আবু হুরায়রা - উলিপুর, কুড়িগ্রাম
৫০০২. প্রশ্ন
কিছুদিন আগে একটি ফার্নিচারের দোকান থেকে আমি এক লক্ষ বিশ হাজার টাকার ফার্নিচার ক্রয় করি। তার মধ্যে এক লক্ষ টাকা নগদে পরিশোধ করি। বাকিটা কয়েকদিন পরে দেওয়ার কথা হয়। ফার্নিচারের দোকানদার বিক্রির সময় আমাকে বলেছিল, এগুলোর কেনা দাম এক লক্ষ টাকা। এর সঙ্গে মেরামত বাবদ অতিরিক্ত খরচসহ এর বিক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে এক লাখ বিশ। কিন্তু ফার্নিচারগুলো দেখার পর অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজন আমাকে বললেন, দোকানদার আপনাকে ঠকিয়েছে। এর কেনা দাম মোটেও সত্তর হাজারের বেশি হবে না। এ বিষয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করা হলে প্রথমে সে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে যে, তার কেনা দাম অন্তত এক লাখ না। তার চেয়ে কম। আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি, তার এই প্রতারণার কারণে আমি কি তাকে বাদবাকি বিশ হাজার টাকা কম দিতে পারি? এক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা কী?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ব্যবসায়ী কর্তৃক মিথ্যা বলা, তার খরিদমূল্য বেশি শোনানো এবং অতিরিক্ত মুনাফা করেও সামান্য লাভ করার ভান করা অন্যায় হয়েছে এবং মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয হয়েছে। হাদীসে এসব বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে।
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
فَإِنْ صَدَقَا وَبَيّنَا بُورِكَ لَهُمَا فِي بَيْعِهِمَا، وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا.
ক্রেতা-বিক্রেতা যদি সত্য বলে এবং সবকিছু স্পষ্ট করে দেয় তাহলে তাদের ব্যবসায় বরকত হয়। আর যদি কোনো কিছু গোপন করে এবং মিথ্যা বলে, তাহলে ব্যবসার বরকত শেষ হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০৮২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৩২)
অন্য এক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنّ التّجّارَ يُبْعَثُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ فُجّارًا، إِلّا مَنْ اتّقَى اللهَ، وَبَرّ، وَصَدَقَ.
কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের ওঠানো হবে পাপাচারী হিসাবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করে সৎ ও সত্যবাদী থেকেছে (তারা বেঁচে যাবে)। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১২১০)
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য ছিল পণ্যের মূল্য যাচাই করে খরিদ করা। বিক্রেতার বলা দাম ন্যায্যমূল্য কি না- তা আপনি ফার্নিচার ক্রয়ের আগেই নিশ্চিত হয়ে নিতে পারতেন। এখন যেহেতু বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে গেছে এবং সেটা মুরাবাহার শর্তে হয়নি। অর্থাৎ কেনা দামের উপর কত লাভ নেওয়া হবে তা লেনদেনের সময় সুনির্দিষ্টভাবে চুক্তি করা হয়নি; বরং সাধারণ বেচাকেনার পদ্ধতিতে হয়েছে তাই যে দামে বিক্রির কথা হয়েছে তা দিয়েই আপনাকে ফার্নিচারগুলো নিতে হবে। কমমূল্য নেয়ার জন্য বিক্রেতাকে বাধ্য করা যাবে না। তবে বিক্রেতার উচিত নিজে থেকে মূল্য কমিয়ে নেয়া। কারণ সে অসত্য বলে আপনাকে ঠকিয়েছে।