যিলকদ ১৪৪১ || জুলাই ২০২০

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - সিলেট

৫১৩২. প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। মাসিক আলকাউসারের সেপ্টেম্বর ২০১৮ ঈ. সংখ্যায় মুহিউদ্দীন ফারূকী সাহেবের লেখায় আজানের দুআর শেষে যুক্ত করা হয়েছে, إِنّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ সুনানে কুবরার বর্ণনায় অংশটি যুক্ত করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, বর্ণনাটি شاذ বা অগ্রহণযোগ্য। এর সত্যতা কতটুকু জানতে চাই।

উত্তর

বাইহাকী রাহ.-এর সুনানে কুবরার বর্ণনায় আযানের পরের দুআয় إِنّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ এই বাক্যটি অতিরিক্ত রয়েছে, যা আলী ইবনে আইয়্যাশ থেকে মুহাম্মাদ ইবনে আওফ আলহিমসী বর্ণনা করেন। মুহাম্মাদ ইবনে আওফ আলহিমসী একজন প্রসিদ্ধ নির্ভরযোগ্য রাবী। ইমাম নাসায়ী ও মাসলামা রাহ. বলেন, তিনি ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য)। খল্লাল রাহ. বলেন, তাঁর যামানায় তিনি ইমাম ও হাফেযে হাদীস ছিলেন, ইলম ও মারেফাতে তাঁর অগ্রগণ্যতা সুপ্রসিদ্ধ ছিল। ২৭৩ হিজরীতে একবার আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর নিকট তাঁর আলোচনা করা হলে তিনি বলেন, চল্লিশ বছর ধরে শাম এলাকায় মুহাম্মাদ ইবনে আওফের মত কেউ ছিল না। (দেখুন, তাহযীবুল কামাল, ১৭/১২৮)

তার একটি বিশেষত্ব ছিল, তিনি হিমসবাসীর (যা শামের একটি শহর) হাদীস সম্পর্কে অধিক অবগত ছিলেন।

ইবনে আদী রাহ. বলেন, শামের শুদ্ধ-অশুদ্ধ হাদীস সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত। আহমদ ইবনে উমায়ের ইবনে জাওছা (যার সম্পর্কে ইবনে আসাকির রাহ. বলেন, তিনি তার যামানায় শামের শায়েখ ছিলেন) মুহাম্মাদ ইবনে আওফের উপর নির্ভর করতেন এবং তাকে হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন, বিশেষ করে হিমসের হাদীস সম্পর্কে। (আলকামিল, মুকাদ্দিমা পৃ. ১৩৪)

একবার ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন রাহ.-এর কাছে শামবাসীর একটি হাদীস বর্ণনা করা হলে তিনি বললেন, এই বর্ণনাটি এভাবে শুদ্ধ নয়। তখন মজলিসের একজন বললেন, ইবনে আওফ হাদীসটি এভাবেই বর্ণনা করে থাকেন। ইবনে মায়ীন রাহ. বললেন, ইবনে আওফ যদি এভাবে বর্ণনা করে থাকেন (তাহলে এভাবেই ঠিক আছে) কারণ ইবনে আওফ তাঁর এলাকার হাদীস সম্পর্কে অধিক অবগত। (তাহযীবুল কামাল ১৭/১২৮)

আর সহীহ বুখারীর কোনো কোনো নুসখায় إِنّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ (এই অতিরিক্ত অংশটি) পাওয়া যায়। (দেখুন, আল মাকাসিদুল হাসানাহ ৪৮৪, ইরশাদুস সারী ২/৯, ফয়যুল বারী ২/২১৪)

তাই কাশ্মীরী রাহ. বলেন, إِنّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ অংশটি বাইহাকীতে শক্তিশালী সনদে বর্ণিত হয়েছে। (আলআরফুয শাযী ১/১১২)

এছাড়া বিভিন্ন হাদীস বিশারদগণ যেমন, হাফেয ইবনে হাজার রাহ. ফাতহুল বারীতে ২/৯৫; আইনী রাহ. উমদাতুল কারীতে ৫/১২৩; ইবনে রাসলান আবু দাউদের ভাষ্যগ্রন্থে ৩/৮৯২; সুয়ূতী রাহ. নাসায়ীর ভাষ্যগ্রন্থে ২/২৭; মোল্লা আলী কারী রাহ. মিরকাতুল মাফাতিহে ২/৩৩১; আরো অনেকে তাদের কিতাবে আযানের পরের দুআ উল্লেখ করার সময় সুনানে কুবরার এই অতিরিক্ত অংশটুকু উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাদের কেউই একে شاذ (শায) বলেননি। তাই এই অংশটিকে শায বলা ঠিক নয়।

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন