মুহাম্মাদ জহিরুল ইসলাম - ফুলবাড়িয়া, উত্তরা, ঢাকা
৯০৯. প্রশ্ন
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বানিজ্য কেন্দ্র ধ্বংস হওয়ার পর পত্র-পত্রিকায় এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়। খবরে বলা হয় যে, কুয়েতের জনৈক গবেষক এই ঘটনার সাথে আলকুরআনের একটি আয়াতের মিল খুঁজে পেয়েছেন। আয়াতটি এই
اَفَمَنْ اَسَّسَ بُنْیَانَهٗ عَلٰی تَقْوٰی مِنَ اللّٰهِ وَ رِضْوَانٍ خَیْرٌ اَمْ مَّنْ اَسَّسَ بُنْیَانَهٗ عَلٰی شَفَا جُرُفٍ هَارٍ فَانْهَارَ بِهٖ فِیْ نَارِ جَهَنَّمَؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الظّٰلِمِیْنَ.
১১ পারা ৯ম সূরা (সূরা তাওবা) এর ১০৯ নং আয়াত। গবেষক তার বিশ্লেষণে উল্লেখ করেন যে, “১১ হচ্ছে টুইন টাওয়ার ধ্বংশের তারিখ। ৯ হচ্ছে খৃস্টাব্দের নবম মাস তথা সেপ্টেম্বর। টুইন টাওয়ারের একটি ভবনের উচ্চতা ছিল ১০৯?। সূরাটির প্রথম থেকে ১০৯ নং আয়াত পর্যন্ত হরফ সংখ্যা গণণা করলে সমষ্টি হয় ২০০১, যা উক্ত ঘটনার বছর। আছাড়াও আয়াতে ‘যুরুফিন হারিন’ শব্দ উল্লেখ রয়েছে। আর টুইন টাওয়ার যে রাস্তায় অবস্থিত তার নাম হল ‘যুরুফিন হার’।
প্রশ্ন হল, সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে কুরআনের এ ধরনের ব্যাখ্যা কতটুকু সহীহ ও গ্রহণযোগ্য?
উত্তর
আলকুরআনের তাফসীরের স্বীকৃত উৎস ছয়টি।
১। কুরআন শরীফ, ২। হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ৩। সাহাবায়ে কেরামের ব্যাখ্যা, ৪। তাবিয়ীনের ব্যাখ্যা, ৫। আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ, ৬। ‘আকলে সালীম’ বা সুস্থ চিন্তাধারা।
পর্যায়ক্রম অনুসারে এসকল উৎসের আলোকে কুরআনের তাফসীর করা এবং তা থেকেই কুরআনী হেদায়াত গ্রহণ করা জরুরি। আরবী বর্ণমালার গাণিতিক মান ও সংখ্যা গণনা তাফসীরের স্বীকৃত কোনো পন্থা নয় এবং এর মাধ্যমে আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা লাভ করা যায় না। তাই সংখ্যা হিসাব করে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সাথে সূরা তাওবার ১০৯ নং আয়াতের মিল প্রমাণ করা সঠিক নয়। এছাড়াও আয়াতে ‘জুরুফিন হার’ শব্দটি তার নির্ধারিত আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কোনো জিনিসের নাম হিসাবে নয়।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যার জন্য নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাব সমূহ দেখা যেতে পারে। বলা বাহুল্য, সেখানে এধরনের কোনো ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত নেই।
উল্লেখ্য, টুইন টাওয়ার ঘটনার শরয়ী হুকুমের জন্য এই আয়াত নয়; বরং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আয়াত-হাদীস ও ফিকহী নীতিমালা জানা প্রয়োজন।
-আলইতকান ৭৮ নং অধ্যয়; উলূমুল কুরআন, তাকী উসমানী পৃ.৩২৩