সাঈদ আহমাদ - কেশবপুর, যশোর
৫৩৫৪. প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় ধান-পাটের সিজনে চাষীরা উৎপাদন খরচ চালাতে প্রায়ই হিমশিম খেয়ে যায়। বিশেষত শেষ মুহূর্তে যখন শ্রমিকের পারিশ্রমিকও দ্বিগুণ হয়ে যায় তখন সব চাষীই অর্থ-সংকটে পড়ে। এসময় বাজারে বড় বড় গুদাম ব্যবসায়ীরা চাষীদেরকে সুদ-মুক্ত ঋণ সুবিধা দেয়। তা এভাবে যে, চাষী তার ধান-পাট উৎপাদনের খরচ অনুযায়ী ঋণ নিয়ে যাবে; তবে শর্ত হল, ‘উৎপাদিত ধান-পাট সবই তার (উক্ত ব্যবসায়ীর) দোকানে বিক্রি করতে হবে।’ সাধারণত চাষীরা ব্যাপকভাবে এই ঋণ-সুবিধা গ্রহণ করে থাকে।
জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে এই লেনদেনে কোনো অসুবিধা আছে কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে ঋণ আদান-প্রদান করা জায়েয নয়। কারণ ঋণ গ্রহীতা থেকে কোনো সুবিধা গ্রহণের শর্ত করা নাজায়েয। এটি এক প্রকার সুদের অন্তর্ভুক্ত।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনÑ
لاَ يَحِلّ سَلَفٌ وَبَيْعٌ، وَلاَ شَرْطَانِ فِي بَيْع.
ঋণদাতার কাছে কোনো কিছু বিক্রয়ের শর্তে ঋণ প্রদান করা বৈধ নয়। এবং (বিক্রয়-চুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন)
শর্ত আরোপ করে বিক্রয় করাও জায়েয নয়। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৫০৪)
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ‘চাষীর উৎপাদিত সকল ধান-পাট উক্ত ব্যবসায়ীর দোকানেই বিক্রয় করতে হবে’Ñ এ শর্ত দ্বারা ব্যবসায়ী (ঋণদাতা) বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে। সুতরাং এধরনের শর্তে ঋণ নেওয়া-দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, কেউ যদি বিনা শর্তেই কাউকে ‘করযে হাসানা’ প্রদান করে, আর তার কাছে পণ্য বিক্রয়ের জন্য ঋণ গ্রহীতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চাপ প্রয়োগ না করে; বরং অন্য জায়গায় বিক্রয় করারও তার অধিকার থাকে, সেক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতা স্বেচ্ছায় উক্ত ব্যবসায়ীর দোকানে তার পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবে। এতে সমস্যা নেই।
Ñকিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ বর্ণনা ৭২৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/২১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/৫৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৩৮৮; রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৬