পজিশন বিক্রির প্রচলিত যে পদ্ধতি রয়েছে, অর্থাৎ দোকান/মার্কেট মালিক প্রথমে কারো নিকট চড়া মূল্যে দোকানের পজিশন বিক্রি করে; অতঃপর পজিশন ক্রেতার কাছ থেকে উক্ত দোকান বা অফিসের আবার মাসে মাসে জমিদারির নামে ভাড়াও আদায় করা হয়। তো এ ধরনের পজিশন বিক্রি শরীয়তসম্মত নয়। এটি না بيع (বেচাকেনা) না إجارة (ভাড়া চুক্তি); বরং এটি একটি জগাখিচুড়ি পদ্ধতি, যা শরীয়তে স্বীকৃত কোনো আকদ ও চুক্তির আওতায়ই পড়ে না। পজিশন বিক্রির নামে একমুঠে যে অঙ্ক প্রথমে নেওয়া হয়, তা শরীয়তের দৃষ্টিতে একপ্রকারের রিশওয়াতের অন্তর্ভুক্ত; যা সম্পূর্ণ নাজায়েয। সুতরাং এ পদ্ধতির লেনদেন থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
সঠিকভাবে লেনদেনটি করতে চাইলে হয়তো দোকান/অফিস সাফ কবলা দলীলমূলে বিক্রি করে দেবে এবং ক্রেতাকে তার সম্পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেবে। এরপর বিক্রেতার উক্ত দোকান বা অফিসে কোনো ধরনের অধিকার থাকবে না। আর সাফ কবলা দলীলমূলে বিক্রি না করতে চাইলে শুরু থেকেই কেবল ভাড়া পদ্ধতি অবলম্বন করবে। এক্ষেত্রে মালিক যদি ভাড়া গ্রহীতা থেকে একমুঠে বেশি অর্থ নিতে চায়, তাহলে মাসিক ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ করে কয়েক বছরের ভাড়া এককালীন অগ্রিম নিয়ে নেবে।
উল্লেখ্যে, প্রচলিত পদ্ধতিতে পজিশন বিক্রি যেহেতু জায়েয নয়, তাই এভাবে দোকান নিয়ে তা অন্যত্র ভাড়া দিলে সেটিও জায়েয হবে না। কোনো দোকান অন্যত্র ভাড়ায় খাটাতে চাইলে بيع (বেচাকেনা) বা إجارة (ভাড়া চুক্তি)-এর কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করে দোকান নিয়ে তারপর ভাড়া দিতে হবে। তবে ভাড়া পদ্ধতি গ্রহণ করে পরবর্তীতে তা অন্যত্র ভাড়া দিতে চাইলে ভাড়ায় নেওয়া বস্তু অন্যত্র ভাড়া দেওয়ার শরীয়তের নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। কোনো বিজ্ঞ আলেম থেকে জেনে সে অনুযায়ী আমল করবে।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৫৮০; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৫১; মুফীদাতুল হুসনা বিযান্নিল খুলুয়ী বিসসুকনা, পৃ. ৪৬; গামযু উয়ূনিল বাসায়ির ২/৩১৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৫২১