ইবনে আলী - লাকসাম, কুমিল্লা
৪৪৫৭. প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় প্রায় সকল মসজিদে তারাবির নামাযে চার রাকাত অন্তর অন্তর একটি দুআ-
سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ...
ও তারপর মোনাজাতের রীতি রয়েছে। গত বছর হাফেজ সাহেব এভাবে মোনাজাত করাকে অনুত্তম বলেন এবং তা না করার কথা বলেন। এতে মুসল্লিরা দুই পক্ষ হয়ে যায়। ফিতনার আশংকায় কেউ কেউ মোনাজাত করার পরামর্শ দেন এবং তিনি তাই করেন। এ প্রেক্ষিতে একজন মুসল্লি বললেন, অনেকে এ মোনাজাতকে মুস্তাহাব পর্যায়ের বলে থাকে। অথচ তারাবির এ মোনাজাত সাহাবায়ে কেরাম, তাবিয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীন কেউ করেননি; তাহলে মুস্তাহাব সাব্যস্ত হয় কীভাবে?
২য় বিষয় : মোনাজাতের পূর্বে
سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ ...
দুআর ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?
উপরোক্ত বিষয়সমূহের দালীলিক সমাধান দিলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
উত্তর
(১, ২) তারাবীর নামাযের চার রাকাত পর পর এবং বিশ রাকাত শেষে বিতিরের পূর্বে কিছু সময় বিরতি দেওয়া মুস্তাহাব। এই বিরতীর সময় কী করতে হবে শরীয়ত তা নির্ধারণ করে দেয়নি। তাই ফকীহগণ বলেছেন, এসময় মুসল্লীরা যেমন তাসবীহ, তাহলীল দুআ-দুরূদ বা যে কোনো যিকিরে কাটাতে পারে তেমনি কেউ চাইলে নিরবও বসে থাকতে পারে। আর আমাদের দেশের কোনো কোনো এলাকায় পঠিত-
سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ....
তাসবীহটির পূর্ণ পাঠ সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না। আর তারাবীর তারবীহার সময় পড়ার বিষয়টি একেবারেই নবআবিষ্কৃত। সাহাবায়ে কেরামের কেউ এসময় এ ধরনের কোনো তাসবীহ পড়েছেন- এমন প্রমাণও পাওয়া যায় না। তাই এই তাসবীহকে মুস্তাহাব বা সুন্নত মনে করার সুযোগ নেই এবং এটিকে এক্ষেত্রে পড়ার মত নির্দিষ্ট তাসবীহও মনে করা যাবে না। বিশেষ করে কোনো কোনো এলাকায় যৌথভাবে উচ্চস্বরে যেভাবে তাসবীহটি পড়া হয় তা পরিহারযোগ্য। তবে তাসবীহের এ দুআটি হাদীসে বর্ণিত না হলেও তার অর্থ ঠিক আছে। তাই কেউ এটিকে সুন্নত মনে না করে ব্যক্তিগতভাবে অনুচ্চস্বরে এটি পড়লে তাকে নিষেধ করারও প্রয়োজন নেই।
আর কোনো কোনো এলাকায় চার রাকাত পর পর মুনাজাতের যে প্রচলন আছে- এ আমলেরও কোনো দলীল নেই এবং সালাফে সালেহীন থেকে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
তাই নিয়ম করে এমনটি না করাই উচিত। কেননা এতে কেউ আমলটাকে শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত বা আবশ্যকীয় মনে করতে পারে, যা বিদআতের রাস্তা খুলে দেয়। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা আবশ্যক।
উল্লেখ্য যে, এ আমলটি কোনো কোনো এলাকায় যেহেতু বহুদিন থেকে প্রচলিত আছে তাই মানুষকে বুঝিয়ে ধীরে ধীরে সংস্কার করতে হবে। কোনোক্রমেই ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৮; মা সাবাতা বিস-সুন্নাহ পৃ. ২১২; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৫৬