আমি শীতকালে চামড়ার মোজা পরিধান করি। আমার জানার বিষয় হল, মোজার উপর মাসাহের সময়সীমা কখন শুরু হয় এবং কখন শেষ হয়? বিষয়টিতে আমার সংশয় রয়েছে। তাই এর সমাধান জানতে চাই।
আমি শীতকালে চামড়ার মোজা পরিধান করি। আমার জানার বিষয় হল, মোজার উপর মাসাহের সময়সীমা কখন শুরু হয় এবং কখন শেষ হয়? বিষয়টিতে আমার সংশয় রয়েছে। তাই এর সমাধান জানতে চাই।
অযু অবস্থায় মোজা পরার পর অযু ভঙ্গ হওয়ার সময় থেকে মোজার উপর মাসাহের সময় শুরু হয়। আর মোজার উপর মাসাহের সময়সীমা মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত (২৪ ঘণ্টা) এবং মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত (৭২ ঘণ্টা)। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
جَعَلَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ ثَلَاثَةَ أَيّامٍ وَلَيَالِيَهُنَّ لِلْمُسَافِرِ، وَيَوْمًا وَلَيْلَةً لِلْمُقِيمِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোজার উপর মাসাহের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন- মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত আর মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৬)
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/৭৩; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৯৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৫১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১০৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৮
আমার বড় ভাইয়ের ডান পায়ের অনেক অংশ কেটে যায়। ফলে ডাক্তার পুরো পায়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছে। এবং তিনি শীতের কারণে বাম পায়ে মোজা পরেছেন। এখন কি তিনি সেই মোজার উপর মাসাহ করতে পারবেন?
না, শুধু এক পায়ের মোজার উপর মাসাহ করা সহীহ নয়। কেননা মোজার ওপর মাসাহ সহীহ হওয়ার জন্য উভয় পায়ে মোজা পরিধান করা শর্ত। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অযু করার সময় অপর পা তাকে ধুতে হবে। এক্ষেত্রে অপর পায়ের মোজার উপর মাসাহ করা যাবে না। অতএব আপনার ভাই অযু করার সময় বাম পায়ের মোজা খুলে পা ধুয়ে নেবেন।
শেয়ার লিংক-শরহুয যিয়াদাত, কাযীখান ১/১৫৪; ফাতহুল কাদীর ১/১৪১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩০; আলহাবিল কুদসী ১/১২৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৫৩; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮৭; রদ্দুল মুহতার ১/২৮০
আমরা একটি ভাড়া বাসায় থাকি। সেখানে ছারপোকার খুবই উপদ্রব। একদিন ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামায আদায় করি। নামাযের পর প্রচণ্ড গরমের কারণে গেঞ্জি খুলি। তখন দেখি, গেঞ্জির কয়েক জায়গায় ছারপোকার রক্তের ছাপ লেগে আছে। তাই এখন মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, ছারপোকার রক্ত পাক নাকি নাপাক? তা কাপড়ে লেগে থাকা অবস্থায় নামায সহীহ হয়েছে কি না? জানালে উপকৃত হব।
ছারপোকার রক্ত নাপাক নয়। একাধিক ছারপোকা থেকে বেশি পরিমাণ রক্ত লেগে গেলেও কাপড় নাপাক হবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গেঞ্জিতে ছারপোকার রক্ত লেগে থাকলেও আপনার নামায সহীহ হয়েছে। তবে নামাযের আগে এজাতীয় রক্ত বা ময়লা লেগে থাকার কথা জানতে পারলে যথাসম্ভব ধুয়ে নেওয়া ভালো।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/৫৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৯; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৫৪২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩২০
কিছুদিন আগে আমি একবার ফরয গোসলের সময় কুলি করতে ও নাকে পানি দিতে ভুলে যাই এবং এ অবস্থায় গোসল শেষ করে ফজরের নামায পড়ে ফেলি। প্রায় এক ঘণ্টা পর বিষয়টি মনে পড়লে আমি পুনরায় গোসল করে ফজরের নামায কাযা করি। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, এ অবস্থায় আমার জন্য পুনরায় গোসল করা আবশ্যক ছিল, নাকি শুধু কুলি করা এবং নাকে পানি দিয়ে নেওয়াই যথেষ্ট ছিল?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার জন্য পুনরায় গোসল করা আবশ্যক ছিল না। আপনার যেহেতু কুলি ও নাকে পানি প্রবেশ করানোর কাজই বাকি ছিল তাই এ দুটি কাজ করে নেওয়াই যথেষ্ট ছিল।
শেয়ার লিংক-সুনানে দারাকুতনী ১/১১৫; কিতাবুল আছল ১/৩২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/৩৩৮; খিযানাতুল আকমাল ১/৩১; রদ্দুল মুহতার ১/১৫৫
আমি একটি মসজিদের মুআযযিন। কয়েকদিন আগে ফজরের নামাযের জন্য আযান দিতে উঠে দেখি, আমার ওপর গোসল ফরয হয়ে আছে। কিন্তু তখন মসজিদের ট্যাংকিতে পানি ছিল না। ওদিকে আযানের সময় হয়ে যাচ্ছিল। আমি তখন নাপাক অবস্থাতেই আযান দিই। পরে ট্যাংকিতে পানি আসলে পবিত্র হয়ে তারপর নামায আদায় করি।
মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাচ্ছি, নাপাক অবস্থায় আযান দেওয়া আমার জন্য কি জায়েয হয়েছে? ওই আযানের মাধ্যমে পড়া নামায কি সহীহ হয়েছে?
গোসল ফরয অবস্থায় আযান দেওয়া মাকরূহ। এ অবস্থায় আযান দিলে সেই আযান হয়ে গেলেও পুনরায় দেওয়া মুস্তাহাব। তাই আপনার উচিত ছিল, তখন নিজে আযান না দিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে আযান দেওয়ার ব্যবস্থা করা। অথবা একটু বিলম্ব করে পবিত্র হয়ে আযান দেওয়া। তবে ওই দিনের আযান আদায় হয়ে গিয়েছে।
শেয়ার লিংক-আলজামেউস সাগীর, ইমাম মুহাম্মাদ, পৃ. ৮৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৪৯; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪
গত জুমায় আমি পাগড়ি পরে নামায পড়ি। সিজদার সময় শুধু পাগড়ির প্যাঁচের উপর সিজদা করি। যমীনে আমার কপাল লাগেনি। মুহতারামের কাছে জানতে চাই, আমার উক্ত নামাযের হুকুম কী?
পাগড়ির প্যাঁচ যদি কপালের উপর থাকে আর সিজদা করার সময় লেগে থাকে তাহলে আপনার নামায সহীহ হয়ে গেছে। তবে বিনা ওযরে যমীনে কপাল না লাগিয়ে পাগড়ির প্যাঁচের উপর সিজদা করা মাকরূহ।
উল্লেখ্য, পাগড়ির প্যাঁচ যদি কপাল থেকে উপরে মাথার অংশে থাকে আর সিজদার সময় যমীনে কপাল একদমই না লাগে তাহলে সিজদাই সহীহ হবে না। তাই এমনটি হলে নামায সহীহ হবে না।
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮৩, ১৪১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৭৩; আলইখতিয়ার ১/১৭৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩০৪; ফাতহুল কাদীর ১/২৬৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৯
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব গতকাল এশার নামাযে শেষ বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে যান। কিন্তু রুকুতে যাওয়ার আগেই তিনি বৈঠকে ফিরে আসেন এবং সাহু সিজদা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে নামায শেষ করেন। মুসল্লীদের কেউ কেউ বলাবলি করছিল, শেষ বৈঠক তো ফরয ছিল। সুতরাং ফরয ছেড়ে দেওয়ার কারণে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায সহীহ হয়নি। মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, উক্ত নামাযটি কি আসলেই সহীহ হয়নি?
উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। যারা বলেছে, সহীহ হয়নি তাদের কথা ঠিক নয়। কেননা, এক্ষেত্রে শেষ বৈঠক ছুটে যায়নি; বরং বিলম্বে আদায় হয়েছে। আর বিলম্বের কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। সুতরাং সাহু সিজদা করার কারণে উক্ত নামায সহীহভাবে আদায় হয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পঞ্চম রাকাতের সিজদা করে ফেললে শেষ বৈঠক ছেড়ে দেয়া সাব্যস্ত হতো। সেক্ষেত্রে সাহু সিজদা যথেষ্ট হতো না; বরং পুনরায় নামায আদায় করতে হতো।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/২২৯; শরহুল জামিইস সাগীর, সাদরুশ শহীদ, পৃ. ১৭৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৫
কিছুদিন আগে আমি একটি কাজে এক সপ্তাহের জন্য চট্টগ্রাম যাই। চট্টগ্রামে থাকাকালে একদিন রাতের বেলা আমি একাকী এশার নামায পড়ছিলাম। দুই রাকাত পড়ার পর আমি বৈঠক করার কথা ভুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাই এবং তৃতীয় রাকাতও পড়ে ফেলি। চতুর্থ রাকাতের জন্য যখন দাঁড়াই তখন আমার মনে পড়ে, মুসাফির হওয়ার কারণে আমার উপর তো চার রাকাত নয়; বরং দুই রাকাত ফরয এবং আমি তো দুই রাকাত পর বৈঠকও ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু তখন আর আমি বৈঠকে ফিরে আসিনি; বরং চার রাকাত পূর্ণ করে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করি। মুহতারামের কাছে জানতে চাই। আমার উক্ত নামাযের কী হুকুম?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু মুসাফির অবস্থায় সেদিনের এশার নামাযটি পড়েছেন তাই দুই রাকাতের পর বৈঠক করা ফরয ছিল। আর এই ফরয বৈঠক যেহেতু করা হয়নি তাই সেদিনের এশার নামায আদায় হয়নি। অতএব কসরের নামায হিসেবে তা দুই রাকাত কাযা করে নেওয়া আবশ্যক। আর উক্ত নামায নফল হিসেবে আদায় হয়েছে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/২৩৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০০; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৩৮; ফাতহুল কাদীর ২/৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৮
একদিন আসরের নামাযের জন্য মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে রুকুতে পাই। আমি তখন তাড়াহুড়ার কারণে রুকুতে যেতে যেতে তাকবীরে তাহরীমা বলি এবং রুকুতে যাওয়ার পর আমার তাকবীরে তাহরীমা শেষ হয়। তখন এ বিষয়টি নিয়ে আমার মনে খটকা দেখা দেয়। তাই রুকু থেকে দাঁড়িয়ে আবার তাকবীরে তাহরীমা বলে নামাযে শরীক হই।
মুহতারামের নিকট আমার প্রশ্ন হল, প্রথম দফায় কি আমার তাকবীরে তাহরীমা সহীহ হয়েছিল?
না, আপনার প্রথমবার তাকবীরে তাহরীমা বলা সহীহ হয়নি। কেননা পূর্ণ তাকবীরে তাহরীমা দাঁড়ানো অবস্থায় কিংবা দাঁড়ানোর কাছাকাছি থাকা অবস্থায় সম্পন্ন হওয়া জরুরি। কিন্তু যদি এর চেয়ে বিলম্ব হয়ে যায় এবং রুকুর কাছাকাছি চলে যাওয়ার পর শেষ হয় তাহলে তা সহীহ হবে না। যেহেতু প্রথমবার আপনার তাকবীরে তাহরীমা রুকুতে গিয়ে শেষ হয়েছে তাই তা সহীহ হয়নি। তাকবীরে তাহরীমা যেহেতু সহীহ হয়নি তাই আপনার নামায শুরু করাও সহীহ হয়নি। সুতরাং আপনি পুনরায় দাঁড়িয়ে নতুন করে তাকবীরে তাহরীমা বলে ঠিকই করেছেন। তবে এক্ষেত্রে আপনি উক্ত রাকাত পাননি। তাই ইমামের সালামের পর ঐ রাকাত আদায় করে নেওয়া আবশ্যক।
শেয়ার লিংক-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৯০; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৪৩২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৬; আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৪৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৯; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৮০
কোনো কোনো মুসল্লীকে দেখা যায়, তারা জামাতে শরীক হওয়ার সময় যদি ইমাম সাহেবকে সিজদা অবস্থায় পায়, তখন তারা নিজে নিজে রুকু করে ইমামের সঙ্গে সিজদায় গিয়ে শরীক হয়। জানার বিষয় হল, তাদের এই কাজ কেমন? এতে কি কোনো সমস্যা আছে?
নামাযের জামাতে শরীক হওয়ার পর ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। তাই ইমামকে সিজদায় পেলে তাকবীরে তাহরীমার পর সরাসরি সিজদায় চলে যাবে। এক্ষেত্রে একাকী রুকু করবে না। একাকী রুকু করার পর এই রাকাতকে গণ্য করলে তার নামাযই হবে না। তাই নিজে নিজে রুকু করবে না; বরং তাকবীরের পর ইমামকে যে অবস্থায় পাবে ইমামের সাথে শরীক হয়ে যাবে। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الصَّلَاةَ وَالإِمَامُ عَلَى حَالٍ فَلْيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الإِمَامُ.
তোমাদের কেউ যখন নামাযে আসে, তখন ইমামকে যে অবস্থায় পায় সে যেন তাই করে। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৫৯১)
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/১২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯১; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩০৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১২
কিছুদিন আগে একবার আমার ফজরের নামায কাযা হয়ে যায়। কিন্তু আমি তা ভুলে যাই এবং ঐ দিন যোহরের নামায পড়ার পর আমার তা মনে পড়ে। পরে আমি শুধু ফজরের নামাযের কাযা পড়ে নিই। কারণ আমি কোথাও পড়েছিলাম, কাযা নামাযের কাথা স্মরণ না থাকলে কাযা নামায না পড়ে কোনো ওয়াক্তিয়া নামায পড়লে ওয়াক্তিয়া নামায সহীহ হয়ে যায়; এক্ষেত্রে কাযা নামাযের সঙ্গে ওয়াক্তিয়া নামায পুনরায় পড়া আবশ্যক হয় না। মুহতারামের কাছে আমি জানতে চাচ্ছি, আমার উক্ত আমল কি সহীহ হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তখন শুধু ফজর পড়ে আপনি ঠিকই করেছেন। কাযা নামাযের কথা স্মরণ না থাকায় যোহরের নামায সহীহভাবেই আদায় হয়েছিল। আপনার জানা মাসআলা সহীহ।
উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে উক্ত কাযা নামাযের কথা স্মরণ হওয়ার পর আবার তরতীব ফিরে আসবে এবং পরবর্তী ওয়াক্তিয়া নামায পড়ার আগেই কাযা পড়ে নেওয়া ওয়াজিব হয়ে যায়।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/১২৯; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৫৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৯; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/৮৩
আমাদের মসজিদে মাগরিবের নামাযে ইমাম সাহেব দ্বিতীয় রাকাত শেষে বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে যান। মুক্তাদীরা পেছন থেকে লোকমা দিলে ইমাম সাহেব বসে যান। তারপর নামায শেষে সাহু-সিজদা করেন। নামাযের পরে কিছু মুসল্লী বলাবলি করছিল, ইমাম সাহেবের দাঁড়ানো থেকে বসে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। এতে নামায নষ্ট হয়ে গেছে।
মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাই, আসলেই কি আমাদের ওই নামায নষ্ট হয়ে গেছে, নাকি সহীহ হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ইমামের বসে যাওয়ার কারণে নামায নষ্ট হয়নি; বরং দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। আর ইমাম সাহেব যেহেতু নামায শেষে সাহু সিজদা করেছেন তাই আপনাদের নামায সহীহ হয়ে গিয়েছে। তবে, ইমাম সাহেব প্রথম বেঠক না করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর মুক্তাদীদের লোকমা শুনে বসে যাওয়া উচিত হয়নি।
এক্ষেত্রে নিয়ম হল, ইমামের অনুসরণে মুক্তাদীরাও দাঁড়িয়ে যাবে এবং অবশিষ্ট নামায শেষ করে ইমামের সাথে সাহু সিজদা করবে।
হযরত মুগীরা ইবনে শোবা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ مِنَ الرّكْعَتَيْنِ فَلَمْ يَسْتَتِمّ قَائِمًا فَلْيَجْلِسْ، فَإِذَا اسْتَتَمّ قَائِمًا فَلَا يَجْلِسْ وَيَسْجُدْ سَجْدَتَيِ السّهْوِ.
যখন তোমাদের কেউ দ্বিতীয় রাকাতের পর না বসে দাঁড়িয়ে যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণভাবে না দাঁড়ায় সে বসে যাবে। আর যখন সে পূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে যাবে তখন আর বসবে না এবং (নামায শেষে) দুটি সাহু সিজদা করে নেবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১২০৮)
শেয়ার লিংক-ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪০২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪২; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৮৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১০১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৫৩
আমি নামাযে প্রায়ই সূরা ফাতিহা পড়ার পরে দ্বিধায় পড়ে যাই যে, সূরা ফাতিহা পড়ার পূর্বে তো ‘আউযূবিল্লাহ’ ‘বিসমিল্লাহ’ পড়েছি, এখন কেরাত পড়ার পূর্বে পুনরায় ‘বিসমিল্লাহ’ পড়তে হবে কি না? মাসআলা জানা না থাকায় কখনো ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ি, কখনো পড়ি না।
মুফতী সাহেবের নিকট এক্ষেত্রে সঠিক সমাধান জানতে চাই।
নামাযের সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য সূরার শুরু থেকে পড়লে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া উত্তম। তবে সূরার শুরু থেকে না পড়ে মাঝ থেকে পড়লে ‘বিসমিল্লাহ’ না পড়লেও চলবে। অবশ্য সর্বক্ষেত্রেই সূরা মিলানের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ ছুটে গেলে নামাযের ক্ষতি হবে না।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৭৮; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৩১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩০৮; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ১৪২; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯০
গতকাল যোহরের চার রাকাত সুন্নত পড়ার সময় দ্বিতীয় রাকাতে প্রথম বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে যাই এবং তৃতীয় রাকাতে সিজদা থেকে উঠে বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়ার পর মনে পড়ে যে, এটা তৃতীয় রাকাত। তখন সাথে সাথে দাঁড়িয়ে বাকি নামায সাহু সিজদার সাথে আদায় করি।
মুহতারামের কাছে জানতে চাই, একই নামাযে একাধিক ভুলের জন্য একবার সাহু সিজদা আদায় করলেই কি নামায সহীহ হয়ে যাবে, নাকি প্রতিটি ভুলের জন্যই ভিন্ন ভিন্ন সাহু সিজদা আদায় করতে হবে? বিষয়টা একটু পরিষ্কারভাবে জানালে উপকৃত হব।
এক নামাযে একাধিক ওয়াজিব ছুটে গেলেও একবার সাহু সিজদা আদায় করাই যথেষ্ট। প্রত্যেক ভুলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সাহু সিজদা করতে হয় না।উল্লেখ্য, নামাযে মনোযোগী হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীসে তাকিদ এসেছে। মনোযোগের সাথে নামায আদায় করলে একই নামাযে বারবার ভুল হওয়ার আশংকা কমে যাবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/১৯৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪১৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮০
আমার ছোট চাচা একজন নামাযী মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায় করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি নামাযের মধ্যে সিজদায় যাওয়ার সময় প্রায়ই আঙ্গুল ফুটান। বিষয়টা আমার কাছে কেমন কেমন লাগছে। তাকে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, আঙ্গুল ফুটালে নামাযের সমস্যা কী? আমি তার কথার সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারিনি এবং বিষয়টা আমার কাছেও অস্পষ্ট।
তাই আমি জানতে চাই, নামাযে আঙ্গুল ফুটালে নামাযের কি কোনো সমস্যা হয়? জানালে উপকৃত হব।
নামাযে আঙ্গুল ফুটানো মাকরূহ তাহরীমী। এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। হযরত ইবরাহীম নাখায়ী এবং মুজাহিদ রাহ. থেকে বর্ণিত-
أَنّهُمَا كَرِهَا أَنْ يُفَرْقِعَ الرّجُلُ أَصَابِعَهُ وَهُوَ فِي الصّلاَة.
তারা উভয়ে নামাযে আঙ্গুল ফুটানো মাকরূহ মনে করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ৭৩৬২)
শেয়ার লিংক-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৭; মাজমাউল বাহরাইন, পৃ. ১৩৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৬; মাজমাউল আনহুর ১/১৮৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৪৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪২
আমাদের মসজিদে নির্ধারিত মুআযযিন নেই। এলাকার মুসল্লীরা আযান দেন। সেদিন এক মুরব্বী নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার আগে ঘড়ি না দেখে মাগরিবের আযান দিয়ে দেন। ওয়াক্ত হওয়ার পর ইমাম সাহেব তাকে পুনরায় আযান দিতে বললে মুরব্বী বলেন, দ্বিতীয়বার আযান দেওয়ার প্রয়োজন কী? একবার দিলেই তো হল। তখন ইমাম সাহেব ওয়াক্ত হওয়ার পর নিজেই আযান দিয়ে দেন। আমার জানার বিষয় হল, দ্বিতীয়বার আযান দিয়ে কি ইমাম সাহেব ঠিক করেছেন? ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দিলে কি ওয়াক্ত হওয়ার পর পুনরায় আযান দিতে হবে?
ওয়াক্ত হওয়ার পর পুনরায় আযান দিয়ে ইমাম সাহেব ঠিকই করেছেন। কেননা ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দিলে তা সহীহ হয় না। তাই কখনো ওয়াক্তের আগে আযান দিয়ে দিলে ওয়াক্ত হওয়ার পর পুনরায় আযান দিতে হবে। হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-
كَانُوا إِذَا أَذّنَ الْمُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ أَتَوْهُ فَقَالُوا: اتّقِ اللهَ، وَأَعِدْ أَذَانَكَ.
মুআযযিন যদি ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে রাতে আযান দিয়ে দিতেন তাহলে, তাকে বলা হত, আল্লাহকে ভয় কর, পুনরায় আযান দাও। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৮৮৯)
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/১১০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮১; খিযানাতুল আকমাল ১/৪১; আলইখতিয়ার ১/১৪৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৪৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩৭৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬২
আমি গতকাল আসরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু না করেই সিজদায় চলে যাই। সিজদা থেকে উঠে বাকি নামায সম্পন্ন করি। তারপর মাগরিবের নামাযের জন্য দাঁড়াই; তখন আসরের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু না করার বিষয়টি স্মরণ হয়। এখন মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমার গতকালের আসরের নামাযটি কি সহীহ হয়েছে?
নামাযে রুকু করা ফরয। তাই কোনো রাকাতে রুকু ছুটে গেলে সেই রাকাত আদায়ই হয় না। তাই আপনাকে উক্ত আসরের ফরয নামায কাযা করে নিতে হবে।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৭২; ফাতহুল কাদীর ১/২৪০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৪২
আমি গতকাল আসরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে ভুলে বৈঠক না করেই দাঁড়িয়ে যাই এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করি। এখন আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে আমার নামায সহীহ হয়েছে, নাকি পুনরায় পড়তে হবে?
উক্ত নামায পুনরায় পড়তে হবে না। কেননা প্রথম বৈঠক ভুলে ছেড়ে দেওয়ার কারণে আপনার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল, যা আপনি আদায় করেছেন; তাই আপনার নামায নিয়ম মতই আদায় হয়েছে। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুহায়না রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
إِنّ رَسُولَ الله صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَامَ مِنَ اثْنَتَيْنِ مِنَ الظّهْرِ لَمْ يَجْلِسْ بَيْنَهُمَا، فَلَمّا قَضَى صَلاَتَهُ سَجَدَ سَجْدَتَيْنِ، ثُمّ سَلّمَ بَعْدَ ذَلِكَ.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক না করেই দাঁড়িয়ে যান। অতঃপর নামায শেষে দুটি সিজদা করেন। তারপর সালাম ফেরান। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৫)
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/১৯৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৮; মাজমাউল বাহরাইন, পৃ. ১৫০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৩৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৫৩
আমি মাঝে মাঝে নামাযের বৈঠকে তাশাহহুদের সময় ভুলে সূরা ফাতিহা পড়ে ফেলি।
মুহতারামের নিকট জানতে চাই, এ ভুলের কারণে কি আমার ওপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?
হাঁ, তাশাহহুদের আগে ভুলে সূরা ফাতিহা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।
প্রকাশ থাকে যে, নামায মনোযোগের সাথে আদায় করা উচিত। একই ভুল বারবার হতে থাকা উদাসীনতার লক্ষণ। খুশু-খূজুর সাথে নামায আদায়ের ব্যাপারে কুরাআন-হাদীসে বিশেষ তাকীদ এসেছে।
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২১; ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৮৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৬০; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭
কিছুদিন আগে আমাদের গ্রামে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। আমার এক চাচাত ভাই সন্ধ্যার পর থেকে নিখোঁজ ছিল। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর সকালে গ্রামের একটি নদী থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে মৃতদেহটি বাড়ীতে এনে গোসলের ব্যবস্থা করছিলাম, তখন এক মুরব্বী বললেন, যেহেতু সে মারা যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পানিতে ছিল তাই তার গোসল হয়ে গেছে। নতুন করে গোসল করাতে হবে না। শুধু জানাযা পড়ে দাফন করলে চলবে। তার কথা অনুযায়ী আমরা তখন গোসল করানো ব্যতীত শুধু জানাযা পড়ে দাফন করে দিই।
জানার বিষয় হল, এই ব্যক্তির কথা কি ঠিক? মৃতদেহ যদি দীর্ঘ সময় পানিতে পড়ে থাকে তাহলে কি তার পুনরায় গোসল করাতে হবে না?
ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয় :
১. মৃতব্যক্তির পুরো শরীর পানি দিয়ে ধৌত করা।
২. এ কাজটি জীবিত ব্যক্তি বা জীবিতদের মাধ্যমে হওয়া।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম কাজটি হয়ে গেলেও দ্বিতীয়টি হয়নি। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত জীবিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ এই কর্তব্য পালন না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই ওয়াজিব হুকুম আদায় হবে না।
বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. বলেন-
يُغَسّلُ الْغَرِيقُ وَيُكَفّنُ وَيُحَنّطُ وَيُصْنَعُ بِهِ مَا يُصْنَعُ بِغَيْرِهِ.
পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিকে গোসল করাবে, কাফন পরাবে এবং কপূর্র লাগাবে। এবং তার ক্ষেত্রেও তাই করা হবে যা অন্য মৃতদের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। (অর্থাৎ তার কাফন-দাফনের যাবতীয় বিষয় সাধারণ মৃতদের মতই।) (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, বর্ণনা ১১১২৫)
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৃতদেহটি নদী থেকে উঠানোর পর গোসল না করিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ ভুল করেছেন। তবে তার জানাযার নামায সহীহ হয়েছে।
উল্লেখ্য, যে কোনো দ্বীনী মাসআলা নির্ভরযোগ্য আলেম থেকে জেনে সঠিকভাবে আমল করা কর্তব্য।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/৩৪০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৮
কিছুদিন আগে আমার এক আত্মীয় হঠাৎ রাতে ইন্তেকাল করেন। রাতেই তার গোসলের কাজ সম্পন্ন হয়। ফজরের নামাযের পর সূর্য ওঠার আগে তার জানাযার নামায পড়ে আমরা লাশ নিয়ে গ্রামের দিকে রওয়ানা হই। এক ব্যক্তি তখন আমাকে বলেন, এই সময় জানাযার নামায পড়া উচিত হয়নি। কেননা ফজরের নামাযের পর সূর্য উঠার আগে যে কোনো নামায পড়া মাকরূহ।
জানতে চাই, এই ব্যক্তির কথা কি সঠিক? ফজরের নামাযের পর জানাযার নামায পড়ার কারণে আমাদের নামায কি মাকরূহ হয়েছে?
ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। ফজরের নামাযের পর সূর্য ওঠার আগে কোনো নফল পড়া যায় না, কিন্তু জানাযার নামায পড়া যায়; তা পড়া মাকরূহ নয়। হযরত নাফে রাহ. বলেন-
أَنّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يُصَلِّي عَلَى الْجِنَازَةِ بَعْدَ الْعَصْرِ، وَبَعْدَ الصّبْحِ إِذَا صُلِّيَتَا لِوَقْتِهِمَا.
আছর ও ফজরের নামাযের পর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করতেন। যদি জানাযা এই দুই নামাযের ওয়াক্তের মধ্যে পড়া হত। (মুআত্তা ইমাম মুহাম্মাদ, হাদীস ৩১৩)
মা‘মার রাহ. হাসান বসরী ও কাতাদা রাহ. থেকে বর্ণনা করেন-
عَنِ الْحَسَنِ، وَقَتَادَةَ كَانَا يُصَلِّيَانِ عَلَى الْجَنَائِزِ بَعْدَ الْعَصْرِ وَالصّبْحِ مَا كَانَا فِي وَقْتٍ.
ফজর ও আছরের নামাযের পর এই দুই নামাযের ওয়াক্ত বাকি থাকলে জানাযার নামায পড়তেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৬৫৬২)
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ফজরের নামাযের পর সূর্য ওঠার আগে জানাযার নামায পড়ার কারণে আপনাদের নামায মাকরূহ হয়নি। ফজরের সময় থেকে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত নফল পড়া যায় না বলে জানাযাও পড়া যাবে না- এমন ধারণা করা ঠিক হয়নি। মাসআলা বিজ্ঞ আলেম থেকে জেনে নিয়ে আমল করা উচিত। নিজ থেকে ধারণা বশত আমল করা বা মন্তব্য করা থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/১২৬; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/৫৪৩; তুহফাতুল ফুকাহা ১/১০৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৮; ফাতহুল কাদীর ১/২০৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৩৮; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৫
এক মাস আগে আমার স্বামী আমাকে এক তালাকে রজয়ী প্রদান করেন। তারপর আমার ইদ্দত চলা অবস্থায় তিন সপ্তাহের মাথায় আমার স্বামী ইন্তেকাল করেন। জানার বিষয় হল, আমি মাসিক হিসেবে তালাকের যে ইদ্দত পালন করছিলাম সেই হিসেবেই ইদ্দত পুরা করব, নাকি মৃত্যুর ইদ্দত (চার মাস দশ দিন) পালন করব?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্বামীর ইন্তেকালের কারণে আপনার তালাকের ইদ্দত বাতিল হয়ে গেছে। তাই আপনাকে স্বামীর মৃত্যুর পুরো ইদ্দত পালন করতে হবে। অর্থাৎ স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকে চার মাস দশ দিন ইদ্দত অবস্থায় থাকতে হবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৪/৪১২; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১৭; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/২৫৮; ফাতহুল কাদীর ৪/১৪২; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩৬; রদ্দুল মুহতার ৩/৫১৩
আমার স্ত্রীর সঙ্গে কোনো বিষয়ে ঝগড়া হলেই সে শুধু বলত, আমাকে ভালো না লাগলে তালাক দিয়ে দেন, অন্য কারো সাথে সংসার করেন। একদিন ঝগড়ার সময় সে বারবার ঐ কথাটি বলছিল। একপর্যায়ে আমি তাকে বলি, ঠিক আছে শুনে রাখো, আমি তোমাকে তালাক দিলাম, আমি তোমাকে তালাক দিলাম। উক্ত কথার দ্বারা এক তালাক দেয়াই আমার উদ্দেশ্য ছিল। তাকে বোঝানোর জন্য কথাটি দুই বার বলেছিলাম। এ ঘটনার এক মাস পর একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার স্ত্রী আবার একই ধরনের কথা বলে। সেদিনও আমি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বলে ফেলি, আজকে তোমাকে আবার তালাক দিলাম।
হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, এই কথাগুলো দ্বারা আমার স্ত্রীর উপর কয় তালাক পতিত হয়েছে? এখন কি আমরা একসঙ্গে ঘর-সংসার করতে পারব?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম ঘটনায় যদি বাস্তবেই আপনার এক তালাক দেওয়াই উদ্দেশ্যে থাকে তবে ঐ ঘটনার কারণে আপনার স্ত্রীর উপর একটি তালাক পতিত হয়েছে। পরবর্তীতে একত্রে বসবাসের কারণে রাজআত হয়ে গেছে। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পুনর্বহাল হয়ে গেছে।
আর দ্বিতীয় ঘটনার কারণে আরো একটি অর্থাৎ দ্বিতীয় তালাক পতিত হয়েছে। অবশ্য এ তালাকটিও রাজঈ তালাক হয়েছে। তাই এখন আপনারা পুনরায় সুষ্ঠুভাবে ঘর-সংসার করতে চাইলে আপনি ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবেন। আর ফিরিয়ে নেয়ার উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, ইদ্দতের ভেতর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করা। যেমন, আমি তোমাকে ফেরত নিলাম বলা।
আর যদি আপনি ইদ্দতের ভেতরে (ঋতুমতী মহিলার জন্য তিনটি ঋতু্স্রাব অতিবাহি হওয়া পর্যন্ত। আর অন্তঃসত্ত্বা মহিলার জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত) ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত না করে থাকেন তাহলে ইদ্দত শেষ হওয়ার সাথে সাথে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আবার ঘর-সংসার করতে চাইলে নতুন মহর ধার্য করে যথানিয়মে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, আপনার স্ত্রীকে আপনি ইদ্দতের ভেতর ফিরিয়ে নেন বা ইদ্দত শেষ হওয়ার পর পুনরায় বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীকে গ্রহণ করেন, উভয় ক্ষেত্রে আপনি পরবর্তীতে কখনো তাকে এক তালাক দিলে পূর্বের দুই তালাকের সাথে মিলে তিন তালাক হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে বিবাহ করেও একত্রিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তাই ভবিষ্যতে তালাকের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, তালাক হল বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা জটিল হয়ে পড়লে উভয়ের জন্য তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথ। তাই অত্যন্ত ভেবেচিন্তে এবং পরামর্শ সাপেক্ষে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। কোনো কথা বা সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া অন্যায়। এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৬২, ২৮৩, ২৮৮, ২৯৫; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৫৫, ৪৭০; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২৯৩, ৩৯৭
এক মেয়ের একটি ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল। তখন ছেলেটি তাকে বিবাহের জন্য বললে মেয়েটি রাজি হয়ে যায় এবং তারা দুজন মিলে একটি কাগজে স্বাক্ষর করে। যাতে উভয়ের পিতার নাম, জন্মস্থান, জন্ম তারিখ এবং এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা মোহর নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ঐসময় তাদের মাঝে সাক্ষী উপস্থিত ছিল না। ঐ কাগজটি পরবর্তীতে কোনো কারণে হারিয়ে যায়। কিন্তু ছেলেটি কয়েকজনের মাঝে এই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছে যে, আমি অমুককে এভাবে বিয়ে করেছি। কিন্তু উক্ত স্বীকারোক্তিমূলক মজলিসে মেয়েটি কিংবা উক্ত স্বাক্ষরকৃত কাগজ কোনোটি উপস্থিত ছিল না। মেয়েটির পরিবার মেয়েটির জন্য ছেলে খুঁজছে। কিন্তু ছেলেটির দাবি, তার সাথে মেয়েটির বিবাহ হয়ে গেছে।
এখন মেয়েটি জানতে চাচ্ছে, ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী কি তাদের বিবাহ হয়ে গিয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাদের বিবাহ সংঘটিত হয়নি। শুধু কাগজে স্বাক্ষর করার দ্বারা বিবাহ সম্পন্ন হয় না; বরং বিবাহ সংঘটিত হওয়ার জন্য শরীয়তের নির্ধারিত শর্তাদি পালন করতে হয়। সুতরাং উক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু তাদের মধ্যে কোনো বিবাহ হয়নি, তাই মেয়েটির পরিবার মেয়েটিকে অন্যত্র বিবাহ দিতে পারবে। এতে কোনো সমস্যা নেই।প্রকাশ থাকে যে, বিবাহের পূর্বে বেগানা ছেলে-মেয়ের পরস্পর ঘনিষ্ঠতা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও মারাত্মক গুনাহের কাজ।
শেয়ার লিংক-ফাতহুল কাদীর ৩/১০২; আলবাহরুর রায়েক ৩/৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭০; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১২
কিছুদিন আগে এক দোকান থেকে ৬০০ টাকায় একটি ছোট ওয়ারড্রোব ক্রয় করি। বাসায় নিয়ে আসার পর দেখি, একটি ড্রয়ারের এক পাশের প্লাস্টিক কিছুটা ফাটা। আমি দোকানদারকে বিষয়টি জানালে তিনি বললেন, আপনাকে ১০০ টাকা দিয়ে দিচ্ছি আপনি ওয়ারড্রোবটি রেখে দিন। আমি তখন ১০০ টাকা নিয়ে ওয়ারড্রোবটি নিজের কাছে রেখে দিই। হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, আমার জন্য কি ১০০ টাকা ফেরত নেয়া জায়েয হয়েছে? এক হুজুর বলেছেন, পণ্যে ত্রুটি পাওয়ার কারণে বিক্রেতা থেকে ক্ষতিপূরণ নেয়া যাবে না; বরং হয়ত পণ্য ফেরত দিতে হবে কিংবা পূর্ণ মূল্যে তা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা জানতে চাচ্ছি।
পণ্যে ত্রুটি পাওয়ার কারণে বিক্রেতা স্বেচ্ছায় কিছু টাকা ফেরত দিলে তা মূল্যহ্রাস হিসেবে ধর্তব্য হয়। আর বিক্রেতা মূল্যহ্রাস করলে ক্রেতার জন্য তা গ্রহণ করা জায়েয। সুতরাং আপনার জন্য ওয়ারড্রোবটি নিজের কাছে রেখে বিক্রেতা থেকে ১০০ টাকা ফেরত নেয়া জায়েয হয়েছে। আর প্রশ্নে উল্লেখিত বক্তব্য বিক্রেতা স্বেচ্ছায় ফেরত না দেয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে পণ্য নিজের কাছে রেখে বিক্রেতাকে কিছু টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করা যাবে না; বরং পণ্য ফেরত দিয়ে পূর্ণ মূল্য ফেরত নেবে। কিংবা পূর্ণ মূল্যে পণ্যটি গ্রহণ করবে। আর বিক্রেতা স্বেচ্ছায় কিছু টাকা ফেরত দিলে তা গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১১/১৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/১৬৭; ফাতহুল কাদীর ৬/৪; আলবাহরুর রায়েক ৬/৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৯৭
কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খাবার আনতে বলে এবং সেগুলোর মূল্য বাবদ ৪৫০ টাকা প্রদান করে। আমি সরাসরি রেস্টুরেন্টে না গিয়ে ফুডপাণ্ডার মাধ্যমে খাবার অর্ডার করি। ফুডপাণ্ডার পক্ষ থেকে ৮০ টাকা মূল্যছাড় দেয়া হয়। যার কারণে খাবারগুলো কিনতে ৩৭০ টাকা খরচ হয়। প্রশ্ন হল, অবশিষ্ট ৮০ টাকা কি আমি রেখে দিতে পারব, নাকি বন্ধুকে ফেরত দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি ফুডপাণ্ডার পক্ষ থেকে যে ৮০ টাকা ডিসকাউন্ট পেয়েছেন তার মালিক আপনার উক্ত বন্ধুই। তার অনুমতি ছাড়া আপনি এ টাকা থেকে কিছুই নিতে পারবেন না। কেননা আপনি কেবলমাত্র ক্রয় প্রতিনিধি। মূল্য কম হোক বা বেশি- এর সবকিছুই মূল ক্রেতার সাথেই সম্পৃক্ত হবে। অতএব আপনার কর্তব্য হচ্ছে, টাকাটা আপনার বন্ধুকে ফিরিয়ে দেওয়া।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১১/২৮৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১৫/৬৫; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৪/৩৫৩; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৮৮
আমি টেইলার্সে একটি পাঞ্জাবি সেলাই করতে দিয়েছি। আমি দৈর্ঘ্যে যে মাপ দিয়েছি দর্জি ভুলে তা থেকে তিন ইঞ্চি ছোট বানায়। ফলে কাপড়টি পরার উপযুক্ত থাকেনি। এখন আমার জন্য তার থেকে কাপড়ের মূল্য ফেরত নেয়া জায়েয হবে কি না?
দর্জি কাপড় বানাতে ভুল করার কারণে যেহেতু তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে তাই আপনি কাপড়টি না নিয়ে তার থেকে এমন কাপড়ের বাজারমূল্য ফেরত নিতে পারবেন। অবশ্য দর্জি মূল্য না দিয়ে হুবহু ঐ কাপড়ই দিতে চাইলে তা-ও জায়েয হবে। সেক্ষেত্রে কাপড় না নিয়ে তাকে মূল্য দিতে বাধ্য করা যাবে না।
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ১২/৪৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৩৭; বাদায়েউস সানায়ে ৬/১৭১; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৬; ; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ৬১১, ৪১৬; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৭১৫
‘কেয়ার টিউটর্স’ অনলাইন ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। তারা টিউশনি ব্যবস্থাপনার জন্য কাজ করে। অর্থাৎ শিক্ষককে ছাত্র ব্যবস্থা করে দেয় এবং ছাত্রকে শিক্ষক ব্যবস্থা করে দেয়। প্রত্যেক শিক্ষকের সঙ্গে এভাবে চুক্তি করে যে, প্রত্যেক টিউশনির ১ম বেতনের অর্ধেক টাকা তাদেরকে দিতে হবে। এই টাকা দেয়ার পর ঐ শিক্ষক যতদিন ঐ ছাত্রকে পড়াবে তার থেকে আর কোনো টাকা নেয়া হবে না। আর কোন্ টিউশনি কত টাকা বেতন পাওয়া যাবে, কী পড়াতে হবে ইত্যাদি সব তথ্য কেয়ার টিউটর্সের অ্যাপে উল্লেখ করা থাকে। শিক্ষক সেগুলো দেখেই টিউশনি গ্রহণ করে থাকেন। জানার বিষয় হল, কেয়ার টিউটর্সের জন্য প্রত্যেক শিক্ষক থেকে উক্ত পদ্ধতিতে টাকা নেয়ার হুকুম কী?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ প্রতিষ্ঠান যদি ছাত্র পড়াবার আয়োজন করে দেয় এবং ছাত্র ও শিক্ষক পরস্পরকে যথাযথ তথ্য প্রদান করে তবে শিক্ষকের ১ম বেতনের অর্ধেক টাকা বিনিময় হিসেবে নেয়া জায়েয হবে। কেননা এটাও নির্ধারিত পরিশ্রমিকের অন্তভুর্ক্ত। তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত বিনিময় নেয়ার চুক্তি করা জায়েয নয়। যেমন যত মাস টিউশনি করবে প্রত্যেক মাসের বেতনের কিছু অংশ নেয়ার চুক্তি করা যাবে না। এটা অনির্ধারিত এবং বিনিময়হীন পারিশ্রমিকের অন্তভুর্ক্ত। যা শরীয়ত পরিপন্থী।
শেয়ার লিংক-আলহাবিল কুদসী ২/৮৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১৩৭; আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর, পৃ. ৩২; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৩
আমাদের এলাকায় মৌসুমি ফলগুলো মোটামুটি বড় হওয়ার পর পাইকারদেরকে খবর দেওয়া হয়। পাইকাররা এসে তখন গাছে কী পরিমাণ ফল আছে তা অনুমান করে ঐ সময়ের বাজারদর অনুযায়ী ফলগুলোর একটি মূল্য নির্ধারণ করে সেগুলো কিনে নেয় এবং বায়না হিসেবে কিছু টাকা গাছের মালিককে দিয়ে যায়। এলাকার প্রচলন অনুযায়ী পাইকাররা তখনই ফলগুলো পেড়ে নেয় না; বরং পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত সেগুলো গাছেই থাকে। এরপর ধীরে ধীরে তারা ফলগুলো পেড়ে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে এবং গাছের মালিককে তার পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে দেয়। এক্ষেত্রে আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনা- যেমন ফল পড়ে যাওয়া, পোকা ধরা, দাম কমে যাওয়া ইত্যাদির কারণে যদি পাইকারদের লসও হয় তবুও তারা গাছেল মালিককে পূর্ণ টাকা প্রদান করে থাকে।
হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, আমাদের এলাকার উক্ত ফল বিক্রয় প্রক্রিয়াটি বৈধ কি না? সঠিক মাসআলা জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পাইকাররা যেহেতু গাছে ফল আসার পর তা দেখে ক্রয় করে এবং চুক্তির সময় পরিপূর্ণ হওয়া পর্যন্ত রেখে দেওয়ার শর্ত করা হয় না, তাই উক্ত পদ্ধতিতে ফল বিক্রি করা জায়েয। এক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হওয়ার পর বিক্রেতার অনুমতি সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় পর্যন্ত খরিদকৃত ফল গাছে রেখে দিতেও অসুবিধা নেই।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/৩১১; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১০৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/৩০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৫৫৬