কেফায়াতুল্লাহ - বংশাল, ঢাকা
৫১৬৪. প্রশ্ন
জনাব মুফতী সাহেব! আমার জানার বিষয় হচ্ছে, সরকার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর আওতায় বিভিন্ন সময় চারাগাছ ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করে থাকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সবচে’ কম রেটে যারা চারাগাছ দিতে পারবে জানিয়ে দরপত্র দাখিল করে- সরকার তাদেরকেই প্রাধান্য দেয়। এক্ষেত্রে ব্যাপারটা এরকম হয় যে, বিভিন্ন নার্সারি থেকে কাক্সিক্ষত পরিমাণ বৃক্ষচারা যদি দশ টাকা করে সংগ্রহ করার সুযোগ থাকে তাহলে লাভ হিসেবে তার সঙ্গে -ধরা যাক- আরো দুই টাকা যোগ করে প্রতিটি চারাগাছের মূল্য ১২ টাকা নির্ধারণপূর্বক আবেদনপত্র পেশ করা হয়। কিন্তু সরকারের তরফে আবেদন মঞ্জুর হওয়ার জন্য এ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সাথে আরো দুই টাকা সংযুক্ত করে দরপত্রে বৃক্ষমূল্য ১৪ টাকা উল্লেখের কথা বলে। ফলে সরকার বৃক্ষ প্রতি ঠিকই ১৪ টাকা দাম পরিশোধে চুক্তিবদ্ধ থাকে। কিন্তু আমার হাতে আসে ১২ টাকা। বাকি দুই টাকা কর্মকর্তারা আনুষঙ্গিক কাজের জন্য কমিশন ফি হিসেবে কেটে রাখে। ক্ষেত্রবিশেষ দেখা যায়, অন্য যারা দরপত্র দাখিল করেছে তাদের মধ্যে আমার দেয়া ১৪ টাকাই সর্বনিম্ন রেট। বাকিদেরটা হয়ত ১৫ টাকা বা তারও ওপরে। এমতাবস্থায় প্রকৃত দামের বাইরে বৃক্ষপ্রতি ঐ দুই টাকা দিতে রাজী হলে কর্মকার্তারা আমার আবেদনকে অগ্রাধিকার দেয়ার আগ্রহ দেখায়। তো আমার জন্য কি এই শর্ত মেনে টেন্ডার গ্রহণের অবকাশ আছে? বিশেষ করে অন্যদের চেয়ে আমার রেট যখন তুলনামূলক কম। তাছাড়া আমি এই টেন্ডার না নিলেও অন্যদেরকে অনুরূপ কমিশন প্রদানের শর্তেই তো দেবে?!
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট লোকদের কমিশন দেওয়ার শর্তটি নাজায়েয, যা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। আর ঘুষ দেওয়া-নেওয়া নাজায়েয। সবাই এভাবেই নেয়, বা নিজে না নিলেও অন্যরা এভাবেই নেবে- এসব অজুহাতে ঘুষ দিয়ে দরপত্র দাখিল করা জায়েয হবে না। আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য উক্ত দুই টাকা করে নেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটা কুরআনুল কারীমে নিষিদ্ধ الأكل بالباطل তথা অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণেরই একটি পন্থা। কেননা, যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ আঞ্জাম দেয়া- এসকল কর্মকর্তাদের সাধারণ দায়িত্ব। এর জন্য তো তারা বেতন-ভাতা পেয়েই থাকে। এ বাবদ বাড়তি টাকা প্রদানের শর্ত করার অর্থ, ঘুষ দাবি করা। আর হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন-
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الرّاشِيَ وَالمُرْتَشِيَ.
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়কেই লা‘নত করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৩৭
অতএব এধরনের কারবারে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য।
উল্লেখ্য, এসব ক্ষেত্রে আসল করণীয় হচ্ছে, অন্য যে যাই করুক নিজে কমিশন দেওয়া থেকে স্বেচ্ছায় বিরত থাকা। কমিশন না দিয়ে কীভাবে দরপত্র পাওয়া যায়- সে পন্থা অবলম্বন করা। এভাবে সবাই ব্যক্তি পর্যায়ে এটা করতে থাকলে ধীরে ধীরে গণসচেতনতা তৈরি হবে। টেন্ডার বাণিজ্যসহ এ ধরনের সবরকম অন্যায় লেনদেনের বিরুদ্ধে সামাজিক বয়কট গড়ে তুলতে পারলে একসময় পরিবর্তন আসবেই ইনশাআল্লাহ।
-আলজামে লি আহকামিল কুরআন, কুরতুবী ২/২২৫; ফাতহুল কাদীর ৬/৩৭১; রদ্দুল মুহতার ৫/৩৬২; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ৬/৪১