শাবান-রমযান ১৪২৯ || আগস্ট ২০০৮

মুহাম্মদ মাহমুদ - বাইতুল আমান, ঢাকা

১৩৪৬. প্রশ্ন

জনাব একটি বই-এ সূরা আননাজম এর ৩৯ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে হুকুম বের করা হয়েছে, কুরআন তেলাওয়াতের সওয়াব মৃত ব্যক্তির জন্য দান করতে চাইলে তা পৌঁছবে না। কেননা এটা মৃত ব্যক্তির আমল ও উপার্জন কোনোটাই নয়। দয়া করে আপনাদের অভিমত জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নে যে আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে তা এই-

وَ اَنْ لَّیْسَ لِلْاِنْسَانِ اِلَّا مَا سَعٰی

এই আয়াতের ভাষ্য হল, মানুষ নিজের আমল দ্বারা যা উপার্জন করে সে তারই সে মালিক। অন্যের উপার্জিত ছওয়াবের উপর তার কোনো অধিকার নেই। অন্যের কোনো নেকী তার আমলনামায় এমনিতেই চলে আসবে না। তবে এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ যে, কেউ স্বেচ্ছায় কোন নেক আমল করে তার সওয়াব অন্যকে দান করল আর আল্লাহ তাআলা তা মঞ্জুর করে ঐ ব্যক্তির আমলনামায় পাঠিয়ে দিলেন। এ প্রসঙ্গে এই আয়াতে কিছুই বলা হয়নি। অন্যান্য আয়াত ও হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, মৃতের নিকটে মুসলিম ভাইয়ের পাঠানো আমলের ছওয়াব পৌঁছে থাকে। সুতরাং উল্লেখিত আয়াত থেকে এই হুকুম বের করা যে, কুরআনের অন্যান্য আয়াত ও সহীহ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক এবং সালাফে সালেহীনের ব্যাখ্যা ও আমলের পরিপন্থী। সুতরাং তা কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সাহাবা-তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের কেউই এই আয়াত থেকে প্রশ্নোক্ত হুকুম গ্রহণ করেননি। বরং তাদের আমল এই ছিল যে, তারা মৃত ব্যক্তির কবরের নিকট গিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। পরবর্তীতে প্রত্যেক যুগে, প্রত্যেক ইসলামী শহরে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং মুসলমানগণ যুগ যুগ ধরে কোনো প্রকার আপত্তি ছাড়াই বিষয়টির উপর আমল করে আসছে।

১. হযরত লাজলাজ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমার পিতা আমাকে ডেকে বললেন, বৎস! আমি ইন্তেকাল করলে আমাকে লাহাদ কবরে সমাহিত করবে এবং কবরে রাখার সময় ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ।’ পড়বে। অতপর মাটি দ্বারা ঢেকে দিয়ে আমার মাথার কাছে দাড়িয়ে সূরা বাকারার প্রথম ও শেষাংশ তেলাওয়াত করবে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে বলতে শুনেছি। -মু’জামে কাবীর, তবারানী ১৯/২২০ হাদীস ৪৯১ মুহাদ্দিস হাইছামী রাহ. বলেন, হাদীসটির বর্ণনাকারীগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য। মাজমাউয যাওয়ায়েদ

২. হযরত শারী রাহ. বলেছেন, আনসারদের কেউ ইন্তেকাল করলে তারা ঐ ব্যক্তির কবরের নিকট গিয়ে গিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতেন।-জামে খল্লাল, শরহুস সুদূর ৩১১

মনে রাখতে হবে কোনো আয়াতের এমন ব্যাখ্যা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না যা কুরআনের অন্য আয়াত বা সহীহ হাদীসের খেলাফ কিংবা সালাফে সালেহীনের ব্যাখ্যার পরিপন্থী। এ ধরনের ব্যাখ্যা পরিহার করা জরুরি। প্রশ্নোক্ত ব্যাখ্যাটি যেহেতু এই শ্রেণীভুক্ত তাই তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, ইসালে ছওয়াব (মৃতের জন্য ছওয়াব হাদিয়া পাঠানো) দ্বারা এখানে আমাদের উদ্দেশ্য হল, যা শরীয়তের বিধান অনুযায়ী হয়ে থাকে। ইসালে ছওয়াবের যে সব পদ্ধতিতে বিভিন্ন বিদআত ও গলদ আকীদা বা আমল রয়েছে তা যে সংশোধনযোগ্য অবশ্যই এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ...

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন