মুহাম্মাদ তানভীর - নীলক্ষেত, ঢাকা
৪৭০১. প্রশ্ন
আমাদের এলাকার একটি মেয়ে তার পছন্দের একটি ছেলেকে বিবাহ করতে চাচ্ছিল। কিন্তু তার মা-বাবা অন্যত্র বিয়ে ঠিক করেন। বিবাহের দিন তার মতামত জানতে চাইলে মেয়ে হাঁ-না কিছুই না বলে চুপ থাকে। তবে মনে মনে সে নারাজ ছিল। এ অবস্থায় তার আকদ হয়ে যায়। এবং মেয়েটি নারাজ থাকলেও মা-বাবার কথায় স্বামীর বাড়িতে চলে যায়। এবং দু‘মাস তার সাথে সংসার করে। এরপর একদিন হঠাৎ সে পালিয়ে গিয়ে পূর্বোক্ত ছেলেটির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তার সাথে ঘর-সংসার শুরু করে। এটা নিয়ে এলাকায় অনেক তোলপাড় চলছে। মেয়েটির দাবি, সে প্রথম বিবাহে রাজি ছিল না। তাই তা সহীহ হয়নি। জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মেয়েটির কথা কি ঠিক? তার প্রথম বিবাহ সহীহ হয়েছে কি না? এবং সে যে দ্বিতীয় বিবাহ করল এর হুকুম কী?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত প্রথম বিবাহটি সহীহ হয়েছে। কুমারী মেয়ের জন্য বিয়ের (ইযন) অনুমতি চাওয়ার পর চুপ থাকাই সম্মতির আলামত। এক্ষেত্রে বিয়ে সম্পর্কে মতামত জানতে চাওয়ার পর প্রত্যাখ্যান না করে চুপ থেকে সম্মতির প্রমাণ দিয়েছে। বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে মনে মনে নারাজ থাকা বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধক নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
الْأَيِّمُ أَحَقّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا، وَالْبِكْرُ تُسْتَأْذَنُ فِي نَفْسِهَا، وَإِذْنُهَا صُمَاتُهَا.
... কুমারী থেকে তার (বিবাহের) ব্যাপারে অনুমতি নিতে হবে। আর তার নীরব থাকাই তার সম্মতি। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪২১)
এ বিয়েতে সে যদি বাস্তবেই সম্মত না থাকত তাহলে তার উচিত ছিল স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া। সে যেহেতু তা করেনি, বরং চুপ থেকেছে তাই প্রথম বিবাহ সহীহ হয়ে গেছে। অতএব প্রথম বিবাহে থাকা অবস্থায় তার দ্বিতীয় বিবাহ সহীহ হয়নি। এখন দ্বিতীয় ছেলের সাথে মেয়েটির ঘর-সংসার করা সম্পূর্ণ হারাম ও ব্যাভিচারের শামিল হচ্ছে। বিষয়টির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে মেয়েটির এই ছেলেকে ছেড়ে তার প্রকৃত স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়া এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা ইস্তেগফার করা কর্তব্য। আর যদি তার স্বামীর সাথে ঘর-সংসার না করতে চায় তবে তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদ হতে হবে। তালাক ছাড়া এমনি আলাদা থাকলে বিবাহ ভেঙ্গে যাবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/৫০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/২৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৩৫; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ৩৭