নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - নগরকান্দা, ফরিদপুর
৫১৫২. প্রশ্ন
মুহতারামের নিকট আমার জানার বিষয় হল, মাগরিবের আযানের পরে ফরয নামাযের আগে নফল নামায পড়ার হুকুম কী? এবিষয়ে কোনো এক আলেমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, পড়া যাবে। কেননা বিভিন্ন সাহাবীরা পড়েছেন।
অন্য একজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, মাকরূহে তানযিহী-এর সাথে হবে; কেননা খুলাফায়ে আরবাআসহ উল্লেখযোগ্য কোনো সাহাবী পড়েননি।
এ বিষয়ে শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
মাগরিবের আযান ও ইকামতের মাঝে সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের কোনো নামায নেই। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো নামায পড়েছেন- এরকম স্পষ্ট কোনো সহীহ বর্ণনা নেই। সহীহ বর্ণনা অনুযায়ী খোলাফায়ে রাশেদীনও এ সময় কোনো নামায পড়তেন না। অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামও সাধারণত এ সময় নামায পড়তেন না।
সুনানে আবু দাউদে এক বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে মাগরিবের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন-
مَا رَأَيْتُ أَحَدًا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُصَلِّيهِمَا.
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কাউকে উক্ত নামায পড়তে দেখিনি। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১২৮৭
সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ.-এর এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন-
كَانَ الْمُهَاجِرُونَ لَا يَرْكَعُونَ الرّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْمَغْرِبِ، وَكَانَتِ الْأَنْصَارُ تَرْكَعُ بِهِمَا.
মুহাজির সাহাবীগণ মাগরিবের আগে দুই রাকাত নামায পড়তেন না। আর আনসার সাহাবীগণ তা পড়তেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৯৮৪
আরেক বর্ণনায় এসেছে, সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. বলেন-
مَا رَأَيْت فَقِيهًا يُصَلِّي قَبْلَ الْمَغْرِبِ إِلاَّ سَعْدَ بْنَ أَبِي وَقّاصٍ.
আমি সাদ ইবনে আবি ওয়াককাস রা. ছাড়া আর কোনো ফকীহকে মাগরিবের আগে নামায পড়তে দেখিনি। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, বর্ণনা ৭৪৬৪
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-
لَمْ يُصَلِّ أَبُو بَكْرٍ وَلَا عُمَرُ وَلَا عُثْمَانُ الرّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْمَغْرِبِ.
আবু বকর, উমর ও উসমান রা. মাগরিবের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়তেন না। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৯৮৫
হাম্মাদ বিন আবি সুলাইমান রাহ. বলেন-
سَأَلْتُ إِبْرَاهِيمَ عَنِ الصّلَاةِ قَبْلَ الْمَغْرِبِ فَنَهَانِي عَنْهَا، وَقَالَ: إِنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا لَمْ يُصَلّوهَا.
আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে মাগরিবের পূর্বে নফল নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা পড়তে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর, উমর রা. এই নামায পড়তেন না। -কিতাবুল আছার ১/১৬৩
সুফিয়ান ছাওরী রাহ. বলেন-
نَأْخُذُ بِقَوْلِ إِبْرَاهِيمَ.
আমার মতও ইবরাহীম নাখায়ীর মতই। -সুনানে বায়হাকী ২/৪৭৬
সুতরাং খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবা এবং তাবেয়ীদের অনেকেই যেহেতু এ সময় নফল পড়তেন না এবং এ সময় নফল নামাযের বিশেষ কোনো ফযিলতও হাদীসে বর্ণিত নেই। অন্যদিকে আযানের পর বিলম্ব না করে দ্রুত মাগরিব পড়ার কথা অন্যান্য হাদীসে এসেছে, তাই এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হানাফী, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের ফকীহগণ উক্ত দুই রাকাত নফল নামাযকে সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল হিসেবে গণ্য করেননি। হানাফী মাযহাবের পূর্ববর্তী ফকীহগণের মতে এ সময় নামায পড়া মাকরূহে তানযিহী তথা অনুত্তম। মালেকী মাযহাবের ফকীহগণও এ সময় নামায পড়াকে মাকরূহ বলেছেন। হাম্বলী মাযহাবের কোনো কোনো ফকীহ থেকেও এমনটি বর্ণিত আছে।
তবে মনে রাখতে হবে, এটি একটি শাখাগত মাসআলা। এতে ভিন্ন মতও রয়েছে। কোনো কোনো সাহাবী এ সময় নামায পড়েছেন- এটিও প্রমাণিত আছে। তাই অন্য মাযহাবের কাউকে এ সময় নামায পড়তে দেখলে আপত্তি করা ঠিক নয়।
-আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৫৭, ১৭৫; তুহফাতুল মুলূক পৃ. ৫৯; আলইখতিয়ার ১/৪১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৮৭; আশশারহুল কাবীর, দরদের ১/১৮৭; হাশিয়াতুশ শিলবী ১/১৮১; হাশিয়াতুস সাবী আলাশ শারহিস সাগীর ১/৯০; আলইনসাফ, মারদাবী ১/৪২২; এলাউস সুনান ২/৬৮