হামীদুল্লাহ - যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
৫৪৭৫. প্রশ্ন
আমার প্রিমিয়ো গাড়িটি নষ্ট হয়ে গেলে তা মেরামত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার হাতে কোনো টাকা না থাকায় আমি একটি সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন তারা আমার সাথে এ মর্মে কারবার করতে আগ্রহ প্রকাশ করে যে, স্বতন্ত্র দুটি চুক্তির মাধ্যমে তারা কারবারটি সম্পন্ন করবে। প্রথম চুক্তি হচ্ছে, তারা মুরাবাহা ভিত্তিতে কাজ করবে। অর্থাৎ গাড়ি ঠিক করাতে যত টাকা লাগবে তত টাকা দেওয়ার সময় অতিরিক্ত আরো ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। দ্বিতীয় চুক্তি হচ্ছে, তারা আমাকে তাদের ওকিল বানাবে অর্থাৎ টাকা দিয়ে গাড়িটি ঠিক করে আনতে বলবে।
উল্লেখ্য, দুটি চুক্তিই আলাদা ও স্বতন্ত্র হবে। অতঃপর আমি রাজি হই এবং প্রথম চুক্তিতে স্বাক্ষর করি। এরপর অন্য আরেকটি কাগজে দ্বিতীয় চুক্তিতেও স্বাক্ষর করি এবং চুক্তি অনুযায়ী গাড়ি ঠিক করে আনার জন্য তারা আমাকে এক লক্ষ টাকা প্রদান করে। (ফলে হিসাব করলে দেখা যায় যে, তাদেরকে আমার এক লক্ষ দশ হাজার টাকা দিলে কারবারটি সম্পন্ন হয়ে যাবে)
হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমার উপরোক্ত কারবারটি শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না? না হলে বলবেন, আমি চুক্তিটি ভেঙে ফেলব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সমিতির সাথে গাড়ি ঠিক করানোর ব্যাপারে মুরাবাহা চুক্তি করা সহীহ হয়নি। কেননা এটা মূলত শ্রমনির্ভর কাজ। এধরনের কাজে মুরাবাহা হয় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত লেনদেনকে মুরাবাহা নাম দেওয়া হলেও তা এক প্রকারের সুদি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। অর্থাৎ সমিতি অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা নেওয়ার শর্তে গাড়ি ঠিক করার নামে এক লক্ষ টাকা ঋণ দিচ্ছে। আর এক্ষেত্রে পৃথকভাবে দুটি চুক্তি করা হচ্ছে বলা হলেও তা বাস্তবসম্মত নয়। এক্ষেত্রে শুধু ফিকহের পরিভাষাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে এবং এসব নামকে সুদ গ্রহণের জন্য হীলা-বাহানা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গাড়ি ঠিক করতে গিয়ে যেসকল পার্টসের প্রয়োজন হয় তাতে সমিতি বিনিয়োগ করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি মেকানিক থেকে কাক্সিক্ষত পার্টসের তালিকা এনে দেবেন আর আপনার চাহিদা মত সমিতির কোনো লোক তা বাজার থেকে কিনে এনে তাতে পরস্পরের সমঝোতার ভিত্তিতে মুনাফা যোগ করে বাকিতে আপনার নিকট পার্টসগুলো বিক্রি করবে। আপনি র্নিধারিত সময়ে সে মূল্য পরিশোধ করে দেবেন। আর গাড়ি ঠিক করতে যে মজুরি লাগবে তা আপনি দেবেন। এতে মুরাবাহা চলবে না।
-ফাতাওয়াল মুআমালাতিল মালিয়া ১/৩১২, ৩২৬; আলমাআয়ীরুশ শারইয়্যাহ, পৃ. ২২৯, ৩১০