যিলকদ ১৪৪৪ || জুন ২০২৩

আবু উমামা হারুন - মোহাম্মাদপুর, ঢাকা

৬১৬৯. প্রশ্ন

জুমার খুতবার যে আযান দেওয়া হয় এর জবাব দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে শরয়ী বিধান কী? এক লোক বলেছে, এই আযানের জবাব দেওয়া যাবে না। তার কথা কি ঠিক? এক্ষেত্রে সঠিক শরয়ী সমাধান জানতে চাই। আশা করি, বিষয়টি জানাবেন।

উত্তর

জুমার খুতবার পূর্বে যে আযান দেওয়া হয় এর জবাব দেওয়া যাবে কি না এ ব্যাপারে ফকীহগণ থেকে দুই ধরনের মতামতই রয়েছে। একটি মতে, এ আযানের জবাব দেওয়া যাবে না। এক বর্ণনায় এসেছে

عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، وَابْنِ عُمَرَ؛ أَنَّهُمَا كَانَا يَكْرَهَانِ الصَّلاَة وَالْكَلاَمَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ بَعْدَ خُرُوجِ الإِمَامِ.

আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত আছে, তাঁরা জুমার দিন ইমাম সাহেব খুতবার জন্য বের হওয়ার পরে (মুসল্লীদের জন্য) নামায পড়া এবং কথা বলা অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৩৪০)

এই বর্ণনা এবং অন্যান্য আরও বর্ণনার আলোকে অনেক ফকীহ বলেছেন, খুতবার আযানের জবাব দেওয়া যাবে না।

পক্ষান্তরে সহীহ বুখারীর একটি হাদীস এবং অন্য আরও বর্ণনার আলোকে অনেক ফকীহ বলেছেন, জুমার খুতবার আযানের জবাব দেওয়া জায়েয আছে।

সহীহ বুখারীতে হযরত আবু উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন

سَمِعْتُ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ، وَهُوَ جَالِسٌ عَلَى المِنْبَرِ، أَذَّنَ المُؤَذِّنُ، قَالَ: اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، قَالَ مُعَاوِيَةُ: اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، قَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلّا اللهُ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: وَأَنَا، فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: وَأَنَا، فَلَمَّا أَنْ قَضَى التَّأْذِينَ، قَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ  صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى هَذَا المَجْلِسِ، حِينَ أَذَّنَ المُؤَذِّنُ، يَقُولُ مَا سَمِعْتُمْ مِنِّي مِنْ مَقَالَتِي.

আমি মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রা.-কে দেখেছি, তিনি মিম্বারে বসা ছিলেন এবং মুআযযিন আযান দিলেন। মুআযযিন যখন বললেন, اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ তখন মুআবিয়া রা. বললেন, اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ। ... যখন আযান শেষ হল তখন তিনি বললেন, হে লোকসকল! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই মজলিশে যখন মুআযযিন আযান দেয় তখন এমনটিই বলতে শুনেছি, যেমনটি তোমরা আমাকে বলতে শুনলে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯১৪)

আরেক বর্ণনায় রয়েছে, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. বলেন

خُرُوجُ الإِمَامِ يَقْطَعُ الصَّلاَةَ، وَكَلاَمُهُ يَقْطَعُ الْكَلاَمَ.

ইমাম খুতবার জন্য বের হলে নামায পড়া যাবে না এবং খুতবা শুরু করে দিলে আর কথা বলা যাবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৩৪২)

উল্লিখিত হাদীস ও আছারের আলোকে অনেক ফকীহ বলেছেন, খুতবা শুরু করার আগে আযানের জবাব দেওয়া জায়েয আছে। হিন্দুস্তানের একাধিক ফকীহ এ মত দিয়েছেন। আব্দুল হাই লখনোভী রাহ., মুফতী কিফায়াতুল্লাহ রাহ., যফর আহমাদ উসমানী রাহ., মুফতী আব্দুর রহীম লাজপুরী রাহ. প্রমুখ ফকীহগণ জুমার আযানের জবাব দেওয়া জায়েয আছে বলে মত ব্যক্ত করেছেন।

সুতরাং কেউ যদি জুমার খুতবার আযানের জবাব দেয় তাহলে তাকে নিষেধ করা যাবে না।

কিতাবুল আছল ১/৩০৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৯৫আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৮২; আসসিআয়াহ ২/৫৩; ফাতহুল বারী ২/৪৬০; উমদাতুল কারী ৬/২১৩; কিফায়াতুল মুফতী ৫/২০৫; ইমদাদুল আহকাম ১/৪১৯

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন