যিলকদ ১৪৩১ || নভেম্বর - ২০১০

ইবনে খালেদ - ঢাকা

২০৩৮. প্রশ্ন

হযরত ওমর রা.-এর যুগে যখন তারাবীর ছোট ছোট জামাতগুলোকে এক ইমামের পিছনে বড় জামাতে রূপান্তরিত করা হয় তখন তারাবী বিশ রাকাত ছিল-এটিই প্রসিদ্ধ। আমরাও এতদিন এমনটিই জানতাম। কিন্তু আমার এক বন্ধু বলল,  এই বিষয়ে বিভিন্ন রকমের রেওয়ায়েত আছে। কিছু রেওয়ায়েতে তো বিশ রাকাতের কথাই আছে, যা হাসানপর্যায়ের। কিন্তু অন্য রেওয়ায়েতে আট রাকাত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিতরসহ মোট এগার রাকাতের কথা আছে। আর এই রেওয়ায়েতটি হল সহীহএবং তা মুয়াত্তার রেওয়ায়েত। সে আরো বলল, যেহেতু সহীহ’-এর স্থান হাসান’-এর উপরে তাই আট রাকাত তারাবীহ পড়াই উচিত। আমার বন্ধুর কথা কি ঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনার বন্ধুর কথা ঠিক নয়; বরং উসূলে হাদীসের আলোকে বিশ রাকাত তারাবীর রেওয়ায়েতটি মুতাওয়াতির। খিলাফতে রাশেদা থেকে আজ পর্যন্ত সকল যুগে হারামাইন শরীফাইনে অবিচ্ছিন্নভাবে এই আমল চলে আসছে। সেখানে তারাবীর নামায বিশ রাকাত পড়া হয়। তবে মসজিদে নববীতে কখনো বিশ রাকাতের বেশি পড়া হলেও কম কখনো পড়া হয়নি। তাআমুল ও তারীখের আলোকে এই রেওয়ায়েত মুতাওয়াতির হওয়া-একটি স্বীকৃত বিষয়। এই ধরনের মুতাওয়াতিরকে পরিভাষায় মুতাওয়াতির বিতাওয়াতুরিত তাবাকাঅথবা মুতাওয়াতির বিতাওয়াতুরিল আমালিল মুতাওয়ারাছবলা হয়। শুধু সনদের বিচারে  রেওয়ায়েতটি হাসান লিগায়রিহী। তবে এমন হাসান লিগায়রিহী’, যা শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর মাজমুউল ফাতাওয়ায় বর্ণিত উসূল মোতাবেক মুতাওয়াতির।সে হিসেবে এই মুতাওয়াতির (মানাবী) কে মুতাওয়াতির বিতাওয়াতুরিল ইসনাদও বলা যায়। 

তাছাড়া সকল যুগের ফকীহ ও সব ধরনের আলেমের স্বতঃস্ফূর্ত গ্রহণের কারণে এই রেওয়ায়েতটি মুতালাক্কা বিলকবূলও বটে।

এই তিন প্রকার রেওয়ায়েত অর্থাৎ মুতাওয়াতির বিতাওয়াতুরিত তবাকা, মুতাওয়াতির বিতাওয়াতুরিল ইসনাদ ও খাবারুল ওয়াহিদ আলমুতালাক্কা বিল কবূল হচ্ছে অকাট্যভাবে প্রমাণিত রেওয়ায়েতের অন্তর্ভুক্ত। এর তুলনায় খাবারে ওয়াহিদে সহীহঅনেক অনেক নিচের পর্যায়ের বর্ণনা।

আপনার বন্ধু যে রেওয়ায়েতটির কথা বলেছে, তা সহীহ নয়; ‘মালুলমুযতারিব। কারণ এই হাদীসের মুল রাবী হল, ‘সাইব ইবনে ইয়াযিদ।তাঁর সূত্রে এই হাদীসের বর্ণনাকারী তিনজন : ১. হারিস ইবনে আবদুর রহমান ২. ইয়াযিদ ইবনে খুসাইফা ৩. মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ।

প্রথমোক্ত দুই শাগরিদ সাইব ইবনে ইয়াযিদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, সে সময় তারাবীহ বিশ রাকাত ছিল।

তবে তৃতীয় শাগরিদ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ তাঁর উস্তাদ সাইব ইবনে ইয়াযিদ-এর সূত্রে কী বর্ণনা করেছেন তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফের শাগরিদদের কেউ এগার রাকাত, কেউ তের রাকাত আবার কেউ একুশ রাকাতের কথা বর্ণনা করেন।

আপনার বন্ধু এগার রাকাতের রেওয়ায়েতটি গ্রহণ করে তা সহীহ বানিয়ে দিয়েছেন। অথচ রেওয়ায়েতটি মুযতারিব।কেননা, মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফের অন্যান্য শাগরিদদের রেওয়ায়েত এর বিপরীত।

অতএব মূল রাবী সাইব ইবনে ইয়াযিদ কী বলেছেন তা নির্ণয় করার জন্য মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফের এই রেওয়ায়েতের পরিবর্তে-যাতে রাকাতসংখ্যা অনির্দিষ্ট-অন্য শাগরিদদের রেওয়ায়েত গ্রহণ করতে হবে। এতে কোনো ধরনের ইখতিলাফ ও ইযতিরাব বাকি থাকে না।

পুরো আলোচনাটি ফন্নীভাষায় লেখা হল। কারণ প্রশ্নে আপনি ফন্নীপরিভাষা ব্যবহার করেছেন। আপনি আলেম না হলেও আপনার বন্ধু সম্ভবত আলেম। তিনি ইনশাআল্লাহ বুঝতে পারবেন। আলকাউসারের আগামী শাবান-রমযান ১৪৩২ হি. সংখ্যায় এই উত্তরের ব্যাখ্যা সম্বলিত দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখার ইচ্ছা রইল। আল্লাহই তাওফীকদাতা।

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন