মুহাম্মাদ জামিল - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা
৩৫৬১. প্রশ্ন
নিম্মলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন :
১. মুহাম্মাদ জামিল তার শ্যালক থেকে উপহার হিসেবে ছয়টি এয়ার টিকেট গ্রহণ বকরেছেন, যার আর্থিক মূল্য পাঁচ লক্ষ টাকা। শ্যালক যদিও মুখে উপহার কথাটি উল্লেখ করেছেন; তবে মুহাম্মাদ জামিল সাহেব গ্রহনের সময় মনে করেছিলেন এটা একটা লোন অথবা করজে হাসানা। জামিল সাহেব সেই লোনটি যেভাবেই হোক এখন পরিশোধ করতে চান। এক্ষেত্রে ইসলামের নিয়মটা কি?
২. জামিল সাহেবের স্ত্রীর রোগের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার থাকা খাওয়াসহ চিকিৎসা বাবদ আনুমানিক আট থেকে দশ লক্ষ টাকা খরচ হয়। সেই টাকাটাও জামিল সাহেবের শ্যালক দিয়ে দিয়েছেন। তবে ধারণা যে, সেটাও তিনি উপহার হিসেবে দিয়েছেন। তবে শ্যালক মুখে সেটা উল্লেখ করেননি। এখন জামিল সাহেব সেই টাকাটাও পুনরায় দিতে চান। এক্ষেত্রে ইসলামের নিয়ম কী।
৩. জামিল সাহেবের ছেলেমেয়েদের খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা তার শ্যালক জামিল সাহেবের স্ত্রীর হাতে প্রদান করতেন। তবে শ্যালক কখনো জামিল সাহেবের হাতে সেই টাকা প্রদান করেননি এবং সেই টাকাও মনে হয় তিনি উপহার হিসেবে প্রদান করেছেন। তবে প্রদানের সময় তিনি কোন কথা উল্লেখ করেননি। উল্লেখ্য যে, শ্যালক জামিল সাহেবের শশুড়ের বাড়ীকে ইন্ডাস্ট্রি করেছিল যার মালিক ছিলেন সকল ভাইবোন। মনে হয় সেই বাড়ীর ভাড়া থেকেই শ্যালক জামিল সাহেবের স্ত্রীকে ৫০০০ টাকা প্রদান করতেন। তবে শ্যালক এই বোনকে দিতেন ৫০০০ টাকা ও অন্যান্য বোনদের দিতেন ৫০০ টাকা (অন্যান্য বোনদের আর্থিক সচ্ছলতা তার চেয়ে ভাল ছিল) এখন বর্তমানে জামিল সাহেব সে টাকাটা পুনরায় ফিরিয়ে দিতে চান। এখন প্রশ্ন হল, এ টাকাটা তিনি কি তার শ্যালককে প্রদান করবেন নাকি স্ত্রীকে? এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কী?
৪. জামিল সাহেবের ছেলের বিদেশে উচ্চতর পড়াশুনা বাবদ জামিল সাহেবের ভায়রা তার হাতে পাঁচ লক্ষ টাকার একটি চেক উপহার বাবদ প্রদান করেন। কিন্তু জামিল সাহেব টাকাটা গ্রহণের সময় বলে নেন যে, এটা লোন। এখন জামিল সাহেব সেই লোনটি পরিশোধ করতে চান। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কী?
৫. জামিল সাহেবের বিয়ের ধার্যকৃত মোহর ছিল ১৫,০০০০ টাকা। তিনি আনুমানিক ৬০% প্রদান করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি ধার্যকৃত পুরো টাকাটা প্রদান করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কী?
৬. জামিল সাহেবের বড় ভাই নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি পাঁচটি ফ্ল্যাট রেখে গেছেন। মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী, সহোদর দুই ভাই ও বিমাতা এক ভাই রেখে মারা গেছেন। দুই বোন ছিল, তারা তার মৃত্যুর পূর্বে মারা গিয়েছেন। এখন তার সম্পত্তির সঠিক বণ্টন কীভাবে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে জানতে চাই।
উত্তর
(১, ২, ৩) প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম ঘটনায় জামিল সাহেবের শ্যালক যেহেতু উক্ত ছয়টি এয়ার টিকেট জামিল সাহেবকে সুস্পষ্টভাবে উপহার বলে প্রদান করেছেন এবং তিনি তা প্রত্যাখ্যান না করে গ্রহণ করে নিয়েছেন তাই এর দ্বারা ঐ এয়ার টিকেটগুলো তার ও তার পরিবারের জন্য হাদিয়া হিসাবে গণ্য হয়েছে এবং তারা এগুলোর মালিক হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে টিকেটগুলো গ্রহণের সময় জামিল সাহেবের মনে মনে ঋণ হিসাবে গ্রহণের নিয়ত থাকলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
অনুরূপ ২নং ঘটনাতে জামিল সাহেবের শ্যালক বোনের চিকিৎসা খরচ বাবদ যে টাকাটা প্রদান করেছেন প্রশ্নের ভাষ্যমতে তিনি তা সেচ্ছায় নিজ থেকেই বোনের চিকিৎসার জন্য খরচ করেছেন তাই এ টাকাও তার পক্ষ থেকে উপহার হিসাবে গণ্য হবে, ঋণ গণ্য হবে না।
আর তৃতীয় ঘটনায় জামিল সাহেবের শ্যালক যে প্রতি মাসে নিজ বোনের হাতে পাঁচ হাজার করে টাকা প্রদান করত তা যদি বাবার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে বোনের প্রাপ্য অংশের ভাড়া হয়ে থাকে তবে তো সে প্রতি মাসে বোনের পাওনা ভাড়া পরিশোধ করেছে।
কিন্তু ঐ টাকা যদি ভাড়ার অংশের না হয়ে থাকে অথবা ভাড়ার টাকার সাথে নিজ থেকে অতিরিক্ত যোগ করে দেয়া হয়ে থাকে তবে ভাড়ার অতিরিক্ত অংশটা হাদিয়া বা উপহার হিসাবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রেও এ টাকা ফেরৎযোগ্য নয়।
সুতরাং উপরোক্ত তিন ঘটনাতেই শ্যালক থেকে প্রাপ্ত হাদিয়াকে ঋণ গণ্য করার সুযোগ নেই। অতএব তা পরিশোধ করা লাগবে না। জামিল সাহেব যদি শ্যালককে এখন নিজ থেকে কিছু দিতে চান তবে তা স্বতন্ত্র হাদিয়া হিসাবে ধর্তব্য হবে।
(৪) জামিল সাহেবের ভায়রা পাঁচ লক্ষ টাকার চেকটি তাকে উপহার বলে দিলেও জামিল সাহেব যেহেতু তা উপহার হিসাবে গ্রহণ করেননি; বরং তিনি তা সুস্পষ্ট লোন বলে গ্রহণ করেছেন, তাই ঐ টাকা উপহার হিসাবে গণ্য হবে না। বরং ঐ পাঁচ লক্ষ টাকা তার উপর লোন হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং এ টাকা তার ভায়রাকে পরিশোধ করে দিতে হবে।
(৫) প্রশ্নের ভাষ্যমতে জামিল সাহেব যেহেতু মোহরানার প্রায় ৬০% স্ত্রীকে আদায় করে দিয়েছেন তাই বাকি অংশ হিসাব করে পরিশোধ করে দিলে তিনি মোহরানার দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন। বকেয়া অংশ থেকে অতিরিক্ত পরিশোধ করা জরুরি নয়। তবে তিনি যাদি স্ত্রীকে ধার্যকৃত মোহরানা থেকে অতিরিক্ত দিতে চান তাহলে সে এখতিয়ার তার রয়েছে।
(৬) প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির উপর কোন ঋণ থাকলে তার রেখে যাওয়া সমুদয় সম্পত্তি থেকে তা পরিশোধ করতে হবে। অতপর তার যদি কোনো বৈধ অসিয়ত থাকে তবে অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ দ্বারা তা আদায় করতে হবে। এরপর বাকি সম্পত্তি তার মৃত্যুর সময় জীবিত ওয়ারিশদের মাঝে নিম্নোক্ত শতকরা হারে বণ্টিত হবে।
মৃতের স্ত্রী পাবে .................. ২৫%
সহোদর ভাই প্রত্যেকে........... ৩৭.৫ করে দুজনে মোট পাবে ............. ৭৫%
আর সহোদর ভাই বিদ্যমান থাকার কারণে বিমাতা ভাই কোন অংশ পাবে না।
উল্লেখ্য যে, মৃতের রেখে যাওয়া পাঁচটি ফ্ল্যাটের বর্তমান মূল্য হিসাব করে উপরোক্ত ওয়ারিশ অর্থাৎ মৃতের স্ত্রী ও দুই সহোদর ভাইয়ের মাঝে তাদের উল্লেখিত প্রাপ্য অনুযায়ী ভাগ হবে।-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাসসাস ৪/২০; আলমাবসূত সারাখসী ১০/১৪৬; শরহুল মাজাল্লা ১/৩৯; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৮৮, ৭৭৪; এলাউস সুনান ১৬/৭০