মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল বারী - কুনিয়া, নেত্রকোণা
২১৮৬. প্রশ্ন
ক) এক এলাকায় ফসলী জমি ভাগে দেওয়ার একটি পদ্ধতি চালু আছে। তা এই যে, জমির মালিক কৃষককে ১০ কাঠা জমি চাষ করতে দিলে এক মওসুমে মালিককে ১৫ মণ ধান দিতে হবে। আর জমিটি কৃষক নিজের খরচে চাষ করবে।
এভাবে জমি ভাগে দেওয়া জায়েয হবে কি না? উল্লেখ্য, ধান দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকের ইচ্ছা। যে কোনো ক্ষেতের ধান সে দিতে পারে। নির্ধারিত কোনো ক্ষেতের ধান দেওয়ার শর্ত থাকে না।
খ) জনৈক প্রাইভেটকার ব্যবসায়ী ৮ লক্ষ টাকা মূল্যে একটি প্রাইভেটকার বিক্রি করেছেন। ক্রেতা নগদ ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। আর চুক্তি করেছেন যে, বাকি ৪ লাখ টাকা ৬ মাস পর পর ১ লাখ টাকা করে দিয়ে ২ বছরে পরিশোধ করবে। প্রশ্ন হল, এ ব্যবসায়ীকে বাকি ৪ লাখ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে কি না।
গ) আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি ধানের ব্যবসা করেন। তিনি নগদ ও বাকিতে ধান বিক্রি করে থাকেন। বাকিতে বিক্রির একটি পদ্ধতি হল, তিনি জ্যৈষ্ঠ মাসে ক্রেতাকে ৫ মণ ধান দিয়ে দিলেন এবং বলে দিলেন যে, কার্তিক মাসে এ ধরনের ধানের যা মূল্য হবে তা পরিশোধ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে ধান বিক্রি করা জায়েয হবে কি না?
ঘ) অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান হওয়ার পর যে স্রাব নির্গত হয় তা নেফাসের রক্ত বলে গণ্য হবে কি না?
উত্তর
ক) প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে চাষের জন্য জমি দেওয়া জায়েয। এই লেনদেনটি হচ্ছে জমি ভাড়া বা লিজ দেওয়া, ভাগে দেওয়া নয়। এক্ষেত্রে জমির মালিককে যে ১৫ মণ ধান দেওয়ার কথা হয়েছে তা জমির ভাড়া। ভাড়া যেমন টাকা হতে পারে তেমনি কোনো পণ্যও হতে পারে। পণ্য দ্বারা ভাড়া আদায় করলে কোন ধরনের পণ্য এবং তার পরিমাণ কি তা চুক্তির সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে। কিন্তু এ জমির বা কোনো নির্দিষ্ট জমির ফসল থেকে দেওয়ার শর্ত করলে তা জায়েয হবে না। বরং কোন প্রকারের ধান দিবে তা নির্ধারিত করতে হবে।-হেদায়া ৪/৩০৬, ২৯৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৪, ৬০; মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৪৫১-৪৫৩, ৪৬৪, ৪৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৫৪, ২৫৮
খ) হ্যাঁ, ঐ ব্যবসায়ীকে গাড়ির বাকি মূল্য ৪ লক্ষ টাকারও যাকাত দিতে হবে। বছর শেষে ইচ্ছা করলে অন্যান্য সম্পদের যাকাত আদায় করার সময় ঐ ৪ লক্ষ টাকার যাকাতও আদায় করে দিতে পারবে। অথবা প্রতি কিস্তি হস্তগত হওয়ার পর ঐ কিস্তির বর্তমান ও বিগত বছরের যাকাতও আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, ব্যবসার সম্পদ এমনিতেই যাকাতযোগ্য। তাই কারটি যদি বিক্রি না হয়ে দোকানে পড়েও থাকত তবুও তার যাকাত দিতে হত।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৪৮৪, ৪৮৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০-৯১; মাবসূত সারাখসী ২/১৯৭; ফাতহুল কাদীর ২/১২৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৫
গ) বাকি ক্রয়-বিক্রয়ের একটি শর্ত হল, বেচা-কেনার সময়ই পণ্যের মূল্য চূড়ান্ত করে নেওয়া। অন্যথায় লেনদেন নাজায়েয হয়ে যায়। প্রশ্নোক্ত লেনদেনে বিক্রয়ের সময় ধানের মূল্য যেহেতু নির্দিষ্ট করা হয় না তাই এ পদ্ধতিতে বেচাকেনা জায়েয হবে না।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৫৫; হেদায়া ৩/২০; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৬৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ৪/৫২৯; মাজাল্লাহ ২৩৭-২৩৯; শরহুল মাজাল্লাহ ২/১৫৮-১৫৯