আমি সাহরী খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করি। প্রায়ই দেখা যায়, এ অবস্থায় আযান হয়ে যায়। জানতে চাই এতে কি আমার রোযার কোনো ক্ষতি হবে?
আমি সাহরী খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করি। প্রায়ই দেখা যায়, এ অবস্থায় আযান হয়ে যায়। জানতে চাই এতে কি আমার রোযার কোনো ক্ষতি হবে?
রোযা অবস্থায় টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করা মাকরূহ তানযীহী। আর যদি তা গলায় বা পেটের ভেতর চলে যায় তবে তো রোযা নষ্টই হয়ে যাবে। তাই সাহরীর সময় শেষ হয়ে গেলে পেস্ট বা মাজন জাতীয় কোনো কিছু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
শেয়ার লিংকরদ্দুল মুহতার ২/৪১৫-৪১৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৪; হিদায়া ১/২২০
লোকমুখে শোনা যায় যে, আহার অবস্থায় সালাম দেওয়া ঠিক নয়। এমনিভাবে আগন্তুক এসে ঘরের লোকজনকে আহার অবস্থায় পেলে সালাম দিতে হয় না। প্রশ্ন হল, এই প্রচলিত কথাগুলো কি সঠিক?
আহারকারী অন্যকে সালাম দিতে পারবে। এ সময় অন্যকে সালাম দেওয়া নিষিদ্ধ নয়। তদ্রূপ আহারকারীকেও সালাম দেওয়া বৈধ। তবে এ সময় সালাম দেওয়া যদি তার কষ্ট বা বিরক্তির কারণ হয় তাহলে সালাম দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। কেননা, এমন হলে সে অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরূহ হবে।
শেয়ার লিংকরদ্দুল মুহতার ১/৬১৭, ৬/৪১৫; আলমাজমূ’ ৪/৪৬৯; ফাতহুল বারী ১১/১৯-২১
এক ব্যক্তি নামাযের জামাতে রুকুতে এমন সময় শামিল হল যে, একবারও পূর্ণভাবে রুকুর তাসবীহ পড়তে পারেনি। এ অবস্থায় সে রুকু ও রাকাত পেয়েছে বলে ধরা হবে কি না? নাকি একবার পূর্ণ তাসবীহ পড়ার সুযোগ পেলে রাকাত পাওয়া গণ্য করা হবে?
রাকাত পাওয়ার জন্য রুকু পাওয়া জরুরি। আর রুকু পাওয়ার জন্য এক মুহূর্ত হলেও ইমামের সাথে রুকুতে শরিক হতে হবে। ইমামের সাথে রুকুর তাসবীহ পাওয়া জরুরি নয়। কিন্তু যদি ইমামকে রুকু অবস্থায় অল্প সময়ের জন্যও না পাওয়া যায় তাহলে এ রাকাত পায়নি বলে বিবেচিত হবে।
শেয়ার লিংকমুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ২৫৩৭-২৫৩৭; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩০৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০; ফাতহুল কাদীর ১/৪২০; মাজমাউল আনহুর ১/২১২; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৪৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২০
এক খতীব সাহেবকে জুমআর বয়ানে বলতে শুনেছি যে, মোজার উপর মাসেহ বৈধ হওয়ার জন্য তা চামড়ার হওয়া জরুরি নয়। বরং আমাদের দেশে প্রচলিত সব ধরনের মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয। চাই তা সুতার হোক বা পশমের হোক বা অন্য কোনো কিছুর হোক। জানতে চাই, তার এ কথা কতটুকু সঠিক?
খতীব সাহেবের ঐ কথা ঠিক নয়। চামড়ার মোজার উপর মাসেহ জায়েয আছে। কিন্তু চামড়া ছাড়া সুতা বা পশমের তৈরি যেসব মোজা সচরাচর পাওয়া যায় এর উপর মাসেহ সহীহ নয়। তবে সুতা বা পশমের মোজায় নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া গেলে তার উপর মাসেহ জায়েয হবে। শর্তগুলো হচ্ছে :
ক) মোজা এমন মোটা ও পুরু হওয়া যে, জুতা ছাড়া শুধু মোজা পায়ে দিয়ে তিন মাইল পর্যন্ত হাঁটা যায়। এতে মোজা ফেটে যায় না এবং নষ্টও হয় না।
খ) পায়ের সাথে কোনো জিনিস দ্বারা বাঁধা ছাড়াই তা লেগে থাকে এবং তা পরিধান করে হাঁটা যায়।
গ) মোজা এমন মোটা যে, তা পানি চোষে না এবং তা ভেদ করে পানি পা পর্যন্ত পৌঁছায় না।
ঘ) তা পরিধান করার পর মোজার উপর থেকে ভিতরের অংশ দেখা যায় না। সচরাচর ব্যবহৃত সুতা বা পশমের মোজায় যেহেতু এসব শর্ত পাওয়া যায় না তাই এর উপর মাসেহ জায়েয হবে না।
শেয়ার লিংকজামে তিরমিযী ১/১৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৮৩; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮২; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৪৩-৩৪৪; ফাতহুল কাদীর ১/১৩৮; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ১২০; মাজমাউল আনহুর ১/৭৫; আননাহরুল ফায়েক ১/১২৩
ঘরবাড়িতে মহিলারা যখন নামায পড়ে তখন সেখানে অধিকাংশ সময় মাহরাম আত্মীয় স্বজন ছাড়া অন্য কেউ থাকে না। তখনও কি তাদের উপর পুরো শরীর ঢেকে নামায পড়া জরুরি?
মহিলাদের চেহারা, কব্জি পর্যন্ত দুই হাত ও গিরা পর্যন্ত দুই পা ব্যতীত অবশিষ্ট সম্পূর্ণ শরীর নামাযে সর্বাবস্থায় ঢেকে রাখা জরুরি। এটা নামায অবস্থার সতর। একা ঘরে নামায পড়লেও এভাবে ঢেকে নামায পড়তে হবে। আর উভয় পা খোলা রাখা জায়েয, কিন্তু তাও ঢেকে রাখা উত্তম।
শেয়ার লিংকআলমুহীতুল বুরহানী ২/১৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪১৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৪; ইলাউস সুনান ২/১৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩০৬; মাজমাউল আনহুর ১/১২২; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৯; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ২১০
যদি কোনো মুকীম ব্যক্তি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামাযে কোনো মুসাফির ইমামের পিছনে ইকতিদা করে তাহলে মুসাফির ইমামের নামায শেষ করার পর অবশিষ্ট রাকাতদ্বয়ে মুকীম মুকতাদীকে কেরাত পড়তে হবে কি না?
চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামযের শেষ দুই রাকাতে কারো জন্যই কেরাত নেই। মুসাফির ইমামের পেছনে মুকীম মুকতাদীর জন্যও একই হুকুম। তবে সে সূরা ফাতেহা পড়বে কি না এ বিষয়ে মতানৈক্য আছে। বিশুদ্ধ মত হল, এক্ষেত্রে মুকীম মুকতাদী শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহাও পড়বে না।
শেয়ার লিংকআলমুহীতুল বুরহানী ২/৪০৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩২; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৫; ফাতহুল কাদীর ২/১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২১৩; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৫৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২
আজ থেকে প্রায় আট-নয় বছর পূর্বে আমাদের এলাকায় একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ নির্মিত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় এর জন্য কোনো স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা না হওয়ায় অস্থায়ীভাবে একটি ঘরে এক দুই মাস পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার পর একটি স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা হয়। জায়গাটি এক বৃদ্ধা মহিলার ছিল। তিনি এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার ও সাবাহী (প্রভাতী) মকতব পড়ানোর জন্য স্থায়ী অনুমতি দিয়ে দেন। ফলে এলাকাবাসী এই জায়গা ও দক্ষিণ পাশ থেকে (অন্য মালিকানাধীন) আরো কিছু জায়গা নিয়ে এখানে একটি ঘর করেন এবং নির্দিষ্ট একজন হুজুরের মাধ্যমে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও সাবাহী মকতব চলতে থাকে। কিছুদিন পর বৃদ্ধার জায়গাটিকে সাবাহী মকতবের নামে ওয়াকফ করে লিখিত আকারে দলীল করে দেন। কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা ও মুসল্লী বৃদ্ধির কারণে সামাজিকভাবে এখানে একটি জামে মসজিদ করা অতি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশপাশে কোথাও আলাদাভাবে জামে মসজিদ করার মতো উপযোগী জায়গা না থাকায় এলাকাবাসী পাঞ্জেগানা মসজিদ-মকতবের নামে ওয়াকফকৃত উক্ত জায়গা এবং দক্ষিণ পাশে আরো এই পরিমাণ জায়গা (এটির মালিক ঐ জায়গা মসজিদের নামে ওয়াকফ করতে প্রস্তুত) সহ এখানে একটি জামে মসজিদ করতে চাচ্ছে। তারা সাবাহী মকতবের জন্য মসজিদের বারান্দাকে নির্দিষ্ট করে দিবে।
জানার বিষয় হল, বৃদ্ধা মহিলা কর্তৃক লিখিত আকারে মকতবের নামে ওয়াকফকৃত উক্ত পাঞ্জেগানা মসজিদ ও মকতবের জায়গা মসজিদের সীমানায় নিয়ে এলাকাবাসীর প্রয়োজনে
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনারা যেভাবে উক্ত পাঞ্জেগানা মসজিদ ও সাবাহী মকতবের জায়গাসহ নতুন জায়গা মিলিয়ে জামে মসজিদ বানাতে চাচ্ছেন তা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে মসজিদের বারান্দা সাবাহী মকতবের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। তা সর্বদা সাবাহী মকতবের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তা লিখিত আকারে রাখতে হবে। যেন পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কোনো জটিলতা না হয়। অবশ্য মকতবের সময় ছাড়া অন্য সময় বারান্দাটি মসজিদের কাজে ব্যবহার করা যাবে।
উল্লেখ্য যে, দানকারিনী মহিলা যেহেতু লিখিতভাবে ওয়াকফ করার পূর্বেই জায়গাটি মসজিদ ও মকতবের জন্য যৌথভাবে দান করেছিলেন তাই পরবর্তীতে শুধু মকতবের নামে ওয়াকফ করলেও তা মসজিদ ও মকতব উভয়ের জন্য ওয়াকফ হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে মকতবের একক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে না।
শেয়ার লিংকআলবাহরুর রায়েক ৫/২৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৭৮-৩৭৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৭; ফাতহুর কাদীর ৫/৪৪৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৮৪১
নফল নামাযে সিজদা অবস্থায় কোনো ধরনের দুআ করা জায়েয আছে কি না? এক আলেমের মুখে শুনেছি, নফল নামাযে সিজদা অবস্থায় বাংলাতেও দুআ করা জায়েয আছে। তার এ কথা কতটুকু সঠিক?
নফল নামাযে সিজদা অবস্থায় কুরআন-হাদীসে বর্ণিত দুআসমূহ পড়া যাবে। তবে নফল হোক কিংবা অন্য কোনো নামাযে অনারবী ভাষায় দুআ করা নিষিদ্ধ।
শেয়ার লিংকসুনানে আবু দাউদ ১/১২৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫২১; আননাহরুল ফায়েক ১/২২৪; হাশিয়া তাহতাবী আলাদ্দুর পৃ. ১/২২৯; আসসিআয়াহ ২/২৪৫
আমরা কখনো রিকশা বা সিএনজি নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য ভাড়া করি। এরপর একাকী যাত্রা করে পথিমধ্যে পরিচিত কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে ডেকে নিই। এধরনের ক্ষেত্রে রেওয়াজ আছে যে, চালক কোনো আপত্তিও করে না এবং বাড়তি ভাড়াও দেওয়া হয় না। জানার বিষয় এই যে, এভাবে পরবর্তীতে কোনো আরোহী নেওয়া শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে অনুমতি আছে কি না?
রিকশা ভাড়া নেওয়ার সময় চালকের সাথে যতজন আরোহীর চুক্তি হয় ততজনই তাতে আরোহণ করতে পারবে। পরে কাউকে নিতে চাইলে ভাড়ার সময় বলে নেওয়া উচিত। পূর্ব অবগতি ছাড়া একে তো চালকের সম্মতি নিতে হবে। আর অতিরিক্ত আরোহীর কারণে কিছু ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া কর্তব্য হবে। তবে কোনো এলাকায় যদি একজন ও দু’জন আরোহীর বেলায় কোনো তারতম্য না করা হয় তাহলে চালকের অনুমতি নিয়ে পরবর্তীতে একজনকে বিনা ভাড়ায় নিতে পারবে।
সিএনজি/অটোরিক্সায় সাধারণত যতজন যাত্রী আরোহন করা নিয়মসম্মত পরবর্তীতে সে সংখ্যক যাত্রী নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
শেয়ার লিংকশরহুল মাজাল্লা খালিদ আতাসী ২/৪৯০, মাদ্দা : ৪২৭-৪২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৪-৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৭২; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩৪৫
আমার চেহারায় গোঁফের স্থানে বড় আকারে লোম রয়েছে এবং আমার ভ্রূ কিছুটা চওড়া। আমার স্বামী সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আমার ভ্রূ জোড়া চিকন করতে ও চেহারার অন্যান্য লোমগুলো তুলে ফেলতে বলছেন। জানতে চাই, এভাবে ভ্রূতে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা ও চেহারার অন্যান্য লোম তুলে ফেলার অনুমতি আছে কি না?
মহিলাদের গোঁফ, দাড়ি বা এর আশপাশের স্থানে কোনো লোম গজালে তা তুলে ফেলার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু ভ্রূ চিকন করা বৈধ নয়। স্বামী চাইলেও তা করা জায়েয হবে না। কেননা হাদীস শরীফে এ জাতিয় মহিলাদের উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে।
শেয়ার লিংকসহীহ বুখারী হাদীস : ৫৫৩৯; সহীহ মুসলিম হাদীস : ৫৫২৯; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/১৯৫; ফাতহুল বারী ১০/৩৯০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৭৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৫; হাশিয়া তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৮৬
দাড়ি এক মুষ্ঠি রাখা ওয়াজিব। তা কি চার আঙ্গুল পরিমাণ রাখলেই যথেষ্ট কি না? কেউ বলেন, পাঁচ আঙ্গুলে এক মুষ্ঠি। তাই পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ লম্বা হতে হবে। এখন এর শরয়ী সমাধান কী? উত্তর দিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
মুষ্ঠি আর চার আঙ্গুল এক কথা নয়। হাতের মুষ্ঠি চার আঙ্গুলের চেয়ে লম্বা। হাদীসে মুষ্ঠি দাড়ির অতিরিক্ত কাটার কথা আছে। তাই থুতনির নিচ থেকে দাড়ি মুঠ করে ধরে মুষ্ঠির নিচের দাড়ি কাটতে পারবে।
শেয়ার লিংকসহীহ বুখারী হাদীস : ৫৮৯২; ফাতহুল বারী ১০/৩৬২; উমদাতুল কারী ২২/৪৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ১৩/১১২; শরহু মুসলিম নববী ১/১২৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪০৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮০, ৮/২০৪; ফাতহুল মুলহিম ১/৪২১
আমি কুরবানীর সময় আমার মরহুম আব্বার পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতে ইচ্ছুক। প্রশ্ন হচ্ছে, এ কুরবানীর গোশত কি সদকা করে দিতে হবে?
না। মৃতের রূহে ছওয়াব পৌঁছানোর জন্য যে কুরবানী করা হয় এর গোশত সদকা করে দেওয়া জরুরি নয়। এ গোশত নিজের কুরবানীর মতো নিজে খেতে পারবে এবং অন্যকেও দিতে পারবে।
শেয়ার লিংকফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩
জনৈক ব্যক্তি হালাল-হারাম উভয় ধরনের সম্পদ দ্বারা একটি ঘর তৈরি করেছে এবং এতে হারাম মালের পরিমাণ কম। জানতে চাই, সে ঘর ব্যবহার করা শরীয়তসম্মত কি না? শরীয়তসম্মত না হলে জায়েয হওয়ার কোনো পন্থা আছে কি?
হারাম মাল অল্প হোক বা বেশি তা ভোগ করা যাবে না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঘরটি তৈরিতে যেহেতু কম হলেও হারাম মালের মিশ্রণ রয়েছে; তাই পূর্ণ হালাল উপায়ে উপকৃত হতে চাইলে যে পরিমাণ হারাম মাল ব্যয় করা হয়েছে তার মালিক জানা থাকলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর মালিক জানা না থাকলে তার পক্ষ হতে ঐ পরিমাণ অর্থ সদকা করে দিতে হবে। এ পন্থা অবলম্বন করলে ঐ ঘর থেকে উপকৃত হওয়া বৈধ হবে।
শেয়ার লিংকমাবসূত সারাখসী ১০/১৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯২; হাশিয়া তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৯২
আমার একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করার দুই দিন পর ইন্তিকাল করেছে। তার আকীকা করিনি। কেউ কেউ আকীকা করার পরামর্শ দিচ্ছে। প্রশ্ন হল, এই সন্তানেরও কি আকীকা করা সুন্নত?
ঐ সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা করা লাগবে না। কারণ সন্তানের বয়স ৭ দিন পূর্ণ হলে আকীকার সময় হয়। এর আগে নয়। অবশ্য অভিভাবক চাইলে এমন সন্তানেরও আকীকা করতে পারেন।
শেয়ার লিংকজামে তিরমিযী ১/২৭৮; আলইসতিযকার ১৫/৩৭৫; ফাতহুল বারী ৯/৫০৯; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৯৭; ইরশাদুস সারী ১২/২২৫
যদি নামাযী ব্যক্তির সামনে কোনো সুতরা না থাকে এবং এ অবস্থায় কেউ অজ্ঞাতসারে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করে তাহলে তার করণীয় কী? সে কি তাকে বাঁধা দিবে, নাকি দিবে না? এক্ষেত্রে কোনটি উত্তম? আর বাঁধা দিলে কীভাবে দিবে?
নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে হাতের ইশারা কিংবা তাসবীহ জোরে পড়ে সতর্ক করা জায়েয আছে। তবে নামাযীর জন্য এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়াই শ্রেয়।
উল্লেখ্য, নামাযীর সামনে দিয়ে কারো অতিক্রম করার আশঙ্কা থাকলে সুতরা সামনে রাখা সুন্নত।
শেয়ার লিংকসুনানে আবু দাউদ ১/১০১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২০১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১৩; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৯; মাজমাউল আনহুর ১/১৮৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৭
আমরা ৪ জন তামাত্তু হজ্বের নিয়তে উমরার ইহরাম করে মক্কা এসেছি। আমরা মক্কাতে প্রায় ১৫ দিন থাকলাম। এখন মদীনা মুনাওয়ারা যাচ্ছি। মদীনা থেকে হজ্বের ১/২ দিন আগে মক্কা ফিরব। জানতে চাই, যারা মদীনা থেকে হজ্বের ইহরাম করবে তাদেরকে কি তাওয়াফে কুদূম করতে হবে?
না। তাদের তাওয়াফে কুদূম করতে হবে না। আপনারা যেহেতু এই সফরেই তামাত্তু হজ্বের উদ্দেশ্যে উমরা করেছেন তাই আপনারা তামাত্তুকারী। আর তামাত্তুকারীর উপর তাওয়াফে কুদূম নেই। তাওয়াফে কুদূম কেবল ইফরাদ ও কিরান হজ্বকারীদের জন্য সুন্নত। তামাত্তুকারীদের জন্য নয়।
শেয়ার লিংকমানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ১৪১; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ১০৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৯২
জনৈক ব্যক্তি হজ্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এ বছর হজ্ব এজেন্সীর কাছে টাকা জমা করেছিলেন। গত সপ্তাহে হঠাৎ তার ইন্তেকাল হয়ে যায়। এখন জানতে চাই, তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্বের জন্য প্রেরণ করা জরুরি কি না? ওয়ারিসগণ কাউকে দিয়ে বদলী হজ্ব না করিয়ে এ টাকা নিজেরা নিতে পারবে কি না? প্রকাশ থাকে যে, মৃত ব্যক্তি হজ্ব করার ব্যাপারে কোনো ওসিয়ত করে যাননি।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওয়ারিসদের উপর মৃতের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করানো জরুরি নয়। ওয়ারিসগণ মৃতের সকল পরিত্যক্ত সম্পদের এমনকি হজ্ব এজেন্সির নিকট জমা দেওয়া ঐ টাকারও মালিক হয়ে গেছে। অবশ্য সকল ওয়ারিশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চাইলে মৃতের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করাতে পারে। তবে ওয়ারিশদের মধ্যে নাবালেগ থাকলে এক্ষেত্রে তার সম্পদ নেওয়া যাবে না।
শেয়ার লিংকরদ্দুল মুহতার ২/৫৯৯; ফাতহুল কাদীর ৩/৭৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৭
৫/৬ বছর ধরে একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। তা হল, জরায়ু বের হয়ে যায়। সন্তান গর্ভে থাকাকালীন সমস্যাটা বাড়তে থাকে। বৃদ্ধ বয়সে সমস্যাটা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ...
আপনার প্রশ্নের উত্তর সরাসরি ফতোয়া বিভাগে যোগাযোগ করে কিংবা ফোনে জেনে নিতে পারেন।
শেয়ার লিংক
অনেকে বলে মাজারকে কবর বলা যাবে না। এতে করে ওলি আল্লাহদের অসম্মান হয়। আসলে কবর ও মাজারের পার্থক্য কী? কবরকে মাজার শরীফ ও মাজার শরীফকে কবর বলা যাবে কি? মাজার শরীফের উৎপত্তি কখন এবং কোথা হতে? আওলিয়ায়ে কিরামের মাজারকে কবর বললে তাদেরকে অসম্মান করা হয় কি না? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরকে রওজা শরীফ বলা হয় কেন? মাজারকে সিজদা করা, চুমু দেওয়া, মাজারকে ভক্তি দেখিয়ে পিছন হয়ে বের হওয়া, মাজারে গিলাফ চড়ানো এবং মাজারের মধ্যে টাকা-পয়সা ফেলা, মাজারের সামনে গাছের গোড়ায় মোমবাতি জ্বালানো, আগরবাতি জ্বালানো, গোলাপ জল ছিটানো শরীয়তসম্মত কি না? না হলে ওলি আল্লাহদের মাজার বা কবরকে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও যিয়ারতের পদ্ধতি কী? কুরআন-হাদীসের আলোকে দলিলসহ বিস্তারিত জানালে দ্বীন পালনে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।
কবর শব্দের অর্থ দাফনস্থল অর্থাৎ যে স্থানে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয়। আর মাযার শব্দের অর্থ দুটি : যিয়ারত করা এবং যিয়ারত স্থল। তাই যে কোনো মুসলমানের দাফনস্থলকে যেমন কবর বলা যায় তেমনি যে কোনো মুসলমানের কবরকে আভিধানিক অর্থে মাযারও বলা যায়। কেননা, সকল মুসলমানের কবরই যিয়ারত করা বৈধ। বুযুর্গ, নেককার ও ওলিদের দাফনস্থলকে কবর বলা যাবে না এমন কোনো বিধান শরীয়তে নেই। ওলি-বুযুর্গদের কবরের জন্য কুরআন-হাদীসে কোথাও মাযার শব্দ ব্যবহার হয়নি। হাদীসে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নবীদের দাফনস্থলকেও কবর বলা হয়েছে। এমনকি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরকেও কবর শব্দেই উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, সহীহ বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘ইহুদী ও নাসারাদের উপর আল্লাহর লা’নত, কারণ তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। (সহীহ বুখারী ১/১৮৬) এই হাদীসে নবীদের দাফনস্থলকে কবর বলা হয়েছে।
অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের ব্যাপারেই বলেন, আমার কবরকে তোমরা উৎসবের স্থান বানিও না। (সুনানে আবু দাউদ ১/২৭৯)
সুতরাং বোঝা গেল, যত সম্মানিত ব্যক্তিই হোক তার দাফনস্থলকে কবর বলা দোষণীয় নয়। তাই ওলি-বুযুর্গদের দাফনস্থলকেও কবর বলা যাবে। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাফনস্থলকে রওযা বলার কারণ হল, রওযা শব্দের অর্থ বাগান। এখানে রওযা দ্বারা উদ্দেশ্য, ‘জান্নাতের একটি বাগান।’
যেহেতু তাঁর কবরটি জান্নাতের নেয়ামতে ভরপুর একটি পবিত্র বাগান। তাই এ অর্থে তাঁর কবরকে ‘রওযা আতহার’ (পবিত্র বাগান) বলা হয়।
অন্য এক হাদীসে কবরের উপর যারা বাতি জ্বালায় তাদের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। (সুনানে তিরমিযী ১/৭৩)
আরেক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রা.কে এই ফরমান দিয়ে পাঠালেন যে, কোনো উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দিবে এবং কোনো মূর্তি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে। (জামে তিরমিযী ১/২০৩)
ফিকহে ইসলামীর প্রসিদ্ধ কিতাব তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩৪১ বলা হয়েছে, কবর মুছবে না, কবরে চুমু দিবে না এবং কবরকে স্পর্শ করবে না। কেননা, এটা নাসারাদের রীতি। (সামনে এ সংক্রান্ত আরো বরাত উল্লেখ করা হয়েছে।)
উল্লেখ্য কবরে চুমু খাওয়া, সিজদা করা, তাওয়াফ করা, কবরের উপর ইমারত বানানো, গিলাফ চড়ানো, মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালানো ইত্যাদি একদিকে যেমন শরীয়তের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ, অপরদিকে তা কবরবাসী ওলীদের প্রতি চরম অবিচার। কেননা, তাঁরা পুরো জীবন শিরক-বিদআতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন অথচ মৃত্যুর পর তাদরে প্রতি ভক্তি নিবেদনের নামে ওই সব কাজ-ই করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সাহাবা, তাবেয়ীন এবং ওলি-বুযুর্গদের পথ-নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের ঈমান-আমল ঠিক করা, তাওহীদ ও সুন্নাহ্কে আঁকড়ে ধরা এবং শিরক-বিদআত ও সকল প্রকার কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমেই তাদেরকে প্রকৃত সম্মান করা যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।
কবর যিয়ারতের সুন্নত তরীকা হচ্ছে কবরের কাছে গিয়ে সালাম দিবে।
এরপর কবরকে পিছনে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে নিজের জন্য এবং কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দুআ করবে। এছাড়া কুরআন মজীদ থেকে কিছু অংশ তেলাওয়াত করে কবরবাসীর জন্য ইসালে ছওয়াব করা যেতে পারে।- দেখুন :শেয়ার লিংক(কবর অর্থ :) লিসানুল আরব ১১/৯; আলকামুসুল মুহীত ২/১৬০; তাজুল আরূস ৩/৪৭৮; তাহযীবুল লুগাহ ৭/১৪৮ মাযার অর্থ : লিসানুল আরব ৬/১১১; তাজুল আরূস ৩/২৪৫; (দাফনস'লকে কবর বলা :) সহীহ বুখারী ১/১৮৬; সহীহ মুসলিম ১/২০১; মুসনাদে আহমদ ২/২৪৬, ৩৬৭; কবরকে রওযা বলা : জামে তিরমিযী ২/৭৩; (কবরে নিষিদ্ধ কার্যাবলি :) সহীহ বুখারী ১/১৮৬; সহীহ মুসলিম ১/২০১; জামে তিরমিযী ১/৭৩; সুনানে নাসাঈ ১/২২২; সুনানে আবু দাউদ ২/৪৬১; সহীহ ইবনে হিব্বান ৭/৪৫২-৪৫৪; রূহুল মাআনী ৮/২৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আননাহরুল ফায়েক ২/৪২; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৭২; মাদখাল ইবনুল হাজ ৩/২৭৩-২৭৪; ইগাছাতুল লাহফান ১/২২২ (কবর যিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি :) সহীহ মুসলিম ১/৩১৩; শরহু মুসলিম নববী ৭/৪৩; হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/১৬৯; শরহুস সুদূর পৃ. ৩১১; রদ্দুল মুহতার ২/২৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫-১৯৬; ইলাউস সুনান ৮/৩৩০-৩৪৩
একটি ইসলামী মাসিক পত্রিকায় এক প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, ইসলামের প্রথম শহীদ হলেন হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসীর রা.। একজন আলেমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তথ্যটি সঠিক নয়। ইসলামের প্রথম শহীদ হযরত সুমাইয়া রা.। জানতে চাই কোন তথ্যটি সঠিক?
ঐ আলেমের বক্তব্যই সঠিক। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসীর রা. ইসলামের প্রথম শহীদ নন। তাঁর ইন্তেকাল/শাহাদত ৩৭ হিজরীতে। হিজরতের পূর্বে ইসলামে সর্বপ্রথম শহীদ হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছেন তাঁর আম্মা হযরত সুমাইয়া রা.। এটি বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ রাহ. থেকে বর্ণিত।
শেয়ার লিংকমুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩৬৯২০; আরো দেখুন : আলইসতীআব ফী মারিফাতিল আসহাব ১/১৮৬৩, ৩/১১৩৫; উসদুল গাবা ৩/৩১২, ৫/৩১৪
কাবা গৃহ পুনঃনির্মাণের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়স কত ছিল? হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের বিষয়ে সৃষ্ট বিবাদ কীভাবে নিরসন হল? এর পিছনে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভূমিকা কী ছিল?
কাবা গৃহ পুনঃনির্মাণের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়স ছিল ৩৫ বছর। হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের বিষয়ে সৃষ্ট বিবাদ নিরসন কল্পে একটি সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয় যে, আগামীকাল যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম কাবাঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সেই এ ব্যাপারে ফয়সালা পেশ করবে। তার ফয়সালাকে সকলে খোদায়ী ফয়সালা হিসেবে মেনে নিবে। আল্লাহ তাআলার কুদরতে পরের দিন সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করলেন। তাকে দেখে সকলে সমবেত কণ্ঠে বলে উঠল এই যে আমাদের প্রিয় ‘আল আমীন’! আমরা সকলে তার প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি একটি চাদর বিছিয়ে স্বহস্তে পাথরটি চাদরের উপর রেখে দিলেন। এরপর প্রত্যেক গোত্রের প্রতিনিধিকে বললেন, তারা যেন প্রত্যেকে চাদরের এক প্রান্ত ধরে পাথরটি দেয়ালের কাছে নিয়ে যায়। তারা যখন নিয়ে গেল তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বহস্তে পাথরটি উঠিয়ে যথাস্থানে স্থাপন করলেন।
শেয়ার লিংকআলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২৬৩; আলকামিল ফিততারীখ ২/৪২, ৪৫; তারীখুল ইসলাম যাহাবী ১/৫৩-৫৪; আলমুনতাযাম ফী তারীখিল মুলূকি ওয়ালউমাম ইবনে জাওযী ২/৩২১, ৩২৪; সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ২/১৭২
আমার বড় খালা কুরআন মজীদ হিফয করেছিলেন। বিয়ের পর সাংসারিক জীবনের ব্যস্ততা ও বিভিন্ন ঝামেলার কারণে কুরআন মজীদের তেলাওয়াত ও চর্চা কম হওয়ায় তিনি এখন হিফয প্রায় ভুলেই গেছেন। ৩০তম পারাটিও ভালোভাবে শুনাতে পারেন না। হিফয করে ভুলে গেলে হাদীস শরীফে খুব ভয়াবহ শাস্তির কথা এসেছে। তাই আমার খালাজান খুব চিন্তিত। এ বিষয়ের হাদীস ব্যাখ্যাসহ জানতে চাই এবং এ অনুযায়ী তার করণীয় কী তাও বলবেন।
এ বিষয়ে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে তা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) যে ব্যক্তি কুরআন মজীদ পড়ল অতঃপর তা ভুলে গেল। কিয়মতের দিন সে কুষ্ঠরোগী হয়ে আল্লাহ তাআলার সামনে উপস্থিত হবে। (সুনানে আবু দাউদ ১/২০৭)
হাদীসের ব্যাখ্যাকারগণের কেউ কেউ উক্ত হাদীসে ‘ভুলে যাওয়া’ শব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, এই শাস্তি ঐ ব্যক্তির জন্য যে কুরআন মজীদ হিফয করার পর অবহেলা ও ত্রুটির কারণে দেখে দেখে তেলাওয়াত করার যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেছে। তবে কোনো কোনো মুহাক্কিক আলেম ‘ভুলে যাওয়া’-এর ব্যাখ্যা করেছেন মুখস্ত পড়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলা। অর্থাৎ যে কুরআন মজীদ হিফয করার পর না দেখে মুখস্ত পড়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে তার ব্যাপারে উক্ত শাস্তি প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ্য যে, এটি খুবই দুঃখজনক বিষয় যে, আল্লাহ তাআলা কোনো বান্দাকে তাঁর পবিত্র কালাম কুরআন মজীদ হিফয করার মতো বিরাট নেয়ামত দান করলেন আর সে তার অবহেলা ও ত্রুটির দরুণ তা ভুলে গেলে। এটি তাঁর এই মহান নেআমতের প্রতি অকৃতজ্ঞতার পরিচয়। তাই এখন তার কর্তব্য হল, প্রতিদিন কিছু সময় হলেও নিয়মিত তেলাওয়াত করে যাওয়া এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফার করা।
শেয়ার লিংকসুনানে আবু দাউদ ১/২০৭, ১/৬৬; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৮৫; মিরকাতুল মাফাতীহ ৫/৯; আওনুল মা’বুদ ৪/২৪১; বাযলুল মাজহুদ ৩/৩০২, ৭/৩১৪; মাজমাউয যাওয়াইদ ৭/৩৪৬; মালফূযাতে হাকীমুল উম্মত ২৩/২০১
একবার ছুটিতে গ্রামের এক ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিলাম। সেখানে এক ওয়ায়েজের মুখে শুনলাম, হাদীসে নাকি আছে, হযরত আযরাঈল আ. যখন মূসা আ.-এর রূহ কবজ করতে এসেছিলেন তখন মূসা আ. তাকে এতো জোরে থাপ্পড় মেরেছিলেন যে, তার চক্ষু বের হয়ে গিয়েছিল। জানতে চাই, এ সংক্রান্ত হাদীসটি কোন কিতাবে আছে এবং তা বিশুদ্ধ কি না?
জ্বী, ঘটনাটি সত্য এবং এ সংক্রান্ত হাদীসটি সহীহ। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মালাকুল মাউত (জান কবজকারী ফেরেশতা) কে মূসা আ.-এর নিকট প্রেরণ করা হল। তিনি যখন এলেন তখন মূসা আ. তাকে জোরে থাপ্পড় মারলেন। যার ফলে মালাকুল মাউতের চক্ষু বের হয়ে পড়ল। তখন তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট আরজ করলেন, আপনি আমাকে এমন বান্দার নিকট প্রেরণ করেছেন যিনি মওত চান না। আল্লাহ তাআলা তখন (নিজ কুদরতে) তার চক্ষু আপন স্থানে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি আবার যাও এবং তাকে বল-আপনি একটি ষাড়ের পিঠে হাত রাখুন। ঐ হাতের নিচে যত পশম পড়বে আপনি চাইলে এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে আপনার হায়াত এক বছর করে দীর্ঘায়িত হবে। মূসা আ. এ কথা শুনে বললেন, এরপর কী হবে? আল্লাহ তাআলা বললেন, মৃত্যুই আসবে। মূসা আ. বললেন, তাহলে এখনি মৃত্যু দিন।
শেয়ার লিংকসহীহ বুখারী হাদীস : ৩৪০৭; সহীহ মুসলিম হাদীস : ২৩৭২ উল্লেখ্য, বিখ্যাত হাদীস-বিশারদগণ বলেন, মালাকুল মাওত মূসা আ.-এর অনুমতি না নিয়েই মানুষের বেশে তাঁর ঘরে প্রবেশ করেছিলেন। তখন তিনি তাকে না চিনতে পেরে বিনা অনুমতিতে ঘরে প্রবেশ করার কারণে চপেটাঘাত করেন।-ফাতহুল বারী ৬/৫০৮; শরহে নববী ১৫/১২৯
আমরা শোনেছি যে, মিনায় অবস্থিত মসজিদে খাইফে সত্তরজন নবী নামায আদায় করেছেন। একথা কি সঠিক? প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।
হ্যাঁ, একথা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে মারফূ হাদীসে এসেছে যে, মসজিদে খাইফে সত্তরজন নবী নামায আদায় করেছেন।
শেয়ার লিংকতাবারানী আওসাত ৬/১৯৩ হাদীস : ৫৪০৩; আখবারে মক্কা ২/১৭৪; মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/৬৩৯
হাদীসে যে ‘দৈয়জ’ শব্দ এসেছে এর অর্থ কী? ‘দৈয়জ’ সম্পর্কে হাদীসে কী বলা হয়েছে? বিস্তারিত জানাবেন বলে আশা করি।
হাদীস শরীফের ঐ শব্দটি হল দাইয়ূছ। এর অর্থ হল, এমন স্বামী যে স্ত্রী বা পরিবারের কোনো মহিলাকে পাপাচার, ব্যভিচার করতে বাধা দেয় না। এককথায় বলা যায়, অসতী স্ত্রী বা নারীর আত্মমর্যাদাহীন নির্বিকার স্বামী বা অভিভাবক।
এ সম্পর্কিত একটি হাদীস হল, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে হারাম করেছেন : ১। মদে অভ্যস্ত ব্যক্তি ২। পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং ৩। দাইয়ূছ- যে তার পরিবার বা স্ত্রীর পাপাচারকে সমর্থন করে।
শেয়ার লিংকমুসনাদে আহমদ হাদীস : ৫৩৭২; বুলূগুল আমানী ৩/৩৫৫৬ হাদীস : ৯৯৭৫; মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার ২/২২২; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৭০