মোস্তফা কামাল - সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা

৩৫২৫. প্রশ্ন

একদিন আমার ভাতিজা ঘরের মেঝেতে পেশাব করে দেয়। ওর মা পরনের প্যান্ট দিয়েই ঐ মেঝে হালকাভাবে মুছে দেয়। আমি খেয়াল না করে ওর উপরই মোটা ও ভারী কার্পেট জাতীয় জায়নামায বিছিয়ে নামায আদায় করি। নামায শেষে ভাইয়া বললেন, ও তো ওখানে পেশাব করেছিল, তুমি তার উপরই জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়েছ! আমি জায়নামায উল্টে দেখি, জায়নামাযের উল্টো পিঠে হালকা ভিজা ভিজা আছে। আর পেশাবের গন্ধ মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু জায়নামাযের উপর পিঠে কোনো গন্ধ নেই। প্রশ্ন হল, ঐ জায়নামাযে আমার নামায কি শুদ্ধ হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।

 


উত্তর

মোটা জায়নামাযের এক পিঠে যদি নাপাকি লাগে আর ঐ নাপাকি বা তার প্রভাব (রংগন্ধ) কাপড়ের অপর পিঠে না পৌঁছে তাহলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী অপর পিঠের পবিত্রতা বহাল থাকবে। নিচের অংশের অপবিত্রতার কারণে তা নাপাক গণ্য হবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত জায়নামাযের উপরের অংশে যেহেতু প্রস্রাবের আর্দ্রতা ও দুর্গন্ধ পৌঁছেনি তাই তাতে আপনার নামায শুদ্ধ হয়েছে।

তবে মোটা কাপড়ের এক পিঠের নাপাকীর প্রভাব অন্য পিঠে প্রকাশ না পেলেও যেহেতু তা কোনো কোনো ফকীহের মতে নাপাক হয়ে যায় তাই এই জায়নামায পবিত্র না করে তাতে আর নামায না পড়াই শ্রেয় হবে। 

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৩৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬২৬

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - নড়াইল, যশোর

৩৫২৬ . প্রশ্ন

আমি মসজিদে যাচ্ছিলাম। এমন সময় চড়ূই পাখির বিষ্ঠা আমার শরীরের উপর এসে পড়ে। ফলে পাঞ্জাবি নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমি টিস্যু দিয়ে তা মুছে নামায আদায় করে নিই। জানার বিষয় হল, আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে, না পুনরায় পড়তে হবে?


উত্তর

চড়ূই পাখির বিষ্ঠা পাক। তা কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয় না। তাই ঐ পাঞ্জাবি নিয়ে নামায আদায় করা সহীহ হয়েছে। 

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২৬১, ১২৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/১১৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাগিব হাসান - মঙ্গলপুর, কুড়িগ্রাম

৩৫২৭. প্রশ্ন

আমি একদিন যোহরের প্রথম রাকাতে ভুলে শুধু একটি সিজদা করি। আরেক সিজদা ভুলে ছুটে যায়। এবং নামাযেই ভুল স্মরণ হওয়ায় আমি সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করি। আমার এ নামায কি সহীহ হয়েছে, নাকি আবার পড়ে নিতে হবে?


উত্তর

আপনার ঐ নামায সহীহ হয়নি। তা পুনরায় আদায় করতে হবে। কারণ নামাযের উভয় সিজদাই ফরয। এর কোনো  একটি ভুলে ছুটে গেলে শুধু সাহু সিজদা করা যথেষ্ট নয়। বরং এ ধরনের ক্ষেত্রে নিয়ম হল স্মরণ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া সিজদা আদায় করবে। অতপর বাকী নামায যথানিয়মে পূর্ণ করবে এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করবে।

-কিতাবুল আসল ১/২০৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২৩, ২২৬

শেয়ার লিংক

হুদ ইবরাহীম - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৫২৮. প্রশ্ন

কোনো মুসাফির সফর থেকে নিজ ঘরের দিকে ফিরে আসার নিয়ত করার পর পথিমধ্যে কোথাও দুএক দিনের নিয়তে অবস্থান করলে সেখানে কি সে কসর করবে, নাকি পুরা চার রাকাত পড়বে?


উত্তর

মুসাফির নিজ বাড়িতে ফিরে আসার নিয়ত করলেই মুকীম হয়ে যায় নাবরং নিজ এলাকার সীমানায় প্রবেশ করার পর থেকে মুকীম গণ্য হয়।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় নিজ গ্রামে প্রবেশের আগে পথিমধ্যে দুএক দিনের জন্য কোথাও অবস্থান করলে মুসাফিরই থাকবে এবং নামায কসর করবে।

-শরহুল মুনইয়াহ ৫৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪০১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৪

শেয়ার লিংক

ওমর ফারূক - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৫২৯. প্রশ্ন

দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে তখন কী করণীয়? মনে পড়লে বসে পড়বে কি না? অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

ফরয নামাযের শেষ রাকাতে বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা না করা পর্যন্ত স্মরণ হওয়ামাত্র বৈঠকে ফিরে আসবে এবং সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায সম্পন্ন করবে।

কিন্তু অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা করে ফেললে নামাযটি আর ফরয থাকবে না। তাই দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে এমনটি হলে সেক্ষেত্রে নিয়ম হল৩য় রাকাতে বৈঠক না করে আরো এক রাকাত পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে পুরো চার রাকাতই নফল গণ্য হবে। আর তাকে ফরয নামায পুণরায় পড়ে নিতে হবে। 

-আলবাহরুর রায়েক ২/১০২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২২; ইলাউস সুনান ৭/১৭৪; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬২-৪৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৫

শেয়ার লিংক

আবুল হুসাইন - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৫৩০. প্রশ্ন

ফজরের দুই রাকাত ফরযের পূর্বে সুন্নতের আগে বা পরে কাযা নামায পড়া যাবে কি? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

হাঁফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পরও ফযরের সুন্নতের আগে বা পরে উভয় সময়ই কাযা নামায আদায় করা জায়েয।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৫

শেয়ার লিংক

মাজহারুল হক - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৫৩১. প্রশ্ন

বহুতল ভবনের নিচ তলায় ইমাম মুসল্লিসহ আছেন। আর এর বরাবর উপর তলায়ও মুসল্লি দাঁড়ায়। কিন্তু উভয় তলার মাঝে কোনো ফুটো নেই। শুধু মাইকে আওয়াজ শোনা যায়। প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে উপর তলার মুসল্লিদের নামায কি সহীহ হবে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

দোতলা থেকে ইমামের ইকতিদা সহীহ হওয়ার জন্য ছাদে ফুটো থাকা জরুরি নয়। এক্ষেত্রে মাইকে ইমামের আওয়াজ শুনে ইমামের উঠা-বসা ও অবস্থা জানা গেলেও ইকতিদা সহীহ হয়ে যাবে। তবে নামায অবস্থায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট কিংবা যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে মাইকের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলেও উপর তলার মুসল্লিগণ যথাযথভাবে যেন ইমামের ইকতিদা করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করে নেওয়া দরকার। এজন্য ইমাম বরাবর ছাদ কিছুটা ফাঁকা রাখা ভালো। আর তা না থাকলে মুকাব্বিরের ব্যবস্থা রাখা উচিত। 

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৮৬

শেয়ার লিংক

এইচএমএস - ঢাকা

৩৫৩২. প্রশ্ন

আমার বাসা ঢাকার মূল শহরে। বিদেশ সফরকালিন বাসা থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়া-আসার সময় আমি কি মুকীম হব, নাকি মুসাফির?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি বিমানবন্দরের পথে ও বিমান বন্দরে মুকীম থাকবেন তাই পুরো নামাযই পড়তে হবে। কেননা মুসাফির হওয়ার জন্য নিজ শহরের আবাদি অতিক্রম করা শর্ত। তদ্রূপ সফর থেকে ফিরে বিমান বন্দরে অবতরণ করলেই মুকীম হয়ে যাবেন।

নাফে রাহ. থেকে বর্ণিততিনি বলেনআবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. মদীনার ঘর-বাড়ি অতিক্রম করলে তখন নামায কসর পড়তেন এবং সফর থেকে ফেরার সময় মদীনার বসতিতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত কসর পড়তেন। 

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস ৪৩২৩, ৪৩১৯, ৪৩২১; কিতাবুল আছল ১/২৩২; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৬৪, ২৭৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৯৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৭, ৪০১

শেয়ার লিংক

মাওলানা মোশারফ হোসেন - ডিওএইচএস মসজিদ, ঢাকা

৩৫৩৩. প্রশ্ন

ফজরের নামাযের জামাত শুরু হওয়ার পর কোনো মুসল্লি যদি মসজিদে এসে বারান্দায় অথবা মসজিদের পেছনের দিকে ফজরের সুন্নত নামায পড়তে চান তা কি তার জন্য জায়েয হবে? কুরআন ও হাদীসের আলোকে মাসআলাটি জানার আগ্রহ প্রকাশ করছি। এ ব্যাপারে কোনো কোনো ব্যক্তি মত প্রকাশ করে থাকেন যে, ‘‘ফরয নামাযের জন্য ইকামত দেওয়া হয়ে গেলে অন্য কোনো নামায বা সুন্নত নামায (বিশেষ করে ফজরের সুন্নত) সম্পূর্ণ হারাম, সুন্নত বিরোধী।’’এ সম্পর্কে তারা একটি লিফলেট প্রচার করে থাকে। যাতে তাদের স্বপক্ষে কয়েকটি হাদীসও উল্লেখ আছে। উক্ত লিফলেটটি প্রশ্নের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হল।


উত্তর

কোন ব্যক্তি যদি ফজরের ইকামত চলাবস্থায় বা জামাত চলাবস্থায় মসজিদে আসে আর তার কাছে মনে হয় যে সুন্নত পড়ে অন্তত এক রাকাত পাওয়া যাবে তাহলে এ ব্যক্তির জন্য মূল জামাতের কাতার থেকে দূরে বারান্দায় বা খুঁটির আড়ালে ফজরের সুন্নত আদায় করা জায়েয আছে।

একাধিক সাহাবা তাবেয়ীন থেকে ইকামত শুরু হওয়ার পর জামাত চলাবস্থায় ফজরের সুন্নত আদায় করা প্রমাণিত আছে। যেমন:

এক. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদআবু মুসা আশআরী ও হুযায়ফা রা. একবার সাঈদ ইবনে আসের নিকট থেকে বের হলেন। ইতিমধ্যে ফজর নামাযের ইকামত হয়ে গেল। তখন ইবনে মাসউদ রা. দুরাকাত সুন্নত পড়ে লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলেনআর আবু মুসা আশআরী ও হুযায়ফা রা. কাতারে প্রবেশ করলেন। (শরহু মাআনীল আসার,১/২৫৫)

দুই. আবু মিজলায রাহ. বলেন আমি ফজর নামাযে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সাথে মসজিদে এমন সময় প্রবেশ করলাম যে ইমাম নামায পড়াচ্ছিলেনতখন ইবনে আব্বাস রা. দুরাকাত সুন্নত পড়ে ইমামের সাথে শরীক হলেন। আর ইবনে ওমর রা. ইমামের সাথে নামাযে শরীক হয়ে গেলেন। ইমাম সালাম ফেরানোর পর তিনি সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকলেন অতপর উঠে দুরাকাত নামায আদায় করলেন। (প্রাগুক্ত ১/২৫৫)

তিন. আবু দারদা রা. বলেন আমি একদা লোকদের নিকট এমন সময় আসি যে তারা কাতারবদ্ধ হয়ে ফজর নামায আদায় করছিল। আমি তখন ফজরের দুরাকাত সুন্নত আদায় করি অতপর তাদের সাথে নামাযে শরীক হই। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহাদীস ৬৪৮২

চার. নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনইবনে ওমর রা. একদা ফজর নামাযের জন্য পোশাক পরিধান করছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি ইকামত শুনতে পেলেনতিনি তখন কামরাতে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত আদায় করলেন অতপর বের হয়ে লোকদের সাথে ফরয আদায় করলেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকহাদীস ৪০১৯

পাঁচ. আবু উসমান নাহদী রাহ. বলেন আমরা ওমর রা.-এর নিকট ফজরের সুন্নত না পড়ে এসে যদি দেখতাম যে তিনি ফজরের জামাতে আছেন তাহলে আমরা মসজিদের শেষ দিকে এসে সুন্নত পড়ে নিতাম অতপর জামাতে শরীক হতাম। -শরহু মাআনীল আছার ১/২৫৬

ছয়. বিখ্যাত তাবেয়ী মাসরূক রাহ. মসজিদে প্রবেশ করলেনতখন লোকেরা ফজর নামায পড়ছিল,তিনি এক কোনায় ফজরের দুই রাকাত সুন্নত আদায় করেন অতপর জামাতে শরীক হন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহাদীস ৬৪৭২

সাত. মুজাহিদ রাহ. বলেনযখন তুমি মসজিদে এসে লোকদেরকে ফজরের জামাতে দেখতে পাবে,আর তুমি ফজরের সুন্নত পড়নি তাহলে তুমি তা পড়ে নাও যদিও তোমার প্রথম রাকাত ছুটে যাওয়ার আশংকা হয়। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহাদীস ৬৪৭৯

তাবেয়ীদের মধ্যে আরো যাদের থেকে ফজরের জামাত চলাবস্থায় সুন্নত পড়া প্রমাণিত আছে তারা হলেনসাঈদ ইবনে জুবাইরহাসান বসরীইকরিমাইবরাহীম নাখায়ী রহ.। ইবনে বাত্তাল রহ. উমর রা. এর  আমলও এমন ছিল বলে উল্লেখ করেছেন।

কোনো কোনো সাহাবীতাবেয়ী ইকামত বা জামাত চলাবস্থায় মসজিদের অভ্যন্তরে ফজরের সুন্নত না পড়লেও মসজিদের বাহিরে বা মসজিদের দরজা সংলগ্ন স্থানে পড়ে নিতেন। তন্মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.হাম্মাদআব্দুর রহমান ইবনে মাকিলআতাইবরাহীম নাখায়ী রাহ. উল্লেখযোগ্য।

উপরোক্ত সাহাবাতাবেয়ীদের আছারআমল ও ঘটনাবলী থেকে একথা সুপ্রমাণিত যেফজরের ইকামত চলার সময় বা ইকামতের পরও মসজিদের বাহিরে বা কাতার থেকে দূরে মসজিদের বারান্দায় বা কোনায় কিংবা খুঁটির আড়ালে ফজরের সুন্œত পড়া জায়েয আছে। মহান পূর্বসুরী এ সকল সাহাবাতাবেয়ীদের বক্তব্য ও আমল থাকা সত্তে¡ও হাদীসের মর্ম ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ না বুঝে ফজরের সুন্নত পড়াকে নাজায়েযহারাম বা বিদআত বলা বড় অন্যায়। এমন কথা প্রকারান্তরে সাহাবা-তাবেয়ীদের আমলকেও বিদআত ও হারাম বলার নামান্তর।

এ কথা সত্য যেকিছু সংখ্যক সাহাবা   إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইকামত শুরু হওয়ার পর ফজরের সুন্নত পড়তেন নাবরং জামাতে শরীক হয়ে যেতেন। যেমনআবু হুরায়রা রা.হুযায়ফা রা. তাবেয়ীদের মধ্যে ইবনে সীরীনইয়াহইয়া ইবনে আবী কাসীরসহ আরো প্রমুখ। কিন্তু যে সকল সাহাবাতাবেয়ীন ইকামত অবস্থায় বা পরে মসজিদে বা মসজিদের বাহিরে ফজরের সুন্নত পড়েছেন তাদেরকে তারা কোনোরূপ তিরস্কার করেননি। যেমন পূর্বে উল্লেখিত ইবনে মাসউদআবু মুসা আশআরী ও হুযায়ফা রা.-এর ঘটনা এবং আবু মিজলাযের বর্ণনায় ইবনে ওমর ও ইবনে আব্বাসের ঘটনা এবং আবু উসমান নাহদীর বর্ণনায় ওমর রা.-এর ঘটনা। এ সময় ফজরের সুন্নত পড়া যদি নাজায়েযহারাম বা বিদআতই হত তাহলে সাহাবা কেরাম অবশ্যই এমন নাজায়েয ও হারাম কাজ করতে বাধা দিতেন। কেননা সাহাবা কেরাম কোনো নাজায়েয বা হারাম কাজকে কিছুতেই বরদাশত করতেন না।

মূলত এ মাসআলায় শুরু থেকেই সাহাবা তাবেয়ীনের মাঝে দুধরনের মত ও আমল চালু ছিল। তাদের এক জামাত إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইকামত শুরু হওয়ার পর কোন নামাযের পূর্বে সুন্নত পড়তেন না। এমনকি ফজরের সুন্নতও না।

পক্ষান্তরে অনেক সাহাবা ও তাবেয়ীন ফজরের সুন্নত অন্য সকল সুন্নত অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে এবং বিভিন্ন দিক থেকে ফজরের সুন্নত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হওয়ার কারণে তারা ইকামত শুরু হওয়ার পরও তা আদায় করে নিতেন এবং إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة এ হাদীসের নিষেধাজ্ঞা থেকে ফজরের সুন্নতকে ভিন্ন মনে করতেন।

হাদীস শরীফে এসেছে :

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। -সহীহ মুসলিমহাদীস ৭২৫

দুই.  আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নতকে অধিক গুরুত্ব দিতেন যতটা না অন্য কোনো নফল বা সুন্নতকে গুরুত্ব দিতেন। -সহীহ বুখারীহাদীস ১১৬৩

এ ধরনের আরো অনেক বর্ণনা ফজরের সুন্নতের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।

উপরোক্ত বর্ণনাগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে অনেক সাহাবী ইকামত শুরু হওয়ার পর অন্য নামায পড়ার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে হাদীসটিকে এক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য মনে করতেন। তারা বরং ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্য চার ওয়াক্তে ইকামতের সময় কোনো ধরনের সুন্নত-নফল শুরু না করার সাথে হাদীসটির বক্তব্য সীমাবদ্ধ রেখেছেন। আর ফজরের সুন্নত সম্পর্কিত হাদীসের কারণে তারা ইকামত শুরু হলেও ছোট সূরা দিয়ে অল্প সময়ের ভিতরে তা আদায় করে নিতেন। এতে উভয় হাদীসের উপরই আমল হয়ে যেত।

অবশ্য জামাত শুরু হওয়ার পর ভিন্ন নামায পড়ার দ্বারা যেন তার প্রতি অবজ্ঞা জাতীয় কিছু বোঝা না যায় এজন্য এ সুন্নত পড়তে বলা হয়েছে নিজ ঘরে বা মসজিদের বারান্দায় অথবা অনেক বড় মসজিদ হলে জামাতের স্থান থেকে অনেক দূরে পিছনে গিয়ে কোনো খুটির আড়ালে। যদি তৎক্ষণাৎ এমন জায়গা না পাওয়া যায় তাহলে ঐ সময় সুন্নত না পড়ে বরং জামাতেই শরীক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর সুন্নত পড়ে নিবে।

দ্বিতীয় বিষয় হলকোনো ব্যক্তি যদি ফরযের পূর্বে সুন্নত পড়তে না পারে তাহলে সে তা কখন আদায় করবে?

এক্ষেত্রে দলীল-প্রমাণের আলোকে শক্তিশালী মত হলএ ব্যক্তি ফজরের সুন্নত সূর্যোদয়ের পর আদায় করবে। ফরযের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে আদায় করবে না। হাদীস শরীফে এসেছে:

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেছেনযে ব্যক্তি ফজরের সুন্নত আদায় করতে পারেনি সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নেয়। -জামে তিরমিযীহাদীস ৪২৩

দুই. স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে তিনি সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে নিতেন।

যেমন বিশুদ্ধ সূত্রে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছেএকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ঘুমের কারণে পড়তে পারেননিতিনি তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নিয়েছেন। -সুনানে ইবনে মাজাহহাদীস ১১৫৫

তিন. উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন এবং আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। -জামে তিরমিযীহাদীস ১৮৩

এ হাদীসে ব্যাপকভাবেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ নিষেধাজ্ঞার অধীনে ফজরের সুন্নতও শামিল। এ থেকে ফজরের সুন্নতকে বাদ দেয়ার সহীহ ও নির্ভরযোগ্য কোনো  হাদীস নেই। ইমাম তিরমিযী রাহ. এ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেনসাহাবা ও তাদের পরবর্তী অধিকাংশ ফকীহের মত হল,তারা ফজর ও আসরের পর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে ফরযের কাযা ছাড়া অন্য কোনো নামায পড়াকে মাকরূহ মনে করতেন।

তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের আমল ও নির্দেশনা এবং ঐ সময়ে সুন্নত নফল আদায়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার হাদীস এবং সাহাবা তাবেয়ীনের অধিকাংশের বক্তব্য ও আমল দ্বারা শক্তিশালীভাবে প্রমাণিত যেফজরের সুন্নত ফরযের আগে পড়তে না পারলে সূর্যোদয়ের আগে তা পড়বে নাবরং সূর্যোদয়ের পর আদায় করবে।

আর প্রশ্নপত্রের সাথে সংযুক্ত লিফলেটে ফরযের পর সূর্যোদয়ের আগে সুন্নত পড়ার স্বপক্ষে যে হাদীস পেশ করা হয়েছে সনদের বিচারে তা সহীহ নয়। খোদ ইমাম তিরমিযী রাহ. এ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেছেনএ হাদীসের সনদ মুত্তাসিল নয়। হাদীসের রাবী মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত তাইমী রাহ. কায়েস রাহ. থেকে কোনো হাদীস শুনেননি। সে মতে এ হাদীসটি منقطع যা পূর্বোক্ত মারফু মুত্তাসিল হাদীসের মোকাবেলায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আর বায়হাকীর রেওয়ায়েতের বর্ধিত অংশ ফজরের দুরাকাতও পড়া যাবে না” দলীলযোগ্য নয়। কেননা মুহাদ্দিসীনে কেরামের বক্তব্য অনুযায়ী এ অংশটি সহীহ নয়। স্বয়ং ইমাম বায়হাকী রাহ. এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেনআবু আহমাদ বলেনমুসলিম ইবনে খালিদের সূত্রে আমর থেকে এ হাদীস যারা বর্ণনা করেছেন ইয়াহইয়া ইবনে নসর ব্যতিত অন্য কেউ তার বর্ণনায় এ অতিরিক্ত অংশ উল্লেখ করেছে বলে আমি জানি না। তিনি আরো বলেনবলা হয়ে থাকে যেআহমদ ইবনে ইয়াসার বর্ণনা করেছেন নসর ইবনে  হাজিব থেকে! কিন্তু এটা ভুল (وهم)

এ ছাড়া নসর ইবনে হাজিব আল মারওয়াযী শক্তিশালী রাবী নন। তার পুত্র ইয়াহইয়াও অনুরূপ। (সুনানে কুবরাবাইহাকী ২/৪৮৩)

প্রকাশ থাকে যেলিফলেটে একটি মাসআলা বলা হয়েছে যেমসজিদে এসে যদি দেখা যায় যে জামাতের দুই/এক মিনিট সময় বাকি আছে তাহলে সুন্নত নামায শুরু করবে না।

প্রশ্ন হলএটা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিতএ ধরনের কোনো কথা কি সাহাবা তাবেয়ীন থেকে প্রমাণিত আছে?

হাদীস শরীফে তো ইকামত শুরু হলে সুন্নত নফল শুরু করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইকামত শুরুর দুই/ এক মিনিট আগে থেকে সুন্নত নফল শুরু করা যাবে না -এমন কথা তো হাদীস আসারে নেই। তিনি কী করে তা বললেন?

এর চেয়েও অধিক মনগড়া কথা হল সুন্নত পড়া অবস্থায় যদি একামত শুরু হয়ে যায় আর সুন্নত আদায়কারী ব্যক্তি প্রথম রাকাতে থাকে বা মাত্র প্রথম রাকাত শেষ হলো তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে জামাতে শরীক হবেন” এটা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিতএটা তো বরং আল্লাহ তাআলার নির্দেশনাولا تبطلوا أعمالكم(তরজমা. আর তোমরা তোমাদের আমলকে বাতিল করে দিয়ো না) এর ব্যাপকতার বিরোধী।

ইমাম জাসসাস রাযী রাহ. বলেনএই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যেযে ব্যক্তি নামাযরোযাহজ্বসহ যে কোনো সওয়াবের কাজ শুরু করেছে তা পূর্ণ করার আগে বাতিল করা জায়েয নয়। (আহকামুল কুরআন ৩/৩৯৩)

অনুরূপ কথা ইমাম কুরতুবী রাহ.ও বলেছেন। (দেখুনআল জামে লিআহকামিল কুরআন ১৬/১৬৮)

ইবনে কুদামা রাহ. বলেননফল পড়া অবস্থায় একামত হয়ে গেলে এবং জামাত ছুটে যাওয়ার আশংকা না হলে তা পূর্ণ করবেতা বাতিল করবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেনولا تبطلوا أعمالكم   (আর তোমরা তোমাদের আমলকে বাতিল করে দিয়ো না।)

-আলমুগনী ২/১২০; শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস ৪১৩৬, ১০/৩২৮; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৯৩৮৫; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ২৩৯৬

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - চট্টগ্রাম

৩৫৩৪. প্রশ্ন

এক ছেলে রমযানের ২০ তারিখ বালেগ হয়। প্রায়ই এমন হত যে, তার রোযা রাখার ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও মায়ের পীড়াপীড়িতে রোযা রাখত না। তদুপরি কাযা-কাফফারার মাসআলার ব্যাপারে সে ছিল উদাসীন। কয়েকদিন সে মায়ের কারণে আর কিছুদিন নিজেই রোযা রাখেনি। আর কিছুদিন সে রোযা রেখেছে। এ দশদিনের মধ্যে কতদিন সে রোযা রেখেছে আর কতদিন রাখেনি তার পুরো স্মরণ নেই এখন সে কী করবে?


উত্তর

রমযানের রোযা রাখার পর বিনা ওযরে তা ভেঙ্গে ফেললে কাযা কাফফারা উভয়টিই আদায় করা জরুরি। আর যদি রমযানের কোনো রোযা একেবারে নাই রাখে তাহলে তাকে শুধু ঐ রোযার কাযা করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবেশরয়ী কোনো ওযর ছাড়া রমযানের রোযা না রাখা অনেক বড় কবীরা গুনাহ।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও আলী রা. থেকে বর্ণিত আছেযে ব্যক্তি অসুস্থতা বা সফর ছাড়া ইচ্ছাকৃত রমযানের একটি রোযা ছেড়ে দিল সে আজীবন রোযা রাখলেও এ রোযার হক আদায় হবে না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহাদীস ৯৮৯৩১২৭১১

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এ ছেলে বালেগ হওয়ার পর তার প্রবল ধারণা অনুযায়ী যে কয়টা রোযা রাখেনি বা রেখে ভেঙ্গে ফেলেছে উপরোক্ত নিয়মে সে ঐ রোযাগুলোর কাযা ও কাফফারা আদায় করবে এবং এজন্য সে আল্লাহ তাআলার নিকট কায়োমনোবাক্যে তওবা ও ইস্তেগফার করবে।

আর একাধিক রোযা রেখে তা ভেঙ্গে ফেললে সেক্ষেত্রে কাফফারার নিয়ম জানতে হলে পরবর্তীতে আবার বিস্তারিত প্রশ্ন করে জেনে নিবেন। 

-রদ্দুল মুহতার ২/৩৮০; হাশিয়াতুশ শিলবী ১/৪৬৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৪৩

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ আল আহাদ - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৫৩৫ . প্রশ্ন

আমার কাছে এক লক্ষ টাকা আছে, যা আমার খোরপোষের বাইরে। ঐ টাকার উপর কি যাকাত ফরয হবে? আর ফরয হলে কত টাকা আদায় করতে হবে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।


উত্তর

হাঁএক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর এ থেকে আপনার মালিকানায় যা থাকবে এবং অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদসহ সবগুলোর উপর যাকাত ফরয। আর যাকাত দিতে হবে ২.৫% হিসাবে যেমন,এক লক্ষ টাকায় দুই হাজার পাঁচ শত টাকা।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৩৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩০০

শেয়ার লিংক

এইচএমএস - ঢাকা

৩৫৩৬. প্রশ্ন

আমি ঢাকা থেকেই প্রথমেই মদীনা শরীফ যাই, সেখানে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওজা মুবারক যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ২/৩ দিন অবস্থান করি। তারপর মক্কা শরীফে ওমরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি এবং আমি মদীনা থেকে অর্থাৎ মসজিদে নববী থেকে ওমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধি। গাড়িতে উঠলে বাঙ্গালী ড্রাইভার আমাকে বলল, মদীনা থেকে ওমরার নিয়ত করলে হবে না। জুল হুলাইফা মসজিদ থেকে ওমরার নিয়ত করতে হবে। আমি তৎক্ষণাৎ বাংলাদেশের দুইজন বড় আলেমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে দুইজনের দুই রকম মতামত পাই। যেমন, একজন বললেন, যেহেতু মদীনা শরীফ ও মসজিদে নববী মীকাতের আগে তাই আপনার ওমরার নিয়ত করা ঠিক আছে। কিন্তু অন্যজন বললেন, যেহেতু হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফ থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধেন তাই আপনাকে জুল হুলাইফা মসজিদে এসেই ওমরার নিয়ত করতে হবে। এমতাবস্থায় কোনটি সঠিক? উল্লেখ্য, যুলহুলাইফা মসজিদে এসে পুনরায় অযু-গোসল না করে (ইহরাম বাঁধা এবং অযু আগেই ছিল) ওমরার নিয়ত করেছি। যেহেতু আসরের নামাযের জামাত মাসবুক হিসেবে শরিক হই। তাই ইহরামের নামায না পড়েই শুধু নিয়ত করে নিয়েছি। এটা কি ঠিক হয়েছে? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য মসজিদে নববী থেকে ইহরাম করা জায়েয় হয়েছে। কেননা হজ্ব ও উমরার জন্য মীকাত এবং মীকাতের আগে যে কোনো জায়গা থেকে ইহরাম করা জায়েয। কারণ ইহরামের জন্য যে মীকাত নির্ধারণ করা হয়েছে তার অর্থ এই যেইহরাম ছাড়া ঐ জায়গাগুলো অতিক্রম করা যাবে না। এ অর্থ নয় যেমীকাতের আগে ইহরাম করা যাবে না।

একাধিক সাহাবী থেকে মীকাতের অনেক আগেই ইহরাম করা প্রমাণিত আছে। ইবনে আবী লাইলা রাহ. থেকে বর্ণিত আছেতিনি বলেনহযরত আলী রা. মদীনা থেকে ইহরাম করেছেন। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহাদীস ১২৮৩২

নাফে রাহ. থেকে বর্ণিততিনি বলেনহযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বাইতুল মাকদিস থেকে ইহরাম করেছেন। -প্রাগুক্তহাদীস : ১২৮১৯

আবদুল্লাহ ইবনে সালামা রাহ. থেকে বর্ণিততিনি বলেনহযরত আলী রা.-কে সূরা বাকারার ১৯৬ নং আয়াত (তরজমা) আর তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্ব ও উমরা পূর্ণ করো।)-এর তাফসীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনহজ্ব ও উমরা পূর্ণ করার অর্থ হলনিজের ঘর থেকে ইহরাম করা।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহাদীস ১২৮৩৪তাফসীরে তবারী ২/২১৩

এ ছাড়াও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.উসমান ইবনে আবীল আস রা.ইমরান ইবনে হুসাইন রা.ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.তাউস রাহ.সহ আরো অনেক সাহাবা-তাবেয়ী থেকে মীকাতের আগেই ইহরাম করার কথা বর্ণিত হয়েছে। দেখুন মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৮/৩৫-৪০

সুতরাং যুলহুলাইফা মসজিদে এসেই ইহরাম করতে হবেমদীনা থেকে ইহরাম করা যাবে না- এ কথা ঠিক নয়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলাইফা থেকে ইহরাম করেছেন এটা যে মীকাত এ কথা বোঝানোর জন্য।

অতএব মদীনা থেকে আপনার ইহরাম করা ঠিক হয়েছে। যুলহুলাইফা এসে পুনরায় ইহরামের নিয়ত করার দরকার ছিল না। তবে পুনরায় নিয়ত করার কারণে কোনো সমস্যাও হয়নি।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৬৬, ১৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৭২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৭৭-৪৭৮

শেয়ার লিংক

রায়হান আহমদ - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৫৩৭. প্রশ্ন

আমরা জানি, শাশুড়ির সাথে দেখা দেওয়া জায়েয। প্রশ্ন হল, শাশুড়ি যদি আপন না হয় অর্থাৎ স্ত্রীর সৎ মা হয় তাহলে কি তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ জায়েয হবে?


উত্তর

নাসৎ শাশুড়ি (অর্থাৎ স্ত্রীর সৎ মা) মাহরাম নয়। তার সাথে পর্দা করা জরুরি। দেখা-সাক্ষাত করা জায়েয নয়।

-আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩৯

শেয়ার লিংক

ফারুক আযীয - মিরপুর-১২, ঢাকা

৩৫৩৮ . প্রশ্ন

স্বামী স্ত্রীকে খোলা তালাক দিলে ইদ্দত চলাকালীন স্ত্রীর ভরণ-পোষণ কে বহন করবে?


উত্তর

সাধারণ তালাকের মতো খোলা তালাকের ক্ষেত্রেও ইদ্দত চলাকালীন স্ত্রীর ভরণ-পোষণ স্বামীকেই বহন করতে হবে। তবে যদি খোলা তালাকের চুক্তির সময় ইদ্দতের মধ্যে ভরণ-পোষণ না দেওয়ার শর্ত করা হয় তাহলে তা সহীহ হবে এবং সেক্ষেত্রে স্ত্রী ইদ্দতকালীন ভরণ-পোষণ পাবে না।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৮৮১১; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৫২-৪৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৩৯; ফাতহুল কাদীর ৪/৭৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/৮৯

শেয়ার লিংক

আসলাম - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৫৩৯. প্রশ্ন

আমি জানি, বিয়ে করার জন্য কাবিন শর্ত। বর্তমানে দেখা যায়, অনেকে বিয়ের কথা পাকাপাকি হওয়ার পর মা-বাবা কিংবা গার্ডিয়ানদের সম্মতিতে কাবিন না করে শুধু আংটি পরিয়ে রাখে। এখন ঐ ছেলে-মেয়ে পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবে কি? অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

আংটি পরানোর দ্বারা বিবাহ সংঘটিত হয় না। এটি উভয় পক্ষের মাঝে সামাজিকভাবে কেবলমাত্র বিবাহের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা বুঝায়। সুতরাং ইজাব-কবুল ছাড়া শুধু আংটি পরানোর  কারণে তারা স্বামী-স্ত্রী গণ্য হবে না। তাই ইজাব-কবুলের আগে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ ও মেলামেশা বৈধ নয়।

প্রকাশ থাকে যেবর্তমানে বিবাহের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর আকদ না করিয়ে আংটি পরিয়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত এভাবে রেখে দেওয়ার রেওয়াজটি ঠিক নয়। এ কারণে ছেলে-মেয়ে ও তাদের নিকটজনদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও মেলামেশা করার গুনাহ বাড়তে থাকে।

উল্লেখ্য যেবিয়ে সহীহ হওয়ার জন্য কাবিন করা শর্ত নয়বরং দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ সাক্ষীর সামনে বিয়ের ইজাব-কবুল করার দ্বারাই বিবাহ সংঘটিত হয়ে যায়।

-রদ্দুল মুহতার ১/১১; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২১ ও ৩/১৪

শেয়ার লিংক

আবূ আহমদ জাদীদ - সাইন্সল্যাব, ঢাকা

৩৫৪০. প্রশ্ন

আমাদের কলেজ একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর টাকা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ৫০% এবং চাকরিজীবীদের বেতন থেকে ৫০% ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। উক্ত টাকা চাকরি শেষে চাকরিজীবীদের প্রদান করার বিধান রয়েছে। বর্তমানে কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত ৫০% এর উপর এফ.ডি.আর. করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ টাকাও চাকরির শেষে মূল ও বর্ধিত অংশসহ চাকরিজীবীদেরকে প্রদান করা হবে।

অতএব এ অবস্থায় উক্ত মূল ও বর্ধিত অংশ চাকরির শেষে গ্রহণ করা যাবে কি না?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ফান্ডে টাকা জমা রাখা যদি ঐচ্ছিক হয় অর্থাৎ কেউ চাইলে উক্ত ফান্ডের জন্য বেতন থেকে টাকা কেটে রাখতে পারেআবার চাইলে পুরো বেতন উঠিয়েও নিতে পারে তাহলে এই ফান্ডে টাকা জমা করা  জায়েয হবে না। যদি কেউ জমা করে ফেলে তবে টাকা উঠানোর পর মূল জমা অর্থাৎ নিজ বেতনের অংশ নিজে ব্যবহার করতে পারবে। আর এর অতিরিক্ত যা পাবে তা সুদ। সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব-মিসকীনদেরকে তা সদকা করে দিতে হবে।

আর প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা করা যদি ঐচ্ছিক না হয়বরং এর জন্য প্রত্যেকের বেতন থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলকভাবে টাকা কেটে রেখে দেয় তাহলে ব্যাংকে সুদীভাবে টাকা জমা রাখার দায় সরাসরি চাকরিজীবীদের উপর আসবে না। বরং এর গুনাহ কর্তৃপক্ষের হবে। আর এক্ষেত্রে তারা নিজ বেতনের অংশ ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত টাকা ব্যবহার করতে পারবে। এর অতিরিক্ত টাকা সুদ। তা সদকা করে দিতে হবে।

-মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ২৫১১, ২৫১৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৫-৪৬৯; কেফায়াতুল মুফতী ১১/২৭৫; জাদীদ মাসাইল কে শরয়ী আহকাম ৬৫

শেয়ার লিংক

পরিচালক, ইত্তিহাদুল মুসলিমীন পাঠাগার - কদমতলী, ঢাকা

৩৫৪১ . প্রশ্ন

আমাদের এলাকার কয়েকজন যুবক মিলে এভাবে টাকা জমা করে যে, ১৮ জন যুবক প্রতিদিন ১০ টাকা করে জমা করে। যার ফলে প্রতিদিন ১৮০ টাকা জমা হয়। এভাবে ১০ দিন অতিবাহিত হলে মোট ১৮০০ টাকা জমা হয়। অতপর ১০ম দিনে সকলের নাম পৃথক পৃথক কাগজে লিখে একটি বাক্সের ভিতর ফেলা হয়। সেখান থেকে কোনো একজন একটি কাগজ উত্তোলন করে। সে কাগজে যার নাম উঠে সে এই ১৮০০ টাকা পায়। এভাবে ১০ দিন অন্তর অন্তর মোট ১৮টি খেলা হয়। যার ফলে সকলেই ১৮০০ টাকা করে পায়। যে ব্যক্তি একবার ১৮০০ টাকা পাবে সে আর কোনো খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু অবশ্যই অবশ্যই তাকে শেষ খেলার পূর্ব পর্যন্ত ১০ টাকা করে প্রতিদিনই জমা করতে হবে।

জানার বিষয় হচ্ছে, তাদের এ খেলা জায়েয হবে কি? যদি জায়েয না হয় তবে জায়েয পদ্ধতি কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী নিজেদের টাকা এভাবে একত্র করে তা উক্ত পদ্ধতিতে একেক জনের জন্য নেওয়া জায়েয। কেননা এক্ষেত্রে সকলের সম্মতিতে একজনকে ঋণ দেয়া হচ্ছে এবং এতে বেশি প্রদানেরও শর্ত নেই। এছাড়া এতে অবৈধতার অন্য কোনো কারণও নেই। তাই প্রশ্নোক্ত লেনদেন জায়েয।

-ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩২৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/৭

শেয়ার লিংক

ফরহাদ - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৫৪২ . প্রশ্ন

প্রচলিত ব্যাংকে ট্রাঞ্জেকশন করা যাবে কি না? আর এসব ব্যাংকে চাকরি করা যাবে কি না, দয়া করে দলিল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো সুদী অর্থনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। সুদ আদানপ্রদানই এসব ব্যাংকের মূল ও প্রধান কাজ। বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় এসব ব্যাংকই হচ্ছে সুদের প্রচার ও প্রসারের প্রধান মাধ্যম।  আর ব্যাংকে কর্তব্যরত ব্যক্তি বিভিন্ন উপায়ে সুদী কারবারের সাথে সরাসরি জড়িত। সুদ দেওয়া-নেওয়া যেমন হারাম তেমনি অন্যের সুদী কারবারে জড়িত হওয়াও হারাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু সুদদাতা ও গ্রহীতাকে লানত করেননিবরং এর লেখক (অর্থাৎ সুদের হিসাব-কিতাবকারী) ও সাক্ষীগণকেও অভিসম্পাত করেছেন।

হযরত জাবির রা. বলেনআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ গ্রহণকারী ও সুদ প্রদানকারী এবং সুদের লেখক ও সাক্ষীদ্বয়ের উপর লানত করেছেন। -সহীহ মুসলিমহাদীস ১৫৯৮

সুতরাং একজন মুসলমানের জন্য প্রচলিত ধারার ব্যাংকে চাকরি করা এবং এর বেতনাদি ভোগ করা বৈধ নয়।

আর সুদভিত্তিক হওয়ায় এসব ব্যাংকে সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাব বা বিভিন্ন মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব খোলা কিংবা সুদের ভিত্তিতে যে কোনো ধরনের ঋণ গ্রহণ করা হারাম। কেউ এমন হিসাব খুলে ফেললে তা দ্রæত বন্ধ করে দিতে হবে এবং এ থেকে প্রাপ্ত সুদ সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হবে।

অবশ্য প্রয়োজনের ক্ষেত্রে এসব ব্যাংকে চলতি হিসাব খোলাটিটিপে-অর্ডার ইত্যাদি সুদবিহীন লেনদেন করা জায়েয।

-তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৫ (সূরা বাকারা : ২৭৫); তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/২১৯

শেয়ার লিংক

মেহেদী - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৫৪৩ . প্রশ্ন

আমাদের কলেজে মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি। এমনকি পরীক্ষার সময় মেয়েদের সাথে বসতে হয়। কারণ আমাদের রোল অনুযায়ী সিট প্ল্যান করা হয়। এ অবস্থায় আমি কীভাবে আমার মহামূল্যবান ঈমান ঠিক রাখতে পারি?


উত্তর

আমাদের  দেশে সরকারী/বেসরকারী বিভিন্ন মানের একাধিক বয়েজ কলেজ আছে। আপনার কর্তব্য ছিল প্রথম থেকেই বয়েজ কলেজে এডমিশন নেয়া। সেক্ষেত্রে আর এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হত না। এখন যদি আপনার জন্য বয়েজ কলেজে ট্রান্সফার হওয়া সম্ভব হয় তাহলে তাই সমীচীন হবে। যতদিন তা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনি যথাসম্ভব দৃষ্টিকে সংযত রাখবেন। মেয়েদের সাথে উঠাবসা ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকবেন। আর কখনো ভুল হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফার করবেন। দৃষ্টি ও মন হেফাযত রাখার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার সাহায্য প্রার্থনা করবেন। সময় পেলে হক্কানী আলেম ও আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে উঠাবসা করবেন এবং তাদের ওয়ায-নসীহত শুনবেন।

প্রকাশ থাকে যেসহশিক্ষার প্রচলিত পদ্ধতি সম্পূর্ণ শরীয়ত পরিপন্থী। এতে পর্দার হুকুম লঙ্ঘনের গুনাহ ছাড়াও আরো অনেক গুনাহর আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ ধরনের পরিবেশ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা মুসলমানের কর্তব্য। 

-সূরা নূর : ৩০; তাফসীরে কুরতুবী ১২/১৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৩৭৩; ফাতহুল বারী ২/৩৯২; আলমাবসূত, সারাখসী ১০/১৫২ ১৬/৪০; আলমাজমু ৪/৩৫০ আদিল্লাতুল হিজাব ৪৫৬-৪৭৪

শেয়ার লিংক

আইয়ুব - ঢাকা

৩৫৪৪. প্রশ্ন

নখ, চুল বা পশম ইত্যাদি কাটার পর আমরা শহরের মানুষ তা কোথায় ফেলব? কেননা শহরে দাফনের জায়গা পাওয়া কঠিন। কমোডে ফেলা যাবে কি না? দয়া করে জানাবেন।


উত্তর

নখচুল বা পশম ইত্যাদি কাটার পর তা মাটিচাপা দেওয়াই উত্তম। তবে শহরে বা যেখানে মাটিচাপা দেওয়ার সুযোগ নেই সেখানে বাসার ময়লার ঝুড়িতে ফেলা যাবে। কিন্তু তা কমোডে না ফেলাই উচিত।

আর যেসব পশম শরীরে থাকা অবস্থায় অন্যের জন্য দেখা নাজায়েয শরীর থেকে পৃথক হওয়ার পর বা কাটার পরও তা দেখা নাজায়েয। তাই এ ধরনের পশম পরিষ্কার করে টয়লেটের ভেতর ফেলে দেওয়া যাবে। আর অন্য কোথাও ফেলতে চাইলে আলাদা কোনো কিছুতে ফেলা উচিতযেন তা দেখা না যায়। 

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৬১৭১, ২৬১৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৯, ৫/৩৫৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪১১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৭১

শেয়ার লিংক

জুলফিকার আলী - মোমেনশাহী

৩৫৪৫. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় বিগত দুই/তিন বছর যাবত মাইকিং করে মহিলাদের জন্য বিভিন্ন স্থানে মহিলা সম্মেলন-এর আয়োজন করা হয়। উক্ত সম্মেলনে কখনও কোনো পুরুষ এবং মহিলা বক্তা ওয়াজ করেন আবার কখনও শুধু মহিলা বক্তা ওয়াজ করেন। মহিলা বক্তাও পুরুষ বক্তাদের মত সুর দিয়ে মাইক ব্যবহার করে এমনভাবে ওয়াজ করেন যে, তার সুরেলা কন্ঠস্বর সম্মেলনের গণ্ডি পেরিয়ে অনেক দূর ছড়িয়ে পড়ে। যা পথচারী পুরুষ এবং আশপাশে অবস্থানরত পুরুষগণ অনায়াসেই শুনতে পায়। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের অবস্থাও উদ্ভট। সংখ্যাগরিষ্ঠ মহিলা বেপর্দা অবস্থায় সম্মেলনে আসা যাওয়া করে। সম্মেলন শেষে সভাস্থল ত্যাগের সময় বেপর্দা নারীদের জটলা বেধে রাস্তা দিয়ে চলা -দিনের আলোতে সকলেরই দৃষ্টিগোচর হয়। এতে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।

এধরনের সম্মেলনের আয়োজকদের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বুখারী শরীফের কিতাবুল ইলমের নিম্নে বর্ণিত বাবগুলোর হাদীস দ্বারা উক্ত সম্মেলনের পক্ষে দলীল পেশ করে থাকেন।

 ১.  باب تعليم الرجل أمته وأهله 

 ২.  باب عظة الإمام النساء وتعليمهن

 ৩.  باب هل يجعل للنساء يوم على حدة في العلم

অতএব, মুফতী সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হল:

ক. উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে কোন মহিলা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মাইক ব্যবহার করে সুরেলা কন্ঠে ওয়াজ-নসীহত করার হুকুম কী?

খ. বর্ণিত পদ্ধতিতে দিনের বেলায় বেপর্দা অবস্থায় মহিলাদের জন্য এ ধরনের ওয়াজ মাহফিলে অংশগ্রহণের হুকুম কী?

গ. এ ধরনের মহিলা সম্মেলন আয়োজন করার হুকুম কী?

ঘ. এ ধরনের মহিলা সম্মেলনের পক্ষে উক্ত বাবগুলো দ্বারা দলীল পেশ করা যাবে কি?

কুরআন সুন্নাহর আলোকে এ বিষয়গুলোর শরয়ী সমাধান বিস্তারিত দলীল প্রমাণসহ জানালে এলাকাবাসী চির কৃতজ্ঞ হবে।

উত্তর

ওয়ায নসীহতদ্বীনী আলোচনা নিঃসন্দেহে মুমিনদের জন্য উপকারী। পুরুষের মত মহিলাদের মাঝেও দ্বীনী তালীম-তরবিয়তওয়ায-নসীহত শরীয়তসম্মত পন্থায় ব্যাপকভাবে হওয়া দরকার। বিশেষত বর্তমানে ফেতনা -ফাসাদের ব্যাপকতার যুগে তাদের মাঝে ওয়ায-নসীহত ও তালীম-তরবিয়তের প্রয়োজনীয়তা যে কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রশ্নের বক্তব্য অনুযায়ী মহিলাদেরকে প্রকাশ্যে মাঠে ময়দানে ডেকে এনে এভাবে সম্মেলন করা এবং মহিলা বক্তা কর্তৃক সেখানে মাইকে আলোচনা করার প্রচলিত পন্থাটি শরীয়তসম্মত নয় । এ পদ্ধতির সম্মেলন বা ওয়ায মাহফিল বর্জনীয়। কেননা,

(ক) প্রচলিত পদ্ধতির উক্ত মহিলা সম্মেলন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তালীম-তরবিয়ত সাহাবা- তাবেয়ীনের অনুসৃত তরীকা পরিপন্থী। দ্বীন-শেখা শেখানোওয়ায-নসীহতের পথ ও পন্থা শরীয়ত নির্দেশিত উপায়ে হওয়া আবশ্যক। শরীয়ত সমর্থন করে না এমন সব পন্থা বর্জন করা জরুরী।

নবীযুগের নারীরা পরবর্তী যে কোনো যুগের নারী অপেক্ষা দ্বীন শেখার প্রতি অধিক আগ্রহী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখ থেকে ওয়ায নসীহত শোনার প্রবল আকাঙ্ক্ষা রাখতেন। তিনি তাদেরকে যে পন্থায় ওয়ায নসীহত করেছেন মূলত সেটাই আমাদের অনুসরণীয়। সে পদ্ধতি কী ছিল লক্ষ্য করুন।

সহীহ বুখারী ও সহীহ ইবনে হিব্বানে বর্ণিত হয়েছেএকবার কিছু সংখ্যক নারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরজ করলেনইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনার মজলিসে পুরুষদের সাথে বসতে পারি না। আমাদের জন্য একটি দিন ধার্য করুন যাতে সেদিনটিতে আমরা আপনার নিকট আসতে পারি। তিনি বললেন موعدكن بيت فلانة অর্থাৎ নির্ধারিত দিন অমুক মহিলার ঘরে জমায়েত হও। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে তাদেরকে ওয়ায-নসীহত করলেন। -সহীহ বুখারীহাদীস ১০১সহীহ ইবনে হিব্বানহাদীস ২৯৪১

লক্ষ করুনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের ওয়ায নসীহত করার জন্য পুরুষদের দৃষ্টির আড়ালে কেমন ঘরোয়া পরিবেশ ও স্থান নির্বাচন করেছেন। তাদের আবদারের প্রেক্ষিতে প্রকাশ্য স্থান যেমন মসজিদে নববীঈদগাহ বা ঘরের আঙ্গীনার কথা না বলে সরাসরি বলে দিলেন موعدكن بيت فلانة অমুক মহিলার গৃহে অবস্থান কর। মূলত তাঁর এ নির্দেশ মহিলাদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানের যে কুরআনী নির্দেশনা রয়েছে তারই অংশ।

(খ) প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নারী শ্রোতাদের থেকে ব্যাপকভাবে পর্দার বিধান লংঘন হয়। যা নাজায়েয হওয়ার ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু তারা যদি যথাযথভাবে পর্দা মেনেও উক্ত সম্মেলনে আসার পাবন্দী করে নেয় তথাপি এ ধারার মহিলা সম্মেলন গোড়া থেকেই শরীয়তের রুচি প্রকৃতি ও স্বভাব বিরুদ্ধ। শরীয়তের স্বভাব চাহিদা হলমহিলাদের ইবাদত বন্দেগী থেকে শুরু করে তাদের সকল কর্মকাРপুরুষদের থেকে আলাদা ও অতি গোপনীয় হবে। পুরুষের জন্য যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে এসে জামাতের সাথে আদায় করা শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ হুকুম সেখানে তাদেরকে গৃহাভ্যন্তরে নামায আদায় করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। মসজিদে নববীতে যেখানে এক রাকাত নামায এক হাজার রাকাত সমানএক বর্ণনামতে পঞ্চাশ হাজার রাকাত সমানএর সাথে আবার আল্লাহর রাসূলের মত ইমামের পেছনে নামায পড়ার সৌভাগ্য তো রয়েছেই। তা সত্বেও সে সময় নারী সাহাবীদেরকে তাদের গৃহাভ্যন্তরের সর্বাধিক নির্জন স্থানে নামায পড়াকে উত্তম বলা হয়েছে।

এ কথা ঠিক যেপ্রথম দিকে কোনো কোনো মহিলা প্রতিনিয়ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি নাযিলকৃত নতুন নতুন ওহী ও বিধি বিধান সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য,পাশাপাশি প্রিয় নবীর মত ইমামের পেছনে নামায পড়ার তীব্র আকাক্সক্ষার কারণে মসজিদে নববীর জামাতে অংশগ্রহণ করত। তিনি তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন না। তবে তার জন্য বেশ কিছু শর্ত ছিল। যেমন,

১. পূর্ণ পর্দার সাথে আসতে হবে।  ২. সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে না।  ৩. সাজসজ্জা পরিত্যাগ করতে হবে।  ৪. রাতে আসবেদিনে আসবে না।  ৫. মহিলারা সবার পরে আসবে এবং নামায শেষে পুরুষদের আগে বের হয়ে যাবে।

৬. কোনো অবস্থায়ই পুরুষদের সাথে মেলা-মেশার আশঙ্কা না থাকতে হবে।

লক্ষ করুনএত পাবন্দী এমন যুগের নারীদের ব্যাপারে ছিল যাকে ইসলামের সোনালী যুগ বলা হয়। যাদের মাঝে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল বিদ্যমান ছিলেন। অতপর তাঁর ইন্তেকালের পর সামাজিক পরিবেশের সামান্য পরিবর্তনের কারণে সাহাবায়ে কেরাম মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে দেন এবং মহিলারাও মসজিদে আসা বন্ধ করে দেয়। উম্মাহাতুল মুমিনীন এবং অন্যান্য মহিলা সাহাবীদের তাকওয়া তহারাতখোদাভীতি যা প্রবাদতুল্যএবং পরবর্তীযুগের নারীদের জন্য যারা হলেন আদর্শ তাঁদের ব্যাপারে যদি এমন নিষেধাজ্ঞা হয় তাহলে এমন ফেতনা-ফাসাদের ব্যাপকতার যুগে প্রকাশ্যে দিবালোকে বেপর্দার সাথে দূর দুরান্ত থেকে মহিলাদের উক্ত সম্মেলনে যাতায়াত কীভাবে অনুমোদিত হতে পারে?

(গ) উক্ত মহিলা সম্মেলনে মহিলা বক্তা কর্তৃক মাইকে আলোচনা করাসুরেলা কন্ঠে বয়ান করা,যার আওয়াজ সভাস্থলের গণ্ডি পার হয়ে কেবল আশপাশের পুরুষগণই নয়বরং দূর দূরান্তের লোকদের কাছেও পৌঁছে যায়তা শরীয়তের নির্দেশনার যে সুস্পষ্ট সীমালংঘন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নারীর প্রতি শরীয়তের বিধান ও চাহিদা হলতার কন্ঠস্বর যেন প্রয়োজন ছাড়া পরপুরুষ শুনতে না পায়। এ বিধান কেবল সাধারণ ক্ষেত্রেই নয়বরং ইবাদত বন্দেগী ও আমলের ক্ষেত্রেও তা পূর্ণমাত্রায় লক্ষ রাখা হয়েছে। যেমন,

১. মুআযযিনের এত অধিক মর্যাদা থাকা সত্বেও নারী কন্ঠস্বর যেন বিনা প্রয়োজনে পরপুরুষ শুনতে না পায় এজন্য তাদের উপর আযানের বিধান দেয়া হয়নি।

২. উচ্চ আওয়াজ বিশিষ্ট ফরয নামাযের কেরাত তাদের জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়ার বিধান রয়েছে।

৩. নামাযে ইমামের কোনো ভুল ত্রæটি হলে তা অবগত করানোর জন্য পুরুষ মুক্তাদীদেরকে সুবহানাল্লাহ বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে একই বিষয়ে নারীদেরকে তাসফীক অর্থাৎ এক হাতের পিঠ অন্য হাতের তালুতে মেরে শব্দ করতে বলা হয়েছে। যেন পুরুষরা আওয়াজকারী সম্পর্কে বিন্দুমাত্র বুঝতে না পারে।

৪. হজ্বের তালবিয়া পুরুষগণ উচ্চ আওয়াজে পড়বে। কিন্তু মহিলারা পড়বে নিম্ন আওয়াজে। এধরনের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পার্থক্য বিদ্যমান।

হাঁপ্রয়োজনে পরপুরুষের সাথে পর্দার আড়ালে থেকে টুকটাক দরকারী কথা বলা নিষেধ নয়। তবে এক্ষেত্রেও কোমলতানম্রতা পরিহার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

লক্ষণীয় বিষয় হলকন্ঠস্বরের কোমলতা পরিহারের নির্দেশ সরাসরি নবীযুগের নারীদেরকে দেয়া হয়েছে। এখন কথা হলতাদের ব্যাপারেই যদি এমন নির্দেশ হয়ে থাকে তাহলে এ যুগের মহিলা বক্তাদের মাইকে আলোচনা করা এবং সুরেলা কন্ঠ দেয়া কতটা শরীয়ত বিরোধী কাজ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মোটকথা প্রশ্নোক্ত মহিলা সম্মেলনে শরীয়ত নিষিদ্ধ একাধিক কর্মকাণ্ড ও আপত্তি বিদ্যমানতাই ভবিষ্যতে এ ধরনের সম্মেলন আয়োজন করা থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরত থাকা আবশ্যক।

আর প্রশ্নে যেসব হাদীসের উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়েছে তার সাথে উক্ত মহিলা সম্মেলনের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। উক্ত অধ্যায়ের হাদীসগুলো দেখলেই তা সুস্পষ্ট হয়ে যায়।

যেমন প্রথম হাদীসটি লক্ষ করুনএ হাদীসের মূল বক্তব্য হল পুরুষগণ নিজেরা পরিবার পরিজনকে সুন্দর আদব আখলাকতালীম তরবিয়ত শিক্ষা দিবে। এজন্য সে দ্বিগুন সওয়াবের অধিকারী হবে।

এ হাদীসে তো নিজ পরিবার পরিজনের শিক্ষা দীক্ষাতালীম তরবিয়তের ব্যাপারে পুরুষের দায়িত্ব বুঝানো হয়েছে। এবং তাদের শিক্ষা দীক্ষা ঘরোয়া পরিবেশে হবে তাও স্পষ্ট।

দ্বিতীয় হাদীসের সারকথা হলরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মহিলা সাহাবীদের যখন ঈদগাহে যাওয়ার অনুমতি ছিল তখন একবার ঈদের নামায শেষে মহিলাদেরকে ওয়ায নসীহত করেছিলেন। এ হাদীস দ্বারাও উক্ত সম্মেলনের পক্ষে প্রমান পেশ করার কোনো সুযোগ নেই। কেননা তাদেরকে তো ঈদগাহে ওয়ায নসীহতের জন্য ডাকা হয়নি। তারা তো সেখানে ঈদের নামাযের জন্য এসেছিলেন।

আর তৃতীয় হাদীসের আলোচনা তো প্রথমেই করা হয়েছে যা দ্বারা এ সম্মেলনের বিপরীতটাই প্রমাণিত হয়।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যেদ্বীনের জরুরী ইলম শিক্ষা করা নারীদের উপরও ফরয। তাদেরকে সঠিক ঈমান-আকীদা শিক্ষা দেয়াতালীম-তরবিয়ত করাওয়ায-নসীহত শোনানো খুবই দরকারি। তবে এর পদ্ধতি হতে হবে অবশ্যই শরীয়তসম্মত। আর এর অনুসৃত পদ্ধতি তো তা-ই যা হাদীস শরীফে এসেছে। অর্থাৎ ঘরের পুরুষরা দ্বীন শিখে তাদের নারীদেরকে শেখাবে। এতে প্রত্যেক ঘরেই দ্বীনী  তালীমের চর্চা হবে এবং ঘরে ঘরে দ্বীনী পরিবেশ কায়েম হবে। পুরুষদের কর্মব্যস্ততার কারণে যদি অধিক সময় না পায় তবে তাদের থেকে নারীরা শিখে ঘরের মেয়েদেরকে অনুরূপ আশপাশের মেয়েদেরকে সহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন মাজীদ শেখাবেপ্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল শেখাবেহক্কানী উলামায়ে কেরামের রচিত কিতাব থেকে ওয়ায-নসীহত শুনাবে। মাঝে মাঝে হক্কানী আলেম ও বুযুর্গদের এনে ঘরোয়াভাবে পর্দা-পুশিদার সাথে ওয়ায-নসীহত শুনবে। ইনশাআল্লাহ শরীয়তসম্মত উক্ত পদ্ধতিতে তাদের অধিক ফায়েদা হবে। 

শেয়ার লিংক