মুস্তাফীজুর রহমান - নগরকান্দা, ফরিদপুর
৬১৫৪. প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় একটি বিল আছে। এলাকার প্রায় সকলেরই সেখানে জমি আছে। বর্ষার মৌসুমে প্রায় পাঁচ-ছয় মাস বিলে পানি থাকে। পাশে নদী থাকায় বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। কয়েক বছর ধরে বর্ষার মৌসুমে বিলে আমার জমিগুলো মাছ ধরার জন্য ভাড়া দিয়ে আসছি। আমরা এভাবে ভাড়া দিই যে, নিলামের মাধ্যমে কাউকে জমিগুলো বর্ষার মৌসুমের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়, যেন সে সেখানকার মাছগুলো ধরে নিতে পারে। ভাড়া নেওয়ার পর ভাড়াগ্রহীতা নির্ধারিত এলাকায় বিভিন্ন খাবার জাতীয় জিনিস দেয়, যেন মাছগুলো ঐ জায়গায় গিয়ে বেশি জমা হয়। এরপর সে নির্ধারিত এলাকার চারপাশে বাঁশ-নেট দিয়ে ঘেরাও করে দেয়। ঐ নির্ধারিত এলাকা থেকে অন্য সবার জন্য মাছ ধরা নিষেধ থাকে।
ইজারা থেকে প্রাপ্ত পুরো টাকা আমরা সবার সম্মতিক্রমে এলাকার মসজিদ-মাদরাসায় দান করে দিই। আমরা নিজেরা এখান থেকে কোনো টাকা গ্রহণ করি না।
সম্মানিত মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হল, উল্লিখিত পদ্ধতিতে কারবার করা আমাদের জন্য শরীয়তসম্মত হচ্ছে কি? যদি এই পদ্ধতিতে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এক্ষেত্রে শরীয়তসম্মত সঠিক পদ্ধতি কী হবে? আশা করি বিষয়টির সমাধান জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর
শুধু মাছ ধরার জন্য পুকুর বা জলাশয় ভাড়া দেওয়া জায়েয নয়। তবে মাছ চাষ করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিল বা জলাশয় ভাড়া দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তাই এক্ষেত্রে বৈধভাবে কারবার করতে চাইলে শুরু থেকেই নির্ধারিত মেয়াদের জন্য ভাড়া গ্রহীতাকে মাছ চাষের/পরিচর্যার জন্য পুকুর ভাড়া নিতে হবে। এরপর সে তাতে মাছ ছাড়া বা বর্ষার মাছ প্রবেশ করা, মাছ আটকানো এবং মাছের চাষ ও পরিচর্যার জন্য যা যা করা দরকার এর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রকাশ থাকে যে, এভাবে ভাড়া নেওয়ার পর নির্ধারিত এলাকার চারপাশে ঘেরাও দিলে সেখানে থাকা মাছগুলো শিকার করার ব্যাপারে তার হক সাব্যস্ত হবে। এক্ষেত্রে উক্ত এলাকা থেকে অন্যের জন্য মাছ ধরা জায়েয হবে না।
আরো উল্লেখ থাকে যে, এভাবে ভাড়া নেওয়ার পর ঘেরাও দেওয়া মাছ পরিচর্যা ও খাবার দিয়ে চাষাবাদ করা যাবে। চাষাবাদের জন্য নতুন মাছ ছাড়া জরুরি নয়।
প্রকাশ থাকে যে, ইজারা থেকে প্রাপ্ত টাকা মসজিদ-মাদরাসা অথবা কোনো জনকল্যাণমূলক ফান্ডে দান করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত খুবই ভালো। তবে এর জন্য শর্ত হল, তা অবশ্যই সকল শরীকের সন্তুষ্টিতে হতে হবে। কেউ যদি চাপের কারণে অথবা লজ্জায় পড়ে দান করতে বাধ্য হয়, তাহলে ঐ শরীকের অংশ নেওয়া বৈধ হবে না। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে—
لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ.
কারো সম্পদ তার সন্তুষ্টি ব্যতীত (অন্যের জন্য) বৈধ না। —মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৬৯৫
তাই কোনো শরীক সন্তুষ্টচিত্তে দিতে না চাইলে তাকে তার হিস্যার টাকা দিয়ে দেবে। বাকিটুকু দান করবে।
—বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/৩২৯; ফাতহুল কাদীর ৬/৪৯; আলবাহরুর রায়েক ৬/৭৩; তাকরীরাতে রাফেয়ী ৫/১৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬১, ৬০ ও ৬/৬৩; রদ্দুল মুহতার ৫/৬০