রাশিদুল ইসলাম - সাভার, ঢাকা
৪৯৩০. প্রশ্ন
আমি একজন মুসলমান। আমি আমার জীবনের যে কোনো ধরনের হারাম উপার্জন থেকে বাঁচানোর জন্য বদ্ধ পরিকর। আমি একটি গার্মেন্টস কোম্পানীতে চাকরি করি। আমি শরীয়াহভিত্তিক একটি সমিতির সদস্য। আমাদের সমিতির অর্থ দিয়ে সদস্যদের বাড়ি করার জন্য একটি জায়গা ক্রয় করা হয়েছে। এই জমি ডেভলপ কোম্পানীকে দেয়া হবে নাকি নিজেরা বাড়ি করবে এ নিয়ে একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত হচ্ছে। তাই আমার অংশের টাকার উপর প্রতি বছর যাকাত দিয়ে আসছি। এখন আমার প্রশ্ন হল, এই যাকাত প্রদান ঠিক আছে কি না?
দ্বিতীয় বিষয় হল, চাকরির অনিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কিছু অর্থ দিয়ে অন্য কোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের চেষ্টা করি। কিন্তু টাকার স্বল্পতার জন্য এবং শরয়ী বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা না হওয়ায় জমির উপর বিনিয়োগ করি। দুইজন মুফতী সাহেবের সাথে কথা বলে যে পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে তার ধরন নি¤েœ উল্লেখ করলাম :
১ম ধরন : ৫০,০০০/- টাকা দিয়ে এক ব্যক্তির নিকট থেকে মৌখিকভাবে ২০ শতক জায়গা ক্রয় করলাম এবং পরবর্তীতে অন্য এক মজলিসে বসে ঐ ব্যক্তির সাথে ওয়াদা করলাম যে, যখন জমি বিক্রি করব তখন আপনার কাছেই বিক্রি করব। অর্থাৎ সে যখন আমাকে টাকা ফেরত দেবে তখন নতুন করে জমির দাম ধরে তার কাছে আবার বিক্রি করে দিব। (এখানে উল্লেখ্য যে, ২০ শতক জমির প্রকৃত মূল্য অনেক বেশি)
২য় ধরন : জমির মালিককে অগ্রিম ৫০,০০০/- টাকা দিব এবং সেখান থেকে প্রতি বছর ২ ফসলের জন্য জমির ভাড়া বাবদ ৮০০ টাকা করে কর্তন হতে থাকবে। অর্থাৎ সে যদি ১ বছর পর টাকা পরিশোধ করে তাহলে (৫০,০০০-৮০০) = ৪৯,২০০/- টাকা পরিশোধ করবে। কিন্তু আমি তাকে প্রতি বছর ৮০০ টাকা দিতে থাকব, যে পর্যন্ত সে আমাকে ৫০,০০০/- টাকা ফেরত না দেবে। (এখানে উল্লেখ্য যে, জমির প্রকৃত ভাড়া আরও বেশি, কিন্তু আমাকে কম টাকায় বন্ধক দিত তাহলে জমি ফেরত নেয়ার সময় তাকে পুরো ৫০,০০০/- টাকাই পরিশোধ করতে হতো তাই সে আমাকে কম টাকায় ভাড়া দিয়েছে)
কেউ কেউ এভাবে জায়েয নয় বলে জানিয়েছে। তাই মনের সংশয় দূর করার জন্য দয়া করে উক্ত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত জানালে উপকৃত হব, অথবা অন্য কোনো সঠিক পদ্ধতি থাকলে জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত জমিটি যদি আপনারা ঘর নির্মাণ করার উদ্দেশ্যে খরিদ করে থাকেন তবে এর যাকাত দেওয়া লাগবে না। ডেভলপারকে দেওয়া হলেও জমির উপর যাকাত আসবে না। কারণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছাড়া ক্রয়কৃত জমি বা বাড়ির উপর যাকাত আসে না।
আর অর্থ বিনিয়োগের যে দুই পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে তার কোনোটিই জায়েয নয়।
প্রথম পদ্ধতিতে জমি ক্রয় করার কথা বলা হলেও সকলেই জানে যে, এটি প্রকৃত অর্থে ক্রয়-বিক্রয় নয়; বরং এখানে কিছু টাকার মুনাফা স্বরূপ গ্রহীতার জমি ভোগ করা হচ্ছে ক্রয়ের নামে। এ কারণেই পরবর্তীতে জমির মালিকের কাছেই জমি ফেরত দেওয়ার শর্ত করা হয়েছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হলে ক্রেতার জন্য পণ্যের উপর নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। সে তার ইচ্ছামত তা ভোগ করতে পারে। তেমনি সেটি দান, হেবাও করতে পারে অথবা যে কোনো জায়গায় বিক্রিও করতে পারে। অথচ এ কথিত বেচা-কেনায় এমন কোনো অধিকারই ক্রেতা পায় না। এমনিভাবে পরবর্তীতে জমির মূল্য কম-বেশি যাই হোক বিক্রেতা কর্তৃক পূর্বে প্রদত্ত মূল্য ফেরত পাওয়ার পরই জমিটি আবার পূর্বের মালিকের নিকট চলে যায়। এতে এ কথাটি সুস্পষ্ট যে, এটা সুদ গ্রহণের একটি হীলা ও ছুতা মাত্র। আর সুদ গ্রহণের হীলা ইসলামে নিষিদ্ধ।
প্রশ্নে বর্ণিত দ্বিতীয় কারবারটিকে ভাড়া চুক্তি এবং প্রদত্ত ৫০ হাজার টাকাকে অগ্রিম ভাড়া ধরলেও বাস্তবে এটি ভাড়া চুক্তি নয়। কেননা বাস্তবেই যদি কারবারটি ভাড়া চুক্তি হত, তাহলে বছরে আটশত টাকা ভাড়া হিসেবে ৬২ বছর ছয় মাসের দীর্ঘমেয়াদি ভাড়াচুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনি তা করেননি। বলা বাহুল্য এত কম টাকায় এ দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি আপনার সঙ্গে কেউ করবে না। অনুরূপভাবে প্রদত্ত ৫০ হাজার টাকা যদি অগ্রিম ভাড়া হত, তাহলে সেখান থেকে প্রতি বছর ভাড়া বাবদ আটশত টাকা কর্তন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনি পৃথকভাবে ভাড়া আদায় করছেন। এসব থেকে যে কেউ বুঝে নিবে যে, আপনার এককালীন প্রদত্ত টাকা অগ্রিম ভাড়া নয়। বরং ঋণ। যার বিনিময়ে নামমাত্র ভাড়ায় আপনি জমি ভোগ করে যাচ্ছেন, যা নাজায়েয হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। তাই অবিলম্বে এ চুক্তি বাতিল করা আবশ্যক।
উল্লেখ্য যে, শরীয়তে عقود লেনদেন ও কারবারের চুক্তিসমূহে শুধু চুক্তির ভাষাই নয়; বরং مقاصد ومعاني অর্থাৎ এর মর্ম ও উদ্দেশ্যও ধর্তব্য হয়।
Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২১০৭৭; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৫/৩৫০; কিতাবুল আছল ২/৯৭, ৩/২৪; আলইখতিয়ার ১/৩৩২; আলমুলতাকাত ফিল ফাতাওয়া পৃ. ২২৬; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ. ২৯৬; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী সংখ্যা ৭, ৩/৫৫৭